আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গীতা দত্ত'র সঙ্গে পরিচয়

.

দিন দশেক আগে গভীর রাতে দারুণ সুন্দর এক গান শুনেছি। মানে টিভিতে দেখেছি । গত কয়েক দিনে অনেক বার শুনেছি । প্রথমে ভেবেছিলাম তারা একজন। পরে জানলাম না, একজন গীতা দত্ত , গীতা বালি আরেক জন ।

দত্ত গাইছিলেন । হাসছিলেন বালি। সে রাতে বাসায় ফেরার কিছুক্ষণ পর কারেন্ট চলে গেল একটার দিকে। তার মানে দুইটার আগে আসবে না। আর সবাই ঘুমে তখন।

কয়েক দিন আগে থেকে ব্যক্তিগত একটা বিপর্যয়ের কারণে প্রচ- অস্থিরতায় মধ্যে সময় কাটছিল। স্বাভাবিকভাবে সব কিছুই অসহ্য লাগে এধরণের সময়ে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় মেজাজ খিঁচড়ে সপ্তমে উঠে গেল। অনেকক্ষণে আসবে না। পাশের বাসার আন্টি বলেন, দেশ ডিজিটাল হয়েছে।

কারেন্ট গেলে ঠিক কাটায় কাটায় এক ঘন্টার মাথায় আসে। কোন নড়চড় হয়না। কি করবো না করবো বুঝতে না পেরে চুপচাপ বসে ছিলাম। আর মর্মঘাতী সাম্প্রতিক বিষয়টি হৃদয়ের উনুনে উল্টে পাল্টে কোন উপায় আছে কিনা উপশমের তাই বের করার চেষ্টা করছিলাম। সম্মোহনের বইয়ে পড়া অটো সাজেশন দিয়ে রেহাই পাওয়া যায় কি না তাও পরীক্ষা করলাম।

নাহ , মন বশ মানে না। কঠিন কঠিন প্রশ্ন জাগে মনে। কিসের কি ! উল্টো মনে হলো, এতো হিসেব নিকেশের ব্যপার নেই। যে কারো সাথে সুযোগ পেলেই অনেক কথা বলে ফেলতে হবে । আন্দাজে,অনুমান করে উল্টা পাল্টা কথা বলতে হবে।

ভুল হলে কেউ কিছু বললে তার সঙ্গে প্রচ- ঝগড়া বাঁধিয়ে দিতে হবে। সব তালগোল পাকিয়ে জটিল ঝামেলা পাকিয়ে ফেলতে হবে। ছোট ছোট ঘটনাকে অনেক বড় করে দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে হবে। একটু জ্বর সর্দি হলে ক্যান্সার হয়ে গেছে এমন ভাবে কঁকাতে হবে। তাহলে মনের ইতং বিতং জুত করতে পারবে না ! নিজের সঙ্গে নিজের আকাশ কুসুম যুক্তি তর্কে ছেদ পড়লো টিভির শব্দে।

বিদ্যুৎ এসেছে। কিন্তু টিভি থেকে চোখ ফেরানো মুস্কিল হলো। এক নায়িকা গিটার হাতে একটা গান গাইছেন। কণ্ঠে কি এক জাদু আছে ! মন বশিভুত হয়ে যায়। আর যিনি গাইছেন , তার ঠমক গমকইবা কই রাখি ! চোখ নাচাচ্ছেন না যেন তুলে আছাড় মারছেন ! আর কি অপরূপ হাসি ! সুবহানআল্লাহ ! এমন চমৎকার করে কাউকে হাসতে দেখিনি।

বিদ্যুৎ চলে গেলে আর ফিরে আসলে টিভিটায় এমনিতে চ্যানেল বদলে যায়। এই বার একটা মিউজিক চ্যানেলে হাজির হয়েছে কোন ভাবে। সেখানে চলছে এই গান । গানটার শেষ দিকে শিরোনাম উঠলো , তকদির সে ,বাজি- ৫১ । মোবাইলে নামটা লিখে করে রাখলাম।

