আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আশার প্রদীপ নিভে গেল



বর্গাচাষি বাবার অভাবের সংসারে আবুবকর সিদ্দিক ছিলেন একমাত্র আশার আলো। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তাকে নিয়েই গর্ব ছিল সবার। অনেক কষ্টের মধ্যেও তার লেখাপড়ার খরচ জোগাতে কখনও আপত্তি করেননি কাঁচামাল ব্যবসায়ী বড় ভাই আব্বাস উদ্দিন। আবুবকরও তাদের ভালোবাসার অমর্যাদা করেননি। মন দিয়ে পড়াশোনা করেছেন।

ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবেন। মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর পাশাপাশি সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবেন। দুখিনী মা রাবিয়া বেগমের মুখে ফোটাবেন সুখের হাসি। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দু'পক্ষের সংঘর্ষে অকালমৃত্যু হলো মেধাবী এ ছাত্রের।

আবুবকর সিদ্দিকের মামা ও তার হাইস্কুলের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ গতকাল বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে ভাগ্নের লাশ নিতে এসে সমকালকে এসব তথ্য জানান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'ওর মাকে গিয়ে আমি কী বলব? কীভাবে সান্ত্বনা দেব? আর কোনো বাবা-মায়ের কোল যেন এভাবে খালি না হয়। ' তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় আবুবকর বরাবর খুব ভালো ফল করত। ' চতুর্থ সেমিস্টার পর্যন্ত তিনি ছিলেন প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয়। তবে তার লক্ষ্য ছিল প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়া।

এজন্য তিনি মাঝে বেশ কিছুদিন বাড়ি যাননি। ভাই আব্বাস উদ্দিনকে বলেছিলেন, আগামী মার্চে পঞ্চম সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হলে তিনি বাড়ি ফিরবেন। তখন লম্বা ছুটির পুরো সময়টাই বাড়িতে থাকবেন। সাংসারিক কিছু বিষয়ে বড় ভাইয়ের সঙ্গে তার আলোচনার কথাও ছিল। শেষ পর্যন্ত তার আগেই তিনি ফিরলেন, তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে।

তার মৃত্যুর খবর সন্ধ্যা পর্যন্ত গোপন রাখা হয় মায়ের কাছে। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় তার লাশ গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ীতে পেঁৗছলে কান্নার রোল পড়ে যায়। ছেলের লাশ দেখে অচেতন হয়ে পড়েন মা রাবিয়া খাতুন। আবুল কালাম আজাদ জানান, গোলাবাড়ী গ্রামের সবাই আবুবকরকে একনামে চেনে। ওই এলাকার মধ্যে একমাত্র সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় তাকে সবাই খুব সমাদর করত।

বাবা-মায়েরা তাদের প্রাইমারি বা হাইস্কুলপড়ূয়া সন্তানকে বলতেন, তোমাকে আবুবকরের মতো ভালো রেজাল্ট করতে হবে। ' এ কারণে এলাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনি ছিলেন আদর্শ। গতকাল তার লাশ দেখে তাদের কেউই অশ্রু ধরে রাখতে পারছিলেন না। আবুবকরের মামা জানান, সমাজসেবামূলক কাজে আবুবকরের অনেক উৎসাহ ছিল। সে স্বেচ্ছায় রক্তদানের সংগঠন 'বাঁধন'-এর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সঙ্গে জড়িত ছিল।

বিভিন্ন সময়ে মুমূর্ষু মানুষের জীবন বাঁচাতে রক্ত দিয়েছে সে। আহত হওয়ার পর তার জন্যও প্রচুর রক্তের প্রয়োজন পড়ে। তবে এজন্য রক্তের অভাব হয়নি। কিন্তু সেসব রক্ত আর তার লাগেনি। তিনি জানান, আবুবকরের পরিবার চলে মূলত তার বড় ভাই আব্বাস উদ্দিনের সামান্য আয়ে।

তার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট ভাই ওমর ফারুক দশম শ্রেণী ও বোন আয়েশা মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ছে। আরেক ছোটবোন পড়াশোনা করে না। আবুবকর সিদ্দিক ২০০৬ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মধুপুর শহীদ স্মৃতি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এর আগে ২০০৪ সালে গোলাবাড়ী হাইস্কুল থেকে বি-গ্রেডে এসএসসি পাস করেন।

২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন। সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ স্যার এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দু' পক্ষের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হলে তাকে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল বুধবার সকালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রেটিং দিন : রেটিং.. ১২৩৪৫

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।