আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউনাইটেড স্টেটস অফ বাংলাদেশ - এর বাজেট

পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি

দুঃখিত, এই নাম বদলাতে ১৪ টাকাও খরচ হয় নাই । আমিই দিলাম তবে অপারেশনাল কারণে। এপ্রিল মাস শেষের দিকে । এখনো ব্লগে বাজেট নিয়ে কোন লেখা দেখলাম না । ধরে নিচ্ছি ঘাড়ের উপর হুমড়ি খেয়ে এসে পড়লে তখন হয়ত কেউ কেউ গুরুগম্ভীর দুই চারটা লেখা দিবে।

আমিও বাজেট নিয়ে খুব একটা চিন্তিত কোনদিনই ছিলাম না । ক্রেতা হিসেবে বাজারে কোন জিনিস গুলোর দাম কমবে বা বাড়বে - এইটুকু দেখেই পত্রিকা রেখে দিতাম। এই গুলা, আফটার অল, বড়ে বড়ে লোগ কি বড়ে বড়ে বাত ! গায়ে লাগা শুরু করলো দুইটা কারণে ঃ ১। যখন জানলাম আমার বেতনের একটি বিশাল অংশ দিয়ে আমি এই বাজেট নামক বস্তুটা বানাতে সাহায্য করি । তার মানে আমার ঘামে ভেজা বহুদিন রাত্রি ও পরিশ্রম ঐ বাজেট ।

সুতরাং, আমার টাকা কেমনে কোথায় খরচ হবে , এইটা নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার আমার আছে। ২। কত টাকা কোথায় খরচ হবে এই বাজেট বানানো আসলে সংসারের বাজেট বানানোর চেয়ে কিংবা আমার প্রতিষ্ঠানের বাজেট বানানোর চেয়ে মোটেই জটিল কোন জিনিস না । বেসিক প্রশ্ন ও উত্তর গুলা একই । কত টাকা আয় হয় ? (রেভেনিউ ) কত টাকা ফিক্সড খাতে খরচ করতে হয়? ( মেন্টেনেন্স) কত টাকা ভ্যারিয়েবল খাতে খরচ করতে হবে? কোন খরচ গুলা না করলেই নয় (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান , শিক্ষা , চিকিৎসা, সামান্য বিনোদন) ? কোন খরচ গুলা উন্নতির জন্য নতুন করে করা দরকার ? ( আয় কিংবা এফিশিয়েন্সি বাড়ানো, কোয়ালিটি অফ লাইফ কিংবা লিভিং স্ট্যান্ডার্ড বাড়ানো) আয় অনুযায়ী ব্যয় প্ল্যান করা হবে ? ( ঘাটতিবিহীন বাজেট) , নাকি, ব্যয় অনুযায়ী আয় প্ল্যান করা হবে? ( রেভেনিউ বাড়ানো , লোন ইত্যাদি) ----------------------- এগুলি কোন স্টেম সেল বায়োলজি না যে কেউ বুঝতে পারবে না ।

আমাদের সকলেরই এইটা বুঝা দরকার। এবং আমার আয় করা টাকা ট্যাক্স হিসেবে নিয়ে সরকার ( আসলে আমার টাকার ম্যানেজার) কোথায় কিসে খরচ করবে , এইটা নিয়ে আমাদের মতামত থাকা দরকার । সেই মতের প্রতিফলন বাজেটে থাকা দরকার । টাকা দিব আমি আর সরকার যা ইচ্ছা , যেখানে ইচ্ছা খরচ করবে ( বিমান বন্দরের নাম পালটানো) তা হইতে পারে না। অনেক কষ্টের উপার্জন এইভাবে নষ্ট হইতে দেখলে মাথায় খুন চাপা কি উচিত না আমাদের ? এই অপচয় কি বন্ধ করবো না আমরা? -------------------------- এইটা নিয়ে চিন্তা করতে করতেই মাথায় আসলো -- আমাদের ৬৪টা জেলা , বিভিন্ন পৌরসভা , উপজেলা , ইউনিয়ন ( গ্রাম সরকার কি এখনো আছে?) ইত্যাদি নির্দিষ্ট পরিমান বাজেট পায় ।

