আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি কাল্পনিক গল্প,তবে অনুভূতিগুলো বাস্তব

সুখের কথা বোল না আর,বুঝেছি সুখ কেবল ফাঁকি,দুঃখে আছি,আছি ভালো,দুঃখে আমি ভালো থাকি।

ব্যস্ত পৃথিবী,মানুষ ছুটছে যে যার কাজে,আর ফয়সাল স্তব্ধ হয়ে নিজের ঘরে শুয়ে আছে। তমা চলে গেছে দুই মাস হতে চলেছে,কিন্তু সারা ঘর জুড়ে তমার স্মৃতি রয়ে গেছে। ফয়সালকে এখন চিনতে কষ্ট হবে,মুখভরতি দাড়ি আর চোখ দুইটা কোটরে ঢুকে গেছে। ফয়সাল এই মুহূর্তে তাকিয়ে আছে মোবাইল ফোনটার দিকে,নাহ,তমা ফোন করবে না,এই কয়মাসে মেয়েটার ব্যাপক পরিবর্তন,ফয়সাল ৫ তা স্লিপিং পিল খেয়েছে শুনে ও তমা বিচলিত হল না!!একটা কল ব্যাক করল না!!তমা অবশ্য এমন ছিল না।

ফয়সালের ঘুম পাচ্ছে,চোখ বন্ধ করল সে,আর তখনই মনে হল সামনে তমা দাড়িয়ে বেশ আছে কঠিন একটা চেহারা নিয়ে,এই চেহারার সাথে ফয়সাল বেশ পরিচিত,রেগে গেলে তমার চেহারা এমন হয়ে যায়,ফয়সালের অসহ্য লাগে,অন্য কোন সময় হলে দাঁত কিড়মিড় করে বলত "তুমি একটা থার্ড ক্লাস মেয়ে,তোমাকে এখন দেখতে ঠিক prostitute এরমত লাগছে'। আজকে বলার সাহস আর ইচ্ছা কোনটায় হল না। তমাই যেন হঠাৎ বলে উঠলো 'তুমি যেদিন বাসা থেকে আমাকে মেরে বের করে দিয়েছিলে সেদিন আমি ১০ টা স্লীপিং পিল খেয়েছিলাম ফয়সাল,সেদিন তো তুমি আমার জন্য কোন সহানুভুতি দেখাওনি,একটা ফোন করে খবর পর্যন্ত নাওনি" 'আর লাস্ট ঈদে কি করলা,মনে আছে??১০৫ ডিগ্রী জ্বর নিয়ে তোমার অনুরধ রাখতে রিতা আপুর বাসায় গিয়েছিলাম আর আসার সময় রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে একা একা বাসায় চলে যেতে বলেছিলে!'তমা বলেই চলল। ফয়সালের রাগ উঠে গেল বরাবরের মত খোঁচা দিয়ে বলল'হ্যাঁ,আমি ভুল করেছিলাম,এখন কি করতে হবে?তোমার পা ধরে মাফ চাইতে হবে?? তমা বলল"তুমি কি এসব কথা তোমার ফামিলির সামনে বলতে পারবা??কক্ষনও না,ফল কাটার ছুরি দিয়ে তুমি আমাকে মারতে এসেছিলে সবার সামনে ,আবার অস্বীকার করে আমাকে মিথ্যুক বানিয়েছিলে'তমার গলা ধরে এলো। ফয়সাল বলে"তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ছুরি দিয়ে মারতাম?? ছুরি দিয়ে মারতে তো এসেছিলে!!পড়ে অস্বীকার করেছো।

তুমি আসলে একটা ভিতু,মেরুদণ্ডহীন কাপুরুষ। তমা বলে উঠে। নাহ,আর চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা বৃথা,ফয়সাল উঠে পরল,আজকাল কি জেগে থাকা অবস্থায় কি ঘুমে সবজায়গায় ফয়সাল তমার সাথে মনে মনে বোঝাপড়া করার চেষ্টা করছে,কিন্তু শুধু ঝগড়াই লেগে যাচ্ছে কোন সমাধানে আসা যাচ্ছে না। ফোনে ও কথা বলেছে,ফলাফল একই। ফয়সালের মা বলে দিয়েছেন ওই মেয়েকে নিয়ে সংসার করতে চাইলে আলাদা বাসা নিতে।

