আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংলাপে সংগীতে

তাঁরা অভিনয়ের মানুষ। সংলাপেই ফুটিয়ে তোলেন চরিত্র। সুরের সঙ্গেও তাঁদের মিতালি। অভিনয়শিল্পী থেকে গায়ক হয়েছেন এ রকম তিনজনকে নিয়েই আজকের আয়োজন

মঞ্চ, টিভি, চলচ্চিত্র—সব ক্ষেত্রেই সমান জনপ্রিয় অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। গান করেন ছোটবেলা থেকেই।

তবে তা কেবল নিজের জন্য। মঞ্চে যাঁরা অভিনয় করেন, তাঁদের কখনো কখনো নাটকের প্রয়োজনে একটু-আধটু গান গাইতেই হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিনেতারা তখন গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলান। মঞ্চে অভিনয় করতে গিয়ে অন্যের গানে গলা মেলাতে ইচ্ছে করল না। ফজলুর রহমান বাবু নিজে গান গাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলেন সেখানেই।



ফরিদপুরে মঞ্চে অভিনয়ের আগে-পরের আড্ডাগুলোতে গান গাইতেন। আরণ্যক নাট্যদলে এসে গান গাওয়ার তেষ্টাটা আরেকটু বেড়ে গেল। অবশেষে মঞ্চনাটক জয়জয়ন্তী ও ঘুমের মানুষ-এ গায়েনের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে তিনি অভিষিক্ত হলেন গায়ক হিসেবে। এরপর অনেক তথ্যচিত্রে গান করেছেন বাবু। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের মনপুরা ছবিতে গাওয়া ‘নিথুয়া পাথারে’ গানটিই তাঁর নামের পাশে গায়কের তকমাটা জুড়ে দেয়।

এরপর ঘেটুপুত্র কমলা ছবিতে অনেক গান করেছেন তিনি। গানের জগতে এমন সাহসী বিচরণের কারণে অনেকের কাছ থেকেই গান গাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছেন, কিন্তু সব প্রস্তাবই ফিরিয়ে দিয়েছেন সবিনয়ে। আর তার কারণটাও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন খোলামেলাভাবে: ‘আমি নিজেকে কখনোই সংগীতশিল্পী মনে করি না। সংগীতে আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। আমার শ্রম, সাধনা, চর্চা—যাই বলি না কেন, সবই অভিনয়কে ঘিরে।

গান গাওয়াটা শুধু শখের বশেই। ’

জনপ্রিয় এই অভিনেতা অনেক নাটকের টাইটেল গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। তাঁর গাওয়া কিছু গানকে সংকলিত করে বাজারে কয়েকটি অ্যালবামও প্রকাশ পেয়েছে।

অনেকটা ফজলুর রহমান বাবুর মতো একই পথে হেঁটেছেন আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। ছোটবেলায় প্রচুর গান শুনতেন।

গান শোনার পাশাপাশি সেই গানগুলো হুবহু গাওয়ার প্রবণতাও ছিল বেশ। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ভুপেন হাজারিকা, মান্না দে থেকে শুরু করে এন্ড্রু কিশোর—সবাইকেই তখন নকল করেছেন সমান তালে। গানের ব্যাপারে বাবার আগ্রহ ছিল কম, মাকে দেখেছেন সব সময় সুরেলা কণ্ঠে গুনগুন করতে। সেই গানগুলো ছিল মূলত কীর্তন আর দেহতত্ত্বের। মায়ের গুনগুন করে গাওয়া থেকেই সম্ভবত গানের প্রতি ভালো লাগা তৈরি হয়ে গেল তাঁর।

গান শোনার সঙ্গে সঙ্গে গাওয়ার অভ্যাসটাকে সময়ের সাথি করে নিয়েছেন। খেয়ালের বসে একদিন ভুপেন হাজারিকার একটা গান হুবহু গেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর। গানটি ‘ইত্যাদি’তে প্রচারিত হয়নি। হলে হয়তো অভিনেতার বদলে নামকরা একজন গায়ক হিসেবেই দেখা যেত তাঁকে! চঞ্চল চৌধুরীর গান গাওয়ার শুরুটা মূলত মঞ্চ নাটকের মধ্য দিয়েই।

মঞ্চে অভিনয়ের ফাঁকে দলগত আড্ডায় সবার সঙ্গে গাইতেন তখন। আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে শিশুদের জন্য করা নাটক কালো দৈত্যতে একজন গায়েনের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়েই গান করেছেন প্রথমবারের মতো। এরপর চে’র সাইকেলসহ অনেক নাটকে গান করেছেন তিনি। মনপুরা ছবির জন্য কৃষ্ণকলির সঙ্গে ‘নিথুয়া পাথারে’ গানটিতে কণ্ঠ দিলেও পরবর্তী সময়ে সেই গান ছবিতে অব্যবহূত থেকে গেছে। এরপর মিশ্র অনেক অ্যালবামে গান করেছেন।

প্রিয় কিছু শিল্পীর গাওয়া গান নিজ কণ্ঠে গেয়ে পালকি নামে বাজারে একটি একক অ্যালবামও বের করেছেন তিনি। অ্যালবামটি বের হয়েছিল গায়ক আসিফের উদ্যোগে তাঁরই অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে।

এই সবকিছুর পরও চঞ্চল চৌধুরী বিশ্বাস করেন, তিনি একজন অভিনয়শিল্পীই। তাঁর কথায়, ‘আমি বলব, আমি গান গাই শুধু নিজের জন্য, কখনো কখনো সময়ের প্রয়োজনে। ’

মডেল-অভিনেত্রী মিথিলার কথাই ধরা যাক।

ছোটবেলা থেকেই তাঁর গানের সঙ্গে সখ্য থাকলেও সময়ের জটিল সমীকরণে তিনি আজ পুরদস্তুর অভিনেত্রী। সেই কিশোর বয়সেই নজরুলসংগীত শিক্ষার উদ্দেশ্যে হিন্দোল একাডেমিতে পা ফেলেছেন। একজন কণ্ঠশিল্পী হওয়ার সব আয়োজন যখন শেষ, তখন ঢুকে পড়লেন মডেলিংয়ে। ঘরোয়া কিছু অনুষ্ঠানে গান করলেও প্রথমবারের মতো তিনি গান করেছেন তাঁর স্বামী গায়ক, মডেল ও অভিনেতা তাহসানের সঙ্গে একটি দ্বৈত অ্যালবাম কথোপকথন-এ। এরপর তাহসানের সঙ্গে বেশ কয়েকটি অ্যালবামেই গান করা হয়েছে তাঁর।

থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবির অ্যালবামে ‘অগোচরে’ শিরোনামে মিথিলা একটি গান করেছেন। মূলত অভিনয়ের আগে গানের জগতে তাঁর প্রথম পদচারণ ঘটলেও নিজেকে একজন সংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচয় দিতে কিছুটা কুণ্ঠাবোধ করেন মিথিলা। তাঁর মতে, ‘গানের মধ্য দিয়েই আমার কাজের শুরুটা হলেও বেলা শেষে আমি নিজেকে একজন মডেল ও অভিনেত্রী বলেই পরিচিত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ’

এখন প্রতিদিনই মিথিলা কিছু গান করে চলেছেন, যার শ্রোতা একমাত্র মেয়ে তাঁর আইরা। গানের কথাও বেশির ভাগ সময় এক ‘আয় ঘুম আয়’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।