আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পন্ডিত সব সময়ই পন্ডিত হয়।

নাট্যকর্মী আবদাল

এক দেশে বাস করত এক পন্ডিত। তাহার সহযোগীতা করার জন্য সাথে থাকত কিসমত আলী নামের এক লোক। স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে কিসমত আলী খুবই হাল্কা পাতলা ছিল। একদিন পন্ডিত ভাবল সে বিদেশ ভ্রমণ করিবে। অতঃপর সে কিসমত আলীকে সাথে নিয়ে বিদেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করল।

ভ্রমণের জন্য যে দেশে গেল তারা সেই দেশের মানুষজন খুবই আজব। সেই দেশে সবই সমান। যেমন চালের দাম পাঁচ টাকা, ডালের দামও পাঁচ টাকা। এক কেজি গরুর মাংসের দাম পাঁচ টাকা, ছাগলের মাংসের দামও পাঁচ টাকা। কয়েকদিন থাকার পর পন্ডিত ভাবল এদেশে থাকা ঠিক হবেনা কারণ যেই দেশে সব কিছুর দাম সমান সেই দেশে শিক্ষিত অশিক্ষিতদের মধ্যে কোন তফাত থাকবে না।

তাই সে সিদ্ধান্ত নিল দেশে ফিরে আসবে। কিন্তু তাহার সহযাত্রী কিসমত আলী দেশে ফিরতে নারাজ। সে ভাবল, যে দেশে ঘিয়ের দাম পাঁচ টাকা সেই দেশ থেকে আমি যাবনা কারণ সে খেয়ে দেয়ে মোটা হতে চায়। তাই পন্ডিত মশাই একাই দেশে প্রত্যাবর্তন করলেন। চলে গেল অনেকদিন।

হাল্কা পাতলা কিসমত আলী খেয়ে দেয়ে অনেক মোটা তাজা হল। এই দেশেই বাস করত এক কাঠুরিয়া। কাঠুরিয়ার বাড়ীতে চুরি করতে এসে দেয়াল ধসে মারা গেল এক চোর। চোরের বউ দেশের রাজার নিকট অভিযোগ করল, রাজামশাই কাঠুরিয়াকে ডাকলেন। বললেন তোমার বাড়ীর দেয়াল ধসে ঐ মহিলার স্বামী মারা গেছে।

তাই তোমাকে শুলে চঁড়ানো হবে। কাঠুরিয়া বলল হুজুর, আমার তো কোন অপরাধ নেই। অপরাধ করেছে রাজমিস্ত্রী যে আমার বাড়ীটি বানিয়েছিল। নিশ্চয়ই সে বালি সিমেন্ট পরিমাণ মত দেয়নি। রাজামশাই রাজমিস্ত্রীকে ডেকে বললেন, তুমি কাঠুরিয়ার বাড়ী বানানোর সময় বালি সিমেন্ট পরিমাণ মত দেওনি।

তোমাকে শুলে চড়াঁনো হবে। রাজমিস্ত্রী বলিল, হুজুর আমার তো কোন দোষ নেই। দোষ হল আমার উস্তাদের যিনি আমাকে শিখেয়েছেন কি পরিমাণ বালির মধ্যে কত পরিমাণ সিমেন্ট মেশাতে হয়। রাজামশাই বলিলেন উস্তাদকে ডাক। কিন্তু মজার বিষয় হল উস্তাদ বেচারা খুবই হাল্কা পটকা, শরীরে যে মাংশ আছে তা দেখে কংকালও লজ্জা পাবে।

শুলে চড়ানোটা একটা হাস্যকর ব্যপার হয়ে দাড়াঁবে! কিন্তু রাজামশাই তো এক কথার মানুষ। তিনি উজির কে ডেকে বলিলেন যান, সমস্ত রাজ্য খুঁজে একজন মোটা তাজা মানুষ নিয়ে আসেন শুলে চড়াঁনোর জন্য। এদিকে পন্ডিতের সহযাত্রী কিসমত আলী দীর্ঘ ছয় মাস ঘি খাওয়ার পর বেশ মোটা তাজা হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত সৈনিকরা তাকেই ধরে নিয়ে আসল শুলে চড়ানোর জন্য। অন্যদিকে পন্ডিত মশাই ভাবলেন দীর্ঘ ছয় মাস হয়ে গেল কিসমত আলীর সাথে দেখা হয় না! তাই তিনি রাজ্যে দেখা করতে আসলেন।

কিন্তু একি হায়! এসে দেখেন কিসমত আলী মৃত্যর মুখে। তিনি ভাবতে লাগলেন কিভাবে কিসমত আলীকে বাচাঁনো যায়। তিনি রাজা মশাইকে বলিলেন, রাজামশাই আমাকে শুলে চড়াঁন। রাজামশাই তো অবাক। মানুষ বাচাঁর জন্য আমার কাছে ফরিয়াদ করে।

আর এই পন্ডিত মরার জন্য পাগল। তিনি পন্ডিতকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি মরতে চাও কেন? পন্ডিত বলিল হুজুর, আজকের দিনে যে ব্যক্তি শুলে চড়েঁ মৃত্যু বরণ করিবে সে পরজন্মে এই রাজ্যের রাজা হয়ে পুনরায় জন্ম গ্রহন করিবে। এ কথা শুনে রাজ্যের উজির এবং সৈনিকেরা শুলে চড়াঁর জন্য নিজেদের পেশ করতে লাগল। রাজামশাই বলিলেন আমি এই রাজ্যের রাজা। সুতরাং আমি আবারও রাজা হওয়ার ইচ্ছা পোষন করি।

অতএব, আমাকেই শুলে চড়াঁনো হোক। অতঃপর বেকুব রাজাকে শুলে চড়িঁয়ে হত্যা করা হল আর এদিকে পন্ডিতমশাই তার শিষ্যকে নিয়ে নিজ দেশি প্রত্যাবর্তন করিলেন। পরিশেষে বুঝা গেল পন্ডিত সব সময়ই পন্ডিত হয়। সেটা শেয়াল পন্ডিত ই হোক আর মানুষ পন্ডিত ই হোক। হে হে হে হে হে ...।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।