আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষমতাসীন দলের ডিজিটাল ইনকামের নতুন রাস্তা।

যেমন ঢাঁকের বাড়ি তেমনি নাচুনে বুড়ি.....

জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী গ্রেফতারের নামে পুলিশের বিরুদ্ধে রমরমা বাণিজ্য এবং নিরীহ লোকজনকে হয়রানির অভিযোগ উঠছে। এই বাণিজ্যে ব্যক্তিগত শত্রুতা, জমিজমা নিয়ে বিরোধ ইস্যুকে ভালোভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। নিরীহ মানুষকে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতে পুলিশের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দলের কোনো কোনো নেতা। এদিকে অব্যাহত গ্রেফতার অভিযানের অংশ হিসেবে রাজশাহীতে আরও ১১, সিলেটে ৪ ও সাতক্ষীরায় ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

তেঁতুলিয়ায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের মিছিল থেকে জামায়াত ও শিবিরের অফিসে হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় পুলিশ কাছেই দাঁড়িয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলে জানা গেছে। দেশজুড়ে গণগ্রেফতার, জামায়াত-শিবিরের অফিসে হামলা-ভাংচুর চালিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ উস্কে দেয়ার প্রতিবাদে গতকাল রাজশাহী বারের ৫২ আইনজীবী এক বিবৃতি দিয়েছেন। আমাদের আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর। রাজশাহী অফিস জানায়, রাজশাহী মহানগরীতে গণহারে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী গ্রেফতারের নামে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে। এ বিষয়ে রাজশাহী বোয়ালিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন মহানগরীর চকপাড়ার গৃহবধূ আঞ্জুমান। আঞ্জুমান বলেন, তার স্বামী রবিউল ইসলাম ভোলা ও দেবর সারোয়ার জাহান টোলার পৈতৃক জমির দলিল জাল করে এক ভূমিদস্যু তা দখলের অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। পুলিশ প্রশাসনকে হাত করে তাদের গ্রেফতার করতে উঠেপড়ে লাগে সে ও তার চক্র। বোয়ালিয়া থানার ওসি জসিম উদ্দিন জমি ছেড়ে না দিলে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার করা হবে বলে কয়েকদিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছেন।

তারা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওসি তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করে। গৃহবধূ আঞ্জুমান বলেন, ওসির হুমকির বিষয়টি মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। ওসি গতকাল ভোরে চকপাড়ার ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে নিরীহ রবিউল ইসলাম ভোলা ও সারোয়ার জাহান টোলাকে গ্রেফতার করে। এরপর তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে মতিহার থানায় সোপর্দ করে। আঞ্জুমান বলেন, তার স্বামী কোনোদিনই শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

তিনি রাজশাহী মহানগরীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। দেবর সারোয়ার জাহান টোলা কৃষিকাজে সম্পৃক্ত। আঞ্জুমান ওসি জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, তার স্বামী ও দেবরের আশু মুক্তি দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজি ও আরএমপি’র কমিশনারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। উল্লেখ্য, জমি ছেড়ে না দেয়ায় রবিউল ইসলাম ভোলা ও সারোয়ার জাহান টোলাকে এর আগেও বোয়ালিয়া থানার ওসি গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির মিথ্যা মামলা দিয়েছিলেন।

ওই মামলায় তারা দু’জনই জামিনে রয়েছেন। এ ব্যাপারে বোয়ালিয়া থানার ওসি জসিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্দেশে ভোলা ও টোলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা শিবির ক্যাডার কিনা তা মেয়র-ই ভালো বলতে পারবেন। মেয়র লিটনের মোবাইল ফোনে বারবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। রাজশাহী পুলিশ কমিশনার নওশের আলীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বোয়ালিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগটি পেয়েছেন।

বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে যারা শিবির ক্যাডার নয় তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। রাজশাহীতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদের সবাইকে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা থেকে এদের শিবিরকর্মী সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়।

তবে পুলিশ কারও পরিচয় জানাতে রাজি হয়নি। গ্রেফতারকৃতদের বিকাল ৪টায় কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এরা ক্লাস করার জন্য ক্যাম্পাসে গিয়েছিল। পরে দুপুরের দিকে পুলিশ শিবির সন্দেহে তাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।

সিলেট থেকে ইকবাল মাহমুদ জানান, সিলেটে চিরুনি অভিযানের অংশ হিসাবে গত দু’দিনে ৪ শিবিরকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা মদনমোহন কলেজের ছাত্র। ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় গতকাল গ্রেফতার হয় ইফতেখার আহমদ ও মুক্তার আহমদ। রোববার ক্লাস শেষে ফেরার পথে ছয়ফুল ইসলাম ও আশরাফুল হককে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। শুক্রবার জামায়াতের মিছিলে পুলিশি হামলার পর ১১ জনসহ এ পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করা হলো।

