আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার সুন্দরবন ভ্রমন আর পিতার চলে যাওয়া..... স্রস্টা , তুমি মাঝে মাঝে এতো নিস্ঠুর হও কিভাবে ?

সব লেখার স্বত্ব লেখকের সংরক্ষিত

সুন্দরবন খুব ভাল করে ঘুরার ইচছা ছিল আনেকদিন ধরে। এই ২১ ফেব্রুয়ারীর ছুটিটা সুবিধাজনক পড়ে যাওয়ায় এমবিএ র কয়েকজন ক্লাসমেট সহ সুন্দরবনের গভীরে যাওয়ার প্লান করলাম। যাওয়ার দিন মন কেমন করছিল, আব্বার শরীরটা খুব একটা ভাল ছিল না। মাস দেড়েক আগে সিসিইউতে ছিলেন , বাড়ী থেকে ঢাকা ফিরে চেক আপের জন্য আবার ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা। ঢাকার বাসায় ছোট ভাই ছিল, আব্বার সংগে মামা ছিল তাই মোটামুটি নিশ্চিন্ত ছিলাম।

খুলনা থেকে বড় লন্চ্ যখন ছাড়ল তখন আব্বাকে ফোন দিলাম। জানতাম কিছুক্ষন পরই নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যাব। আব্বা ফোন ধরে যথারীতি আগে সালাম দিয়ে আমাকে লজ্জায় ফেললেন প্রানবন্ত গলায় জিজ্ঞাস করলেন কেমন আছ বাবু? বললাম, ভাল । আমার লন্চ ছেড়ে দিয়েছে , সুন্দরবন যাচ্ছি এখন। বললেন, কবে ফিরবা? বললাম, সোমবার সকালে ।

আব্বা একটু চুপ করে থেকে বললেন, ঠিক আছে আস। সেইই তাঁর সংগে জীবনের শেষ কথা বলা আমার । আমি যাত্রার উত্তেজনায় ভুলে গিয়েছিলাম, একবারও জিজ্ঞেস করিনি আপনার শরীর কেমন আব্বা? পরদিন ভোরে কটকা পৌছালাম আমরা। আয়োজকরা নানা অজুহাতে এরপর হিরন পয়েন্টে যাওয়া এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা কয়েকজন বেশ চেঁচামেচি করে হিরন পয়েন্ট যাওয়ার জন্য গোঁ ধরলাম, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আমিই ছিলাম সবচেয়ে উচ্চকন্ঠ।

হিরন পয়েন্ট যাওয়ার পথে সমুদ্র ঘেঁষে যখন চলছিলাম কারও মোবাইলে নেটওয়ার্ক ছিলনা, শুধু বুলবুলের মোবাইলে হটাৎ করে একবার নেটওয়ার্ক এসে পড়ায় একটা মেসেজ আসল, আমার ছোট ভাই পাঠিয়েছে। আমাকে যেভাবেই হোক এখনই বাড়ীতে যেতে। তারপর সেখান থেকে ফেরার নানা চেস্টা। একটা স্পীড বোট পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সবাই মিলে সেটাকে দাড়া করাবার চেস্টা করল, দাড়ালো না সেটা। লন্চের লোকজন বলল হিরন পয়েন্ট স্পীডবোট আছে।

হিরন পয়েন্ট যেয়ে দেখি সেই স্পীডবোট টা নিয়ে এক মহিলা সচিব কিছুক্ষন আগে মংলা গেছেন। আটকা পড়ে গেলাম। হিরন পয়েন্ট এক ভয়াবহ জায়গা। মোবাইলের নেটওয়ার্ক নাই। নেভীর একটা ঘাটির মতো আছে তারাও কোন হেল্প করতে পারলনা।

নেভীর কোয়ার্টারের তিনতলায় নির্দিস্ট একটা জায়গা আছে সেখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক রহস্যজালের মতো আসে যায়। সেখান থেকে এক নেভীর অফিসারের ফোন থেকে বাসায় কথা বলে জানলাম আব্বাকে মরচুয়ারীতে রাখা হয়েছে আমার অপেক্ষায়। জোয়ারে লন্চ ছাড়ল, পরদিন সকালে মংলা পৌছানোর কথা, ভোরে দেখি লন্চ ঘন কুয়াশায় সুন্দরবনের এক খালে আটকা পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম একটা লন্চ ডুবেও গেছে। এরপর নরক যন্ত্রনার দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে আসরের সময় পৌঁছালামা বাড়িতে।

ভয়ে ছিলাম পিতার কি মুখ দেখব এতো সময় পর। কিন্তু আমার দেখা আমার জন্মদাতা মানুষটার শেষ চেহারা ছিল স্নিগ্ধ এক অপার্থিব হাসিতে ভরা। এখনও বিশ্বাস হয়না মাঝে মাঝে, আব্বা চলে গেছেন। ক্লাশ মাঝে মাঝে দেরীতে শেষ হলে শাহবাগে যখন বাসের জন্য দাড়িয়ে থাকতাম, ফোনটা বেজে উঠতো, আব্বু তুমি কোথায়? এখনও শাহবাগে যখন বাসের জন্য যখন দাড়িয়ে থাকি হটাৎ হটাৎ মনে হয় এই বুঝি আমার ফোনটা বেজে উঠল। বাজে না।

সেই প্রিয় কন্ঠটা আর কোনদিনই শুনতে পাবনা। আপনারা আমার আব্বার জন্য একটু দোয়া করবেন, তিনি যেন বেহেশতিবাসী হোন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.