আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পেশাদার খুনির সাথে পার করা কিছু সময়

ওয়ার্ডের ভেতর একটি ট্রলিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে ছেলেটি। বয়স বিশ-বাইশ, হাতে হ্যান্ডকাফ। তিনজন পুলিশ ঘিরে আছে তাকে। ইমার্জেন্সি থেকে একসাথে অনেক রোগী এসেছে। মানুষে গিজগিজ করছে ওয়ার্ডের ভেতরটা।

পুলিশ থাকায় সবার ভীড় সেই ট্রলিটির সামনেই বেশী। আমি আর আমার এক বন্ধুর ভাগ্যে পড়েছে সেই ছেলেটিকে চিকিৎসা দেবার দায়িত্ব। এতো লোকের ভীড়ে ঠিকমতো কথাও বলা যাবে না। প্রথমে রোগী ছাড়া ওয়ার্ডের বাইরের সব লোককে বের করে দেয়া হলো। আসামী রোগীটি চিৎকার করছে।

অন্য কোন কথা না বলে “ব্যথা ব্যথা” বলে কাতরাচ্ছে। কথা হলো পুলিশের সাথে। - কি হয়েছে? - কিছুই হয় নাই স্যার, খালি খালি ভান ধরছে। - ভান ধরছে কেনো? - স্যার, এই শালা হলো পেশাদার খুনি। ধরা পড়ছে আজকে সকালে।

খালি মিথ্যা কথা বলে। একটু ডলা দিতে যাওয়াতেই এমন চিল্লানো শুরু করছে আর থামে না। আসলে কিছুই হয় নাই, তারপরও হাসপাতালে আনতে বাধ্য করছে। বিরাট বজ্জাত। ছেলেটির দিকে এবার ভালো করে তাকালাম।

শীতল চাহনী। সত্যিই ভয় ধরে যাবার মতো। এবার তার সাথে কথা হলো। - অ্যাই, তোমার সমস্যা কি? - স্যার, হাত-পায়ের হাড্ডি ভাইঙ্গা গেছে। - তুমি বুঝলে কিভাবে হাড্ডি ভেঙেছে? - আমি বুঝি স্যার।

আগেও এমন হইছে। - কোথায় ব্যথা দেখাও। ব্যথার যায়গা দেখালো সে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এর আঘাত তেমন মারাত্মক কিছু নয়। ইনজেকশন দিয়ে এক্সরে করতে পাঠানো হলো।

প্রায় ঘন্টাখানিক পর ফিরে এলো এক্সরে রিপোর্ট নিয়ে। নাহ, কিচ্ছু নেই। রিপোর্ট নরমাল। আবার যাওয়া হলো ছেলেটির ট্রলির কাছে। - স্যার, ভাংছে নি? - না, ভালো আছে।

- স্যার, আমিতো মইরা যাইতাছি। - তোমার কতটুকু কি হচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারছি। - স্যার, আমারে ভর্তি দেন। - না, ভর্তি দেয়ার মতো সমস্যা তোমার নেই। ভর্তি দিলাম না।

চিকিৎসা দিয়ে বিদায়ের জন্য ব্যবস্থাপত্র লেখা হচ্ছে। এমন সময় একজন পুলিশ এগিয়ে এসে বললেন, “স্যার, ব্যাটা আপনাদের ডাকতে বলতেছে”। উঠে আবার যাওয়া হলো তার কাছে। পুলিশরা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে, হ্যান্ডকাফ ট্রলির রডের সাথে আটকানো। - স্যার, আমারে দয়া কইরা ভর্তি দিয়া দেন।

- না, ভর্তি দেয়ার মতো রোগী তুমি না। তোমাকে ভর্তি দিলে জরুরী অন্য একটা রোগী সিট পাবে না। - স্যার, আপনেগো আমি খুশী কইরা দিমু। - এমনিতেই অনেক খুশী আছি, তোমার আর খুশী করার কোন দরকার নেই। ভর্তি না দিয়ে ব্যবস্থাপত্র লিখে পুলিশের হাতে দিয়ে দেয়া হলো।

পুলিশ বের হয়ে যাচ্ছে তাকে নিয়ে। তার শীতল দৃষ্টি ডাক্তারদের দিকে, সত্যিই ভয় জাগানো সে দৃষ্টি। নিয়ে যাবার সময় সে জোরে জোরে বললো, “ডাক্তার, ভর্তি না কইরা কাজটা কিন্তু ভালো করলেন না”। আমাদের সবার ভেতর ভয়ের ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেলো। পরবর্তি কিছুদিন বেশ উৎকণ্ঠায় কাটলো সবার।

কোন অঘটন না ঘটে যায়। আলহামদুলিল্লাহ, কিছু হলো না। ঘটনাটি ২০০৩ সালের মাঝামাঝি সময়কার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়াল্টি ওয়ার্ডের। এখনো মনে হলে অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়। পেশাদার খুনীর সেই শীতল চাহনী যেন চোখের সামনে ভেসে উঠে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.