আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পেশাদার প্রযুক্তিকর্মীর দলে

ভালো হতে চাই

পেশাদার প্রযুক্তিকর্মীর দলে এমন নামে আজ কালের কন্ঠ পত্রিকার টেকবিশ্ব পাতায় প্রতিবেদন ছাপে দেখুন কাজে লাগে কি না। লেখক হাবিবুর রহমান তারেকহুজুগে বাঙালি একসময় ছুটেছিল 'কম্পিউটার সায়েন্স'-এর পেছনে। ধারণাটা এমন ছিল, কম্পিউটার বিষয়ে পাস করলেই মাসে লাখ টাকার চাকরি দাঁড়িয়ে থাকবে দরজায়। সেই সুযোগে ট্রেনিং সেন্টারগুলোও কামিয়েছে দুহাতে। এই ট্রেনিং সেন্টারগুলোর মধ্যে যেগুলো একটু বেশি অসাধু, তারাই করেছে আসল সর্বনাশ।

চাকরির বাজারে কোন কোর্সগুলো আসলে প্রয়োজন, শিক্ষার্থীদের তা জানানোর কোনো প্রয়োজনই বোধ করেনি তারা। বরং সবাইকে দিয়েছে ভুল তথ্য। ফলাফল ভয়াবহ। কম্পিউটার ট্রেনিং থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল সবাই। আকর্ষণীয় চাকরির বাজার অধরাই রয়ে গেল আমাদের।

তবে সময় ফুরিয়ে যায়নি। কিছু কম্পিউটার কোর্স আছে, যেগুলো সম্পন্ন করলে এই দামি চাকরির বাজারে এখনো ঢুকে পড়া যাবে অনায়াসে। এর জন্য জরুরি হচ্ছে 'ভেন্ডর সার্টিফিকেশন'। 'ভেন্ডর সার্টিফিকেশন' তথ্যপ্রযুক্তিতে একজন পেশাদারের প্রকৃত দক্ষতার সনদ হিসেবে বিবেচিত হয়। ভেন্ডর সার্টিফিকেশন কী কোনো ভেন্ডর (যেমন মাইক্রোসফট) তার নির্দিষ্ট কোর্সের ওপর পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ব্যবহারিক বা প্রকৃত দক্ষতা যাচাই করে ওই কোর্সের ওপর সনদ দেয়, যাকে ভেন্ডর সার্টিফিকেশন বলে।

তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বখ্যাত ভেন্ডরগুলো হলো_মাইক্রোসফট করপোরেশন, সান মাইক্রোসিস্টেম, সিসকো সিস্টেমস, আইবিএম, ওরাকল করপোরেশন, কম্পটিয়া, রেডহ্যাট করপোরেশন ইত্যাদি। কেন এই সার্টিফিকেশন ভেন্ডর সার্টিফিকেশন একজন আইটি পেশাজীবীকে ব্যবহারিক দক্ষতার পাশাপাশি ভেন্ডরগুলোর বিভিন্ন বিষয়ের ওপর অতিরিক্ত জানতে সাহায্য করে। তা ছাড়া পেশাজীবীরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাঁর সর্বোচ্চ দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ পান এই সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে। বিশ্বের চাকরির বাজারে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হয় ভেন্ডর সার্টিফাইড পেশাজীবীদের। যেসব সার্টিফিকেশন আছে বিশ্বে প্রচলিত ভেন্ডর সার্টিফিকেশনগুলো মূলত নেটওয়ার্কিং, প্রোগ্রামিং, ডাটাবেজ ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপিং, সিকিউরিটি এনালিস্টের ওপর ভিত্তি করে।

