আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চরিত্রহীন পাত্র, প্রতারক পুরুষ ও প্রবাসী ব্যাচেলর ছোকরা

.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা

দেশে একটা জীবন ছিল। মতির দোকানের চা। ওই পিচ্চি, দুটো বেনসন দিয়ে যা। অথবা চলন্ত রিকশা থেকে আমাকে দেখেই, "এই সাঈফ! রিক্সা, থামো থামো!" তারপর বন্ধুর সাথে কথাচ্ছলে পরোটা ডিম ভাজার রেস্তোরায় ঢুকে খাওয়ার ফাকে এক চক্কর আড্ডা। অথবা বাস থেকে নেমেই ফুটপাতে ঝাপি নিয়ে বসা কলাওয়ালার সাথে দাম দর করা।

রান্না করতে ইচ্ছে না করলে কাছের কোন সহকর্মী, সহপাঠীকে ফোন করে হোটেলে গিয়ে চারটা ডাল, ভাত খিচুড়ি খেয়ে নিবার স্বাধীনতা ছিল। এমনকি রিক্সাওয়ালার সাথে এক প্রস্থ গল্প, বাসে ট্রেনে পাশে বসা লোকটির সাথেও আড্ডা জমিয়ে কথা দু'টো কথা বলার লোকের অভাব ছিলনা। প্রবাসটা সেখানে নির্বাসিত দ্বীপে বসবাস করার মত। ফ্রিজ ভর্তি খাবার, আরাম দায়ক বসতভিটা সবই আছে। কিন্তু দেখা যাবে সপ্তাহান্তের আস্ত দু'টো দিন কারো সাথে কোন কথা না বলে, কারো সাথে কোন দেখা না হয়ে ঘরে শুয়ে বসে নাটক দেখে চলে গেল।

ঘোরতর অলসতার কারণে কিন্তু পেটকে দীর্ঘক্ষণ ভার রাখতে শুকনো বিস্বাদ (হোল হুইট,আস্ত গমের) রুটি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। অথবা ইফতার করে প্রচন্ড ক্লান্তির কারণে এক ঘুমে সকালের আলো। উৎসবের মাইক, সাইরেন শব্দের অভাবের চেয়ে অভিমান করে টানা ২৪ ঘন্টা উপবাস থাকার ব্যাপার গুলোই নাড়া দেয় বেশি। ব্যক্তিগতভাবে প্রচন্ড স্বার্থপর ও অন্তর্মুখী হবার কারণে এ ধরনের জীবনযাপনে আপত্তি নেই, বরং বেশ আয়েশের সাথেই অভ্যস্ত। কিন্তু দেশে সারা জীবন আতলামি করে আসা মোটা ফ্রেমের চশমার নরম-শরম ছেলেটিকেও দেখি কীসের জন্য যেন উশখুশ করছে।

দেশে মা মানা করে দিয়েছে বলে পর্ক, মদ, বার এসবের ত্রি সীমানায় সে ঢুকবেনা। কিন্তু সপ্তাহে ৫ দিন গাধার মত খাটুনির পর বারে গিয়ে মদে গলা ভিজিয়ে না নাচলে যে পরের সপ্তাহে কাজ করার স্ফূর্তি আসেনা। বা নিজেকে লোকজ সংস্কৃতির সাথে মিলাতে না পারার কারণে সংস্কৃতিগত দূরত্বের কারণে এতগুলো মানুষের সামনে বিচ্ছিন্ন প্রজাতির এলিয়েন ভেবে কষ্ট পেতে থাকে। তাই সবুজ তার মোটা ফ্রেমের চশমার ফাক দিয়ে সঙ্গিনী পাবার স্বপ্ন দেখতো, যেটা সে আগে বই-পুস্তকের ভাজের বাইরে আনেনি। পিএইচডি কোয়ালিফাইং পাশ দিয়েই বাড়ি যায়, বাবা-মা নাকি বিশেষ সূত্র মারফর পরিচিত কনে দেখাবে।

