আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যথেষ্ট দূর্নাম নিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে ফিরে



মানুষ বেশি কথা বললে তাকে দোষ দেয়া হয়। আর চুপ থেকে দোষের পাল্লায় পড়ে আমাকে যথেষ্ট দুর্নাম নিয়েই হাছন আর শাহ আবদুল করিমের সুনামগঞ্জের পথে রওনা হতে হল। প্রাণবন্ত মানুষ শওকত ভাই, এটিএনের শওকত মিল্টনের এই আন্তরিক দোষারোপ অবশ্য বেশ ভালোই লাগছিল। খুব সকালের ঘুম ভাঙ্গা, দীর্ঘ ভ্রমণের আগে ছোটখাটো আরেক ভ্রমণ সেই গুলশান এবং তার পর পরই মাত্র পনেরো মিনিটের কথা বলে আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্টানের পরিচালকের পাক্কা সোয়া একঘন্টা একটা দীর্ঘ ব্রিফিং হজম। ভাবটা এমন ফ্রিতে যাইতেছেন একটু বাষণ শুনতেই হইবো।

এসবসহ যাবতীয় ধকল শেষে শওকত ভাইয়ের চেঁচামেচি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে দিয়েছিল জীবনের প্রথম রওনা হওয়া কোনও মিডিয়া ট্যুরের। যাত্রা শুরুর কথা সকাল আটটায়। কিন্তু বাঙ্গালী সময় জ্ঞানের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে সেটা শুরু হলো সাড়ে দশটায়। তার আগে, আমাদের পৌঁছার কথা ৭ টা থেকে সাড়ে ৭টায় হলেও বাঙ্গালী সময় জ্ঞানের প্রতি আরো এক্সট্রা পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে আমি পৌঁছালাম ৯টায়। সবাইকে নিয়ে গাড়ি রওনা হল গুলশান থেকে।

বাড্ডা রামপুরা বিশ্বরোড দিয়ে যাত্রাবাড়ী হয়ে গাড়ি চলে যাবে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে। ভ্রমণের মূল শর্ত হল দেখা। তাই গাড়িতে ওঠে সবাই প্রথম কিছুক্ষণ দেখাদেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ভ্রমণের মূল শর্ত পূরণ করতে গিয়ে চেনা ঢাকাও সবাই বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখতে আরম্ভ করলেন। এ দেখাদেখির চোখে এসে বাদ সাধলো চোখের সামনে হঠাৎ ধরা চলতি পথের প্রথম আপ্যায়ন হিসেবে আসলো অ্যাপেল আর কমলা।

বাইরে কি আছে তা দেখার চেয়ে সবাই মোটামুটি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম কমলা আর আপেলের আবরণের ভেতরে কি আছে তা দেখার জন্য। গাড়ি চলছে। যাব, গাড়ি চলে না... চলেনা উচ্চারণে দেশ কাঁপানো বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের সুনামগঞ্জে। হাছন রাজার সুনামগঞ্জে। ঘরবাড়ি ভালো না যে হাছনের তার বাড়ির দিকেই যাচ্ছি।

আমরা যাচ্ছি সেই দিকে, যেখানে এক সময় শাহ আবদুল করিম সুন্দর দিন কাটাতেন। তবে তার এলাকায় কেমন কাটবে তা এখনও শিওর না হলেও আমাদের এ যাত্রায়, এই মাইক্রোবাসের ভেতরে দিনটা সুন্দরই কাটতে লাগল। গাড়ির ভেতরে ছিলেন বেশিরভাগই মিডিয়াকর্মী। শওকত ভাইয়ের কথাতো আগেই বললাম। সঙ্গে ছিলেন অগ্রজ সাংবাদিক বিপ্লব মোস্তাফিজ।

ছিলেন আরটিভির ঝুমুর বারি, চ্যানেল আইয়ের পান্থ রহমান, ডেইলি স্টারের ইমরান। সঙ্গে তিন চ্যানেলের তিন সাংবাদিকের সহকারী স্বজন, রানা এবং রফিক। ছিলেন আমন্ত্রণ জানানো প্রতিষ্ঠানের দুই সুহৃদ মাসুম ভাই এবং সুব্রত দা আর একজন অস্ট্রেলিয়ান এডুইনা এছাড়াও একটি এনজিও থেকে আসা অদৃ নামের একজন। গাড়ি চলছে। কখনও থেমে থেমে।

