আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রশাসনের দলবাজ কর্মকর্তারা মন্ত্রীদের মানছেন না : বিমান ও পর্যটন সচিবকে সতর্ক করে মন্ত্রীর তিন চিঠি+ছাত্রলীগের হামলা : সোনাইমুড়ীতে প্রতিমন্ত্রীর সভা পণ্ড

শিক্ষাই হল জাতি

প্রশাসনের দলবাজ কর্মকর্তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। সার্ভিস রুলস মানছেন না তারা। মন্ত্রীর কথাও শুনছেন না। মন্ত্রীকে উপেক্ষা করে সংবাদ মাধ্যমে মনগড়া তথ্য সরবরাহ করায় সরকারকে প্রায়ই বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। বারবার সতর্ক করেও এসব কর্মকর্তাকে সামলাতে পারছেন না মন্ত্রীরা।

সরকারের ভারপ্রাপ্ত এক সচিবকে গত এক সপ্তাহে তিনবার চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছেন মন্ত্রী। এর আগে মৌখিকভাবে কয়েক দফা সতর্ক করার পরও সাবধান না হওয়ায় মন্ত্রী তাকে চিঠি লিখে সতর্ক করতে বাধ্য হন। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শফিক আলম মেহেদীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মন্ত্রী। তিনি মাঝেমধ্যে এমন সব ঘোষণা দেন সংবাদ মাধ্যমে, যা তার দেয়া সমীচীন নয়। মন্ত্রীকে না জানিয়ে অনেক স্পর্শকাতর বিষয়েও তিনি ঘোষণা দিয়ে দেন।

অথচ পরবর্তীতে ওই বিষয়ে মন্ত্রীকে জবাবদিহি করতে হয়। এ সচিবের দেয়া অধিকাংশ ঘোষণা পরবর্তীতে ভুল প্রমাণ হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২২ এপ্রিল শফিক আলম মেহেদী ময়মনসিংহ থেকে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘ইতোমধ্যে হযরত শাহজালাল (র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ওই বিমানবন্দরটি আর বেশি দিন আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। ’ সচিবের এ ধরনের মনগড়া বক্তব্য বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রচারের পর বেকায়দায় পড়ে মন্ত্রণালয় ও সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্মকর্তারা।

বিভিন্ন মহল থেকে এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে মন্ত্রীকে ফোন করা হয়। মন্ত্রী সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্মকর্তাদের কাছে আন্তর্জাতিক এ ঘোষণা সম্পর্কে জানতে চান। সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্মকর্তারা এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাদের জানা নেই বলে মন্ত্রীকে জানান। কোত্থেকে এ তথ্য দিলেন তার কোনো সঠিক জবাবও দিতে পারেননি প্রচারমুখী সচিব মেহেদী। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী জিএম কাদের এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে মনগড়া বক্তব্য দেয়ার জন্য সচিবকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে দেন।

গত ২৬ এপ্রিল সচিবকে লেখা চিঠিতে জিএম কাদের বলেন, ‘সরকারের সচিবের বক্তব্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে সরকারি বক্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয়। গত ২৩ এপ্রিল দৈনিক মানবজমিন ও আমাদের সময়ে আপনার বরাত দিয়ে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, বর্তমান বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে এবং এ বিমানবন্দরটি আর বেশি দিন আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। আমার জানা মতে বিষয়টি সত্য নয়। সরকারি ভাষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে বিধায় ভবিষ্যতে এ ধরনের নেতিবাচক সংবাদ বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষতিকারক হবে ও স্বার্থান্বেষী মহল এতে ফায়দা নিতে পারে। অনতিবিলম্বে এ বিষয়ে সঠিক বক্তব্য সংবাদপত্রে প্রেরণ করা জরুরি।

দয়া করে ব্যবস্থা নিন। ’ এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মাথায় ২৮ এপ্রিল সচিবের বরাত দিয়ে একটি দৈনিক পত্রিকায় বিমানবন্দর সিকিউরিটি ফোর্স গঠন সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশিত হয়। ওই পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাত্কারে সচিব এর আগে যে দেশে একটি দুটি বিমান দিয়ে সারাদেশের সিডিউল রক্ষা করা হয় সেদেশে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির জন্য আলাদা বিমান ক্রয়ের মতো বেফাঁস কথা বলেন। পরের দিন তিনি আবার দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসের কাজের মেয়াদ শেষ। এ কারণে তাদের বাতিল করা হয়েছে।