আজ থেকে ১৫ বছর আগেও প্রবাসী পাত্র ব্যাপারে একটা অন্ধ ভক্তি ছিল। পিয়াজ কাটা, মদের ছিপি লাগানো, থালা বাটি ধোয়া, টেবিল মোছা চাকুরি করে নিজের পড়ালেখার পয়সা জুগিয়েছে ছেলেরা। দেশে কর্ম খালী নেই, তাই প্রবাসী বলে যা পেত তাতেই নিজের মেয়েকে গছিয়ে দিতে আপত্তি করেনি অভিভাবককূল। সবুজের মত কলুর বদল গুলো এক কালে দেশে গেলে পাত্রীর বাবা-মা পাত্র্রীর "স্থানীয় গোপন সম্পর্ক" অগ্রাহ্য করে মেয়ের নাকে দড়ি দিয়ে টেনে হেচড়ে লম্পট প্রবাসী ছোকরার গ্রাসের নাগালে বসিয়ে দিত। আশ্চর্যজনকভাবে, সেই সব কামলা খাটা ছোকরার দল ডিগ্রি নিয়ে এখন চাকুরি করে গাড়ি বাড়ি হাকায়, তাদের এক এক জনের বিশাল দশা, প্রতিষ্ঠিত।

নব্বইয়ের শেষের দিকে দেশে রীতিমতো কর্পোরেট বিপ্লব শুরু হল। কোন মতে ব্যাচেলর পাশ দিয়ে একটা এমবিএ ডিগ্রি চালু রেখে এক এক জন মোটা মাইনের চাকুরে, গাড়ি, ফ্ল্যাট আর বউ সংসার নিয়ে আরামে দিন কাটানো যুবকের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে লাগল। হুড়মুড় করে পড়ে যেতে লাগলো প্রবাসী ছোকরাদের দাম। ব্যাপারটা ইডেনের কেলেঙ্কারির মতই। প্রবাসী পুরুষের প্রতারণা ও চরিত্রহীনতার বেপরোয়া সংবাদের সুবাদে এখন কেউ প্রবাসী পাত্রের প্রস্তাবে নূন্যতম "খোজ-খবর" নেবার মত সময়, আগ্রহ দেখায়না।

সাবধানের মার নেই, ঝামেলা করে প্রবাসী ছোকরার "কাহিনী-চরিত" জানার চেয়ে চার পাচটা কর্পোরেট ফুল বাবুর দেখে চোখের সামনে বাগদান সেরে ফেলা যায়। ব্যাচেলর ছোকরা বাসা ভাড়া নিতে এসেছে, তাই বেশি বাক্য ব্যয় না করে, "এখন দেশেই ভাল চাকুরি আছে, প্রবাসে কেন বাপু? আমি আমার মেয়েকে বিদেশে পাঠাবোনা। অন্য জায়গা দেখো। "-বলেই সশব্দে দরজা লাগিয়ে দেন গৃহকর্তা। কোয়ালিফাইং পাশ সবুজের বেলায় ঠিক এই ঘটনাটি ঘটেছে।

ছাত্রাবস্থায় যারা পড়াশোনার সুবাদে সম্পর্ক করেছেন, তারা উচ্চশিক্ষার তাগিদে কোন প্রকার বিবাদ ছাড়াই দু'জন/একজনের ফান্ডে বিদেশে পড়তে চলে যান। কিন্তু সবুজের কপালে এমনটা জুটেনি। তার উপর, সবুজ এখনও "ছাত্র", পেশা হিসেবে পড়াশোনার কথাই লেখা থাকবে, এটা আবার মোটা মাইনের চাকুরি করা পাত্রের ভিড়ে ভীষণ নিচু দরের পেশা। ভাবখানা এমন, ছোকরা লেখাপড়াই শেষ করেনি, এখনই এসব কী? লেখাপড়া শেষ করো, চাকুরি ধরো , চাল-চুলা বানাও, তারপরে না হয়ে আমার মেয়েকে পুষবে, এর আগে কী! এসব কথার ভাল যুক্তি আছে, পড়াশোনা বাবদ যে ফান্ড পায় সেটি প্রায়শই ঝুকিপূর্ণ থাকে। ফান্ড চলে যেতে পারে, আবার যে ফান্ড পায় তা সাধারণ চাকুরিজীবীদের ১/৩ ভাগ।

নিজের হয়ত চলে মাস শেষে ভালই বাচে, কিন্তু ঘাড়ের উপর আরেকজন চেপে বসলে সর্বশান্ত হবার উপক্রম হয়। পুরুষের বিয়ে করার যোগ্যতাটা এখনও বউ খাওয়ানো, চাল-চুলার মালিকানার উপর নির্ভরশীল। বিদেশে "ছাত্র", দু'পয়সার ঝুকিপূর্ণ ফান্ড নিয়ে পড়ালেখা করে, ভিন দেশে অর্থ-বিদ্যা সব হারিয়ে ছোকরা যেকোন সময় পথে বসতে পারে। তাই একেবারে বিদেশে চাকুরির সনদ দেখাতে হবে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলে যদি দেখা যায়, সামান্য ইন্ট্রাক্টর বা ল্যাব টেকনিশিয়ান, ঢাবির কলা ভবনের ছাত্রী প্রতারিত হয়ে গলায় ফাস লাগায়।

