আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লালনের আখরায় কিছুক্ষন



কুষ্টিয়া গিয়েছিলাম ৪ ফেব্রুয়ারী। ওখানে আমার নানাবাড়ী। অনেক দিনপর এলাম প্রায় ১০ বৎসর। শহরের এদিক ওদিক ঘুরলাম। শেষটায় ভাবলাম লালনের আখরা আর কুঠিবাড়ী ঘুড়ে আসি।

তাই দুলাভাইকে নিয়ে চললাম। সাথে ছিল ভাইয়ার ছোট্ট মটর সাইকেল। মটর সাইকেলটা ছোট কিন্তু ইউজার ফ্রেন্ডলি। চড়ে বেশ মজা পেলাম। সে দিন আমরা ১০.৩০টার দিকে তাঐদের(আরিফ ভাইয়ের বাবা-মা) বাসে তুলে প্রায় ১১.০০টার দিকে লালনের আখরার দিকে যাত্রা শুরু করি।

আমরা যখন পৌছি তখন প্রায় ১২টা কি ১২টা ২০ মিনিট। মাজারের সামনে একটা খোলা জায়গা আছে সেখানে কিছু দোকাণীরা পসরা সাজিয়ে বসে আছে বিভিন্ন কুটির পন্য। বেশীর ভাগ দোকানেই একতারা, দোতারা, লালনের স্টাচু, শোপিছ, বাশী ইত্যাদি আর কিছু খাবারের দোকান। মটর সাইকেল রাখার জন্য আছে বিশেষ স্থান ৫ টাকা দিয়ে রাখতে হয়। তার পাশে একটা স্কুল বিশাল মাঠের বেস্টণীওয়ালা।

মটর সাইকেল রেখে আমরা ঢুকলাম লালনের মাজারে, শুনেছি আগে এখানে গেট ছিলনা কিন্তু খালেদা জিয়া সরকার একটা বেষ্টণ দিয়ে দিয়েছে, সাথে করেছে একটা পাঠাগার, রিসার্স সেন্টার আর ওডিটরিয়াম। তবে ফকিররা (লালনের অনুসারীরা) সেই অডিটরিয়ামে উঠেন না, সবাই না যারা বিশেষ ভক্তি করেন। আমি একজনকে জিজ্ঞেস করলাম কেন ওপরে ওঠেন না। সে বলল, আমার গুরু নিচে শুয়ে আর আমি তার উপরে উঠব? গুরুর প্রতি তার ভক্তি দেখে আমি বিমোহিত হলাম। লালনের মাজারটা ঘর মত করে তার ভিতর এক পাশে তার আর অন্য পাশে তার পালক মাতার কবর, আর বাইরে তার পালক পিতা মওলানা মলম শাহ, দাসী ও অণ্য আরো কয়েকজন মুরিদের কবর।

ঔদিকে অডিটরিয়ামের নিচে হারমোনিয়াম, তবলা, দোতারা নিয়ে একদল ফকির গান গাইছে_ " আমি অপার হয়ে বসে আছি ওহে দয়াময়", 'খাঁচার ভিতর অচিন পাখি'। দুলাভাই ছিলেন খুবই কৌতুহলী মানুয় উনি দোতারাটা নিয়ে বাজাতে শুরু করলেন সাথে দোলনী। অবশ্য সেখানে ১ ফকির ছিলেন তার অনুমতি নিয়েই বাজিয়েছিলেন। ওখানে একপাশে এক হকার কিছু পসরা নিয়ে বসে আছে। হাতে বাধার সুতা, রবার ব্যান্ড, বেসলেট, পিতলের কৃষ্ণকলি, গোপাল, রাধা-কৃষ্ণ, চিংড়ি, ঘোড়া, লালন, তাবিজ এর খোল , আজমির শরীফের তাবিজ, ঘটক মাছের কাটা(মাজার ব্যাথ্যা সাড়ায়), কি ফলের বিচীর মালা যা কিনা মাথার সমস্যা ছাড়ায় যেমন মাথা ঘুড়া সাড়ায়।