পরদিন ইউটিউবে সহজেই পেয়ে গেলাম। কয়েকবার শুনে নিলাম আগে। যেহেতু হিন্দির কিছু বুঝিনা, চারজন হিন্দি সিনেমা ও গানে বিশেষজ্ঞকে নিয়ে বসলাম অর্থ বের করতে। হিন্দি সিনেমায় মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির কারণে এক সময় মায়ের হাতে হরহামেশা মার খাওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পন্না সদস্যটি বললেন, আরে এতো গীতা দত্ত ! গেয়েছেনও তিনি। গুরু দত্তের ওয়াইফ।

গুরু দত্ত পরে আরেক জনের লভে পরলে তিনি মাত্রাতিরিত্ত মদ্যপান শুরু করেন। একসময় এই কারণেই মারা যান। তাকে আবার পছন্দ করতেন দেব আনন্দ। তাদের মধ্যে অনেক ঝামেলা ছিল। এই সিনেমাটার নাম বাজি।

অনেক সোন্দর। বাজি নামে আমীর খানেরও একটা সিনেমা আছে। বাড়ির সুপারি , নারকেল , চাল বিক্রি করে এলাকার সিনেমা হলে বুঝ হবার পর থেকে এলাকা ছাড়া হবার আগে পর্যন্ত প্রত্যেকটি সিনেমা দেখা ও খুপরি ঘরে পাঁচ টাকা করে টিকিট কেটে ছোট বেলা থেকে বছরের পর বছর ভিসিআরে হিন্দি ফিল্ম দেখার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন চিন্তিতস্বরে বললেন, এই নায়িকার নাম বোধ হয় গীতা বালি। গানটা গীতা দত্তেরই। আর গীতা দত্তের বাড়ি বাংলাদেশেই।

নিশিরাত বাঁকা চাঁদ আকাশে গানটাতো তার! অনেক গান আছে তার বিখ্যাত। হরেক রকম তথ্যে জটিল গিট্টু লেগে গেল। কোন কথাই সঠিক মনে হলো না এক পর্যায়ে আর। তার চেয়ে গানটার অর্থ বলো এতো ভালো লাগছে কেন ! ওরা যা বললো , গানের মানে হলো , ভাগ্য পছন্দ না হলে নিজেই ভাগ্য গড়ে নাও। কোন আশা না থাকলে তাই নিয়ে বাজি ধরো।

মাঝ পথে নৌকা ভেঙ্গে গেলে সেখান থেকেই যাত্রা করো, পেছনের কিছু মনে রাখার দরকার নেই। এরকমই কী কী কথা। কথাগুলোওতো সুন্দর মনে হলো ! অদ্ভুত জগত ও জীবন ছিল তার। তিনি ১৯৩০ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার এক ধণাঢ্য জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। পরে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে মুম্বাইয়ের প্রথম সাড়ির প্লেব্যাক সিঙ্গার ছিলেন তিনি ।

গান বিষয়ে পুরোপুরি অজ্ঞ আমি তার সম্পর্কে এতোদিন কিছু জানতাম না এই জন্য খুব ভালো লাগছে। খুব দুঃসময়ে তার সৃষ্টি আমাকে কিছুটা হলেও আশ্রয় দিল । গীতা দত্ত আর গীতা বালির কাছে খুব কৃতজ্ঞ লাগছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম তার গাওয়া গানের এ্যালবাম বড় সব দোকানেই পাওয়া যায়। ভাল লাগছে জোগাড় করা যাবে যে কোন সময়।

উইকিপিডিয়ায় প্রথমআলোর একটি লেখা বাজীর গানটির কথা গীতার উপর একটি সাইট গীতার উপর জিও টিভির সুন্দর একটা রিপোর্ট

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।