আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুরে এলাম সুন্দরবন



পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। আমরা বন্ধুরা কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম সুন্দরবন ঘুরতে যাব। লেখক নিজে ও তার বন্ধুরা নয়ন,সুলতান,হানিফ,মাসুম,সুজন এবং আমাদের সবার ছোট ভাই ইমরান এই ব্যাপারে খুব উৎসাহি ছিলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না কবে আমরা যাত্রা শুরু করব। নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমরা ডিসেম্বরের ৬ তারিখে সকাল ৬.৫০ এর কপোতাক্ষ ধরে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।

রাজশাহী থেকে খুলনার যাতায়াতের সবচেয়ে উত্তম পথ রেলপথ। রাজশাহী থেকে খুলনার ট্রেন ভাড়া মাত্র ১২৫ টাকা। আমদের যাত্রার দিন খুব কুয়াশা ছিল। এতই কুয়াশা ছিল যে আমরা পাকশি সেতুর উপর থেকে সামান্য দূরের লালন শাহ সেতু দেখতে পারছিলাম না। খুলনা ট্রেন থেকে নেমেই খুলনা জাহাজ ঘাটে আমরা লাইটার জাহাজ দেখতে পাচ্ছিলাম।

এর আগে আমরা কখনো জাহাজ দেখিনি তাই আমরা জাহাজ দেখে টপাটপ ছবি তুলতে লাগলাম। খুলনা শহর খুব উন্নত শহর কিন্তু এর রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব খারাপ। খুলানার পথে পথে আমরা অনেক বড় বড় বিল্ডিং দেখতে পেলাম যা খুলনার অর্থনৈতিক অবস্থার পরিচয় দিচ্ছিল। আমরা সেদিনিই খুলনা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে মংলার উদ্দেশ্য রওনা দিই;উদ্দেশ্য দিনে দিনে মংলায় পৌছে যাওয়া। খুলনা থেকে মংলার বাস ভাড়া মাত্র ৪৭ টাকা।

সময় লাগে দেড় ঘন্টা। মংলাতে বাস থেকে নেমে নদী পার হয়ে মূল মংলা শহরে যেতে হয়। মংলা শহরের দুটি অংশ,একটি মংলা ই পি জেঢ ও অপরটি মংলা মূল শহর। মংলাতে থাকার মত বেশ ভাল কিছু হোটেল আছে ভাড়া ১৫০ থেকে ৫০০ টাকার মত। আমরা এরকমই একটি মানসম্মত হোটেলে উঠলাম।

আমদের মধ্যে নয়ন এর আগেও মংলাতে এসেছে তাই সে জানত কিভাবে সুন্দরবনে যাবার ব্যাবস্থা করতে হয়। আমরা তার কথা অনুযায়ী সেদিন সন্ধ্যা বেলাতেই একটা ছোটখট ট্রলার ভাড়া করে নিই। একটা বিষয় লোক্ষণীয় সবাই সুন্দরবনে বলে করমজল নামে যে জায়গাতে যায় তাকে সুন্দরবন না বলে একটা ছোটখাট পার্ক বলা যেতে পারে তাই কেউ যদি সুন্দরবনে যেতে চায় তবে তাকে এই ব্যাপারটা খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আগে থেকে জানতাম তাই আমরা ট্রালার মালিকের সাথে দফারফা করে নিলাম যে আমরা একেবারে সুন্দরবনের ভিতরে যাব। ভাড়া ঠিক হল ২০০০ টাকা।

পরেরদিন আমরা সুন্দরবনের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। আমরা যতই সুন্দরবনের কাছাকাছি পৌছতে লাগলাম ততই আমরা উত্তেজিত বোধ করতে লাগলাম। প্রায় এক ঘন্টা পরে আমরা পৌছে গেলাম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে। সুন্দরবনের ভিতরে ঢুকতে গেলে করমজলে সরকারি অনুমতি নিতে হয়। সুন্দরবনে ঢুকার খরচ খুব বেশি।

নান খাতে টাকা দিতে হয়। সরকার যদি এই খরচটা কমায় তবে আরও পর্যটকের সমাগম হবে। আমরা সুন্দরবনের একেবারে ভিতিরের দিকে ঢূকে গিয়েছিলাম। সুন্দরবনের ভিতর দিক দিয়ে ছোট ছোট খাল ভিতর দিকে চলে গিয়েছে। এ রকমই একটি খাল দিয়ে আমরা সুন্দরবনের ভিতরের দিকে ঢুকে গেলাম,আমরা শুধু বিভিন্ন রকম পাখি দেখতে পাচ্ছিলাম কিন্তু বানর,হরিন এসব দেখতে পাচ্ছিলাম না।

অবশ্য আমরা বাঘ দেখার আশা করিনি কেননা আমরা যে অঞ্চলে গিয়েছিলাম সে অঞ্চলে বাঘ থাকেনা। বাঘ থাকে কটকা হিরণ পয়েন্ট,দুবলার চর প্রভৃতি অঞ্চলে। একটূ পোরে আমরা বানর দেখতে পেলাম। আমদের দিনে দিনে ফিরে আসার চিন্তা থাকায় আমরা সন্ধ্যার মধ্যে মংলায় ফিরে আসি। আমরা সবায় উপলব্ধি করতে পারছিলাম সুন্দরবনের মত বড় বন একদিনে দেখা সম্ভব না।

আমরা চিন্তা করেছি আমরা আবারও সুন্দরবনে যাব। মংলা থেকে ফিরে আমরা বাগেরহাটের দিকে যাত্রা শুরু করি। মংলা থেকে বাগেরহাট পর্যন্ত সরাসরি কোন বাস না থাকার জন্য আমরা কাটাকাটি ভাবে বাগেরহাট শহরে পৌছালাম। খান জাহান আলীর পবিত্র ভূমি বাগেরহাট। মংলারমত বাগেরহাটেও ভাল মানের হোটেল আছে।

বাগেরহাট শহরটা খুব ছোট। বাগেরহাট শহরে দেখারমত আছে পি সি কলেজ,রামকৃষ্ণ মন্দির,ভৈরব নদীর তীর। আমরা এর সবই দেখলাম। শহরটা খূব ছোট বিধায় রিক্ষায় করে সমস্ত শহর ঘুরে দেখা যায়। বাগেরহাটে আরও দেখারমত ষাটগুম্বজ মসজিদ ও খান জাহান আলীর মাজার আছে।

ষাটগুম্বজ মসজিদ দেখার মত একটা জায়গা। আমরা ভেবে অবাক হচ্ছিলাম বহু বছর আগে কিভাবে পাথর দিয়ে এই মসজিদটা তৈরি করেছিল। এরপর আমরা খুলনা শহর ও বেনাপোল দেখে রাজশাহী এর উদ্দেশ্যে রওনা দিই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.