আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রশাসনের সোর্স সন্ত্রাস

দক্ষিন যাত্রাবাড়িতে স্ত্রী রেখাকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছে বোরহান (৪০)। তার পেশা কি, সে কি করে তা এলাকার কেউ না জানলেও তার একটি পরিচয় সকলেই জানে-‘বোরহান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স’। তবে সে পুলিশ নাকি র‌্যাবের সোর্স এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন ধারনা নেই এলাকাবাসীর। এই সোর্স হিসেবে কাজ করেই তার সংসার চলে। মূলত এটাই তার পেশা।

তবে এর পাশাপাশি ডাকাতি, ব্ল্যাক মেইলসহ নানাবিধ অপরাধের সাথেও রয়েছে তার সম্পৃক্ততা। তার শ্বাশুরী রাজধানীর সিটিপল্লীর মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি জাল টাকাসহ আটক তার বন্ধু সাজ্জাদ জানায়, বোরহানই তার শ্বাশুরীর মাদক ব্যবসাসার দেখভাল করে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার অপরাধের সাথেও জড়িত বোরহান। এই বোরহানের রয়েছে ছোট একটা ডাকাত দল।

ডাকাতির কাজে সে ব্যবহার করে তার স্ত্রী রেখাকেও। গত সোমবার রাতে যাত্রবাড়িতে ডাকাতি করে লুন্ঠিত মালামালসহ পালানোর সময় স্ত্রী ও দলসহ জনতার হাতে ধরা পরে সে। সূত্র জানায়, বোরহান যাত্রাবাড়ি, খিলগাঁও ও সবুজবাগ থানা এলকায় র‌্যাবের সোর্স হিসিবে কাজ করছে। সিটি পল্লীতে তার শ্বাশুরীর মাদক ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই সে সোর্সের কাজ করছে। শুধু এক বোরহানই নয় র‌্যাব-পুলিশের সোর্সদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ব্লাকমেইলসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ।

অনেক ক্ষেত্রে এলাকায় এসব সোর্সদের দাপট পুলিশের চাইতেও বেশী। তথ্যের জন্য সোর্সদের উপর নির্ভর করে থাকায় অনেক সময় তাদের অনৈতিক কর্মকান্ডের খবর জানার পরও দেখেও না দেখে থাকতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। কিন্তু দিন দিন এসব সোর্সদের উৎপাত এতটাই প্রকট আকার ধারন করছে যে এলাকার নিরীহ মানুষ চরমভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছে এদের হাতে। পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি এলাকার সন্ত্রাসী, মাদক বিক্রেতাসহ অপরাধী চক্রের সাথেও এদের রয়েছে সখ্যতা। অপরাধী ধরতে পুলিশ অভিযানের অনেক তথ্যই অনেক ক্ষেত্রে এদের মাধ্যমে পেয়ে যায় অপরাধীরা।

ফলে ব্যার্থ হয় পুলিশী অভিযান। অনেক সময় এদের দ্বারা হয়রানীর শিকার হয় সাধারন মানুষও। এলাকায় দুটি পরিবার বা পক্ষের মধ্যে বিরোধের ফায়দা লুটে এরা। বিবাদমান এক পক্ষ অন্য পক্ষকে হয়রানী করতে ব্যবহার করে এসব সোর্সদের। এ ক্ষেত্রে সোর্সরা এক পক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আনিশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা হয়রানী করে অন্যপক্ষকে।

এ ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা লুটে নেয় তারা। আবার আটককৃত অপরাধীদের পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনতে মধ্যস্থতার ভূমিকাও পালন করে সোর্সরা। শুধু নিজেরাই নয় অনেক ক্ষেত্রে নিজ পরিবারের সদস্যদেরও নিজেদের অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত করে সোর্সরা। গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে জনসাধারনের হাতে ধরা পড়ে সোর্স দম্পতি বোরহান-রেখা। কিন্তু ডাকাতি হলেও এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ি ধানায় চুরির মামলা দায়ের করা হয়।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, ৩০/৮/এ/১ দক্ষিন যাত্রবাড়িতে গত সোমবার রাত ৯ টার দিকে ঘড়ের তালা ভেঙ্গে গৃহপরিচারিকাকে মারধোর করে নগদ টাকা ও স্বর্নালঙ্কার নিয়ে পালানোর সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে পুলিশের সোর্স বোরহান ও তার স্ত্রী রেখা (২৬)। গৃহকর্তা আজিজুল হক অপরাধকন্ঠকে জানান, বাড়িটি তার শ্বশুরের। ঐ বাড়ির তৃতীয় তলায় তার স্ত্রী ফারজানা আক্তার ও এক মেয়ে নিয়ে তিনি ভাড়া থাকেন। তাদের পাশ্ববর্তী অপর আরেকটি ভবনের নীচ তলায় পুলিশের সোর্স বোরহান সস্ত্রীক ভাড়া থাকেন। এলাকার সকলেই জানেন বোরহান পুলিশের সোর্স।

সে বিভিন্ন রকম অপরাধের সাথেও জড়িত। ঘটনার সময় তার স্ত্রী ঘড়ের বাইরে তালা দিয়ে বাড়ির দ্বিতীয় তলায় তার শ্বশুরের বাসায় তারাবি নামাজ পড়ছিলেন। এসময় তৃতীয় তলায় তাদের বাসায় কাজের বুয়া কাজ করছিল। বোরহান ও তার স্ত্রী ধারালো অস্ত্র নিয়ে রাত ৯ টার দিকে উপরে উঠে। ভবনের নীচ তলায় তাদের দলের অপর দুই সদস্য সোহেল ও উজ্জলকে পাহারায় রাখে।

বোরহান স্ত্রীকে নিয়ে ঘড়ের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। এসময় বুয়া তাদের চিনে ফেলে এবং বাধা দেয়। ডাকাতদল তাকে মারধর করে একটি রুমে বন্ধ করে রাখে এবং আলমারি ভেঙ্গে ৬ ভরি স্বর্নালঙ্কার ও নগদ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় বুয়ার চিৎকারে এলাকার লোকজন তাড়া করে ধরে ফেলে বারহানসহ ৪ ডাকাতকে। পরে পুলিশ এসে তাদেরকে থানায় নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ি থানার অপারেশন অফিসার মাজহার জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলা (নং-৫১, তাং-১৫/০৮/১১)। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.