আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একদা এক সন্ধ্যায়

সত্য সর্বদাই রাজনৈতিক

কোন এক সন্ধ্যাবেলা বেদনাহত প্রাণে বসে বসে ভাবছিলাম একা নদীকিনারে। নাহ্ তাকে ঠিক ঠিক সন্ধ্যা বলা যাবে না তবে বিকেলও ছিলো না; আর সত্যি কথা যদি বলতে হয় ওগুলোকে কোনভাবেই ভাবনা বলা যায় না। বরং ক্রমাগত ভাবনার ভারে আমি ছিলাম ক্লান্ত, ভীষণ ক্লান্ত, বস্ত্তত আমি আর ভাবতেই চাইছিলাম না। বহুদিন আগের কথা- দু’একটা ভুলতো হতেই পারে আর কথা পুরোনো হলে ঠিকমত কে কবে রেখেছে মনে । যাক গে সে সব।

মোটকথা সেদিন নদীতীরে বসেছিলাম একটি বিশেষ কারণে-- এক অর্বাচীন কিশোরীর হৃদয়রেখা ধরে হাঁটতে গিয়ে বুঝলাম মোটেই তা সরলরেখা নয় বেমাক্কা হোঁচটে ভীষণভাবে আহত হয়েছিলাম শুশ্রূষার প্রয়োজন ছিলো তাই নদীকিনারে বসে মচকানো মনের গায়ে ডলছিলাম নানাবিধ দার্শনিক আরকের সাথে অতিঘণীভূত আদর্শিক পালিশের যথাযথ মিশ্রণ সৌভাগ্য সে মলম আমাকে নিরাশ করেনি এদিকে পরিচর্যাও হচ্ছিল বেশ ভালো - ঠান্ডা বাতাসের ছোঁয়া, শান্ত নদী আমাকে দিচ্ছিল প্রশান্ত আমেজ, সতেজ অনুভূতি সবকিছু সামলে উঠছিলাম দ্রুত নতুন শেখা সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছিল বাকী যা কিছু দীনতার মেঘ। নির্জন নদীতীরে বসে বিশিষ্ট বোধের আলোয় ক্রমশ ফিরে পাচ্ছিলাম আপন অধিকার ঠিক সন্ধ্যা-তারাটির মতো : উজ্জ্বল, নি:সঙ্গ, মহৎ! না, ঠিক নি:সঙ্গ না, তখনই খেয়ালে এল যে আশেপাশে মানুষ আছে এবং তারা সঞ্চরণশীল. . . . তাদের বিড়ির গন্ধ, খোশগল্প, মাথাঘষা কিংবা ডুবদেবার মৃদু শব্দ আমার কাছে এতক্ষণ নি:স্তব্ধতার অংশ বলেই মনে হচ্ছিল। ও হ্যাঁ, ততক্ষণে সন্ধ্যা আরও ঘণীভূত হয়েছে তবু রক্তিম আভার শেষ ভগ্নাংশে তাদের চকচকে নাকের ডগা তখনো ঘোষণা করছিল যে তারা মোটেই সিল্যুয়েট নয় কয়েকজনা ক্লান্ত মজুর মাত্র; দিনশেষে এখানে বসে, কিছু খুচরো গল্পগুজবের মাঝে দু’একটা বিড়ি টেনে স্নান সেরে নিজের ঘরে ফিরে যাবে: নিজের ঘরে? হয়তো নিজের না তবু ঘর তো, ঘরে মানুষকে ফিরতেই হয়। যেখানে অপেক্ষা করছে তার বধু, সন্তান অথবা তেমন কেউ নেই তার শুধুই বৃদ্ধা মাতা কিংবা এও হতে পারে সে ঘর শুধুই অন্ধকার, সে গেলেই কেবল জ্বলবে বাতি আবার হয়তো দেখা গেল এসবের কিছুই না: সে আদৌ ঘরে ফিরে যাবে না বস্ত্ততঃ তার কোন ঘরই নেই সে কোথাও ফিরে যায় না, কেবল ঘুরতে থাকে; অবশ্য এটাকে ঠিক ঘোরাও বলা যায় না, বরং বলা যায়- সে কেবল উড়তে থাকে, ছেঁড়া ঠোঙ্গার মতো যতক্ষণ না কুড়িয়ে নেয় কোন কাগজ কুড়ানী আবার কাগজ কুড়ানীর কথা এসে গেল, ধুর্ খালি কথার পিঠে কথা আসে, আসল কথায় আসি যা বলছিলাম- লোকটির হয়তো ঘর নেই কিন্তু এমন ভাবতে মন সায় দেয় না ঘর থাকবে না এটা হয় নাকি? তবে এমনও হতে পারে সে সরাসরি ঘরে ফিরবে না হয়তো কোন রকে বসে তাস পিটোবে টিনের মগে আনা চা খেয়ে বিড়ি টানতে টানতে খিস্তি করবে; অবশ্য শুঁড়ীখানায় ঢোকার স্বাধীনতাও তার রয়েছে ভাগ্য ভাল থাকলে সেখানে সে খুঁজে পেতে পারে জন্মের কৈফিয়ত এবং এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে সে উপভোগ করতে পারে কোন পথনারী’র সঙ্গ ট্যাঁকের জোর একটু বেশি হলে ছাদের তলায়ও সেটা হতে পারে। এসব শেষ হলেই কেবল বাড়ি ফেরার প্রশ্ন আসে তখন সেখানে কে তার জন্য অপেক্ষা করছে সে কথা এখানে অবান্তর; সে কোথায় ফিরে যাবে না যাবে সে আলোচনা এখানে একেবারেই অথর্হীন।