তথ্য-প্রযুক্তির যে কয়টি ভেন্ডর আছে তার মধ্যে মাইক্রোসফট, সিসকো ও কম্পটিয়া অন্যতম। মাইক্রোসফটের সার্টিফিকেশন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করলে সেই বিষয়ের ওপর সার্টিফায়েড হওয়ার সুযোগ আছে। এই সার্টিফিকেশন তাকে সেই বিশেষ কোর্সে বিশেষ দক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এমসিএসই মাইক্রোসফট সার্টিফায়েড সিস্টেমস্ ইঞ্জিনিয়ার (এমসিএসই) হচ্ছে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ সার্ভার ২০০০ অথবা ২০০৩-এর ওপর ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জনের সার্টিফিকেট। সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং সিস্টেম অ্যানালিস্টদের জন্য এই সনদ।

এমসিএসই সনদধারী এবং ডিআইআইটির কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস শুভ জানান, এমসিএসই হতে হলে মোট সাতটি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে, যার চারটিই নেটওয়ার্কিং সিস্টেমসের ওপর। ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেমস ও ডিজাইনের ওপর একটি করে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। সর্বশেষ পরীক্ষাটি হচ্ছে ইলেকটিভ অর্থাৎ পরীক্ষার্থী নির্দিষ্ট তালিকা থেকে তাঁর পছন্দের বিষয়টি বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। এমসিটিএস উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম, এক্সচেঞ্জ সার্ভার, এসকিউএল সার্ভার এবং ভিজ্যুয়াল স্টুডিওর মতো মাইক্রোসফটের প্রোডাক্টের সফল ট্রাবলশুটিংয়ে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে হওয়া যাবে এমসিটিএস, অর্থাৎ মাইক্রোসফট সার্টিফায়েড টেকনোলজি স্পেশালিস্ট। উল্লেখ্য, এমসিএসডির পরিবর্তিত রূপ এমসিটিএস।

এমসিএসডি সনদধারী আতিকুর রহমান সুমন বলেন, ডেটাবেইস ম্যানেজমেন্ট, সফটওয়্যার ডিজাইনারসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে চাকরির সুযোগ পান এমসিটিএস সার্টিফায়েড প্রফেশনালরা। এমসিটিএস হতে হলে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, উইন্ডোজ অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব সার্ভিসসহ সার্ভার কম্পোনেন্ট এবং সলিউশন আর্কিটেকচারের ওপর একটি করে মোট চারটি পরীক্ষা দিতে হবে। তা ছাড়া পরীক্ষার্থীকে একটি ইলেকটিভ বিষয়েও পরীক্ষা দিতে হবে। এমভিপি বাংলাদেশে যে কয়েকজন এমভিপি হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে জিকরুল আহসান শাওন অন্যতম। তিনি জানান, অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে মাইক্রোসফটের যেকোনো একটি টুলসের ওপর দক্ষতা এবং ব্যবহারকারীদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহযোগিতা করার যোগ্যতা থাকলেই হওয়া যাবে এমভিপি।

উল্লেখ্য, উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম, এএসপি ডট নেট, সি শার্প, ভিজ্যুয়াল বেসিক ইত্যাদি হচ্ছে মাইক্রোসফটের একেকটি টুলস। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন mvp.support.microsoft.com সাইটে। মাইক্রোসফটের সার্টিফিকেশনগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন http://www.microsoft.com/learning সাইটে । সিসকো সার্টিফায়েড সিস্টেম অ্যাসোসিয়েট সর্বোচ্চ ১০০ নোড-বিশিষ্ট নেটওয়ার্কের জন্য ল্যান, ওয়্যান ও ডায়াল আপ এক্সেস সার্ভিসের ব্যবহারিক দক্ষতা যাচাই করা হয় 'সিসিএনএ' পরীক্ষায়। তবে বিভিন্ন প্রোটোকলসহ নেটওয়ার্কিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত আনুষঙ্গিক অনেক ব্যাপারেই ধারণা থাকতে হয়।