সে বাজেট কেন পায়, কি করতে পায় ( বেতন টেতন জাতীয় ফিক্সড খরচ ছাড়া), তার জাস্টিফিকেশন কি সেইটার একটা প্রণালী আছে জানি, কিন্তু সাধারণ নাগরিক হিসেবে তার ডিটেইলস জানার উপায় কি আমি জানি না । এই যেমন কিছু দিন আগে প্রতি সাংসদ ১৫ কোটি টাকা কিসের পিছনে খরচ করবে সেইটার কোন প্ল্যান , প্রোগ্রাম, বাজেট পেশ না করেই টাকা পেয়ে গেলো । এই টাকা গুলা তো আপনি আমি দিয়েছি , সেইটার হিসাব নিকাশ কেন সরকার আমাকে আপনাকে দেবে না? যেমন ধরুন, আমাদের এলাকায় সেচের পানি পাওয়া যাচ্ছে না । পানির লেভেল মাটির অনেক নিচে নেমে গেছে । স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের চিন্তা হচ্ছে খাল বা নদী থেকে পানি টেনে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে টাকা দেওয়া হোক।

কিন্তু বাজেটের পর দেখা গেলো এলাকায় একটি স্কুল ও মসজিদ প্রতিষ্ঠার বাজেট পাওয়া গেছে যেইটা চেয়ারম্যান আর চামচারা মিলে লুটে খাচ্ছে । মানে পেটে খাবার নাই কিন্তু শিক্ষা ও ধর্মে অনেক উন্নতি হচ্ছে । আমি টোটালি কনফিউজড ! এমতাবস্থায় আমার প্রস্তাব হইলো এই রকম " আমি তো এমনি এমনিই পাই/খাই" ধরনের বাজেট পাওয়ার রাস্তাটা বদলানো দরকার । ------------------------------ নতুন প্রস্তাব ঃ ৬৪টা জেলাকে নিজ নিজ বাজেটের জন্য প্রতিযোগিতায় নামানো হউক । ১।

প্রতিটা জেলা তাদের নিজ নিজ উপজেলা , পৌরসভা, ইউনিয়ন , গ্রাম ইত্যাদি প্রশাসনিক ইউনিট গুলোর সাথে কথা বলে ঠিক করবে এলাকায় ফিক্সড বা মেইন্টেনেন্স খাতে ও উন্নয়ন খাতে কত টাকা লাগবে = টোটাল বাজেট কত লাগবে। ২। এই বাজেট তৈরী হবে গ্রাম-->ইউনিয়ন--> থানা/উপজেলা --> জেলা এই ক্রমানুসারে এলাকায় কোন কাজটা আগে করা দরকার সেই প্ল্যান ও সম্ভাব্য খরচের এর ভিত্তিতে । অর্থাৎ গ্রাম সরকার গ্রামের প্ল্যান ও বাজেট দিবে ইউনিয়ন পরিষদে। ইউনিয়ন পরিষদ যাচাই বাছাই করে সামগ্রিক প্ল্যান দেবে উপজেলাকে ।

উপজেলা পরিষদ যাচাই বাছাই করে পরিমার্জিত প্ল্যান ও বাজেট দেবে জেলাকে। জেলার প্রশাসন , সাংসদ ইত্যাদি সংসদে নেগোশিয়েট করবে কেন তাদের এই বাজেট পাওয়া উচিত । ৩। কেন বাজেট পাওয়া উচিত , এই জাস্টিফিকেশন দেখাতে হবে কত গুলো বেঞ্চ মার্ক ইন্ডিকেটরের ভিত্তিতে । যেমন, ক) তারা গত বাজেটের কয়টা কাজ (টাস্ক) নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর মান সম্মত ভাবে কোন বাড়তি খরচ না করেই সম্পন্ন করতে পেরেছে ।

