আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম নিয়ে রাজনীতিঃশুধু নিরীহ মোল্লারা কেন দায়ী?

রাজনীতির আবর্জনাগুলো বাদ দিলে আপনার সাথে আমার দ্বিমত খুবই সামান্য।

ধর্ম নিয়ে রাজনীতি আর ধর্মীয় রাজনীতি এক জিনিস নয় কিন্তু আমাদের দেশে প্রায়ই এই নিয়ে ক্যাচাল লেগে থাকতে দেখি। যারা ধর্মীয় রাজনীতি করছে তাদের ভিতরে যথেষ্ঠ মেধা সম্পন্ন কন্টেম্পোরারী লিডারশীপ না থাকার ফলে টোটাল বিষয়টাকেই বিতর্কিত করছে, আর সাথে সাথে সেকুলারিষ্টদের প্রপাগান্ডাতো আছেই। যাই হউক এখানে ধর্মীয় রাজনীতির দোষ-গুন কোনটাই করা উদ্দেশ্য নয় বরং ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করতে দিতে নারাজ তাদের কিছু স্ববিরোধীতা তুলে ধরার প্রয়াস। শুরুতে বলে নেয়া ভাল চারদলীয় জোট যেহেতু নিজেদেরকে ইসলামী জাতীয়তাবাদের ধারক-বাহক মনে করে তাই ধর্ম তাদের রাজনীতিতে ব্যবহার হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

তাই মুল বিষয়টা সেকুলার দাবীদারদের ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার কিছু ঘটনা তুলে ধরা হল; 'পবিত্র কুরআন-হাদিসের আলোকে খলিফাতুল মোসলেমীন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব' শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন খলিফাতুল মুসলিমিনদের একজন। মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বশূন্য অসহায় দরিদ্র মুসলমান তথা সারা বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধুর আপসহীন লড়াইয়ের কারণে বঙ্গবন্ধুই সারা বিশ্বের মুসলমানদের একমাত্র অভিভাবক ছিলেন। তারা বলেন, আমাদের ঈমানই হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। যারা ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধিতা করেন তারা কুরআনকে অস্বীকার করেন। তারা বলেন, 'বাংলাদেশ-জিন্দাবাদ' কোনো ফজিলত নেই কিন্তু 'জয় বাংলা' শ্লোগানে বরকত ও ফজিলত আছে।

(নভেম্বর ২৬, ২০০৯, নয়া দিগন্ত) মুসলমান মাত্রেই "ঈমান" কাকে বলে জানার কথা এখানে ঈমানের যে নতুন সংজ্ঞা দেখলাম তা কি ধর্মনিরপেক্ষ মুসলমানদের ঈমানের সংজ্ঞা?? প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ২ এপ্রিল আওয়ামী ওলামা লীগ আয়োজিত এক সভায় বলেন, দেশে ইসলাম টিকিয়ে রেখেছে একমাত্র আওয়ামী লীগ। আর এ ইসলামের প্রবর্তক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আরো বলেন, জামায়াত নেতারা রোজা রাখে ঠিকই, কিন্তু ইফতার করে হুইস্কি দিয়ে। এখন বুঝিতে পারিতেছি উপরে বর্নিত ধর্মনিরপেক্ষ ঈমানের সংজ্ঞা তাহা হইলে বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত ইসলাম অনুসারীদের জন্যই প্রযোয্য. গত ২০ মার্চ আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, " লাখ লাখ কোটি কোটি বছর পর আল্লাহ যদি আমাদের বিচার করতে পারেন তবে আমরা এখন এসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে পারব না কেন? এখানে উনি কিন্ত আল্লাহর সাথে নিজেদের তুলনা করেন নাই যেমনটা নিজামীকে করা হয়েছিল নবীজির সাথে, কারন আল্লাহ হলেন একজন আর উনি বলেছেন আমরা। তবে বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত ধর্মনিরপেক্ষ ইসলামে আল্লাহ কয়জন এটার বিস্তারিত কোন ওহি এখনো পাওয়া যায়নাই।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, কৃষি মন্ত্রী, ও সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী মতিয়া চৌধুরী হালে নতুন উম্মতের সন্ধান দিয়েছেন। বিএনপি জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, তারা রাসূলে পাক (সা.)-এর ইসলামে বিশ্বাস করে না। বিএনপি হচ্ছে জিয়াউর রহমানের উম্মত, তাদের দোসর জামায়াত হচ্ছে নিজামীর উম্মত, আর আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি তারা মহানবীর (সা.) উম্মত (আমার দেশ, ২১ মার্চ, ২০১০) এখানেই শুরু হয় মুহাম্মদি ইসলাম ও বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত ইসলামের দন্ধ!তবে মতিয়া চৌধুরী কথা সত্য হলে বলতে হয় আওয়ামীগের কেউ কেউ আবার মুহাম্মদি ইসলামও মানে কিন্তু প্রশ্ন তাহলে মোহাম্মদি ইসলামে কি কোনভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হবার সুযোগ আছে?? সুযোগ করে দেয়ার জন্য ফতোয়া দরকার, যদিও ফতোয়ার ব্যপারে হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে তা সত্বেও বাংলাদেশ জাতীয় মুফতি ঐক্য পরিষদ (বামুপ) থেকে ফতোয়ায় বলা হয়েছে "বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিরোধিতা করা তথা আওয়ামী লীগের সমর্থন না করা কুফরি" অতএব, আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করলে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে, সে যত বড় আলেমই হোক না কেন। (নয়া দিগন্ত, নভেম্বর ৩১, ২০০৯) এই ফতোয়া অনুসারে কার কি অবস্থা জানাইয়া যান, তবে আমি বলতে পারি আমি বহু আগে থেকেই কুফরি করছি ধর্মনিরপেক্ষ ইসলামের সাথে....এবং এর জন্য মুরতাদ হইতে হলেও হতে রাজি। ঐ ফতোয়ার পরেও যখন জানা গেল যে কেউ কেউ আওয়ামীলিগের মুহাম্মদি ইসলাম(আগেই যেটা বলেছি) পালন কন্টিনিউ করতাছে তখনি মন্ত্রির পক্ষ থেকে আসে কঠোর নির্দেশনা "শেখ হাসিনার নির্দেশ মানা আলীগ ও ছাত্রলীগের জন্য ইবাদত" বলেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম! (নয়াদিগন্ত,মে ৬, ২০১০) এবং তাহা নিশ্চিত করার জন্যই বোধহয় ফটোসহ সদস্য সংগ্রহ করার কথা বলা হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে।