সিসিএনএর সার্টিফিকেশনের বৈধ মেয়াদকাল সর্বোচ্চ তিন বছর। সিসিএনএ সার্টিফায়েড প্রফেশনাল তানভিরুল ইসলাম জানান, 'বায়িং হাউস, গার্মেন্টস ছাড়াও বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে সিসিএনএ সার্টিফায়েডের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশের ব্যাংকগুলোয় অনলাইন সেবা যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি বড় বড় প্রতিষ্ঠানে এন্টারপ্রাইজ নেটওয়ার্কিং ব্যবহারের কারণে সিস্টেম অ্যাডমিনস্ট্রেটর, সিস্টেম সিকিউরিটি অ্যাডমিনস্ট্রেটরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে সিসিএনএ সার্টিফায়েড। ' সিসকো সার্টিফায়েড সিস্টেম প্রফেশনাল সিসকোর সার্টিফিকেশনে সিসিএনএর পরের ধাপই সিসিএনপি। মাঝারি আকারের নেটওয়ার্কিং পরিবেশের জন্য 'সিসিএনপি' প্রযোজ্য।

১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ নোড-বিশিষ্ট নেটওয়ার্কে একজন প্রফেশনালের অ্যাডমিনস্ট্রেটর হওয়ার যোগ্যতাকেই নিশ্চিত করবে সিসিএনপি। এ সার্টিফিকেশনের বৈধ মেয়াদ তিন বছর। কম্পটিয়ার 'এ প্লাস' সার্টিফিকেশন কম্পিউটিং টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (CompTIA) বা কম্পটিয়ার সার্টিফিকেশনগুলোর মধ্যে 'এ প্লাস' খুবই জনপ্রিয় ও চাহিদাসম্পন্ন সার্টিফিকেশন। হার্ডওয়্যার এবং অপারেটিং সিস্টেমের দক্ষতা যাচাইয়ের মাচকাঠি এই দুই সার্টিফিকেশন। 'এ প্লাস' সার্টিফিকেশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন http://www.comptia.org সাইট থেকে।

প্রস্তুতি নেবেন যেখানে ভেন্ডরগুলোর অনুমোদিত ট্রেনিং সেন্টার আছে বাংলাদেশে, যেখান থেকে পরীক্ষাপূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া যাবে। আবার কোর্স ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করে এবং অনলাইনের সহযোগিতায় ঘরে বসেও নিতে পারেন ভেন্ডরের সার্টিফিকেশন পরীক্ষার প্রস্তুতি। ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির উপপরিচালক খালেদ সোহেল জানান, 'মানসম্পন্ন ট্রেনিং সেন্টারে প্রস্তুতি নেওয়াটাই ভালো। নেটওয়ার্কিং কিংবা অন্য যেকোনো ক্লাসের জন্য যে ধরনের পরিবেশ দরকার, তা শুধু ট্রেনিং সেন্টারেই পাওয়া যাবে। ' আহ্ছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, নিউ হরাইজনসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে পাবেন সিসকোর বিভিন্ন সার্টিফিকেশনের প্রস্তুতি।

সিসকোর আনুষঙ্গিক তথ্য পাওয়া যাবে Click This Link লিংক থেকে। একইভাবে মাইক্রোসফট ও কম্পটিয়ার ওয়েবসাইট থেকে (ঠিকানা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে) জেনে নিতে পারবেন, তাদের অনুমোদিত ট্রেনিং সেন্টার ও টেস্ট সেন্টারের সম্পর্কে। পরীক্ষার আগে পরীক্ষার আগে প্রার্থীদের অনলাইন থেকে কিংবা নির্দিষ্ট টেস্ট সেন্টারে ফি পরিশোধের মাধ্যমে টেস্ট ভাউচার সংগ্রহ করতে হয়। সংগৃহীত ভাউচারের মেয়াদ ইস্যুকৃত তারিখ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত বৈধ থাকে। টেস্ট সেন্টার আছে সারা বিশ্বে বিভিন্ন ভেন্ডরের পরীক্ষাগুলো 'পিয়ারসন ভার্চুয়াল ইউনিভার্সিটি এন্টারপ্রাইজ' (Pearson VUE) এবং প্রমেটিকের অধীন লাইসেন্সধারী টেস্ট সেন্টারের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন http://www.vue.com, http://www.pearsonvue.com এবং http://www.prometric.com ঠিকানায়।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.