আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জঙ্গিবাদের নব উত্থান অ্যাকশনে প্রশাসন

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
ফের উত্থান ঘটছে জঙ্গিবাদের। এযেন নব-উত্থান। দীর্ঘদিন অনুকূল পরিবেশ না পাওয়ায় এবার একই প্লাটফরমে আসছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলো। অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার এসব সংগঠনের নেতৃত্বে রাখা হচ্ছে উচ্চশিক্ষিতদের।

সামরিক কায়দায় গড়েতোলা এই জঙ্গি সংগঠনগুলোয় রাখা হচ্ছে পদাতিক, রণকৌশল ইউনিট, গোয়েন্দা, তদন্ত বিভাগ, গবেষণা এবং যোগাযোগ বিভাগ। গোয়েন্দা নজরদারি এড়াতে কাটাউট কিংবা স্লিপার সেল পদ্ধতির মাধ্যমে চলছে জঙ্গি কার্যক্রম। একই সঙ্গে পুরনো নামের বদলে নতুন নতুন নামে সংগঠিত হচ্ছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে 'আনসারুল্লাহ-বাংলা টিম' (এবিটি) এবং 'বিইএম'-এর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। গ্রেফতার জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া চাঞ্চল্যকর তথ্যে রীতিমতো চোখ কপালে উঠেছে গোয়েন্দাদের।

যে কোনো মূল্যে জঙ্গিদের রুখে দিতে আদাজল খেয়েমাঠে নেমেছে পুলিশ-র‌্যাবসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। রয়েছে কড়া সতর্ক অবস্থানে। বাংলাদেশ প্রতিদিন সূত্র জানায়, 'এবিটি' ইয়েয়মেনভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা ইন দি অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলার (একিউএপি) আদলে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার মূলনীতির অনেক কিছুই 'এবিটি'র কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে। দাওয়াহ, ইদাদ, রিবাত ও কিতাল- এই চারটি স্তরে বিভক্ত হয়েএবিটির সদস্যরা গোপনে প্রায় সারা দেশেই সক্রিয় রয়েছেন।

গত এক দশকে এ দেশে গড়েওঠা জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহরীর, জামা'আতুল মুসলেমিন, জাদিদ আল কায়দা, জুমাআতুল আল সাদাত, তামির উদদীনের একটি অংশের সদস্যরা এবিটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। তারা আল-কায়েদা নেতা আনোয়ার আল আকিকে আইকন হিসেবে মনে করেন। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) প্রায় দুই বছর ধরে ফারুক আহমেদ গ্রুপ ও নজরুল ইসলাম গ্রুপে বিভক্ত হয়েকাজ করছে। নিজেদের মধ্যে অন্তঃকলহ থাকায় একীভূত হয়ে কাজ করতে পারছে না। তবে এ দুই গ্রুপই গ্রেফতার এবিটির প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিন রহমানীকে জেএমবির আমির করার প্রস্তাব দিয়েছিল।

তবে রহমানী জেএমবির দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। এবিটির ব্যানারেই তারা কাজ করতে সম্মত হন। পরে হরকাতুল জিহাদ, হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা জসিমউদ্দিন রহমানীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় বৈঠক করে একই প্লাটফরমে কাজ করার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিলেন। সে অনুসারে এবিটির কর্মপদ্ধতি আরও যুগোপযোগী করার কাজ চলছিল। তবে এরই মধ্যে কাটাউট পদ্ধতিতে এর সদস্যরা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-কমিশনার মুনিবুর রহমান জানান, এবিটির কর্মকাণ্ডে তারা রীতিমতো বিস্মিত, একই সঙ্গে উদ্বিগ্নও বটে। এর পর থেকে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। রিমান্ডে থাকা গ্রেফতার হওয়াদের কাছ থেকে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। সূত্রে জানা গেছে, বিপথগামী একজন সেনা কর্মকর্তা এবিটির উপদেষ্টা পরিষদে কাজ করছেন। তিনি মূলত সামরিক বিভাগটি দেখভাল করেন।

তিন মাস আগে কুমিল্লায় ওই সেনা কর্মকর্তা এবং জসিমউদ্দিন রহমানীর সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয়। এবিটির গবেষণা ও অপারেশন সেলের দায়িত্বে রয়েছেন বর্তমানে পাকি¯ত্মানে অবস্থানরত ইজাজ হোসেন। তিন মাস আগে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। সে সময় তিনি জসিমউদ্দিন রহমানী, জুন্নুন শিকদার, কাজী রেজোয়ানের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন। বিদেশে থেকেই তিনি হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে এবিটির সদস্যদের কাজ করার ব্যাপারে মতামত জানিয়েছিলেন।

