আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি প্রাচীন দিনের জন্ম কাহিনী

হাউকাউ পার্টি

অনেক অনেক যুগ আগে যখন পৃথিবী বা সমুদ্র বা বায়ু কিছুই ছিল না-তখন ছিলেন কেবল বিশ্ব-পিতা। তাঁকে কেউ সৃষ্টি করে নাই, কেউ তাঁকে দেখতে পায় না। এখানে ছিল গিন্নুঙ্গা নামক একটা বিশাল বড় গর্ত। গহব্ববরের দক্ষিনে আগুনের দেশ, সুৎর্র্ নামে বিশাল দৈত্য জ্বলন্ত তলোয়ার হাতে সেই দেশে পাহারা দিত। সেই গিন্নুঙ্গা নামে গর্তের ভিতরটা ছিল বড়ই ঠাণ্ডা।

হ্নরগেল্মির ঝরণার জল তাতে পড়ে বরফ হয়ে যেত, সুৎর্রের তলোয়ার হতে আগুনের ফিনকি পড়ে সেই বরফকে গলিয়া দিত। সেই আগুন আর বরফের লড়াই হতে গিন্নুঙ্গা গহ্বরের ভিতরে য়ীমির নামের এক জন অতি ভীষণ দৈত্য আর আধম্লা নামে গাছ জন্ম নিল। য়ীমির আধম্লাকে পেয়ে তার দুধ খেতে লাগলো, আর আধম্লা আশেপাশের বরফে লবনের গন্ধ পেয়ে তাই খেতে আরম্ভ করল। খেতে খেতে সেই বরফের ভিতর থেকে একটি দেবতা বের হয়ে আসলেন, এর নাম বুরি। যাই হোক, এই য়ীমির হতে অসুর আর বুরি হতে দেবতাগণের জন্ম, আর জন্মের পর থেকেই অসুর আর দেবতা মধ্যে বিবাদ শুরু হয়ে যায়।

যুগযুগ ধরে সেই বিবাদ চলতে থাকে, শেষে অনেক যুদ্ধের পর দেবতারা য়ীমিরকে মেরে ফেলেন। আর যত অসুর ছিল, য়ীমিরের রক্তের বন্যায় সকলেই ডুবে মারা যায়, বাকি থাকে কেবল বার্গেল্মির আর তার স্ত্রী। এই দুজনে তখন একটা নৌকায় করে পৃথিবীর একেবারে শেষে প্রান্তে গিয়ে ঘর বাঁধেন। তখন থেকে ই জায়গাটার নাম হয় নাম হয় 'জোতন্হাইম' বা দৈত্যপুরী। ধীরে ধীরে সেই দৈত্যপুরীতে অসুরের বংশ বাড়তে লাগলো, দেবতা অসুরের বিবাদও আবার নতুন করে জেগে উঠলো।

এদিকে অসুরেরা সব মারা যাওয়াতে দেবতারা কিছুদিনের জন্য যেন একটু আরাম পেলেন। তখন তাঁদের মনে হলো যে, "চারিদিকে কেবলই শূন্য আর কুয়াশা আর আগুন আর বরফের লড়াই দেখতে একটুও ভাল লাগে না। " তাই তাঁরা সকলে মিলে যুক্তি করলেন যে, চলো আমরা য়ীমিরের দেহ হইতে গাছ-পালা নদ-নদী আর পাহাড় পর্বতের সৃষ্টি করি। য়ীমিরের রক্তে সমুদ্র ত আগেই হয়েছিল, এখন তার গায়ের মাংশে তৈরি হলো মাটি, হাড় আর দাঁত হলো পাহাড়-পর্বত, চুল-দাড়ি হইল গাছপালা, মাথার খোলটা হলো আকাশ, মগজগুলো হল মেঘ। ওদিকে পরে থাকতে থাকতে য়ীমিরের মাংশ পচেঁ তাতে পোকা ধরে গিয়েছে।

দেবতারা ভাবলেন, এই পোকাগুলিকে কি করা যায়? যেই ভাবা, অম্নি কাজ। এগুলিকে তারা বানিয়ে ফেললেন পরী, ভূত আর বামন। পরীরা দেখতে ভারি সুন্দর; তারা আকাশ আর পৃথিবীর মাঝখানে থাকে, চাঁদের আলোতে খেলা করে, প্রজাপতির পিঠে চড়ে ফুলগুলিকে ফুটাতে আসে, আর নানাভাবে লোকের উপকার করে। ভূত আর বামনগুলি দেখতে যেমন বিশ্রী তেমনি পাজী। এরা মাটির নীচে থাকে, সোনা-রূপা মনি-মানিকের সন্ধান রাখে, আর মানুষের ক্ষতি করতে রাত্রে বেরিয়ে আসে।

