আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজের বানানো নতুন কমিটির সাথেও রেজাউলের দ্বন্দ্ব আরম্ভ

রাজাকার ও তাদের বংশধরেরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ঠাই পাবে

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম নতুন কার্যকরী পরিষদের (কাপ) প্রথম বৈঠকেই পুরনো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। বিদ্রোহীরা ছাত্রশিবিরের নতুন কার্যকরী পরিষদকেও মেনে নেয়নি। ওই বৈঠকে কয়েকজন পরিষদ সদস্য সভাপতি সম্পর্কে ওঠা বিতর্কের বিষয়ে মুক্ত আলোচনার প্রস্তাব করেন। কিন্তু সভাপতি তাঁর বিষয়ে নতুন পরিষদকে 'পুরনো কোনো বিষয়' নিয়ে আলোচনার সুযোগ দিতে অপারগতা জানান। জামায়াতের নীতিনির্ধারকদের পরামর্শে উল্টো তিনি মুক্ত আলোচনার প্রস্তাবকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন।

এ ঘটনায় শিবিরের অভ্যন্তরীণ সংকট আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সভাপতির নেতৃত্বেই গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শিবিরের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত পরিষদের প্রথম বৈঠকেই আবারো বিতর্কের অবতারণা হয়। এতে শিবির সভাপতি রেজাউল করিম ও নতুন সেক্রেটারি জেনারেল ডা. ফখরুদ্দিন মানিক ছাড়াও পরিষদের নবনির্বাচিত ৩৩ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামী প্রধান অতিথি, ঢাকা মহানগর জামায়াত আমির রফিকুল ইসলাম খান ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচিতদের খণ্ডিত তালিকা এ ঘটনার রেশ ধরে শিবির সভাপতি নবনির্বাচিত কার্যকরী পরিষদের ৩৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ না করে শনিবার ২৩ ও গতকাল রবিবার আরো দুইজনের নাম প্রকাশ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মুহাম্মদ শামসুদ্দিন আহমেদ ও নাসির উদ্দিন মোল্লার নাম গতকাল প্রকাশ করা হয়। এ সম্পর্কে শিবির সভাপতি রেজাউল করিম জানান, শৃঙ্খলাজনিত কারণে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের সদস্যরা ভোট দিয়ে পরিষদ সদস্য নির্বাচিত করার পর এমন পদক্ষেপ নেওয়া কতটা সংবিধানসম্মত জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'হয়তো উনারা নির্বাচিত হয়ে শপথ গ্রহণের পর আবারো সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। ' সেটা কি আপনার সম্পর্কে মুক্ত আলোচনার প্রস্তাব তোলা? এমন প্রশ্নের জবাবে রেজাউল করিম বলেন, 'এসব আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

' শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য তাঁদের বহিষ্কার করা হচ্ছে কি না প্রশ্ন করা হলে শিবির সভাপতির জবাব, 'আমাদের সংগঠনে বহিষ্কারের নিয়ম নেই। আমরা সংশোধনের সুযোগ দিই। আশা করছি তাঁরা সংশোধন হবেন। ' চার মনোনীত ও ২৫ নির্বাচিত সদস্য নির্বাচিত ৩৩ সদস্যের মধ্যে নাম প্রকাশ করা ২৫ সদস্য হচ্ছেন_দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, মুহাম্মদ আতাউর রহমান সরকার, নূর মোহাম্মদ মণ্ডল, শামসুল আলম গোলাপ, নিজামুল হক নাঈম, গোলাম মর্তুজা, সোহেল খান, মনির উদ্দিন মনি, আতিকুর রহমান, আ স ম ইয়াহইয়া, মাকসুদুর রহমান, মোকাররম বিল্লাহ আনসারি, মুহাম্মদ কলিমুল্লাহ, তৌহিদুর রহমান সুইট, আবদুল জব্বার, আবু নাসের, মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, মুহাম্মদ জাকারিয়া হাবিব, নুরুল ইসলাম আকন্দ, মুহাম্মদ তারেকুজ্জামান, মিয়া মুজাহিদুল ইসলাম, মাসুদ পারভেজ রাসেল, মুহাম্মদ শামসুদ্দিন আহমেদ ও নাসির উদ্দিন মোল্লা। ঘোষিত দুই তালিকায় নবনির্বাচিত পরিষদ সদস্যদের সঙ্গে সভাপতি সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে চারজন মনোনীত সদস্যও কার্যকরি পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করেন।

