আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে ডুবে ভেসে উঠি বারবার - ০৩

আদর্শটাকে আপাতত তালাবন্ধ করে রেখেছি

১. স্বভাবগত কারণে নারী-সম্পর্কিত লেখাগুলো একটু বেশি পড়া হয়। স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভলপমেন্ট, অ্যাকশন অ্যাইড বাংলাদেশ ও পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রকাশিত বেশ কিছু পুস্তিকা পড়ছিলাম। বিষয়- নারীর ওপর সহিংসতা। কী কী করলে নারীর প্রতি সহিংসতা ধরা হবে, যৌতুকপ্রথা বন্ধ করতে হলে কী কী করা উচিত ইত্যাদি নানা বিষয়ে ভরা পুস্তিকাগুলো। বেশ অবাক হয়েই লক্ষ্য করলাম- প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই পুরুষকে নারীর প্রবল প্রতিপক্ষ হিসেবে ধরা হয়েছে।

নারীর বর্তমান দুরবস্থার মূল কারণ পুরুষ কিংবা বলা ভালো পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা- এতে সন্দেহ নেই; কিন্তু যখন সচেতনতামূলক আন্দোলনের পর্যায় আসে, ঘোষিত ‘প্রতিপক্ষ’কে সহায়তাকারীর ভূমিকা নিতে বলা হয়, তখন এ ধরনের মনোভাব কি পুরো আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না? আজকে নারীর পিছিয়ে পড়ার জন্য যদি একমাত্র পুরুষকেই দায়ী করা হয়, এবং সে অনুযায়ী নারী-আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত এনজিওসমূহ কর্মপন্থা ঠিক করে, তাহলে এদেশে নারীমুক্তি (অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে) সুদূরপরাহত বলা যায়। পুরুষ যতোটুকু নারীর প্রতিপক্ষ, নারীও তার চেয়ে নারীর কম প্রবল প্রতিপক্ষ নয়। মূল বিষয় হলো- মানসিকতা। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা যেখানে যেখানে আছে, প্রতিপক্ষ হিসেবে সেগুলোকেই আসলে ধরা উচিত। নারী হলেই যে তিনি নারী-নিপীড়নকারী নন, এ ধারণার বৃত্ত থেকেও বেরিয়ে আসা দরকার।

পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা অনেক নারীর মধ্যেই প্রবলভাবে বিদ্যমান। আমাদের প্রধান দুই নেত্রী নারী- কিন্তু তারা কি পুরুষতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক নন? লড়াইটা আসলে কার সাথে- সেটা ঠিক করতে না পারলে নিজের শক্তিক্ষয় ছাড়া অন্য কোনো ফলাফল পাওয়া দুষ্কর। যৌতুক নিয়েও একই কথা। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, সম্পদের ওপর নারী-পুরুষের সমঅধিকার যতোদিন না প্রতিষ্ঠা করা যাবে, ততোদিন যৌতুকপ্রথা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়- রূপ বদলাবে কেবল। যতোই সমাজ-সচেতনতা বাড়ান বা প্রচারণা চালান, যৌতুকের মূল কারণ নারী-পুরুষের সম্পদের অসম-বণ্টন।

এই বণ্টন যতোদিন না হবে যৌতুক ততোদিন থাকবে, নানা ফর্মে, গিফট হিসেবে, পিতামাতা কর্তৃক কন্যাকে গাড়ি উপহার-ফ্ল্যাট উপহার-স্বর্ণ উপহার-জামাই বাবাজিকে মোটর সাইকেল-ফ্রিজ-টিভি-নিদেনপক্ষে হানিমুন করার জন্য টাকা উপহার- নানা ফর্মে যৌতুকপ্রথা থাকবেই। মধ্যবিত্তের শব্দ ও বাক্যজনিত সমস্যা বা সংবেদনশীলতা বেশি, যৌতুক তাই দিন দিন পরিণত হচ্ছে উপহারে। আচ্ছা, পিতামাতার সামর্থ্য থাকলে মেয়েরা কি চান না বিয়ের সময় পিতামাতার কাছ থেকে কিছু না কিছু নিয়ে আসতে? চান না নিজের হাতে কিছু একটা সম্পদ রাখতে? মেয়েরা কি এর উত্তর দেবেন? আচ্ছা, যদি ছেলেদের মতো মেয়েরাও পিতামাতার সম্পদের উত্তরসূরী হন, তাহলে কি মেয়েরা বিয়ের সময় পিতামাতার কাছ থেকে কিছু আনতে চাইবেন? ১২.১২.০৯ ২. অফিস শেষ হয় ৫.১৫-তে। আমি নেমে আসি একটু আগেই- পুঁচকিগুলো আসে তো! ওদের নিয়ে একটু খেলা করি। কেউ কেউ যাবার সময় হ্যান্ডশেক করে, হাত নেড়ে দেয়, কেউ কেউ বললে পাপ্পিও দেয় ।