ওখানকার ফকিরগুলো দেখে বেশ ভাল লাগলো, সাদা পোশাক, সাদা দাড়ি এক কথায় বেশ পবিত্র পবিত্র ভাব। তার সাথে কিছু কথা বললাম। জানতে চাইলাম লালন কোন ধর্মের? বলল, মানব ধর্ম। আমরা বললাম মানব ধর্ম আবার কি? তিনি কি হিন্দু না মুসলমান। হিন্দু না মুসলমান অতো বিবেচনা করার দরকার আছে বাবা।

হিন্দু না মুসলমান তা নিয়ে দন্দে যাওয়ার কি দরকার? তাঁর জীবনী কিছু বললেন। তেমন নতুন কোনো তথ্য পেলাম না। বলল, নেই ভেসে আসার কাহিণী বসন্ত রোগ নিয়ে। তারপর মলম শাহ্ নদীর ধারে ওযু করতে গিয়ে তাকে পান। কিছু কবরের সামনে লেখা লালনের নিজ হস্তে মুরীদ।

বললাম, আপনারা কি সবাই মুরীদ? মানে উনার যারা ভক্ত তাদের কেই কি মুরিদ বলে। তার জবাব না, লালন সাঁই সবাকে মুরিদ করতেন না। এ প্রসঙ্গে উনি একটি কাহিণী বললেন, " তাঁর জীবদ্দশায় একবার ভারত থেকে কিছু লোক এসেছিলেন তার মুরিদ হবারর জন্য মানে শিষ্যত্ব গ্রহন করার জন্য। তারা জানতো লালনের কিছু আধ্যাত্মিক শক্তি ছিলো। (আসলোই ছিল_তিনি অসময়ে গাছে আম দেখিয়েছেন তা খাইয়েছেন)।

তাই তারা কিছু চুন এনেছিল পরীক্ষা করার জন্য কি রকম আধ্যাত্মিক শক্তি আছে তাঁর তা পরখ করার জন্য। লালন তাদেরকে শরবত দিয়ে আপ্যায়ন করলে তারা তা পান করে বলেছিল আমরা আপনার জন্য কিছু চুন এনেছি যা আমরা শরবত হিসাবে সব সময়ই খায়। লালন বললে ঠিক আছে, আমি খাচ্চি তবে তোমরাও এ থেকে কিছু পান কর। তারা না না করছিল যে আপনি গুরু আপনার সামনে খাবনা। ওদিকে লালনের আদেশ না খেলে মুরীদ করা হবে না।

শেষমেশ তারা খেতে অপারগতা প্রকাশ করে। লালন তাঁর ভক্তদের বলে খাও তারা কোন রকম দ্বিধা না করে ঢক ঢক করে পান করা শুরু করে দেয়। তখন লালন বলে দেখ এরাই আমার প্রকৃত ভক্ত । " এবার আমি তাকে আমের কাহিণীটা খুলে বলতে বললাম। "একবার এক সাধূর অসময়ে আম খাওয়ার সাধ হল।

লালন বলল ঐ গাছে আম আছে দেখগা পাবা। ঠিকই ঐ সাধূ ওখানে ৫টা আম দেখলেন। " ফকির আমাদের ঐ দিকে হাত দিয়ে দেখালেন খুব সম্ভবত সেখানটায় আমের গাছ ছিল। তাকেঁ বললাম লালনের কোন আসল ছবি আছে কিনা? তিনি জানালেন না তার জীবদ্দশার কোন ছবি নেই তবে বিভিন্ন সময়ে নানাজন একেঁছেন। একদিকে সাইড করে যে ছবিটা তা অনেকটা মিলে তাঁর চেহারার সাথে।

তবে কুঁজো হয়ে চেয়ারে বসে থাকাটা নাকি তার সাথে মেলেনা। কয়েক দিন আগে ভারত থেকে এক লোক এসেছিল ১টা ছবি আকিয়ে নিয়ে তাতেও লালনের কোন মিল ছিলনা, মাথার উপর কোন খোঁপা ছিলনা। তিনি লালনকে দেখেছেন কিনা এমন জবাবে বললেন, না তবে তার বাবা দেখেছেন আর তার দাদা ছিল লালনের কাছের শিষ্য। এই ছিল মোটামুটি লালনের আখরা ছেউরিয়া দর্শনের কথা তারপর আমরা চললাম শিলাইদহ্ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠি বাড়ীর দিকে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।