আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবিরাজ

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

কবিরাজ কবি ও রাজা। দুজন দুই জগতের মানুষ। একজন কবিতা লেখেন, অপরজন রাজ্য শাসন করেন। কবি কখনো রাজা হয়েছেন বলে আমার জানা নেই। তবে রাজা হয়ে কবিতা লিখেছেন এমন নজির ইতিহাস ঘাঁটলে পাওয়া যাবে।

একজন কবি তার কবিতার মাধ্যমে মনের ভাবনাগুলোকে প্রকাশ করেন। একজন রাজা তার বীরত্ব, ক্ষমতা ও রাজতন্ত্রের যাবতীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশ শাসন করেন এবং প্রজাদের সেবা ও নিরাপত্তা বিধান করেন। যদি কখনো কবিকে রাজ্য শাসনের ভার দেয়া হয় এবং রাজাকে কবিতা লেখার দায়িত্ব- তবে তাদের দুজনকে দিয়ে কোনটাই ঠিকমত হবে কিনা তাতে যথেস্ট সন্দেহ রয়েছে। কবিতা লেখা ও রাজ্য শাসন কেউ কারো সম্পূরক হবার কথা নয়। অবশ্য তাদের যৌথ প্রয়াশে কবিতা ও রাজ্য দুটোই শাসনের সাথে সাথে শরীরের রোগব্যথি শাসন বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব কারণ কবি ও রাজা দুজনে এক হলে যা দাঁড়ায় তা হলো “কবিরাজ” অর্থাৎ চিকিৎসক।

“কবিরাজ” কিন্তু “কবির রাজা” কিংবা “রাজ কবি” কিংবা “রাজকীয় কবি” কোনটাই নন। “কবিরাজ” মূলতঃ আয়ুর্বেদিকবা ইউনানি চিকিৎসক। যারা নানাবিধ গাছ-গাছরা, জড়িবুটি, ভেষজ বা হার্বাল পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে থাকেন। বড় বড় শহরে তাদের চিকিৎসার তেমন প্রসার না থাকলেও গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে তারা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে বহুকাল যাবৎ চিকিৎসা প্রথা চালিয়ে আসছেন। তাদের চিকিৎসা পদ্ধতিতে আধুনিক ধ্যান ধারণার মানুষেরা তেমন আস্থাশীল নন।

বিশেষত যারা এলোপ্যাথির উপর প্রচন্ড রকমের আস্থাশীল। আবার হোমিওপ্যাথির উপর বেশী আস্থাশীল তাদের অনেকেও কবিরাজি চিকিৎসায় তেমন ভরষা পাননা। গ্রামে-গঞ্জে ও মফস্বলে কবিরাজকে অনেক সময় বৈদ্য বা হেকিম বলে ডাকা হয়। কবিরাজ, হেকিম, বৈদ্য ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের চিকিৎসা পদ্ধতিতে তেমন বিশেষ কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্য যা তা তাদের চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিশেষ বিশেষ হারবালের ব্যবহার ও গুনাগুন সম্পর্কে নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে বিশেষ কিছু রোগের ব্যাপারে সাফল্যের কিছু প্রচারণা।

এছাড়া অনেক ওঝা বা তান্ত্রিক বলে পরিচিত কিছু স্বঘোষিত বা লোকমুখে প্রচলিত চিকিৎসক যারা পাগল, বিভিন্ন ধরণের মানসিক ব্যধি ও যাদুটোনার চিকিৎসা করে থাকে। বর্তমানে গ্রাম ও শহরে হোমিওপাথ্যি চিকিৎসার চল থাকলেও এলোপ্যাথি চিকিৎসার উপর মানুষের ব্যাপক আস্থা এবং তা সর্বজনবিদিত। আবার অনেক জটিল ও কঠিন অসুখ যখন এলোপ্যাথি চিকিৎসার বাইরে চলে যায় তখন অনেকে হোমিওপাথ্যি বা কবিরাজি চিকিৎসার স্মরণাপন্ন হন। গ্রামে-গঞ্জের অবুঝ ও সরল মানুষেরা জটিল কোন রোগে ওঝা-পীর-ফকির, মন্ত্র-তন্ত্র, ঝাঁড়-ফুক, তাবিজ-কবজ ইত্যাদির আশ্রয় নিয়ে থাকে। কাকতালিওভাবে কিছু কিছু আরোগ্যের খবর লোকমুখে এদিক সেদিক ছড়ালেও এসব বুজরুকি চিকিৎসার প্রতি বেশীরভাগ ঝুঁকে থাকে অল্পশিক্ষিত ও কুসংস্কারে বিশ্বাসী মানুষেরা।

(আমি কবিরাজ বা চিকিৎসক দুটোর একটাও নই। আমি নগর গরেষক। যা লিখেছি তা আমার দেখা ও জানার ভিত্তিতেই লেখা। কেউ এ বিষয়ে অভিজ্ঞ হলে ভুলত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিতে পারেন। )


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.