আর মানুষের এতো বেশি ব্যক্তিগত বিষয়ে হাত দেওয়া একদমই উচিত না সবচেয়ে বড় কথা মূল ঘটনার সাথে এসব আলোচনার কোনই সম্পর্ক নেই; এটা জানা কথা সব ক্ষেত্রেই পরিমিতিবোধ প্রয়োজন যতটুকু না বললে না ততটুকুই বলা উচিত তাই তার ঘরের দরজায় ঠিক কি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেটা জানার চেয়ে জরুরী হচ্ছে- তখন স্পষ্টতই আমরা স্থান কালের ঐক্যে বিরাজ করছিলাম, এ নিয়ে কোন সন্দেহই ছিল না অবাক কান্ড! সেখানেই সমস্যা হল- হঠাৎ করেই কেন যেন মনে হতে লাগল কোথায় একটা কিন্তু রয়েছে কিংবা তার চেয়েও বেশি কিছু কেন মনে হচ্ছিল জানি না, অথচ কিছু একটা মনে হচ্ছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। যদিও আমার উপস্থিতিকে তারা গ্রাহ্য বা অগ্রাহ্য কোনটাই করেনি অবশ্য তাতে কিছু প্রমাণ হয় না কিন্তু সমস্যা ছিলো অন্য যায়গায় মনে হচ্ছিল ওরা আমাকে দেখেই নি এমনকি আমার এমনও সন্দেহ হচ্ছিল ওরা আদৌ আছে কি না! তাদের একজন ঠিক আমার পাশ দিয়ে হেঁটে গেল- একটু হলেই আমার গায়ে লাগতো- কিন্তু লাগেনি- হয়তো লেগেছিল আমি বুঝতে পারিনি। আর একজন আমার সামনেই গামছা ঝাড়ছিল তখন ঠান্ডা জলের ঝাপটা লাগে আমার মুখে না! কথাটা ঠিক হল না, মুখে লাগেনি বরং বলা যায় জলকণা আমার ভিতর দিয়ে বেরিয়ে গেল- আর সেটাই হয়েছিল মনে হয় কারণ- আমি নিশ্চিত বলতে পারি আমার মুখে কোন জল লাগেনি- আমি খেয়াল করেছিলাম আমার মুখ শুকনোই আছে- অথচ আমি পেলাম একটা শীতল অথবা সিরসিরে অনুভূতি অথবা এমনও হতে পারে সে অনুভূতি আমি ঠিক শনাক্ত করতে পারিনি- কিন্তু পরে ভেবে দেখেছি মোটেও আশ্চর্য নয় আসলে জলকণা খুব মিহি ছিল, এতটা মিহি যে শরীরে লাগে না- ভেদ করে চলে যায়- তাই এখন আর আশ্চর্য হই না- বহুদিন আগের ঘটনা তখন আমার বয়স ছিল আঠার এখন . . .! হাসি পায়- তখন কত সহজে আশ্চর্য হতাম! তারপর বয়স বাড়ছিল দ্রুত, সেই সাথে জ্ঞান- আর এটাতো সবাই জানে, জ্ঞান সবই ব্যাখ্যা করতে পারে- এই আপাত আশ্চর্য ঘটনাগুলো খুবই সাধারণ খুব সহজে তা বোঝা যায়, শুধু সময়ের ব্যাপার- তবু মাঝে মাঝে খটকা লাগে হঠাৎ হঠাৎ মনে হয়-এত মিহি জল, ওরা পেল কোথায়! আসলে খুব অপরিপক্ক ছিলাম- সঠিকভাবে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে পারিনি- সেই কতকাল আগের কথা!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।