অতিসম্প্রতি বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া কে 'বেনামাজী' বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিদিন নামাজ পড়েন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, "বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক ওয়াক্ত নামাজ পড়েন না এবং এমন কোনো ইসলাম বিরোধী কাজ নেই যা তিনি করেন না। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ইসলামের নিয়ম-নীতি মেনে চলেন। যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন প্রতিদিন তিনি নামাজ আদায় ও কোরআন তেলোয়াত করেন।

" সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!! এমন নেত্রীই দেশবাসী আশা করে.... কিন্তু এই কথার তীব্রবিরোধিতা করেছেন বেরসিক বিএনপি, হানিফের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এমকে আনোয়ার বলেন, হাতে তজবিহ, মাথায় হিজাব দিয়ে লোক দেখানো নামাজ বেগম খালেদা জিয়া পড়েন না। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার নামাজ পড়া নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন, তাদের বিষয়ে আলোচনা করতেও লজ্জা হয়। ওরা ন্যূনতম শিষ্টাচারও জানেন না। তিনি বলেন, বেগম জিয়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং সপ্তাহে দু’দিন রোজা রাখেন। ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ সাহেব নামাজ পড়েন কিনা তা দেশবাসী জানতে চাইলে হয়তো লজ্জাই পেতে হবে।

২৯ মে, আমার দেশ বেটা ফখরুলও নির্বোধ, ধর্মনিরপেক্ষ ইসলামের নেতা হানিফ সাহেব নামাজ পড়েন কিনা এটা দেশবাসী কেন জানতে চাইবে? ব্যটা তুমি কি মনে করো দেশবাসী তোমার মত নির্বোধ? নেতা-নেত্রীদের ধর্ম চর্চার অতিউত্তম কথা আমরা জানতে পারছি দিন দিন তাই বুঝি আশার হাল ছাড়ছেন না ধর্মীয় রাজনীতিকরাও। আওয়ামীলিগের অতি আস্থাভাজন মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, 'পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে ইসলামি দল নিষিদ্ধ হবে না। দুই-তিনটি জঙ্গি দল নিষিদ্ধ হবে। শেখ হাসিনা আমাকে তা স্পষ্ট করে বলেছেন। (নয়াদিগন্ত, ১ এপ্রিল, ২০১০)।

শুনছি দেশ অতি শীগ্রই ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাচ্ছে তাহলে প্রধানমন্ত্রী কিভাবে মিছবাহুর রহমান চৌধুরীকে দেয়া ওয়াদা রাখেন তাই দেখার অপেক্ষায় আছে সচেতন দেশবাসী।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.