দেশে মোবাইল বিপ্লবের যুগে মেয়েরা এখন যথেষ্ট স্মার্ট (বুদ্ধি-মতি), যোগাযোগের উপায় জানে। নেহাৎ মতিভ্রম না হলে কেউ প্রবাসী লম্পট,প্রতারক ছোকরার সাথে সম্পর্কে জড়ায়না, হাতের কাছে চাল-চুলার যোগ্যতা বুঝে খুব দ্রুত একজনের সাথে গাটছড়া বেধে ফেলে। তার উপর, প্রবাসী ছাত্র ছোকরা কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের কর্মজীবীরা পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়ে সহধর্মিনীকে দেশে ফেলে আসার মত ঘৃণ্য কাজ করে (পাত্রের সাময়িক অপারগতার দায় কেউ নিতে রাজি নয়) পাল্টা কেলেঙ্কারির রসদ জোগায়। আবার বিদেশে নিয়ে গিয়ে ঘরে বসিয়ে রেখে খাইয়ে পরিয়ে নাকি "দাসীগিরি" করিয়ে নেয়, এ মর্মে জনৈক ব্লগার আমাদের নিশ্চিত করলেন। আবার বাসায় বসে থাকতে না চাইলে, অড জব (কী ঘৃণ্য ব্যাপার!) করিয়ে নেয়।

মেয়ে তো দেশে থাকতে একটা এনজিও তে সসম্মানে ভাল বেতনের চাকুরি করতো, প্রবাসে গিয়ে কী অধঃপতন, দাসীগিরি! তাই রিক্সার টুনটুন আওয়াজ, সুখ নিমগ্ন কর্পোরেট দাসত্ব, মায়ের হাতের ভাত, বন্ধুর আড্ডা ফেলে যেসব অর্বাচীনের দল দু'পয়সার উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গতর খাটেন, নিজের বিরুদ্ধ রুচি, সংস্কৃতি, ও পরিবেশে বাঁচার সাহস দেখান---- তাদের হাতে নিজের ভগ্নি/কন্যাকে তুলে দিবার মত ভুল যেন কেউ না করে। দেশে সুখ থাকতে ভূতের কিল খেতে যারা বিদেশগামী হন, তাদের জন্য রাস্তা ঘাটে শেতাঙ্গিনী কুলটার অভাব নেই, সপ্তাহান্তে। বিদেশের চলনসই ঘন ঘন ডিভোর্স, লিভ টুগেদার, বারের সংস্কৃতির সাথে একাত্ম হতেই তো এই পোড়ামুখো ছোকরা গুলো ভিনদেশে গিয়েছে। নামের সামনে "ড." লিখবার মত পড়াশোনার শেষ করলেও ততদিনে "বৃদ্ধ ব্যাচেলর" বিয়ে করার মত বিবাহ যোগ্য "বৃদ্ধা ব্যাচেলর" অবশিষ্ট থাকবেনা। বরঞ্চ বয়সের ফারাকের কারণে পরকীয়া জাতীয় রুচিবোধ জন্মাবে।

সে ক্ষেত্রে অড জব আর ছাত্রত্বের অভিশাপমুক্ত হয়ে প্রবাসে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ৩৫ বা তদুর্ধ্ব বয়সী বৃদ্ধ ব্যাচেলরদের পাখি ভাইয়ের শরণাপন্ন হয়ে শর্ট ডিভোর্সী বা সন্তান সমেত বিধবা মহিলা খোজা ছাড়া গতি নেই। এতে করে এককালীন "নারীবাদী" পূণ্য করার সুবাদে বুড়াকালে বিয়ে করার "ভিম-রতি হেতু কলঙ্কও" মোচন হবে। কারো ব্যক্তিগত রুচি, পরিসরে আঘাত লাগলে ক্ষমাপ্রার্থী। সেজন্য মাইনাস বাটন চেপে খানিকটা ঘিন্না মুক্ত হতে পারেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.