তাছাড়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব উদ্যোগে স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। ’ সচিবের এ বক্তব্য পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। বিশেষ করে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সদস্যরা স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে এ ধরনের সিদ্ধান্ত কেন মন্ত্রণালয় নিলো জানতে চান মন্ত্রীর কাছে। মন্ত্রী এর কিছুই জানেন না বলে জানান তাদের। পরে মন্ত্রী পত্রিকা এনে সচিবের মনগড়া বক্তব্য দেখে মনোক্ষুণ্ন হন।

সঙ্গে সঙ্গে তিনি সচিবকে কড়া ভাষায় চিঠি লেখেন। চিঠিটি ছিল এরকম—‘সচিব, এসব বিষয়ে দয়া করে হঠাত্ সংবাদ মাধ্যমে না যাওয়ার অনুরোধ করছি। পরবর্তীতে আমার সঙ্গে আলাপ না করে সংবাদ প্রকাশ করবেন না। ’ জানা যায়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসের স্ক্যানিং মেশিন দিয়ে বর্তমানে কার্গো ভিলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ১/১১-এর পর ইউরোপ ও আমেরিকাগামী যে কোনো ফ্ল্যাইটের জন্য কার্গো স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক করা হয়।

সে সময় কার্গো ভিলেজের স্ক্যানিং কাজে নিয়োগ করা হয় অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসকে। তখন থেকে কোম্পানিটি আধুনিক স্ক্যানিং মেশিন ব্যবহার করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ২৪ মার্চ স্ক্যানিং মেশিন কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব উদ্যোগে স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে নাকি দুর্নীতি বাড়বে এসব নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে ব্যাপক আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, স্ক্যানিং মেশিন এ মুহূর্তে কেনা সম্ভব নয়। এটি ক্রয় করে স্থাপনের পর সার্ভিস পেতে অন্তত ৮ মাস লেগে যাবে।

কাজেই হুট করে কার্গো ভিলেজের স্ক্যানিং কাজের জন্য নিয়োগ পাওয়া অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসকে বিদায় করে দেয়া ঠিক হয়নি। সংসদীয় কমিটি স্ক্যানিং কার্যক্রম যাতে বন্ধ হয়ে না যায় সেজন্য অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসকে দিয়ে আপাতত কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সচিব সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই হঠাত্ পত্রিকায় সাক্ষাত্কার দিয়ে বলে বসেন, অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসের কাজের মেয়াদ শেষ। এ কারণে তাদের বাতিল করা হয়েছে। শুধু বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নয়, অন্য যেসব মন্ত্রণালয়ে জনতার মঞ্চের কর্মকর্তা রয়েছেন সেখানেও নিয়ম-নীতির ধার-ধারছেন না তারা।

ক্ষেত্রবিশেষে মন্ত্রীর চেয়েও জনতার মঞ্চের আমলারা ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন বেশি। সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবু আলম শহিদ খানের দাপটে ওই মন্ত্রণালয়ের সবাই থাকেন তটস্থ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও প্রাক্তন কেবিনেট সেক্রেটারি ড. আকবর আলি খান এ প্রসঙ্গে আমার দেশকে বলেন, মন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয়ে সচিব মিডিয়ায় বক্তব্য দিতে পারেন না। কারণ, মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হচ্ছেন মন্ত্রী। মন্ত্রীর কথা অমান্য করে কোনো সচিব মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়ে থাকলে অবশ্যই তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন।

-----------সোনাইমুড়ীতে ছাত্রলীগের হামলায় পণ্ড হয়ে গেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর মতবিনিময় সভা। অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ সভামঞ্চে হামলা চালায়। এতে মঞ্চটি তছনছ হয়ে যায়। এছাড়া কলেজ শিক্ষকসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। শনিবারের এ ঘটনায় পুলিশ এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে।

শনিবার উপজেলার জয়াগ মহাবিদ্যালয়ে প্রতিমন্ত্রী ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে জয়াগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও জনপ্রতিনিধিদের মতবিনিময় করার কথা ছিল। সভা শুরুর আধাঘণ্টা আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আকবর পলাশের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী সভা মঞ্চে হামলা চালায়। এতে কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক জাকির হোসেনসহ পাঁচজন আহত হন। এ সময় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিসহ সাজানো মঞ্চ তছনছ হয়ে যায়। সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রলীগ নেতা পলাশকে গ্রেফতার করে।

স্থগিত করা হয় মতবিনিময় সভা। এদিকে জয়াগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল কাশেম মন্ত্রীর সভামঞ্চ ভাংচুরের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা পলাশ জড়িত নয় বলে দাবি করেন। প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করা না হলে জয়াগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতারা একযোগে পদত্যাগ করবেন বলেও তিনি হুমকি দেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.