একজন তো দূর থেকে ফ্লাইং কিসও দেয় মামাকে। কয়েকটা রাজকন্যা বিকেলটাকে ভরিয়ে রাখে প্রতিদিন। অফিস ছুটি আমার কাছে তাই শুধু অফিস থেকে বেরুনোই নয়, গুল্টুপুল্টুদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কাটানোর লোভনীয় অফারও। এ মাসে বাসা বদল করলাম। আগের রুটের অফিসের গাড়ি ছাড়তো ৫.২৫-এ।

বর্তমান রুটের গাড়ি ছাড়ে ৫.১৬-তে। তার মানে আমাকে মোটামুটি আরও আগে থেকেই গাড়িতে উঠে বসে থাকতে হবে- আর ওই সময়টাতে ছোট্ট মামারা মাত্র বেরুনোর প্রস্তুতি নেবে। ওরা যখন বের হবে, আমি হয়তো তখন গুলশান ছাড়িয়ে বাড্ডায় পৌঁছে যাবো। অর্থাৎ মামাদের সাথে বিকেলে এখন আর দেখা হবে না। কোনোদিন দেখা হলে, সেটা হবে সৌভাগ্য।

এখন থেকে কচি দাঁত দিয়ে কামড়ে কামড়ে লালামেশানো অর্ধেকটা বাদাম বিকেলবেলা কেউ মুখে তুলে দিবে না, নিজের ঠোঁটের লিপিস্টিক দিয়ে কেউ মামার গালে টিপ দিয়ে দিবে না, কিংবা সিঁড়ির ওপর থেকে নিচে লাফ দিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বায়না ধরবে না কেউ- আমার মামারা আমাকে মিস করবে কিনা জানি না, কিন্তু প্রতিটা বিকেলে আমার হৃদয়ে একটা ছোট্ট বেদনার ঢেউ উঠবে। এটা ঢাকা শহর না হলে কবেই গুল্লি মারতাম অফিসের গাড়িকে! ০৩.০১.১০ ৩. গতকাল রাতে ছিনতাই হয়ে গেল- দুটো মোবাইল সেট আর কিছু টাকা। রাত তখন মাত্র নয়টা বাজে, বাসাবো প্রধান সড়কের ওপর ছিনতাইটা হলো। রিকশাটা নাটকীয়ভাবে থামিয়ে কয়েকজন মিলে জোর করে (আসলে জোর করতে হয় নি, গলায় ছুরি ধরে চাহিবামাত্র নিজে থেকেই দিয়ে দিয়েছি) এগুলো নিয়ে নিলো। প্রথমদিকে খুব একটা দুঃখ হয় নি- এও তো জীবনের একটা অংশ।

রাত যতোটুকু বাড়তে লাগলো ততোই যেন একটা অপমানবোধ কিংবা অসহায়ত্বের বোধ জন্ম নিতে লাগলো- কয়েকটা মানুষ আমাকে অসহায় বানিয়ে আমার জিনিসগুলো নিয়ে গেলো, আর আমি কিছুই করতে পারলাম না! আচ্ছা, আমরা ধনীরা যখন গরীবের সম্পদ নানা কৌশলে লুট করে তাদের অসহায় বানিয়ে নিয়ে যাই, তখন কি গরীবদেরও এই একই অনুভূতি হয়? নাকি তাদেরকে যে অসহায় বানানো হচ্ছে, সেটা তারা বুঝতেই পারে না! ১৩.০১.১০

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.