আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোবাইল সিমের রেজিস্ট্রেশনে ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি, একই আইএমইআই নম্বরে ব্যবহার হচ্ছে একাধিক সেট ।। ৯০ ভাগ রেজিস্ট্রেশনই ভুয়া

সত্যের চেয়ে অপ্রিয় আর কিছু নেই

মোবাইল ফোনে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সাইবার ক্রাইম বিভাগ অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে মোবাইল সিমের রেজিষ্ট্রেশনে ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি। তারা মোবাইল ফোনের ৯০ ভাগ রেজিষ্ট্রেশনে ভুল তথ্য থাকার প্রমাণ এবং একটি আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি) নম্বরে সাড়ে ১২ হাজার সেট ব্যবহার করারও তথ্য পেয়েছে। একই আইএমইআই নম্বরে একাধিক সেট ব্যবহার করায় মোবাইল সন্ত্রাস দমন করা গোয়েন্দাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর ৯০ ভাগ সিমের রেজিষ্ট্রেশনই ভুয়া বলে দাবি করছে পুলিশ।

অভিযোগ পাওয়া মোবাইল নম্বরের মালিককে অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ তথ্য আবিষ্কার করেছে ডিএমপি’র সাইবার ক্রাইম বিভাগ। তবে থেমে নেই রেজিষ্ট্রেশনবিহীন মোবাইল সিম বিক্রি। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার পরও রাজধানীর অলি-গলিতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে মোবাইল ফোনের সিম কার্ড। ভুয়া নাম-পরিচয়ে লাখ-লাখ মোবাইল ফোনের সিম রেজিষ্ট্রেশন হওয়ায় দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে মোবাইল সন্ত্রাস। এসব সিম ব্যবহার করে চাঁদা দাবি, হত্যার হুমকি ও উত্ত্যক্ত করাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

প্রায় প্রতিদিন এসব অভিযোগ জমা পড়ছে পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে। তবে ফল শূন্য। অভিযোগ তদন্তের পর সিম বন্ধ (ব্লক) করে দেয়া ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছুই করতে পারছে না। পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী দেশে সর্বাধিক ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন কোম্পানীর প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ সিম কার্ডের রেজিষ্ট্রেশন সঠিক থাকলেও ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ রেজিষ্ট্রেশনে উল্লিখিত তথ্য সঠিক নয়। একই সাথে দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত কোম্পানীর প্রায় ৯০ ভাগ, তৃতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত কোম্পানীর প্রায় ৮০ ভাগ, চতুর্থ সর্বাধিক ব্যবহৃত দুইটি কোম্পানীর ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ এবং অপর একটি কোম্পানীর ৫০ থেকে ৬০ ভাগ মোবাইল সিমের রেজিষ্ট্রেশনের লিখিত তথ্য সঠিক নয় বলে জানা গেছে।

অভিযুক্ত সিমের রেজিষ্ট্রেশনে দেয়া তথ্য অনুযায়ী গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গ্রাহককে খোঁজ করতে গিয়ে এসব ভুয়া তথ্যের প্রমাণ পেয়েছেন। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মাইনুল ইসলাম বলেন, মোবাইল ফোন সন্ত্রাস বন্ধ করতে কোম্পানিগুলোর ডিস্ট্রিবিউটরদের সিম বিক্রির রেজিস্ট্রেশন মনিটরিং করতে পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া উচিত। এতে সন্ত্রাসীদের কাছে সিম বিক্রি বন্ধ করা সম্ভব হতে পারে। সিমের রেজিস্ট্রেশনের সঠিক তথ্যের সঙ্গে থানায় দায়ের করা মামলা ও অভিযোগের তথ্য মিলিয়ে দেখা সম্ভব হলে পূর্ব থেকে অনেকাংশে মোবাইল সন্ত্রাস বন্ধ করা সম্ভব হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের এসি মো রকিব জানান, মোবাইল অপারেটরদের কাছে ওইসব নম্বর বন্ধ করতে না বললে তারা নিজ গরজে বন্ধ করে না।

আর এ কারণেই থামানো যাচ্ছে না মোবাইল সন্ত্রাস। তিনি জানান, এসব সিমের রেজিস্ট্রেশনে গ্রাহকের যে পরিচয় ও ছবি দেয়া রয়েছে তা সবই ভুয়া। একারণে ভুয়া রেজিস্ট্রেশনযুক্ত মোবাইল ফোন দিয়ে অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীদের সনাক্ত করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এক বছরে সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে প্রায় আধা লাখের বেশি মোবাইল গ্রাহকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্তের পর পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা ভুয়া নাম-ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার সিম বন্ধ করে দিয়েছে।