এদিকে সিলেটে জামায়াত ইস্যুতে অভিনব মামলা বাণিজ্যে নেমেছে স্থানীয় পুলিশ ও আওয়ামীলীগের নেতারা। চিরুনি অভিযানের নামে নিরীহ মানুষকে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সারা দেশের ন্যায় সিলেটে পাড়ায় পাড়ায় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের তালিকা তৈরি করছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। এ তালিকার ভয় দেখিয়ে ইতোমধ্যে নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা উেকাচ আদায়ের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে এ মামলা বাণিজ্য চলছে।

শুক্রবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল করতে গিয়ে দফায় দফায় পুলিশী বাঁধার মুখে পরে জামায়াত ও শিবির। এসময় ইট পাটকেলে র্যাব ও পুলিশের কয়েক সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় জামায়াত ও শিবিরের ৩’শ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ এ্যসল্ট মামলা দায়ের করে। আর এ মামলাকে কেন্দ্র করেই ভাগ্য খুলে যায় পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও আওয়ামীলীগ নেতাদের। শুক্রবার সহিংসতার সময় নগরীতে গণগ্রেফতার চালিয়ে নিরীহ পথচারী, হাসপাতালের রোগী, বিয়ের আসরে অভ্যাগত অতিথি এমনকি হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ ১৮ জন শিবির ক্যাডার সন্দেহে আটক করে পুলিশ। শুক্রবার রাতেই আটককৃতদের যাচাই-বাছাই এর নামে শুরু হয় টাকা আদায়ের অবৈধ মিশন।

আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা এ যাচাই-বাছাই পর্বে নেপথ্য ভূমিকা রাখেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর জামায়াত কিংবা শিবির ক্যাডার এর ‘তালিমা’ থেকে মুক্তি পেতে ওই নেতাকে মোটা অংকের নজরানা দিতে হয়েছে আটককৃতদের। আর যারা নজরানা দিতে সমর্থ হননি তাদেরকে যথারীতি শিবির ‘ক্যাডার’ হিসেবে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত তারা বহু চেষ্টা করেও জামিন পাননি। নগরীর শিবগঞ্জ এলাকার সত্যেন্দ্র কুমার দেব এর ছেলে বিজয় কুমার দেব নামের একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীও শিবির ক্যাডার পরিচয়ে জেল খাটছেন।

শুক্রবার নগরীর একটি ক্লিনিকে চিকিত্সাধীন তার জনৈক আত্মীয়কে দেখতে এসেছিলেন তিনি। এসময় পুলিশের গণগ্রেফতারের শিকার হন বিজয়। আটককৃতদের মধ্যে আরেকজন সদর উপজেলার রায়েরগাঁও গ্রামের আপ্তাব আলীর পুত্র ক্বওমী মাদ্রাসা ছাত্র ইসা মিয়াকেও অনুরূপ ভাগ্য বরণ করতে হয় । শুক্রবার রাতেই আটকের খবর শুনে তার আত্মীয় স্বজনেরা ছুটে যান ক্ষমতাধর এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায়। সেখানে আরো অনেকেই নির্ধারিত অংকের নজরানা দিয়ে মুক্তিলাভের সুসংবাদ নিয়ে বের হলেও টাকা না দিতে পারায় ব্যর্থ মনোরথে ফিরতে হয়েছে দরিদ্র ইসা মিয়ার স্বজনদের।

প্রসঙ্গক্রমে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আটককৃতদের ব্যাপারে বিভিন্ন চ্যানেলে তথ্য সংগ্রহ করে যারা নির্দোষ তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। এদিকে, শুক্রবারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও মহানগর জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরসহ ৩’শ জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে। অভিযুক্তদের পাকড়াও করতে প্রায় প্রতিরাতেই নগরী ও আশপাশের শিবির প্রভাবাধীন এলাকায় হানা দিচ্ছে পুলিশ। এ্যসল্ট মামলার ভয় দেখিয়ে পাড়ায় পাড়ায় উেকাচ বাণিজ্যের জাল পেতেছেন পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা ও আওয়ামীলীগের নেতারা।

মামলা আতংকে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা নিরূপায় হয়ে ছুটছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের বাড়িতে। বিশেষ করে চলমান এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থী ছাত্রদের অভিভাবকেরা তাদের সন্তানের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চেয়ে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছেন। এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা চেয়ে কয়েক’শ আবেদন জমা পড়ে েজনপ্রতিনিধিদের দিয়ে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের তালিকা পণনয়নের খবরে রীতিমত আতংক সৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী থানার এসআই খোরশেদ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এমন তালিকা প্রণয়নের খবর শুনেননি বলে জানান। প্রশাসনিকভাবেও এ ধরণের কোন তালিকা প্রস্তুতের জন্য বলা হয়নি বলে জানান।

তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ার্ড কাউন্সিলর স্বীকার করেছেন দল থেকে তাকে তার এলাকার জামায়াত-শিবির কর্মীদের নাম, ঠিকানা প্রেরণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ তালিকা প্রণয়নের কাজ দলীয় কর্মীরা করছেন বলেও জানান এ জনপ্রতিনিধি। সুত্র: আমারদেশ আরো: লিখেছেন ও.জামান Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.