আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংলাপে ‘সংলাপ’ থাকা না থাকা

সংলাপ ও সংলাপের পরিণতি কি হয় সেটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সংলাপের প্রক্রিয়াটাই এখন এগোচ্ছে না। থমকে পড়েছে। রাজনীতির এসব জায়গাগুলো জনগণের কাছেই ধাঁধার মত ঠেকছে। যে বিএনপি এতদিন শুধু ‘তত্ত্বাবধায়ক তত্ত্বাবধায়ক’ করে প্রচ্ছন্নভাবে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে লড়ছিল সেই বিএনপি অনেকদিন তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে নিশ্চুপ।

দুই দলের মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার পরও কেন সংলাপ এগোচ্ছে না তা কেউ জানলনা। সবকিছুই ঘোলাটে। মনে হচ্ছে বিএনপি এ ঘোলাটে পরিস্থিততিটাই মেনে নিয়েছে। সেটা মেনে কেন এতদিন ‘মৌনব্রত’ পালন করেছে তা বোঝা দুরূহ। দেখার বিষয় হয়ে উঠেছে বিএনপির তত্ত্বাবধায়কের নামে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে।

মজার বিষয় হচ্ছে যখনই বিএনপি ‘আঙ্গুল সোজা করে ঘি তুলতে চাইল’ তখনই আওয়ামী লীগের চড়া গলা শোনা গেছে। সেটা- প্রধানত আগে তারা তত্ত্বাবধায়ক নয় অন্তবর্তি সরকারের রাজী ছিল। সেটার জন্যই আলোচনা করবে বিএনপির সঙ্গে। কিন্তু বিএনপি শর্তছাড়া সংলাপে রাজী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ অনেকটা অন্তবর্তি সরকারের রূপরেখাও ঘোষণা করেছে। আওয়ামীলীগের কোন কোন নেতা বলেছেন শেখ হাসিনাই হবে অন্তবর্তি সরকারের প্রধান।

শর্তছাড়া হলেও আওয়ামী লীগ প্রকারান্তরে নির্বাচনি সরকারের ব্যাপারে একটা শর্ত জুড়ে দেয়। মজার বিষয় হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্তবর্তি সরকারের রূপরেখায় বিএনপি ও আওয়ামীলীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর যেন কোন পছন্দ বা ‘না পছন্দ’ নেই। দুটি বৃহৎ দলে বহুদলীয় গণতন্ত্র যেন অতলে ডুবে গেছে। বিষয়টি আলাদা আলোচনার দাবি রাখে। কারণ অন্য দলগুলো দুই প্রধান দলের কাছে তাদের দলীয় আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে বিলীন করে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ইচ্ছা -অনিচ্ছার উপর এদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের নিয়তি হয়ে উঠেছে। আসলে এখানে কোথায় বহুদলীয় গণতন্ত্র। ভোটাররাও বিএনপি -আওয়ামীলীগকে দিয়ে গণতন্ত্রের খেলাটা উপভোগ করে। তো আমরাও মনে করছি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এ দুটি দলকে সন্তুষ্ট করতে পারলেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের দায় মিটে যায়। তো শেষ পর্যন্ত কি হচ্ছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি সর্বদলীয় অন্তবর্তি সরকার সেটা নিয়েই কথা। অবশ্য শুধু তত্ত্ববধায়কই নয় বিএনপি রাজনৈতিক আন্দোলনও আগের মত নেই। ঘন ঘন হরতাল, ঘন ঘন গাড়িতে অগ্নি সংযোগ কমে এসেছে। হয়ত এ ধরনের পরিস্থিতি নেই বলে দেশের মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে আছে। হরতাল নেই, জ্বালাও পোড়াও নেই।

গাড়ি ভাঙ্গচুর নেই। নাকি মাত্র কিছুদিনের জন্য নেই। তারপরও এ নাগরিক স্বস্তি কতদিন থাকবে শেষ পর্যন্ত- সেটাই দেখার বিষয়। তবে যেটাকে এতটাই স্বস্তি মনে করছি সেটা আসলে কতটা স্বাচ্ছন্দের- সেই বিষয়টিও অঅছে। এ সময়টা কতটা স্বাচ্ছন্দময় সেটা হয়তও আরও দেরিতে বোঝা যাবে।

বিএনপি মনে হয় এ কারণে ‘আঙ্গুল সোজা করেছে’। এটা ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামের অনুতাপ কিনা। পরবর্তি ১৯ দিন পর বিএনপি আবার সরকারের প্রতি সংলাপের আহ্বান। মাঝখানে তো অনেক দিন পেরোল। সেটা কেন হল।

