আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কায়রো আন্তর্জাতিক বই মেলা : ভাবনার অন্তরালে আমাদের একুশ

যে ছেলেটির মুখে আজ হাসির ছোঁয়া নাই, সে ছেলেটির মুখে মোরা একটু হাসি চাই।

মোস্তফা হোসাইন (শাহীন) যে কয়েকটি সভ্যতাকে বুকে লালন করে পৃথিবী আজো গর্ববোধ করে মিশরীয় সভ্যতা সে গর্বের ঢেউয়ে অবিচ্ছেদ্য আত্মা । পৃথিবীর দিকে দিকে শিক্ষা,সংস্কৃতি,সভ্যতা, উদারতা আর মমত্ববোধের বানী পৌছে দেয়ার ক্ষেত্রে মিশরীয় সভ্যতা পালন করে চলছে কান্ডারীর ভূমিকা । আল –আজহার,কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের মত পৃথিবী বিখ্যাত প্রাচীনতম জ্ঞানের সৌধ সমুহকে যে দেশ বুকে ধারন করে চলছে,সে দেশের ব্যপারে বাড়িয়ে না বললে ও অনেকাংশেই যথেষ্ট। মিশরের কথা শুনলেই কেন জানি নাকের ডগায় একধরনের জ্ঞানের হৃদয় কাড়া ঘ্রান আভাস পাওয়া যায়।

তাদের সেই জ্ঞান ও সংস্কৃতির জ্যোতিকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে রাষ্ট্রিয়ভাবে তারা আয়োজন করে নানাধরনের আন্তার্জাতিক সম্মেল,সেমিনার সহ আরো অনেক কিছুর। পাশাপাশি প্রতি বছরআন্তর্জাতিক বই মেলার মাধ্যমে নিজেকে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপর করে নতুন এক আঙ্গিকে । পৃথীবির দ্বিতীয় বৃহত্তম বই মেলা হলেও আরব বিশ্বে এটিই সবচেয়ে বড় এবং আন্তর্জাতিক বই মেলা। এই মেলাকে সামনে রেখে ছাত্র,শিক্ষক,পাঠক,প্রকাশক,বই আমদানী ও রপ্তানীকারক,বিদেশ থেকে আগত অতিথি ও ছাত্র,টেলিভিশন-রেডিও সব ক্ষেত্রেই একধরনের সাজ সাজ রব পড়ে যায় । সবাই ঈদের কেনাকাটার মত পরিবারের সাথে দলবেধে বই কিনতে আর মেলা উপভোগ করতে যায় ।

"জেনারেল ইজিপ্সিয়ান বুক অর্গানাইজেশান"র তত্ত্বাবধানে ১৯৬৯ সাল থেকেই মিশর এই বই মেলার আয়োজন করে আসছে । সে বছর কেবলমা্ত্র ২টি প্যাভিলিয়নে বিশ্বের মোট ৪৭ টি দেশ ও ৪৬২টি প্রকাশনীর অংশগ্রহনে মেলা অনুষ্ঠিত হলেও সময় এবং কালের ব্যবধানে ২০০৪ সালে রেকর্ড পরিমান দেশের অংশগ্রহনে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ৩৭ টি প্যাভিলিয়নে এ বছর মেলায় মোট ৯৭ টি দেশ ও ৩১৫০ টি প্রকাশনী অংশগ্রহন করে । এবারের তথা ২০১০ সালের মেলাটি ৪২তম কায়রো আন্তর্জাতিক বই মেলা। অন্যান্যবারের তুলনায় এবারের বই মেলায় আনুপাতিক হারে অংশগ্রহনকারী দেশের সংখ্যা কম হলে ও মেলার আমেজ আর আকর্ষন কোনটারই কমতি ছিলনা।