দিনে এরা মাটির উপরে আসতে পারেনা, আসলে পাথর হয়ে যায়। এই সকল সৃষ্টির মাঝখানে দেবতারা আগেই তাদের নিজের থাকার জায়গা ঠিক করে রেখেছিলেন। সেই জায়গার নাম আসগার্ড বা স্বর্গ। সেখানকার রাজা ছিলেন বিশ্ব-পিতা। তাঁর নাম ওডিন বা Woden।

এনার নাম হতেই ওয়েডনেজ ডে এর উৎপত্তি। আর আমাদের বুধবারে বুধ হলেন একজন বৈদিক দেবতা। ওডিন স্বর্গের সকলের চেয়ে উঁচু সিংহাসনে বসে তাঁর রানী ফ্রিগ্গার Frigga সাথে স্বর্গ মর্ত পাতাল কোথায় কি হচ্ছে তার খোজ খবর নিতেন। ওডিনের একটা যাদুর বল্লম ছিল, এজন্য কেউ তাকে পরাজিত করতে পারতো না। ওডিনের এক পুত্রের নাম টিউ Tiu।

তার নামে মঙ্গলবারের নাম টিউজ ডে Tuesday হয়েছে। ইনি বীরত্ব এবং যুদ্ধের দেবতা। ওডিনের যেমন একটা আশ্চর্য বল্লম ছিল, এর তেমন একটা তলোয়ার ছিল। ওডিনের আর-এক পুত্র থরের Thor নামে ইংরেজী থার্সডে Thursday বা বৃহ:স্পতি হয়েছে। থরের মত শক্তি কোনো দেবতার ছিল না, তাঁর হাতুড়ি দিয়ে যাকেই তিনি গদাম করে মারতেন, তা সে পাহাড় হোক, আর পর্বতই হোক, তখনই গুঁড়া হয়ে যেত।

স্বর্গে বাইফ্রেস্ট্ নামে বিচিত্র সেতু আছে (যাকে আপনারা রামধনু নামে চেনেন) সেই সেতুর উপর দিয়ে দেবতারা যাওয়া আসা করতেন। কিন্তু থর্ কখনো সেই সেতুর উপর উঠতেন না,কারণ তিনি উঠতে গেলে সেতু ভেঙ্গে পড়ত । ফ্রাইডে বা শুক্রবার যার নামে হয়েছে, তিনি হলেন সৌন্দর্যের দেবী ফ্রিয়া Freya। কারো কারো মতে ইনিই ওডিনের রানী ফ্রিগ্গা। যুদ্ধে যত বীরের মৃত্যু হত, তাদের অর্ধেক ফ্রিয়ার কাছে আশ্রয় পেতো।

ফ্রিয়া তাহার সঙ্গিনী ভ্যাল্কীরদের নিয়ে সেই বীরদিগকে নিতে যুদ্ধ ক্ষেত্রে আসতেন। তাঁর সভায় গিয়া বীরদেরর সুখের সীমা পরিসীমা থাকত না। রোমান দেবতা স্যাটার্ন ছিলেন ফসল আর কৃষির দেবতা। তিনি সপ্ত টাইটানদের একজন। এনার স্ত্রীর নাম ওপস।

একবার বিশ্ব পিতা তাকে অভিশাপ দেয় যে, তাকে তার যেকোন সন্তান ক্ষমতাচুত্য করবে। এজন্য যখনই ওপস নতুন সন্তান জন্ম দিত, স্যাটার্ন সাথে সাথে মেরে =বাচ্চা টাকে ফেলতো। এভাবে এক সময় তাদের সপ্তম সন্তান জুপিটারের জন্মের সময় তিনি ক্রীটে বেড়াতে যান। এই সুযোগে ওপস জুপিটারকে লুকিয়ে ফেলে সেখানে একটা পাথর রেখে দেয়। এভাবে বেচেঁ যান জুপিটার এবং তিনি তার বাবা পরিচারক হিসেবে কাজ করতে থাকেন।

যাই হোক এই Saturn থেকেই Saturday বা শনিবারের এর জন্ম। সপ্তাহের মধ্যে এটাই একমাত্র ইংরেজি নাম যার উৎপত্তি হয়েছে রোমান মিথ থেকে। আর আমাদর শনিবার নামটা এসেছে বৈদিক দেবতা শনি থেকে, ইনি খুবই বদ মেজাজি দেবতা। বল্মিকি মুনির অভিশাপের কারণে যার দিকে তাকাতেন, তারই কোন না কোন ক্ষতি হয়ে যেত। রবি আর সোমবার সম্পর্কে কোন তথ্য এখনও পর্যন্ত খুজেঁ পাইনি, তাই এদের এবারের মতো রেহাই দিলাম উৎস: উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর 'নরওয়ের পুরাণ'



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.