আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেহেদির অভ্র বনাম মোস্তফার বিজয় (কপি পোষ্ট)

|শৈল্পিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি|

... .... ... ... ... ... মেহেদি সাহেব লিখেছেন যে, তিনি বিজয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমার কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন এবং আমি টাকা চেয়েছি। এটি একদম সত্য কথা। আমি টাকা কামাই করার জন্যই বিজয় আবিষ্কার করেছি। আমার মাঝে কোন মহত্ত্ব নেই। আমি দেবতা হতে চাইনি।

আমি জানি সেটি আমি হতে পারবোনা। আমি একজন সফটওয়্যার ব্যবসায়ী এবং সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশের জন্য আমি নিজে প্রানপন চেষ্টা করি। যতো বেশি দামে পারি সেই দাম দিয়ে সফটওয়্যার বেচার চেষ্টা করি। সরকার এই ব্যবসাকে উৎসাহিত করার জন্য অনেক প্রনোদনাসহ কর অবকাশ দিয়েছে। আমি সেই সুযোগও গ্রহণ করি।

বিণামূল্যে কোন সফটওয়্যার বা সেবা দেয়া হবে সেটি আমি কখনও ভাবিনা। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আমি তেমন কাজ করার কথা স্বপ্নেও দেখিনা। যদি তাই করতাম তবে কপিরাইট বা প্যাটেন্ট করতাম না। কিন্তু মেহেদি সাহেব আমার অনুমতি না পেয়ে যে কাজটি করেছেন সেটি আমার পছন্দ হয়নি। মেহেদী হাসান খানের মতে, বিজয় থেকে ইউনিবিজয় করার সময় তিনি এতে ৮টি পরিবর্তন করেছেন।

আমিও সেই পরিবর্তনগুলো দেখেছি। কিন্তু তাতেও আমার মেধাস্বত্ত্বের লঙ্ঘন হয়েছে। কারণ মূল কীবোর্ডে কোন পরিবর্তন নেই। তাছাড়া এর ফলে আমার প্যাটেন্ট অধিকারও লঙ্ঘন করা হয়েছে। অভ্র সফটওয়্যারের অন্য কোন বিষয় বা প্রেক্ষিত নিয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।

একটু আইনি বিষয়গুলো দেখনু: কপিরাইট লঙ্ঘন: “মেহদি হাসান খান বলেন, ইউনিবিজয় আর বিজয় কোনোদিনই এক কীবোর্ড লেআউট ছিলোনা, এখনো নেই। যেখানে একটা কি বা বোতামের পার্থক্য একটা আলাদা লেআউটের জন্ম দেয়, ইউনিবিজয়ের সাথে বিজয়ের অন্তত ৮টি পার্থক্য রয়েছে। ” (দৈনিক প্রথম আলো ২৩ এপ্রিল ২০১০) নীচে অভ্র কীবোর্ডটির একটি ছবি অভ্রর ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে আমাকে পাঠানো হয়েছে। আসুন দেখি এখানে আসলে কি পার্থক্য আছে। যদিও বলা হচ্ছে যে আটটি পার্থক্য রয়েছে তবুও প্রকৃত পার্থক্য কতোটা? অথবা পার্থক্য নামে আসলে চোখে কি ধুলো দেবার চেষ্টা করা হয়েছে।

এই লেআউটটিতে টিলডে বোতামে ঘঔ নামক যে বোতামটি রয়েছে সেটি নতুন। বাংলা লেখার জন্য এর কোন প্রয়োজন নেই। অভ্র ইউনিকোড নামক পদ্ধতিতে বাংলা লেখার জন্য তথাকথিত এই বোতামটি যুক্ত করেছে। আমরা বিজয়-এ সেটি ছাড়াই বাংলা লিখতে পারি। ফলে এটি কোন পার্থক্য নয়।

বাংলা কীবোর্ডের সাথে এই বোতামের কোন সম্পর্ক নেই। একেবারে ওপরের সংখ্যার সারিতে দুই সংখ্যা বোতামের শিফটে চন্দ্রবিন্দু আছে। বিজয়-এ এটি আছে একই সারির সংখ্যা ৭-এর শিফটে। অভ্রতে কপিরাইট এড়িয়ে যাবার জন্য চন্দ্রবিন্দুর বদলে ৭-এর শিফটে নেয়া হয়েছে খন্ড ত। বাংলা ভাষায় চন্দ্রবিন্দু বা খন্ড ত-এর ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে।

ত বর্ণের সাথে হসন্ত দিয়ে ৎ লেখা যায়। ফলে এটি কীবোর্ডে না থাকলেও কোন সমস্যা হয়না। ফলে এটিও কোন পার্থক্য নয়। অভ্রতে ৬-এর শিফটে আছে বিসর্গ। বাংলায় বিসর্গের ব্যবহার যে কতোটা সেটিও আমরা জানি।