প্রতি বছরর মেলায় আগত যেকোন একটি দেশকে মেলা কতৃপক্ষ মেলার প্রধানতম অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষনা করে। এবার মেলায় "রাশিয়া"সে গৌরব অর্জন করে । এ বছর মেলায় মোট ৩১ টি দেশ অংশগ্রহন করে,তার মধ্যে ১৫টি আরব বিশ্বের বাকীসব অন্যান্য অনারব দেশ । মেলায় মোট মিশরীয় ৫৩৮ টি অন্যান্য আরব দেশ থেকে ২০০ টি এবং অনারব দেশ সমুহ থেকে ৬২ টি সহ মোট ৮০৪ প্রকাশনী অংশগ্রহন করে। এ বছর মেলায় মোট ১৬টি প্যাভিলিয়নে ৮৬৯ টি ষ্টল স্থাপন করা হয়।

উল্লেখ্য যে একেকটি প্যাভিলিয়নে মোটামোটি ভাবে আমাদের একুশে বই মেলার সমমান একটি মেলা করা সম্ভব হয়ে থাকে। এ ছাড়া ও মেলাকে আকর্ষনীয় করে তুলতে সেখানে আয়োজন করা হয় নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, বাচ্চাদের খেলাধূলার উপযোগী ও দর্শনার্থী এবং ক্রেতাদের বিশ্রামের সুবিধার্থে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে দু'টি বিশাল পার্ক। এ ছাড়াও স্থাপন করা হয় কনসার্ট হল ও থিয়েটার মঞ্ঝ সহ নানাধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন। স্থানীয় এবং অন্যান্য দেশের মোট ১১টি মন্ত্রনালয়,বিভিন্ন দেশী বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থা এ মেলায় অংশগ্রহন করে এ বছর। মেলার ধরন:- সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এবং দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্ধে উঠে মিশরের সরকার এই মেলার আয়োজন করে থাকে ।

আদর্শিক, মৌলিক,উপন্যাস,গল্প, সাহিত্য,ইতিহাস,সাইন্স,ব্যাংকিং-বীমা সহ কোন ধরনের বই ই বাদ পড়েনা এই মেলায়। তবে মেলার মোট বইয়ের প্রায় ৮০ ভাগই ইসলামী মৌলিক ও সাহিত্য ভাবধারার । যে কোন চিন্তাধারার বই হোকনা কেন মেলায় তা বিক্রি ও উপস্থাপিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে । এমন কি নিষিদ্ধ ব্রাদারহুডের বই ও মেলায় বিক্রি হয় মেলাকে সামগ্রীক ভাবে সবার কাছে গ্রহনযোগ্য করে তোলার জন্য, কারন নিষিদ্ধ হলে ও সাধারন মানুষের কাছে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে । সব ধরনের হিংসাত্নক আর রাজনৈতিক মানসিকতার উর্ধ্ধে উঠে এই মেলার আয়োজন করা হয় বলে আন্তর্জাতিক মান রক্ষার ক্ষেত্রে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়না মেলার আয়োজকদের।

একুশে বই মেলা :প্রেক্ষিত আন্তর্জাতিকীকরন:-আমাদের ২১শে বই মেলার আন্তর্জাতিকীকরন নিয়ে লেখালেখি চলছে বিভিন্ন মহল থেকে । কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের দৃষ্টিভংগি দেখলে যথেষ্ট পরিমার সন্দেহের উদ্রেগ হয় এ ক্ষেত্রে তারা কতটুকু আন্তরিক। রাষ্ট্রের সব অর্জনগুলোকে যে ধরনের নোংরা আর দলীয় দৃষ্টিকোন নিয়ে তারা দেখেন সেক্ষেত্রে অন্তত এতটুকুন নিশ্চিত হওয়া যায় যে ২১শে মেলার মান দিন দিন অধ:পতনের দিকেই যাবে। সরকার একুশে মেলাকে নিয়ে ও নোংরা রাজনীতি এবং সংকীর্ণ দলীয় মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে বার বার। মেলা মানেই হচ্ছে সমষ্টি কিংবা অনেকের একসাথে অংশগ্রহন,অথচ সরকার তার পছন্দের কিছু প্রতিষ্ঠানকে কেবলমাত্র সেখানে অংশগ্রহনের সুযোগ দিয়ে মেলাকে তার সংজ্ঞাহীনতার দিকেই ঠেলে দিয়েছে।

