আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাজী নজরুল ইসলামের নাস্তিকতার প্রমান।

: বুঝলি বাবুল, ইসলামি জাহানেরই শ্রেষ্ট কবি কাজী নজরুল। : ওরে হামজা, কস কী মমিন! তাহলে ওমর খৈয়াম, ফেরদৌসী কে? : এরা কারা? : চিনবি না তুই। সেটা বাদ থাক। যা বলছিলি, নজরুল..… : একেকটা কবিতা শুনেছিস নজরুলের! কী একটা বই আছে না, ও হ্যা, 'বিদ্রোহী', ওটার একেকটা কবিতা পড়লে জিহাদী জোস উথলে ওঠে আমার। আজকে তৌহিদী জনতা এত প্রেরণা কোত্থেকে পায়, বুঝিস না? : দ্যাখ হামজা, 'বিদ্রোহী' নামে কোনো বই নেই।

এটা একটা কবিতা। বইটার নাম 'সঞ্চিতা'। : ও হ্যা মনে পড়ছে। এত বই লিখছে বুঝলি, নামই মনে থাকে না। 'সঞ্চয়িতা' বইটা আসলেই জিহাদী জোসের বই।

: 'সঞ্চয়িতা' না, 'সঞ্চিতা'। 'সঞ্চয়িতা' রবি ঠাকুরের। : ও তাই। নাস্তিক রবি নিশ্চয়ই নজরুলের কাছে থেকে নামের ধারণাটা চুরি করছিলো। দ্যাখ, কেমন একই রকম নাম! : হামজা, 'সঞ্চয়িতা' বইটা 'সঞ্চিতা'র অনেক বছর আগেই লেখা।

: সে যাই হোক, শোন, শেষের দিকে পাগল না হয়ে গেলে তোর ওই নাস্তিক-মুরতাদ রবি ঠাকুর যে নোবেলটা পাইছিলো না, ওরকম চার-পাঁচটা নোবেল-টোবেল নজরুল একাই পাইতো। : হুম, হতে পারে। বিরাট প্রতিভাধর ছিলেন। : আর যাই কস, নোবেলটা দেয়নি তার মূল কারণ যারা দেয় ওরাই আসলে নাস্তিক-মুরতাদ। দেখিসনা খালি ইহুদীরা ঘন ঘন নোবেল পায়? নাস্তিকরা তো নাস্তিকদেরই নোবেল দেবে, তাই না? : তাই নাকি? তাহলে তো নজরুলই বড় নাস্তিক।

: একদম বাজে কথা বলবিনা বাবুল। প্রমান দে তো পারলে। : দ্যাখ হামজা, নজরুলের জন্মই তো মালাউন-কাফেরদের ভিটাতে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। : জন্ম ব্যাপার না।

জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো। আমাদের প্রিয় নবীজীর জন্মের আগে আরব কাফেরদের ভূমি ছিলো। : কিন্তু ভারত তো এখনও মালাউনদের ভূমি। : কইলাম না, ওসব ব্যাপার না। : তারপর শোন, নজরুল ছোটকালেই 'লেটো' নামের একটা নাট্যদলে যোগ দিয়েছিলেন।

দলটা এক মালাউনের ছিলো। তাই ওই দলে কাজ করতে গিয়ে নজরুল বেদ-পুরাণ পড়েছিলেন। 'দাতা কর্ণ', 'যুধিষ্ঠিরের সঙ' নামের কিছু মালাউন ধর্মীয় নাটকও করেছিলেন। : ওসবও ব্যাপার না। আমাদের জাকির নায়েক সব ধর্মের বইই পড়েছেন।

গীতা-বেদ-বাইবেল-ত্রিপিটক, সব। তাতে কী? : তারপর দ্যাখ, নজরুলের কয়েকটা প্রেমিকা ছিলো। তুই বল একাধিক প্রেম কারা করে? : না, সে তো করতেই পারে। চার বউ রাখলেও সমস্যা নেই। এটা কোনো কথা না।

