আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাগ্নির মৃত্যুই কি ডেকে নিলো আমাকে লালমনিরহাটে ৪ বছর পর!!

আসুন,সরকারী কর্মচারীদের ঘুষগ্রহণসহ সকল দুর্নীতিবন্ধে সর্বাত্মক সহায়তা করি। কারন সরকারি কর্মচারীরা দেশপরিচালনার হাতিয়ার। তারা যদি না হয় দক্ষ ও সততার অধিকারী, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং বাংণাদেশকে কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করার কাজটি হবে সুদূরপরাহত।

গ্রামের বাড়িতে তেমন যাওয়া হয়না, ঈদের পর গেলাম ঠিক ৪ বছর পর সরকারী টুরে, সাথে তথ্য কমিশনের সচিব। ট্রেনেও গেলাম অন্তত ৮ বছর পর।

এখন নিজেকেই মনে হয় অপরাধী? তাহলে, ৪ বছর পর আমার যাবার অপেক্ষায়ই কি ছিলো তরতাজা ও সুস্থ ভাগ্নিটার মৃত্যু? ১৫ আগস্ট বিকেলে গেলাম লালমনিরহাটে বড়বোনের বাসায়, একনজর দেখা হলেও স্বভাবসুলভভাবে ভাগ্নির সাথে কথা হলোনা। বড়বোন আমার জন্য রান্না নিয়ে মহাব্যস্ত। কারণ রাতেই আমি যাবো সার্কিট হাউসে এবং পরদিন ১৬ আগস্টে আছে মিটিং । সন্ধ্যার দিকে ১০/১২দিন আগে সিজার করা সম্পূর্ণ সুস্থ ভাগ্নির বুকের ব্যথা এবং অপারেশনের আশেপাশে ব্যথা দেখা দেয় এবং ভাগ্নি জামাই তাকে প্রথমে নিয়ে যায় ''শাপলা ক্লিক'' এ যেখানে সিজার করা হয়েছিলো। সেখানকার ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই লিখে দেয় গ্যাস্ট্রিকের নানা ওষুধ!! বাসায় এসে না কমে বরং তার অসুখ বাড়লে আবার পাঠাই সরকারী হাসপাতালে কিন্তু তাদের যন্ত্রপাতি নেই মর্মে তারা চিকিৎসায় অপারগতা প্রকাশ করে নিতে বলে ৫০ কিমি দূরের রংপুর মেডিকেলে।

তাই করা, হলো রাত ২টায় ভরতি হলো এবং নানা পরীক্ষার চিকিৎসা চললো। বিকেলে খবর পেলাম কিছুটা আরাম হয়েছে এবং ভাগ্নি হাটাচলা করতে পারছে। আমি সন্ধায় পৌছুলাম গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে, ১৭ আগস্ট সেখানেও মিটিং হবে। মিটিংশেষে দুপুরে রওনা দিলাম নীলফামারীর দিকে। হঠাত ছোটভাইর ফোনে জানলাম, এমাত্র ভাগ্নিটা মারা গেলো।

স্বপ্নের মতোই মনে হতে লাগলো, বাপ-মাসহ আমরা বুড়োরা কতো জতিল ব্যাধি নিয়ে বেঁচে থাকলাম আর মরে গেলো ২৫/২৬বছরের ভাগ্নিটা। এই মেঝো ভাগ্নিটা আমারই কোলে-পিঠে মানুষ শুধু নয়, তাদের ৪ ভাই-বোনের নামগুলোও আমারই দেয়া। তাকে স্কুলে ভর্তি থেকে হাইস্কুলে চাকরীর চেষ্টায়ও সরাসরি আমার ভূমিকা ছিলো। আরেকটু সুস্থ হলেই নতুন চাকরীতে যোগ দেবার কথা ছিলো। কিন্তু চারীতে তার আর জয়েন করা হলোনা!! তার এই ২য় মেয়েটি ভূমিষ্ঠ হবার পর আমাকেই ফোন করে সে মেয়ের নতুন একটা নাম নিয়েছিলো---সারাহ কবীর মোল্লাহ।

আমার দেয়া নাম ছাড়া কারো নামই সে নিতে রাজী ছিলোনা। ১ম মেয়েটির নাম জারাহ কবীর মোল্লাহ। ১২/১৩দিনের এই শিশুটির কী হবে এখন? আল্লাহ যা ভালো মনে করেছেন-তাই করেছেন? আর ৪বছর পর আমার জানাজার অপেক্ষায়ই কি ছিলো ভাগ্নিটা? আমার মা-বাবার জানাজাও আমিই পড়েছিলাম, এবার আবার ভাগ্নির পালা!! লালমনিরহাটে জানাজশেষে তাকে স্বামীর বাড়ী নামরীতে দাফন করা হলো। আমার শুধু মনে হচ্ছিলো, শাপলা ক্লিনিকই মৃত্যুর জন্য দায়ী যারা সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে দিয়েছিলো গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ!!ক্নিনিকের বিরুধে মামলা করার চিন্তাও করলাম, কিন্তু আমার বোন ছাড়া ভাগ্নিজামাই রাজি নয় বলে পারিনি। তবে শাপলা ক্লিনিকের মালিক খুঁজতে গিয়ে পেয়ে গেয়ে গেলাম আমারই এক বাল্যবন্ধুকে।

কিতু সে জানালো, দোস্ত আমি কয়দিন হলো আমার মালিকানা শেয়ার তুলে নিয়ে এই ক্লিনিকের দায়িত্বমুক্ত হয়েছি। তাই আমাকে আগে না জড়িয়ে দেখে যাও এর সত্যতা। আমিও তোমার সাথে আছি ইত্যাদি। দেখলাম, সে ৫লাখ টাকার মালিকানা শেয়ার লাভসহ তুলে নিয়েছে ঠিকই। কারণ হিসেবে বললো--তার মতো লোক থাকায় অনেক কষ্টে ক্লিনিককে সে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিনিত করেছিলো এবং বেশ নামডাকও হয়েছিলো এর।

কিন্তু ইদানীং সেই ক্লিনিক কসাউখানায় পরিনত হয়েছে, ভাল ডাক্তার-নার্সের বদলে দালাল দিয়ে রোগী ধরা আর নানা অপকর্মের দরুন তাকে বের হতে হয়েছে বিবেকের তাড়নায় ইত্যাদি। । সে আরো বললো--এই ক্লিনিক আর ২মাসের মধ্যেই বন্ধ হতে বাধ্য!! শুনলাম, ভাগ্নিও বলেছিল, তার অপারেশন নাকি ভালো হয়নি, সে মারা যাবে বলেও আশঙ্কা করে সবার কাছে মাফও চেয়েছে। তবে সবচে খারাপ লাগে যে, সে রোজার মাসেও গর্ভাবস্থায় কুরআন শরীফ খতম করে ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলো এবং ওখান থেকেই খতম উপলক্ষে একটা দোয়ার অনুষ্ঠান করতে তার মাকে খুব পীড়াপীড়ি করেছিলো। তার মা তার আবদারও রেখেছিলো।

নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ ছাড়াও এই শরীরেও রোজা রেখেছিলো, কারো বাধা মানেনি। তবে সে নাকি বলেছিলো, সিজার করবে না বাচচা প্রসব হবে নরমালী। এতে সে যদি মরেও সে শহিদী মরণ বেচে নেবে। কিন্তু স্বামীর চাপে সিজার হয় তার। কাকে দোষ দেবো!!


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।