কখনও দ্রুত গতিতে। দুপুর নাগাদ গাড়ি হেলেদুলে পৌঁছাল অর্ধেক পথ। একটা হোটেলে নেমে খাওয়া দাওয়া করতে হবে। সবাই ক্ষুধার্ত। রাতের বেলায় এ ক্ষুধা থাকলে পূর্ণিমা চাঁদকে হয়তো ঝলসানো রুটি ভেবে কিছুটা নিবারণের চেষ্টা করা যেত।

কিন্তু দিনের বেলা হওয়ায় সূর্যকে নিয়ে সে কল্পনা করে নিজেই ঝলসে যাওয়ার রিস্ক নিতে কেউ রাজি হল না। কারণ, সবার চোখের সামনে ছিল হোটেলের ঝলসানো রুটি অথবা ভাতের আয়োজন। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভ্রমণযাত্রী পাবদা মাছ দিয়েই সারল প্রথম খাবারায়োজন। খাওয়া শেষে আবার যাত্রা শুরু। যাওয়ার এ অংশ ছিল আরও জমজমাট।

শওকত ভাইয়ের যথারীতি মাতিয়ে তোলা। এবার তবে এক্ষেত্রে তিনি তার ভাষারীতি পাল্টে বরিশালীয় ব্যবহার করেছেন। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিপ্লব ভাইয়ের রাবিন্দ্রীক ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল বেশ উপভোগ্য। সঙ্গে যে যার মতো সহযোগিতা করেছে এই বাকযুদ্ধে। শুধু একজন ছাড়া।

এনজিও কর্মী অদৃ। যিনি প্রায় সারাদিনই ঘুমিয়েছেন। শওকত ভাইয়ের যন্ত্রণায় যার বারবার ঘুম ভাঙতে হয়েছে এবং সারাদিনই জেগে জেগে যিনি একটা কথাই বলেছেন, রাতে ঘুম হয়নি। রওয়ানা দেয়ার আগেও যিনি যথেষ্ট পেইন দিয়েছেণ। তাকে বারবার বলা হয়েছে গাড়ী যাবো রামপুরা-বাড্ডা বিশ্বরোড ধরে।

সায়েদাবাদ দিয়ে বের হবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরপর তার প্রশ্ন, আচ্ছা এইটা কি মগবাজার দিয়ে যাবে? সবার উত্তর না। আবার তার প্রশ্ন এটা কী মগবাজার দিয়ে যাবে? সবার একই উত্তর, না। পরে জানা গেল তিনি তার বাসায় জানাবেন কোনদিক দিয়ে যাচ্ছেন। যার বাসা মগবাজার এর আশেপাশে হওয়ায় সেটা বাসায় জানালে সবার বুঝতে সুবিধা হতো।

বাড্ডা রামপুরা বললে বাসায় আবার চিন্তায় পড়ে যেতে পারে। একটা সময় অবশ্য ফাঁকে ফাঁকে সবাই কম-বেশি ঘুমিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় পৌঁছলাম আইউসিএন-এর লোকাল অফিসে। ক্লান্ত সবাই ঘুম ঘুম চোখে যখন বিশ্রামের জায়গা খুঁজছিল তখন তাদের রাত্রীকালীন খাবার আয়োজন অনেকটাই ঘুম কাটিয়ে দিয়েছে নিজ দায়িত্বে। আমরাও নিজ দায়িত্বে খাবার সেরে ঘুমাতে গেলাম আমাদের জন্য নির্ধারিত গেস্ট হাউস সানক্র্যাডে। ঘুমানোর আগে সেই শৈশবের রুটিনের মতো জানিয়ে দেয়া হল, সকাল ছটার মধ্যে উঠতে হবে।

তাই ঘুমিয়ে তৃপ্ত হওয়ার আগেই অতৃপ্তি নিয়ে ঘুমাতে গেলাম। (চলবে) ছবি: ১. জাদুঘাটা নদীর সামনে খাড়াইয়া আছি। ভ্রমণ কাহিনীর সাথে বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়াইয়া লেখকের একটা ছবি দেয়া লাগে। এইটা সেই শর্ত পূরণের নিমিত্তে সংযোজিত। ২. এটিএন বাংলার সিনিয়র রির্পোটার, আলোচ্য ভ্রমণের প্রাণ শওকত মিল্টন ৩. ইহারা সেই পাখি, যাদের অতিথি পাখি বলা হয়।

বিনা পাসপোর্টে আমাদের দেশ ভ্রমণ করিয়া যায় প্রতিবছর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।