এ বছর ও মেলায় আবেদনকারী সব প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহন করার সুযোগ দেয়া হয়নাই। "জামাআত সম্পৃক্ততা" শুধু এই হিংসাত্মক অমূলক দাবী তুলে দেশের অনেকগুলো জনপ্রিয় প্রকাশনীকে ষ্টল বরাদ্দ দেয়া হয় নাই । একটি দলীয় সম্পৃক্ততার ছুঁতোয় যেখানে ষ্টল বরাদ্দ দেয়া হয়না সেখানে কিভাবে সরাসরি দলীয় সাইনবোর্ডে(আওয়ামীলীগ ও বিএনপি) ষ্টল বরাদ্দ পেয়ে থাকে এই আজব প্রশ্নের জবাব বোধ করি শেখ হাসিনা কিংবা তার দলের লোক ছাড়া আর কেউ দিতে পারবেনা। যে দেশে আওয়ামীলীগ আর বিএনপি রাজনীতি করে ঠিক সে দেশেই জামাআত ও রাজনীতি করে, ভাষা আন্দোলনে যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের কোনই অবদান নেই সেই শেখ মুজিবের দল যদি ভাষা আন্দোলনের চেতনার মেলায় ষ্টল দিতে পারে তাহলে ভাষা সৈনিক প্রফেসর গোলাম আজমের লিখিত বই কেন বিক্রি হতে পারবেনা?তার লেখা বইয়ের ষ্টল কেন বরাদ্দের অনুমতি পাবেনা? যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে একুশে মেলা হয় সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সফল জিএসের বই কেন বিক্রির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হবে? নিষ্পাপ এই বই মেলাটিকে ও আওয়ামীলীগ তার নিজের সম্পদ দাবী করে তার গায়ে কলংকের কালিই লেপন করার নিকৃষ্ট চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । যেখানে অসংখ্য গাজাখুরি, নিম্ন মানের উপন্যাস আর অনৈতিক গল্পের বইয়ের স্থুপিকার (অবশ্য সবগুলো না) সেখানে অস্তিত্ত্বের পরিচয় আর নৈতিকতা শিক্ষার বইয়ের মেলাজাত করন নিষিদ্ধ।

কেন এই হঠকারীতা? এ সব কিসের ইংগিত? কোন আদর্শকে ভয় পেয়ে তার চলার পথ রুদ্ধ করা নাকি নিজেদের কলংক ঢাকার জন্য মিথ্যা ইতিহাসের দিগন্ত উম্মোচন করার হীন প্রয়াস? না এমনটি হলে এটা নিতান্তই ছোট,নিচ,নোংরা,হিংসাত্মম,সংকীর্ণ,বাহুবলে অন্যের অধিকার হরন,অসাংবিধানিক,আর অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় । চলার পথ রুদ্ধ করে কিংবা মিথ্যা ইতিহাসের আবডালে কোন কালজয়ী আদর্শকে চ্যুত করা যায়না এটা প্রমানিত সত্য। একুশ আমাদের অহংকার, আমাদের চেতনার সন্দ্বিপন,রক্ত দিয়ে কেনা পৃথীবি বিখ্যাত অর্জন,সেই একুশে খুঁজে পাওয়া ভাষা আজ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত আর সেই ভাষার চেতনার একুশে মেলা আন্তর্জতিকীকরন করা হোক এটাই আমাদের প্রত্যয় তবে তা যেন হয় দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্ধে উঠে উদারতা,ভালোবাসা আর সহমর্মিতার মধ্য দিয়ে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.