আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভবিষ্যৎ ডাক্তারদের পথচলাঃ

কেন যে এখানে এলাম!
এম বি বি এস কোর্সের ৩য় বর্ষে শুরু হয় পোষ্ট মর্টেম-এর ব্যবহারিক। তানিয়া এই ক্লাস খুব সাহস নিয়ে শুরু করল কারণ ১ম বর্ষের প্রিজার্বড ডেড বডির ডিসেকসন সে নিজের হাতেই করেছে। মৃত মানুষ কাটতে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু ক্লাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ক্ষত বিক্ষত একটি লাশের মাথার খুলি থেকে যখন মগজ তুলে আনা হলো তখন তানিয়ার সাহস পানি হয়ে বাষ্প হতে শুরু করেছে। ফলাফল স্পট বেহুশ।

তার রুমমেট বেহুশ না হলেও দুইদিন খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমন হুশ বেহুশের ঘটনা যেখানে খুব সাধারণ ও নৈমিত্তিক ঘটনা তার নাম মেডিকেল কলেজ। সুস্থ, অসুস্থ কিংবা মৃত মানব শরীর নিয়ে যাদের ক্যাম্পাস জীবন তারা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ে বেড়িয়ে পড়াশোনা করে আসা শিক্ষার্থীর স্বপ্নই থাকে ডাক্তার হওয়া। তবে ডাক্তারী পড়াটা ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখা থেকে কয়েকগুণ কঠিন।

ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো পড়াশোনা কথা ভুলে গিয়ে ডানা গুটিয়ে বায়োকেমিস্ট্রি, এনাটমি কিংবা প্যাথলজীর সাগর- মহাসাগরে ডুব সাঁতার কাটতে হয় ১ম বর্ষ থেকেই। স্বপ্নের বন্দর যখন দূরে দেখা যায় তখন এসব কষ্ট আর গায়ে লাগে না। মানবসেবা যার হৃদয়ে থাকে তাকে কেউ আটকাতে পারে না। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র শাওন বলেন, অনেক ছাত্র আছে যারা বাবা-মার মন রক্ষার জন্য মেডিকেলে পড়তে আসে। এসব ছাত্ররা আনন্দ নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৫ম বর্ষের ছাত্রী নার্গিস জানান ১ম ও ২য় বর্ষ মূলত তাত্ত্বিক পড়াশোনা, ব্যবহারিক বলতে ল্যবরেটরীতেই হয়ে থাকে। ৩য় বর্ষ থেকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীর অবস্থা দেখে দেখে শিখতে হয়। অনেক সময় রাতেও ওয়ার্ডে ক্লাশ করতে হয়। তবে ৪র্থ বর্ষ থেকে তাত্ত্বিক পড়াশোনার চাপ কিছুটা কম থাকে। যেহেতু ৩য় বর্ষে ক্লাশ,ওয়ার্ড ও ল্যাবে সমান চাপ থাকে তাই ৩য় বর্ষই সবচেয়ে কষ্টের সময়।

ফাইনাল পরীক্ষার পাশাপাশি প্রতিদিনই ভাইভা পরীক্ষা থাকায় প্রতিদিনের পড়াশোনা প্রতিদিন শেষ করতে হয়, জমিয়ে রাখার কোন সুযোগ নেই। এতো চাপ তাই বলে কি অন্য কাজ বন্ধ থাকবে? না, তা হয় না। পড়াশোনার পাশাপাশি সব শিক্ষার্থীই সামাজিক, সেবামূলক, সাংস্কৃতিক স্বেচ্ছাসেবক কিংবা রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। স্বেচ্ছায় রক্ত সংগ্রহকারী সংগঠন সন্ধানী শুধুমাত্র মেডিকেল ছাত্ররাই পরিচালনা করে থাকে। বাংলাভাষা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কিংবা গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলনে মেডিকেলের ছাত্রদের অবদানের জন্য খোদ মেডিকেলের ছাত্ররা যেমন গর্বিত তেমন এদেশের আপামর জনতাও।

বছর জুড়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন আর অংশগ্রহণ ছাত্রদের পড়াশোনার শত ব্যস্ততা ভুলিয়ে দেয়। গত ২০ জানুয়ারি ঢামেক-এ বানী অর্চনার অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই তার প্রমাণ। কেমন কাটে হল জীবন এমন প্রসঙ্গে ঢামেক-এর মামুন বলেন, সকাল সাতটায় ক্লাশ শুরু হয় তাই ছটা থেকেই ক্লাশের প্রস্তুতি চলে। যে দিন রাতে ক্লাশ থাকে না সেদিন বিকালে কিছুটা বাড়তি সময় পাই। রাতে ক্লাশ থাকলে বিকেলের মধ্যেই পরের দিনের পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলি।

আবাসিক হলে আনন্দ বেদনা ভাগাভাগি, আড্ডা আর পড়াশোনায় কেটে যায় সময়গুলো। অতিরিক্ত পড়ার চাপ থাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম জব বা টিউশনী করানো সম্ভব হয়না, তবুও কেউ কেউ করে। তবে কোর্স শেষ হবার পর ইন্টার্নীকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা কিছু অর্থ পেয়ে থাকে। নার্গিস বলেন, ঢাকা মেডিকেলে ছাত্রদের হলের চেয়ে ছাত্রী হলে কিছুটা সিট সংকট চলে। সুযোগ-সুবিধাও ছাত্রীরা কম পায়।

মেয়েদের হলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ নিতে কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেয় না বলে ছাত্রীরা ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, মেডিকেলের ছাত্ররা যদি ইন্টারনেট সংযোগ না পায় তবে আপটু ডেট তথ্যের সাথে তারা পরিচিত হতে পারবে না। হল ক্যান্টিনের খাবারের মান পার্শ্ববর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর তুলনায় নিম্নমানের। সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর মানবসেবায় ব্রত হবার উদ্দেশ্যে সকল সমস্যা আর দুর্গম পথে চলে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। শেখার পথ শেষ হলেই শুরু হবে সেবার পথচলা।

সে পথ হবে আরও মসৃণ, আরও সুন্দর।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।