কদাচিৎ এর ব্যবহার হয়। অভ্রতে বিজয়-এ ব্যাক স্লাশ নামক যে বোতামটিতে খন্ড ত ও বিসর্গ ছিলো সেখানে পেট কাটা ব ও র রাখা হয়েছে। এই দুটি বর্ণ এখন অসমিয়াতে ব্যবহৃত হয়-বাংলায় প্রচলিত নয়। এর বাইরে ইংরেজী এক্স বোতামে ও এবং ৗ চিহ্নের বদলে ো ও ৌ বসানো হয়েছে। এটি একেবারেই অদল বদল নয়।

কারণ অভ্রতে ও কার ও ঔ কার লেখার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। লক্ষ্য করুন, এছাড়া ইংরেজী অ থেকে ত পর্যন্ত কোন বোতামে কোন পরিবর্তন নেই। তবুও হিসাবের জন্য যদি অদল বদল ধরা হয় তবে ২, ৬, ৭ ও ব্যাক স্ল্যাশ বোতামের ৫টি পজিশনে তা করা হয়েছে। এগুলো বোতাম নয়-পজিশন। কম্পিউটারের প্রতিটি কীবোর্ডে ১২টি ফাংশন কী ছাড়াও নর্মাল-শিফট, জিআর-শিফট জিআর (অপশন বা শিফট অপশন) এরকম দুই শতাধিক পজিশন আছে।

এজন্যই ইলেকশন কমিশন অভ্র সফটওয়্যার দিয়ে বিজয় কীবোর্ড লেআউট ব্যবহার করতে পেরেছে। তারা তাদের ল্যাপটপে ইউএসবি পোর্ট দিয়ে ডেস্কটপ কম্পিউটারের বিজয় কীবোর্ড লেআউট মুদ্রিত কীবোর্ড যুক্ত করে এই কাজটি সম্পন্ন করেছে। অভ্র কীবোর্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, বাংলা মূল বর্ণ ৫০টির মাঝে কেবলমাত্র , ৎ, ঃ ও চন্দ্রবিন্দুর স্থান বদল করা হয়েছে। দেখার বিষয় যে, আইনে কি একে গ্রহণযোগ্য পরিবর্তন বলে মনে করা হয়। আইন বলে কপিরাইটের হুবহু বা অংশ বিশেষ পুনরুৎপাদন বা ব্যবহার করলে তা কপিরাইটের লঙ্ঘন হবে।

কপিরাইট আইন ২০০০ (২০০৫ সালে সংশোধিত) অনুসারে, ধারা ২(৮)(ঙ) তে কপিরাইট লঙ্ঘনকারী অনুলিপির সংজ্ঞা হিসেবে বলা হয়েছে, “৩[(ঙ) কম্পিউটার প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে, কোন কম্পিউটার প্রোগ্রামের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষের পুনরুৎপাদন বা ব্যবহার। ” এই সংজ্ঞায় অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, কোন কম্পিউটার প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে সেই প্রোগ্রামের সম্পূর্ণ বা অংশ বিশেষ পুনরায় উৎপাদন করলে বা ব্যবহার করলে সেটি কপিরাইট লঙ্ঘনকারী অনুলিপি হবে। এক্ষেত্রে অভ্র বিজয়-এর অংশ বিশেষ পুনরুৎপাদন করছে এবং নির্বাচন কমিশনসহ যারা অভ্র ব্যবহার করছে তারা কপিরাইট লঙ্ঘন করছে। আইনে কম্পিটউটার প্রোগ্রামের সংজ্ঞাও দেয়া আছে। এতে বলা আছে, কম্পিউটার প্রোগ্রাম অর্থ পাঠযোগ্য মাধ্যমে যন্ত্রসহ, শব্দ, সংকেত, পরিলেখ অথবা অন্য কোন আকারে প্রকাশিত নির্দেশাবলী যা দ্বারা কম্পিউটারকে কোন বিশেষ কাজ করানো বা বাস্তবে ফলদায়ক করানো যায়।

খুব সঙ্গত কারণেই আইনানুগভাবে বিজয় কীবোর্ডকে ইউনিবিজয় নামে অভ্র সফটওয়্যারে ব্যবহার করা আইনসঙ্গত নয়। যেহেতু বিজয়-এর কীবোর্ড ও সফটওয়্যার নিবন্ধিত সেহেতু এটি আদালতের সাক্ষ্য হিসেবেও গণ্য হবে। আইনের ধারায় এভাবে তা বলা আছে। “ ধারা ৬০(২) কোন কর্মের কপিরাইটের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট উক্ত কর্মের কপিরাইট থাকার বিষয়ে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য হিসাবে গণ্য হইবে এবং সার্টিফিকেটে যে ব্যক্তিকে কপিরাইটের স্বত্ত্বাধিকারী হিসাবে দেখানো হইয়াছে তিনি ঐরূপ কপিরাইটের স্বত্ত্বাধিকারী। ” অন্যদিকে অভ্র ছাড়া আর যেসব সফটওয়্যার যেমন লেখনী, প্রশিকা, প্রবর্তন, ফাল্গুন ইত্যাদি কোন পরিবর্তন ছাড়াই বিজয় কীবোর্ড সরাসরি ব্যবহার করেছে।

