আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোজাফ্ফর আহমদের ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আমি সত্য জানতে চাই বাংলাদেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোজাফ্ফর আহমদ। নিরহংকার সদালাপী দক্ষ সংগঠক মোজাফ্ফর আহমদ ২০১২ সালের আজকের এইদিনে মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুদিনে তার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা । মোজাফ্ফর আহমদ ১৯৩৬ সালের ২৭ মার্চ কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন । তাঁর বাবার নাম নাজির আহমেদ এবং মায়ের নাম জাহানারা বেগম।

৫ ভাই ২ বোনের তার অবস্থান ছিলো ২য়। তাঁর বাবা নাজির আহমেদ বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে ছিলেন। মোজাফ্ফর আহমদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় 'মঠবাড়িয়া কে এম লতিফ ইনস্টিটিউশন' থেকে। ১৯৫০ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক এবং ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে তিনি অনার্স এবং ১৯৫৬ সালে মাস্টার্স করেন।

মোজাফ্ফর আহমদ অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৪০ বছরেরও বেশি সময়। হরগঙ্গা কলেজে স্বল্প সময়ের জন্য অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন মোজাফফর আহমদ। পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালে পিএইচডি করতে যাওয়ার আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র মোজাফ্ফর আহমদ ১৯৬৫ সালে আমেরিকার শিকাগো ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী বব লুকাস তাঁর সহপাঠী ছিলেন।

পিএইচডি শেষ করে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যোগদান করলেও কিছুদিন পর পদত্যাগ করেন। এরপর কিছুদিন করাচিতে ইউনাইটেড ব্যাংকে কাজ করে ঢাকায় ফিরে আসেন। যোগ দেন ইপিআইডিসিতে। ১৯৬৬ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মোজাফফর আহমদ। তাঁর সহধর্মিণী অধ্যাপিকা রওশন জাহান।

রওশন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। সন্তানদের দেখাশোনা করতে তিনি চাকরী ছেড়ে দেন। উইমেন ফর উইমেন এর সক্রিয় সদস্য ও সাবেক সভাপতিসহ আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মহিলা পরিষদ, গণসাক্ষরতা অভিযানের সক্রিয় সদস্যা তিনি। তাঁদের বড় ছেলে সিরাজুল আমিন আহমদ, মমতাজুল করিম ও মেয়ে সোহেলা নাজনীন। (স্বজনদের সাথে মোজাফ্ফর আহমদ) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দেন ১৯৭২ সালে ।

১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে পরিকল্পনা কমিশন ছেড়ে দেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) যোগদান করেন অধ্যাপক হিসেবে। দীর্ঘ ৩০ বছর এখানে অধ্যাপনা করে ২০০৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। মোজাফফর আহমদের লেখালেখির শুরু কবিতা, গল্প দিয়ে। এরপর অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষা, নির্বাচন, গণতন্ত্র এগুলো নিয়েও লিখেছেন।

তাঁর লেখা ৪শ প্রবন্ধ ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন প্রকাশনায়। এছাড়াও রয়েছে ২০০ বুক রিভিউ, আছে শ'খানেক অন্যদের বইয়ের সমালোচনা। দেশ-বিদেশে তাঁর একাধিক বই ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি কাজ করেছেন ইউনেসকোসহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে। মাঝখানে ১৯৭৯সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত পড়িয়েছেন বোস্টন ইউনিভার্সিটির ইকোনমিকস্ ডিপার্টমেন্টে।

একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে। (আত্মীয় স্বজন পরিবেষ্ঠিত অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ) দেশব্যাপী সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিক সংগঠন সুজন-এর সভাপতি হিসেবে কাজ করেছেন। টিআইবি’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। তিনি যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, বাপার সাথে। পরিবেশ আন্দোলনে তরুণ সমাজকে উৎসাহ দিতে ‘পরিবেশ অলিম্পিয়াড’ করার স্বপ্ন দেখেছিলেন; যা বাপা’র উদ্যোগে দেশব্যাপী এখন সফলভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমিরেটাস ড. মোজাফ্ফর আহমদ শিক্ষায় অসামান্য অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদকে সম্মানিত হন ২০০৮ সালে। মোজাফ্ফর আহমদ খ্যাতি বা ঐশ্বর্যের পেছনে ছোটেননি। তিনি ছিলেন লাজুক স্বভাবের অমায়িক মানুষ। তাঁর অনেক সহকর্মী বিদেশে চলে গেছেন; কিন্তু তিনি নিশ্চিন্ত-নিরাপদ প্রবাসজীবনের আরাম-আয়েশের লোভ ত্যাগ করে রয়ে গেছেন বাংলাদেশে। জীবনযাপনে পরিমিতির অনুশীলন তাঁকে রক্ষা করেছে অনৈতিকতার দূষণ থেকে; এবং এটাই তাঁকে শক্তি-সাহস জুগিয়েছে ক্ষমতাবানদের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর।

দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বদানকারী দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ ২০১২ সালের আজকের এইদিনে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মে' ২১ তারিখ রাতে অসুস্থতা অনুভব করলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে গেছেন।

নিরহংকার সদালাপী অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.