এখন সে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না,বুঝতে পারছে বউয়ের কাছে তার এখন কোন সম্মান নাই,বউকে মানাতে গেলে মা কে হারাতে হবে। তমার ভীষণ অস্থির লাগছে,ফয়সাল ঘুমের ওষুধ খেয়েছে,ও অনেক কষ্ট পাচ্ছে এই কথা চিন্তা করে তমা নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না। অথচ ফয়সাল কখনো নিজের বউয়ের প্রতি বিন্দুমাত্রও সম্মান দেখায়নি। তমার শাশুড়ি এত অত্যাচার করেছে কোনদিন একটু পাশে এসে দাড়ায়নি উল্টো মায়ের সাথে সাথে গলা মিলিয়েছে। ফয়সালের অনেক রাগ,ও মারাত্মক একগুয়ে আর জেদি ও ভীষণ।

সামান্য কারণে ঝগড়া,আর এরপর তমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য রাতের পর রাত বাসার বাইরে কাটানো আর তমার রাতগুলো কাটত শাশুড়ির খোঁটা খেয়ে,কাঁদতে কাঁদতে বারান্দায়। কত রাত যে তমা এভাবে কাটিয়েছে হিসাব নাই,কেউ ছিল না তমার পাশে এসে দাঁড়াবার। এই দিনগুলোর কথা তমা ভুলে ও মনে করতে চায় না। তমার এখন আবার নিজের উপর খুব রাগ লাগছে,যে মানুষটা ওকে তিলে তিলে এত কষ্ট দিল তার জন্য এখনও মনে কত মায়া!!তার সাথে ডিভোর্স হয়ে যাবে এই ভেবে তমা পাগল হয়ে যাচ্ছে আর ভাবছে ফয়সাল্কে ছাড়া ও থাকবে কিভাবে???এত এত কষ্ট পেয়েছে তার কাছ থেকে যে সুখের অল্প কিছুদিন দুঃখের মধ্যে চাপা পরে যায়। তমা আবার ভাবে ফয়সাল ওর সাথে আবার ইমসোনাল ব্ল্যাকমেইল করছে না তো?? ধুর!তমার আর কিছু ভাবতে ভালও লাগছে না,একটা চাকরির ইন্টারভিউ আছে ওইটার জন্য পড়তে হবে।

ও বুঝে গেছে আত্মসম্মানবোধের জন্য নিজের পায়ে দাঁড়ানো খুব দরকার। হঠাৎ আবার তমার মন বলল' আচ্ছা ফয়সালের সাথে যদি আমার ডিভোর্স হয়ে যায় তাহলে তো সব অন্যায় করে ও ওরা ক্ষমা পেয়ে যাচ্ছে,ওদের কি কোন শাস্তি হবে না!!!তমার মনে হাজার রকমের চিন্তা দুশ্চিন্তা আসে,কোনটা যে ঠিক আর কোনটা যে ভুল বুঝতে পারে না,মাঝে মাঝে মনে হয় ও বুঝি পাগল হয়ে যাবে। কিছুতেই তমা চিন্তা ভাবনা করা থামাতে পারে না, হঠাৎ হঠাৎ ইচ্ছা হয় বিষ খেয়ে সব জ্বালা মিটায় ফেলতে। তমার বান্ধবীর এক খালাতো বোনের কথা মনে পরল,মেয়েটা শ্বশুর বাড়ীর অত্যাচারে পাগল হয়ে গিয়েছিল। ওদের ক্লাসে এক মেয়ে ছিল সাঙ্ঘাতিক সাহসী শ্বশুরবাড়ির নামে মামলা ঠুকে দিয়েছিল,কিন্তু মামলা আর শেষ হয় না,মেয়েটা ক্লাস পরীক্ষা ঠিকমত দিতে পারত না।

মেয়েটার নাম ছিল রাবেয়া। একদিন তমা ওকে জিজ্ঞেস করেছিল'আচ্ছা রাবেয়া তোর মামলা শেষ হবে কবে রে?? 'আর বলিস না,এত ঝামেলা। ওরা আমার কাছ থেকে শুধু জানতে চায় আমাকে মেরেছে কিনা?আর শরীরে কোন দাগ দেখাতে পারব কিনা??এইগুলো ওদের জন্য প্রমাণ। শারীরিক আঘাত ওদের কাছে মূল্যবান,মানুসিক আঘাতের কোন দাম নাই তাদের কাছে"রাবেয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিল। তমা আবার ভাবে একটা মানুষের উপর মানুসিক অত্যাচার করা হচ্ছে এটা বোঝানোর জন্য কি তাকে পাগল হয়ে যেতে হবে নাকি আত্মহত্যা করতে হবে???


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.