আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবিরাজ গনি মিয়া (ছোট গল্প) একটি অতি প্রাকৃতিক ঘটনা-১

ভোরের তারা হয়ে একাকি পথ খুজি

গাঙ্গে নতুন পানির ঢল নেমেছে। উথাল পাথাল গাঙ্গের পানি জামিল শেখের মনের পালে আনন্দের হাওয়া বইয়ে দিয়ে যায়। তিন মাস পর বউকে নিয়ে নিজের বাড়ী ফিরছেন। সাথে আছে কলিজার টুকরা তিন বছরের মেয়ে আমিনা। জামিল শেখ মুগ্ধ চোখে বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

এত সুন্দর তার বউটা, খোদা যেন নিজ হাতে বানিয়েছেন। কাশ ফুলের মত শুভ্র গায়ের রঙ। রুপ যেন ঠিকরে পড়ছে তার তরুনী বধুর গা থেকে। এই ভাটি অঞ্চলে এক ব্যবসায়ী বন্ধুর বাড়ীতে প্রথম দেখেছিল স্ত্রী আগরজান বিবিকে। সেই দেখা দেখেই জামিল শেখ দিওয়ানা হয়েছিলেন।

ঐ বন্ধুর বাড়ীর পাশের বাড়ীতেই থাকতো তার স্ত্রীদের পরিবার। দুই মাসের মধ্যে বউ করে নিয়ে এলেন আগরজান বিবিকে। দুই বছর পর তাদের কোল জুড়ে এল মেয়ে আমিনা। বংশের প্রথম মেয়ে। বড় সৌভাগ্যবতী তার এই মেয়ে।

জন্মের পর পরই খরা আক্রান্ত গ্রামে নামলো অঝোর ধারায় বৃষ্টি, গাইয়ের হল বাছুর। ব্যবসায়ী জামিল শেখেরও ব্যবসায় হতে লাগলো আয় উন্নতি। গ্রামের লোকজন বলল বড় পয়মন্ত মেয়েগো শেখের বেটি!! তখন বৃটিশ পিরিয়ড সবে শেষ হয়েছে পাকিস্তান আমল চলছে। গ্রামের ছেলে হলে কি হবে জামিল শেখ ছিলেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার, তার বাবাও ছিলেন উকিল। সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে তিনি শুরু করেছিলেন অটোমোবাইলস এর ব্যবসা।

ধীরে ধীরে ভালোই লাভ হতে লাগলো। তাইতো ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্হানে ছুটাছুটি করতে হয়। সেই সুবাদেই মাঝে মাঝে স্ত্রীকে বাপের বাড়ী নাইয়রে পাঠানো হয়। এবারের নাইয়রটা একটু বেশী দিনেরই হয়ে গেল, প্রায় তিন মাস। তাইতো এইবার বউকে আনার সময় এত আনন্দ আয়োজন।

বিরাট পানসি নাও ভাড়া নিয়েছেন, উচু লয়ে বাজছে কলের গান। আত্মীয় স্বজনরা সবাই হৈ হুল্লোড় করছে। বেশ দূরের পথ। বাড়ী পৌছাতে পৌছাতে মাঝ রাত্রি হয়ে যাবে। সেদিন ছিল অমাবশ্যার রাত।

চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। হারিকেনের টিমটিমে আলোই ছিল যা একটু ভরসা। আমিনা ফিসফিসিয়ে কানে কানে মাকে বলল তার ছোট বাথরুম পেয়েছে। আগরজান বিবি স্বামীকে বললেন "এই যে শুনছেন, মেয়েটারে নৌকার কিনারে একটু ধরেনতো ওর পিশাব ধরছে"। শেখ সাহেব অতি সাবধানে মেয়েকে নৌকার কিনারে বসিয়ে দিলেন।

সে সময় নৌকা চলছিল এক পুরনো শ্মশ্মান ঘাটের কাছ ঘেষে যা অন্ধকারে কেউই দেখতে পায়নি। অতঃপর শ্মশ্মান ঘাট পেরোবার পর পরই আমিনার পেটে শুরু হল তীব্র ব্যাথা। এ কি ব্যাথা!! এ যেন জীবন মরন ব্যাথা। ছোট্ট আমিনার কান্না দেখে কে। বাবা মায়ের মন কন্যার কষ্টে জ্বলে যাচ্ছে।

এই অকূল পাথার নদীতে মেয়েকে নিয়ে এই রাতের বেলা কোথায় যাবেন, কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না। কিছুদূর যাবার পর সবাই টের পেল শ্মশ্মান ঘাটের ব্যাপারটা। নিশ্চয়ই কোন দুষ্টু জ্বীনের নযর পড়েছে মেয়েটার উপর। মাঝি আশ্বাস দিল কাছেই খুব বিখ্যাত একজন কবিরাজ থাকেন, তার নাম গনি মিয়া। তিনি সব ঠিক করে দিবেন।

নৌকা ঘুরিয়ে কবিরাজ বাড়ীর দিকে রওনা হল সবাই। কবিরাজ বাড়ীর একদম কাছাকাছি চলে এসেছে নৌকা। জামিল সাহেব দরাজ গলায় ডাকলেন "গ..নি মি...য়া ও গ..নি মি..য়া বাড়ী আছোনি"। ডাক দেয়ার সাথে সাথে আমিনা উঠে বসল, তার ব্যাথা বেদনা সব ভাল হয়ে গেছে। সে হাসতে লাগলো।

সবাইতো অবাক, ঘটনা কি? মেয়েটা এতক্ষন ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছিল কিন্তু কি এমন জাদুর ঘটনা ঘটল যে মেয়েটা হঠাৎ ভাল হয়ে গেল। মাঝির মুখ থেকে শোনা গেল আসল ঘটনা। তিনি বললেন "গনি মিয়া এতই নামী কবিরাজ যে তার নাম নিলেই খারাপ জ্বীন, দুষ্টু আত্মা সব দৌড়ে পালায়, তাই মেয়ের বাবা যখন গনি মিয়ার নাম ধরে ডাকলেন তখন ভয়ে জ্বীন আমিনাকে ছেড়ে যায়। আমিনাও তাই ব্যাথা মুক্ত হয়। নৌকার যাত্রীরা সব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

পথে আর কোন সমস্যা হল না। নিরাপদে সবাই বাড়ী ফিরে গেল। এমন কবিরাজ কি এখন আর আছে যার নাম শুনলেই রোগ পালাবে!!! আমার গল্পটি ফুরলো নটে গাছটি মুড়লো। সত্য ঘটনা অবলম্বনে।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.