তাঁরা হচ্ছেন_শফিউর রহমান (সাবেক ঢাবি শাখা সেক্রেটারি), মুহাম্মদ আহমাদুল্লাহ (ঢাকা মহানগর পশ্চিম সভাপতি), কামরুল ইসলাম ইমরুল (ময়মনসিংহ শহর শাখা সভাপতি) ও মুহাম্মদ জহির উদ্দিন (ফেনী শহর শাখা সভাপতি)। আহমাদুল্লাহ পদত্যাগ করেছিলেন। শিবিরের সংবিধানের ধারা ১৯-এ বলা আছে, 'সভাপতি প্রয়োজনবোধ করলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবে না, এমন সংখ্যক সদস্যকে এবং কার্যকরী পরিষদের সাবেক সদস্যদের মধ্য থেকে অনূর্ধ্ব দুইজনকে কার্যকরী পরিষদের পরামর্শক্রমে পরিষদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। ' পদত্যাগীদের ৯ জন পুনর্নির্বাচিত সূত্র মতে, ২২ ফেব্রুয়ারি এক কাগজে স্বাক্ষর করে যে ১৮ কার্যকরী পরিষদ সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৯ জন নতুন পরিষদে আবার নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। এর মধ্যে ছয়জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নতুন পরিষদে নির্বাচিত হওয়ার পরও নাম প্রকাশ হয়নি এমন সদস্যদের মধ্যে জোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, নজরুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, জাকির হোসাইন, শাহরিয়ার আলম সিফাত, ডা. শহিদুল্লাহ শরীফ ও আসাদ উদ্দিনের নাম রয়েছে। ছোট করা হলো সেক্রেটারিয়েট ২০০৯ সেশনে শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটি বা সেক্রেটারিয়েট ছিল ২১ সদস্যের। এবার একজনকে একাধিক দায়িত্ব দিয়ে ১১ সদস্যের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েট গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে নূর মোহাম্মদ মণ্ডল দপ্তর সম্পাদক, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহিত্য সম্পাদক, মুহাম্মদ আতাউর রহমান সরকার প্রচার, আইটি ও তথ্য সম্পাদক, মুহাম্মদ কলিমুল্লাহ প্রকাশনা সম্পাদক, গোলাম মর্তুজা সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক, মুহাম্মদ সোহেল খান অর্থ ও পাঠাগার সম্পাদক, মিয়া মুজাহিদুল ইসলাম কলেজ ও ক্রীড়া সম্পাদক, মুহাম্মদ নিজামুল হক নাঈম মানবসম্পদ উন্নয়ন ও গবেষণা সম্পাদক, আহমাদুল্লাহ স্কুল ও বিতর্ক সম্পাদক, সম্পাদক মুহাম্মদ শফিউর রহমান শিক্ষা ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক ও আল মুত্তাকী বিল্লাহকে ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক করা হয়। সভাপতির অঞ্চলপ্রীতি! শিবির সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম নতুন কমিটিতে অঞ্চলপ্রীতির সীমাহীন নজির দেখিয়েছেন ।

তিনি নতুন কার্যকরী পরিষদ ও সেক্রেটারিয়েটে তাঁর অঞ্চলের চার থেকে পাঁচজনকে স্থান দিয়েছেন। রেজাউল করিমের বাড়ি নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুরে। পদত্যাগী ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনের স্থলাভিষিক্ত শিবিরের নতুন সেক্রেটারি জেনারেল ডা. ফখরুদ্দিন আহমেদ মানিকের বাড়ি ফেনী। নতুন কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক মুহাম্মদ কলিমুল্লাহ ও শিবির সভাপতি মনোনীত পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ জহির উদ্দিনের বাড়িও ফেনী। বিদ্রোহীদের হুঁশিয়ারি বিদ্রোহীরা ছাত্রশিবিরের নতুন নেতৃত্ব মেনে নেয়নি।

উল্টো তাঁরা শিবির সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিমসহ কার্যকরী পরিষদ বাতিলের দাবি জানিয়ে নতুন সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচন চেয়েছে। বিদ্রোহীরা সারা দেশে ৫০ ভাগ ভোটও পড়েনি বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তাঁদের দাবি না মানলে সংকট আরো বাড়বে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.