খোদ রাজধানীতে ১৩৭৬টি অভিযোগের কারণে ২৪৪৭টি সিম বন্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে নিয়ম অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন না করায় ও ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করায় ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারির পর থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে প্রায় ২ লাখ সিম। এদিকে এতকিছুর পরও রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সিম বিক্রি বন্ধ হয়নি। গতকাল রাজধানীর গুলিস্তান, ফার্মগেট, মিরপুর ১ ও ১০ নম্বর গোলচক্করের ওভারব্রীজের নিচে রেজিষ্ট্রেশনবিহীন সিম বিক্রি করতে দেখা গেছে। ফার্মগেট ওভারব্রীজের নিচে সেবুল আহমেদ ও অন্যান্য বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলে তাদের উল্টো প্রশ্ন, ‘আপনি কে? সিম বিক্রি করলে আপনাকে জিজ্ঞেস করতে হবে কেন? ভাই নিজের কাজ করেন।

পুলিশসহ অনেক বড় ভাইকে ম্যানেজ করেই এখানে বসেছি। ডিস্টার্ব কইরেন না। সিম না কিনলে সরেন। ’ গুলিস্থান মোড়ে খোলা আকাশের নিচে সিম বিক্রি করছিলেন ব্যবসায়ী রাতুল মিয়া। প্রতিটি সিমের মূল্য নিচ্ছেন ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ঘোষণার কথা জানতে চাইলে তিনি শুনেছেন বলে জানান, বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকেই তিনি সিম কিনছেন। যাদের ভোটার আইডি কার্ড নেই তারা তার কাছ থেকে সিম কিনেন। তাদের কাছ থেকে একটু বেশী দাম নিচ্ছেন বলে তিনি জানান। র‌্যাবের গোয়েন্দাসূত্রে জানা যায়, মোবাইল ফোন কোম্পানীর বিক্রয় কেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন ফুটপাতে মোবাইল সিম বিক্রি চলছে। এসব সিম সন্ত্রাসী চক্র কিনে ব্যবহার করে।

তারা শুধু হুমকি ও চাঁদা দাবির জন্য এসব সিম অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করে। এ কারণে এ ধরনের সন্ত্রাসী গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে একাধিক সিমকার্ড পাওয়া যায়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা এসি মোঃ রকিব জানান, সম্প্রতি গোয়েন্দারা কয়েকটি অপরাধের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে নকল আইএমইআই নম্বর পেয়েছেন। গত ২০ অক্টোবর ১৩৫৭৯০২৪৬৮১১২২০ আইএমইআই নম্বরের মোবাইল সেট ব্যবহারকারী অপরাধীকে ধরতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ একই আইএমআই নম্বরে ১৯৮টি সিম ব্যবহারের প্রমাণ পান। এই আইএমইআই নম্বরে ১৯৮টি মোবাইল ফোন সেট ব্যবহার হচ্ছে।

অথচ আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী একটি আইএমইআই নম্বর একটিমাত্র মোবাইল সেটে ব্যবহƒত হওয়ার কথা। তিনি আরো বলেন, আইএমইআই নম্বর প্রতিটি মোবাইল সেটের ইউনিক নম্বর। একটি সেটের জন্য একটি আইএমইআই নাম্বার নির্দিষ্ট থাকে। অথচ বাংলাদেশে একটি চক্র মোবাইল ফোনের এ ইউনিক নম্বর পরিবর্তন করে নানা অপরাধ করে যাচ্ছে। এসব কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টেলিফোন ও মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজি তদন্ত সংক্রান্ত সেল মোবাইল ফোনের সিমকার্ড ক্রয়ে নতুন নীতিমালা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে।

নতুন এ নীতিমালায় সিমকার্ড রেজিষ্ট্রেশনে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে নীতিমালা চূড়ান্ত করে। একইসঙ্গে নতুন নীতিমালায় কেউ যদি সিমকার্ডে ভুয়া তথ্য দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৭৭, ১৮২, ৪১৭, ৪১৯, ৪৬৫ এবং ৪৭১ ধারায় অভিযোগ আনা যেতে পারে। আবার সিমকার্ডের রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্ত করারও সুপারিশ করা হয়েছে। ইত্তেফাকে প্রকাশিত।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.