( এফিশিয়েন্সি) খ) তাদের প্ল্যান এ তারা সাধারণ নাগরিকের মতামত এবং গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা পরিষদের সাথে কত টুকু আলোচনা করেছে। ( লেভেল অফ সিটিজেন পারটিসিপেশন) গ) তাদের ফাইনাল ডকুমেন্টে নাগরিকের ব্যক্ত প্রয়োজন ( কমিউনিকেটেড নিড ) কতখানি প্রতিফলিত হয়েছে? ( গ্রাম সরকার, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের পেশ করা প্ল্যানের সাথে জেলার ফাইনাল প্ল্যান এর পার্থক্য ) ঘ) এলাকার ভিত্তিতে সব এলাকার প্রয়োজন সমান ভাবে গুরুত্ব পেয়েছে কিনা ( সামগ্রিক ও সমতাবাদী উন্নয়ন প্ল্যান) ঙ)গত বাজেটের ব্যর্থতার খতিয়ান , কারণ সমূহ এবং এই বাজেটে ব্যর্থতা এড়াতে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? চ) নিজ জেলায় উপার্জন ( কর্মসংস্থান) ও মৌল চাহিদার ঘাটতি পূরণে সাফল্যের পরিমাণ কতটুকু? ( নতুন কাজের সংখ্যা, বর্তমান বেকার সংখ্যা (%), এলাকার কত % মানুষ খাদ্য, নিরাপদ পানি, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা , কর্মমুখী শিক্ষা ইত্যাদি মৌল অধিকার পাচ্ছে এবং কত % পাচ্ছে না ) ছ) মৌল অধিকার গুলো নাগরিকের কাছে পৌছানোর জন্য জেলা প্রশাসন , সাংসদ তাদের অধস্তন প্রশাসনিক বডি ( গ্রাম সরকার, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ) এই বাজেটে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে তার ডিটেইলড প্ল্যান । জ) পেশ কৃত বাজেটে নিজ জেলার রেভেনিউ , নিজ জেলার খরচ , প্ল্যান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় টাকা, সময়, হিউমেন রিসোর্স কতটুকু ভালো ভাবে বর্ণিত আছে ( বাজেট প্ল্যানের মান ) ঞ) বাজেট ও এক্সেকিউশনের ডিজাইন, প্ল্যান, ইভ্যালুয়েশন ও মনিটরিং এর ব্যবস্থা আছে কিনা এবং তা কতখানি স্ট্রং । ট) কোন জেলা তাদের সিভিল বা প্রাইভেট ফান্ডিং ( যারা কোটি কোটি অলস টাকা নিয়ে বসে আছে , ইনভেস্ট করতে না পেরে আচার বানাচ্ছেন বা বিদেশে ইনভেস্ট করছেন) থেকে কত টাকা সরাসরি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে পেরেছে ( যেমন , এখন পাওয়ার প্ল্যান্টে , কৃষিভিত্তিক ইন্ডাস্ট্রিতে , আই সি টি খাতে ইত্যাদি) জরুরী খাতে যেই জেলা যত বেশি প্রাইভেট সেক্টর বিনিয়োগ আনতে পারবে তার প্রাপ্ত স্কোর তত বেশি হবে। -------------------------------- উপরের কয়টা ইন্ডিকেটরের ভিত্তিতে প্রথমে গ্রাম সরকার গুলো নিজেদের বাজেট নিয়ে প্রতিযোগিতা করবে ইউনিয়ন পরিষদে।

এরপর ইউনিয়ন গুলো প্রতিযোগিতা করবে উপজেলা পরিষদে । এরপর উপজেলা গুলো প্রতিযোগিতা করবে জেলা পরিষদে । জেলা গুলো প্রতিযোগিতা করবে সংসদে কিংবা ৬টি বিভাগে । সাংসদ যেই দলেরই হোক , জেলার জন্য বা বিভাগের জন্য একত্র হয়ে লড়তে হবে বাজেট পেতে হলে । প্রতিটা লেভেলে ঐ গ্রামের, ইউনিয়নের , উপজেলার ও জেলার সাংবাদিক, শিক্ষক, গবেষক, অর্থনীতিবিদ , পেশাদার ব্যক্তি ( যে কেউ যে ট্যাক্স পে করে) দর্শক হিসেবে উপস্থিত থাকবে ( সিভিক ডিউটির পার্ট হিসেবে ) ।

যারা সরাসরি অংশগ্রহন করবে তাদের জন্য কোন রকম ইন্সেন্টিভ ( টাকা নয়, সার্টিফিকেট বা দলিলে নাম উল্লেখ) রাখা যাইতে পারে। প্রতিটা লেভেলের পারফরমেন্সের জন্য স্কোরিং হবে। ( খালি আমরাই পরীক্ষা দিমু? উনারা দিবে না?) --------------------------------- সব শেষ একটা সর্বদলীয় সংসদ কমিটি কে কেমন স্কোর করলো বিভিন্ন ইন্ডিকেটরে , সেই অনুযায়ী বাজেট ভাগ করে দিবে একটা জাতীয় সমন্বিত বাজেট ও উন্নয়ন প্ল্যান এর ভিত্তিতে ( ৬৪ জেলা থেকে প্রাপ্ত এবং সমন্বিত) ----------------------------- আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে লিখলাম, এখন আপনারা আপনাদের ভাবনা যোগ করেন প্লিজ। অতিরিক্ত ইংরেজি ব্যবহারের জন্য দুঃখিত । ছবি কৃতজ্ঞতা ঃ মাসুম ভাই Click This Link আমাদের বাজেট যেন স্রেফ হরির লুটের আর কালো টাকা ( ট্যাক্স বিহীন টাকা কিংবা অবৈধ পথে আয় করা টাকা ) সাদা করার মেশিন যেন না হয় ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.