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল মাত্র তিনটি বোতাম বদল করে একটি জাতীয় কীবোর্ড তৈরী করেছে। এর সবগুলো একেবারে কপিরাইটের লঙ্ঘন। আইনে কম্পিউটার প্রোগ্রামের কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য শাস্তির বিধান এভাবে দেয়া আছে, “ধারা ৮৪, যদি কোন ব্যক্তি- (ক) কোন কম্পিউটার প্রোগ্রাম এর লংঘিত কপি অনুলিপি করিয়া যে কোন মাধ্যমে প্রকাশ, বিক্রয় বা একাধিক কপি বিতরণ করেন তাহা হলে তিনি অনুর্ধ চার বৎসর কিন্তু অনন্যূন ছয় মাসের কারাদ-ে এবং অনূর্ধ চার লক্ষ টাকা কিন্তু অন্যূন এক লক্ষ টাকার অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবেন। (খ) কম্পিউটারে কোন লংঘিত কপি ব্যবহার করেন তাহা ইলে তিনি অনুর্ধ তিন লক্ষ টাকা কিন্তু অন্যূন এক লক্ষ টাকার অর্থদন্ডে দ-ণীয় হইবেন। ” প্রথমোক্ত দফায় যদি অভ্রকে অভিযুক্ত করা যায় তবে দ্বিতীয় দফায় অফিযুক্ত রা যায় ইলেকশন কমিশনকে।

আরও একটি দফা আছে যাতে ইউএনডিপিকে অভিযুক্ত করা যায়। প্যাটেন্ট: : বিজয় এর বাংলা লেখন পদ্ধতির প্যাটেন্ট রয়েছে। এই প্যাটেন্ট অনুসারে বিজয় দিয়ে যেভাবে বাংলা লেখা হয় সেটি নতুন আবিষ্কার হিসেবে গণ্য হয়েছে। প্যাটেন্ট ও ডিজাইন আইনে বলা হয়েছে, ১২. (১) ) A patent sealed with the seal of the Department of Patents, Designs and Trade Marks shall, subject to the other provisions of this Act, confer on the patentee the exclusive privilege of making, selling and using the invention throughout Bangladesh and of authorizing others so to do. এর ফলে বিজয় এ ব্যবহৃত বাংলা লেখনপদ্ধতি অভ্র ব্যবহার করতে পারেনা। যেহেতু অভ্রতে ব্যবহৃত ইউনিবিজয় কীবোর্ড লেআউটে সেই পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে সেহেতু এটি প্যাটেন্ট আইনেরও লঙ্ঘন।

বাজারে আগে উল্লেখিত যেসব বাংলা সফটওয়্যার রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রেও প্যাটেন্ট আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগ করা সম্ভব। কারণ, তারা কেবল যে লেআউট নকল করেছে তা নয়-তারা বিজয়-এর বাংলা লেখার পদ্ধতিও নকল করেছে। এখানে আরও উল্লেখ করা দরকার যে আইনে প্যাটেন্ট বলবৎ হওয়া বিষয়েও বিধান আছে। এতে বলা হয়েছে যে, , (১) An invention may, during the period between the date of an application for a patent therefor and the date of sealing a patent on that application, be used and published without prejudice to that patent, and such protection from the consequences of use and publication is in this Act referred to as provisional protection. . এর অর্থ দাড়াচ্ছে যেদিন বিজয়-এর প্যাটেন্ট অধিকার চাওয়া হয়েছে সেদিন থেকেই প্যাটেন্ট অধিকার রয়েছে। ফলে ২০০৭-০৮ সালের কথা বলে পার পাবার কোন উপায় নেই।

ট্রেডমার্ক: বিজয় একটি ট্রেডমার্ক করা শব্দ। এই সম্পর্কে বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থার বক্তব্য হচ্ছে: Trademark owners have right to prevent others from using the same or confusingly similar mark but cannot prevent others from making or selling the same good (obviously not yet patented) under a non confusing mark. এখানে ইউনিবিজয় একটি বিভ্রান্তিকর শব্দ যা দিয়ে বিজয়-এর কপিরাইট ও প্যাটেন্ট লঙ্ঘন করার পাশাপাশি ট্রেডমার্কও লঙ্ঘন করা হয়েছে। অন্য সফটওয়্যার নির্মাতারাতো বিভ্রান্তিকর নয়-সরাসরি ট্রেডমার্ক আইন লঙ্ঘন করেছে।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।