পরে এবিটির সদস্যরা হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন। ইজাজ বিভিন্ন নামে অন্তত চারটি পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। এরই মধ্যে তিনি পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে ফেলেছেন বলে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। ইজাজ হোসেন আগে জামা'আতুল মুসলিমিনের আমির ছিলেন। তার বাসা রাজধানীর ভাসানটেকে।

তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা প্রকৌশলী। ২০০৮ সালে ভাসানটেকে জেএমবির নাশকতার ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন ইজাজ। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, কেবল কওমি শিক্ষা নয়, এর পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতদেরই বর্তমানে ভেড়ানো হচ্ছে নতুন জঙ্গি সংগঠনগুলোয়। এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের তত্ত্বাবধানে স্বতন্ত্র গবেষণা সেলের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে সাংগঠনিক কাঠামো এবং কর্মপদ্ধতি। কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ সিলেবাস।

এসব সিলেবাসে রয়েছে আধুনিক রণকৌশল এবং সাংগঠনিক মানোন্নয়নসংক্রান্ত অসংখ্য বই। প্রত্যেক সদস্যকে বাধ্যতামূলকভাবে এসব বই অধ্যয়ন করতে হয়। বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই তাকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জড়ানো হচ্ছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে তারা বেশির ভাগ সময়ই অ্যানালগ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। বড় ধরনের অপারেশনের প্রয়োজনে তারা সংগ্রহ করেছেন এসএমজি, এলএমজির মতো ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র।

আফগানিস্তান-ফেরত মুজাহিদ এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহারে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত পলাতক দুর্ধষ জঙ্গিদের এখন নাশকতার জন্য মাঠে নামানো হচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রপ্তরা দেশে এসে সংগঠিত হয়ে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বলেও খবর রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। ডিবির জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম জানান, এবিটির সদস্যরা ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ডের দিকেই এগোচ্ছিলেন। স্লিপার সেল পদ্ধতি অনুসরণ করে এবিটি উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে ফেলেছে। জসিমউদ্দিন রহমানীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

অন্যদিকে, সম্প্রতি বগুড়ার ঠনঠনিয়ায় 'বিইএম'-এর গোপন আস্তানা আবিষ্কারের পর হতভম্ব হয়েপড়েন অনেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। ওই আস্তানা থেকে তিন সদস্য গ্রেফতারসহ উদ্ধার করা হয় অত্যাধুনিক এসএমজি একে টুটু সাব মেশিনগান, জার্মানির তৈরি এসএমজি, পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিনসহ ৮০টি গুলি এবং জঙ্গি প্রশিক্ষণের উপকরণ। এসব অস্ত্রের পাশাপাশি অত্যাধুনিক অস্ত্রের নকশা ও আত্মঘাতী হতে উদ্বুদ্ধকরণ নোটও উদ্ধার করা হয় আস্তানাটি থেকে। এর আগে ১২ আগস্ট আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিন রহমানীকে বরগুনা থেকে ৩১ সঙ্গীসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে পুলিশ ১২ জনের ছবিসহ একটি তালিকা উদ্ধার করে।

যাদের সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। র‌্যাব সূত্র জানায়, বিইএমের সদস্যরা অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র চালাতেও পারদর্শী। বড় ধরনের জঙ্গি হামলার জন্য সংগঠনটি সশস্ত্র প্রশিক্ষণের তৎপরতা চালাচ্ছে। যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র ব্যবহারের কৌশলের পাশাপাশি ওইসব ভারী অস্ত্র কীভাবে তৈরি করা হয় তাও শেখানো হচ্ছে বিইএমের স্কুল অব ইনফেনটি-ট্র্যাকটিস শাখার মাধ্যমে। এমনকি এই সংগঠনের একটি ইন্টারোগেশন সেল রয়েছে, যেখানে নতুন সদস্যদের সামরিক কৌশল শেখানো হয়।

এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা একে-অন্যকে 'ভাই' বলে সম্বোধন করেন। যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় সাংকেতিক ভাষা। তারা বিভিন্ন সীমান্ত পথে এবং বিদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছেন। এসব অস্ত্র দিয়েতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও যুদ্ধে নামার ক্ষমতা রাখেন। রাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এ টি এম হাবিবুর রহমান জানান, বিইএমের জঙ্গি সদস্যরা প্রত্যন্ত অঞ্চল বেছে নিয়ে সেখানে বাসা-বাড়ি-মেস ভাড়া নিয়ে অবস্থান করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

তবে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। সুত্র
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.