আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবনের কিছুক্ষণ

মাকড়সা সম্পর্কে সবাই জানে......

HSC পরীক্ষার পর সারাজীবনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আগমন আমার ঢাকা শহরে, রাজধানী ঢাকা, যার সবকিছুই আমার কাছে অচেনা, অজানা। না, লালিত স্বপ্নটা তবে ঢাকা আসা নয়, ঢাকাতে এসে মেডিকেল ভর্তির কোচিং করে ভাল কোনো সরকারী মেডিকেল কলেজ়ে চান্স পাওয়াটাই সেই স্বপ্ন। হলাম ভর্তি, কোন এক সর্বজনবিদিত, স্বনামধন্য কোচিং এ, ফার্মগেটে। থাকতাম মামার বাসায়, মোহাম্মদপুর। মামা ব্যাচেলর, চাকরিজীবী, সাথে আরও কয়েকটা (!) ওইরকম।

বিকাল ৩ টায় আমার ক্লাস, ২ ঘন্টা করে। যেতাম মোহাম্মদপুর থেকে ঠেলতে ঠেলতে, ফিরতাম ফার্মগেট থেকে ঝুলতে ঝুলতে। সারাদিন “কেউ কোথাও নেই”, আমি যেতাম ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে। অথবা, আমাদের একমাত্র Computer এ কোন এক থ্রিলার সিনেমার জগতে। প্রথম দেড়মাস এভাবেই কাটলো।

তবে হ্যাঁ, পড়ি না পড়ি, বাবা দিনে যতবারই ফোন করুক না কেন, প্রতিবারেই বলি- “পড়ছি তো” । মামার বদলী আমাকে মেসে উঠতে বাধ্য করলো। উঠলাম মেসে। পান্থপথেই, বসুন্ধরা সিটির ঠিক পিছনেই। উঠেই কয়েকটা চিরচেনা মুখের অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি।

একজন স্কুলের জানে জিগার দোস্ত, বাকি দুইজন কলেজ়ের। প্রথম দিনেই মামা সবকিছু আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন, সেই যে গেলেন আর ফিরে এলেন না। তাতে অবশ্য আমারই সুবিধা। মাঝে মাঝেই বসুন্ধরা সিটিতে গমন, উদ্দ্যেশ্য কেনাকাটা নয়, গরু(!) দেখা। আর পড়াশোনা তো চলছেই আপন গতিতে, নাকি মন্থর হয়ে আছে, বুঝতেই পারলাম না! আরে ধ্যাৎ, এত বোঝাবুঝির সময় কোথায়?????? আমার স্কুলজীবনের বন্ধুই আমার রুমমেট।

কিন্তু রাতে ও কখনোই রুমে থাকত না। ছাদে থাকত আর সারারাত মোবাইলে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করত। অধিকাংশ সময়েই সকালে রুমে ফিরত। আমি ভেবে পাইনা, একটা মানুষ সারারাত মোবাইলে এত কিভাবে কথা বলে, আর কি-ই বা বলে(?)। কিন্তু না, রহস্যটা আমার কাছে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি, উদ্ধার করে ফেলেছিলাম, সেই ক্লাস ৮ থেকে “মাসুদ রানা” পড়ি, উদ্ধার করতে না পারলে মান সম্মানের ব্যাপার।

কিভাবে? হ্যাঁ, সেটাই হল জ্বলন্ত প্রশ্ন, মানে “Burning Question” আর কি(!)। পরিচিত এক আপুর মাধ্যমে পরিচিত হলাম ঐ তার(!) সাথে, যাকে প্রথম ও শেষ দেখেছিলাম ক্লাস নাইন এই, আপুর বিয়ের অনুষ্ঠানে। ফোন নম্বর দিলেন আপু, দিলাম ফোন, বললাম কথা। প্রথম দিন তো ভালোভাবেই কথা বললো, কিন্তু দ্বিতীয় দিন থেকে কথাই বলতে চাইলো না। আমি ভাবলাম, এ আবার কেমন মেয়েরে বাবা! তখন কি আর জানতাম, সবাই নাকি শুরুতে এমনই করে, J ।

এখন আমি বুঝলাম, রাত কিভাবে কথা বলতে বলতে পার হয়। শেষ পর্যন্ত দেখাও করলাম, নীরবে। নীরবে মানে গোপনে নয়, ওটা ওর মেসের নাম “নীরব ছাত্রী হোস্টেল”। জানিনা সেটা এখন কোথায় আছে, কেমন আছে? J কিন্তু এটা তো আর আসল অধ্যায় না। আসল টা হল, চান্স পেতে হবে, মেডিকেল এ।

দেখতে দেখতেই একদিন ভর্তি পরীক্ষার তারিখ দিলো। দিলাম পরীক্ষা সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে, যা আছে কপালে! বৃত্ত ভরাট করতে কৃপণতা? একদমই করি নাই। মনের মাধুরী মিশিয়ে ১০০ টায় পূরণ করে দিলাম। বাইরে এসে দিব্যি বলে দিলাম চান্স তো হবেই। তবু যেন কেমন কেমন একটা ভয় করতে লাগল, মনের মধ্যে।

এই ভয়টা আগে কখনোই করেনাই…। অতঃপর রেজাল্ট দিলো, চান্স হল না। এরপর কোন university এর পরীক্ষার খাতার বৃত্তই আমার কলমের খোঁচা থেকে রেহাই পাইনি, রেহাই দেয়নি আমাকেও। শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর এ Microbiology তে টিকলাম, ভর্তিও হলাম। কিন্তু ক্লাস না করলে ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে, দিলাম করে বাতিল কোনো Hesitation ছাড়াই।

খোজ খবর নিয়ে দেখলাম, বন্ধুদের মধ্যে তখনো অনেকেই বাকি, মানে আমার মতো অবস্থা আর কি! তখনো একটা বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বাকি ছিলো। সবাই মিলে সেটা বেশ Seriously দেয়ার চিন্তা করলাম, দিলাম ও তাই। তিনটা বিষয়ে এ পরীক্ষা দিয়ে তিনটাতেই চান্স পেলাম, ভর্তি হলাম আবার সেই Microbiology তে, কারণ একটাই, ক্লাস না করলেও ভর্তি বাতিল হবে না। তারপর ভর্তি হলাম আবার সেই কোচিং এ, যেটার শেষ পরিনতি আমাদের সবার প্রিয়, সবার গর্ব ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ। আর তারপর তো চলছেই… শেষ এই এক বছরটাকে( ১ম থেকে ২য় বার) আমি কখনোই জীবনের ক্ষতির জায়গাটাতে ফেলি না।

কারন, তখন বুঝতে শিখেছি জীবন কি জিনিস, কে ভালো কে মন্দ, শিখেছি কঠিন বাস্তবতা; চিনতে শিখেছি চিরচেনা মানুষের অচেনা রূপ। জীবন কে সুন্দর করে সাজাতে গেলে যেগুলো জানা বড্ড বেশিই দরকার। এই সময়টা তাই আমার কাছে “The Time of Purification”। MY LIFE TIME PURIFIER."

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.