: আচ্ছা, তারপর দ্যাখ, প্রতিভা বসু নামের এক মালাউন মহিলার সাথে প্রেম করেছে। তারপর বিয়েও করেছে প্রমীলা সেনগুপ্তা নামের এক মালাউন মহিলাকে। তাও ধর্ম অপরিবর্তিত রেখে। এসব হারাম না? : আরে যুবক বয়সে এসব একটু আধটু হয়। আর উনি জন্মেছিলেন যুদ্ধের সময়ে।

গনিমতের মাল বুঝিস? এসব ব্যবহার করা হারাম না। আমাদের সাঈদী হুজুররাও করেছে। তাই বলে কি উনারা নাস্তিক হয়ে গেছে নাকি? : নারী পুরুষের সমান অধিকারের কথাও কিন্তু বলেছে নজরুল। ওই যে, 'বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যানকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। ' : ওসব হুজুররাও বলেছে।

সমান অধিকার। হু। : নজরুল যে মালাউনদের ধর্মে আসক্ত হয়েছিলো, তার বড় প্রমান কিন্তু ওর ছেলেদের হিন্দু দেবতাদের নামে নাম। কৃষ্ণ, অরিন্দম। এবার কী বলবি? : হু, এইটা জানি কেমন কেমন ঠ্যাকে! : কবিতায়ও কিন্তু বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।

: কিভাবে? : ওই যে, 'হিন্দু নাকি ও মুসলিম, এই জিজ্ঞাসে কোন জন? /কান্ডারি বল মরিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র। ' : এই কথা বলে কি বুঝালো? ওর মা হিন্দু ছিলো? : রে না। উনার মা তো জাহেদা খাতুন। মুসলিমই। : তারপর দ্যাখ, নজরুল তিন হাজারের বেশি গান লিখেছে।

তাতে কিছু গজল থাকলেও বাকি সব গানেই বাজনা আছে! : হু। : শ্যামা সঙ্গীতের নাম শুনেছিস? : না, কী ওটা? : ওই যে কালি পূজো করে না হিন্দুরা? : হু। : ওই দেবতাকে নিয়ে গান। নজরুল অসংখ্য শ্যামা সঙ্গীত লিখেছে। অনেক হিন্দু ভক্তিগীতি লিখেছে।

: কস কী বাবুল! : শেষ ভাষণে নিজেকে রক্ষা করতে কি বলে গেছিলেন জানিস? : না। : বলে গেছিলেন, 'কেউ বলেন আমার বাণী যবন। কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দু'টোর কোনোটাই না। আমি শুধু হিন্দু-মুসলিমকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি।

গালাগালি কে গলাগলিতে পরিনত করার চেষ্টা করেছি। ' পুরাল নাস্তিক লালন শাই টাইপ ডায়ালগ। : এইডা ক্যামনে সম্ভব? : পুরাই জ্যামিতিক ভাবে প্রমান করে দিলাম কিন্তু। : জ্যামিতি। হুম, জ্যামিতি ভালো জিনিস।

আরবীয়দের সৃষ্টি। তা ওই সময়ের মওদুদীবাদী কেউ তখন ওর কল্লা দাবী করেনি? : নাহ্ִ। : আগে জানতাম না রে এসব। আজকে নাস্তিক-মুরতাদ-মালাউন ব্যাটার ১১৪ তম জন্মদিনের দিন কি কাহিনী শুনালি রে বাবুল! আচ্ছা, একটা কথা, ওর মরণোত্তর ফাঁসির দাবী তোলা যায় না? : মৃত্যুর পর ফাঁসির দাবী হয় নাকি? : মরণোত্তর পুরষ্কার থাকতে পারে, আর ফাঁসির দাবী থাকতে পারবে না? শালারে আজকে হাতের কাছে পাইলে রে! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.