২২ মে রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভার পর বিএনপি আবার সংলাপের জন্য সরকারকে আহ্বান জানায়। এ আহ্বানে তারা এখন ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ ঐক্যমতের’ সরকারের কথা বলেছে। মনে হচ্ছে বিএনপি প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের দাবিই মেনে নিতে যাচ্ছে। এরপরও সরকারের সংলাপের আহ্বানকে তারা ‘হাওয়াই আহ্বান’ বলে অভিহিত করেছে। মানে আলোচনার কথা বলে সরকারই আলোচনার সব পথ রুদ্ধ করছে- এমন অভিযোগও করা হয়েছে।

সংলাপের জন্য স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিএনপি সরকারকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সহিংসতা, হানাহানি, খুন, নিপীড়ন এবং আক্রমণাত্মক ও অশ্লীল মিথ্যা প্রচারণা’ বন্ধ করার আহ্বান জানায়। সংলাপের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ‘শৃঙ্খলিত’ করার চেষ্টা, বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের তীব্র সমালোচনা করে দলটি। অবশ্য বিএনপি এর আগেও একই কিসিমের কথা বলেছিল- নেতা কর্মিদের জেলে রেখে সংলাপের আহ্বান একটি নাটক। এবং তারা বলেছে- ‘বিএনপি কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম কিংবা সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে কখনো বিশ্বাস করে না। এগুলো আওয়ামী লীগেরই মজ্জাগত অভ্যাস।

তারাই সরকার উৎখাতের জন্য ‘ট্রাম্পকার্ড ষড়যন্ত্র’ করেছিল। বিএনপির এ বক্তব্যে আলটিমেটাম ঘোষণার কিছুটা অনুতাপও আছে। তবে তারা এও বলছে শেখ হাসিনাকে সরকার প্রধান করার কথা বলে আলোচনার পথই রুদ্ধ করে দিচ্ছে। বিএনপির এ আশংকা একটা ‘নাটক’ মনে হতে পারে। তাদের বক্তব্য থেকে মনে হচ্ছে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের পরিণতিটা আসলেই জানে।

বা কি হতে যাচ্ছে। কারণ সংলাপের জন্যই বাংলাদেশে দুই দলের এত দেন-দরবার। বিএনপির একমাত্র দাবিই ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এক্ষেত্রে এজেন্ডা ঠিক রেখেই তারা সংলাপে বসতে সরকারকে জানিয়েছিল। আর তখন কোন শর্ত মেনে আওয়ামী লীগ সংলাপে বসবে না বলেছিল।

সেখানে বিএনপিকে আওয়ামী লীগই শর্ত জুড়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটামের পরবর্তিতে তাদের অবস্থা এখন অনেকটা ‘ যা পায় তাই যথেষ্ট’ এমন ভাবের মনে হচ্ছে। যে বিএনপি সংলাপ ও নির্বাচনকালীন নির্ভরযোগ্য সরকারের জন্য দেশে এত আন্দোলন সংগ্রাম করেছে তারা এভাবে চুপসে যাওয়ার কারণটা রহস্যজনক। তারপরও বিএনপি কোণঠাসা অবস্থা থেকে বের হচ্ছে সেটাই গণতন্ত্রের জন্য আশা। হেফাজতে ইসলামের মতিঝিলে সমাবেশের পর এদেশের রাজনীতির অনেক গতি প্রকৃতিই বদলে গেছে।

এতেই কিনা ‘তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকারের মতিভ্রম’ ঘটেছে তা সময় এলে বলা যাবে। সংলাপ নিয়ে বিএনপি নিশ্চুপ থাকলেও এসময়ে কয়েকটি শক্তিশালী দেশের প্রতিনিধিরা সরব ছিলেন। সাভার ট্র্যাজেডি সহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা কথা বললেও সংলাপের গতি-প্রকৃতি তারাই নির্ধারিত করে দিয়েছে কিনা। শুধু আলটিমেটামের ১৯ দিন পরই বিএনপি মুখ খুলেছে তা মনে করার কারণ নেই। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি যত আন্দোলন-হরতাল করেছে সব রাজনৈতিক কর্মসূচীর ফলাফল কিছুটা দলটি পেয়ে গেছে।

এরপর সংলাপ কতটা সংলাপ থাকে নাকি ‘সঙ’ আলাপ হয় সেটা সামনে দেখা যাবে। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।