আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তগদ্য: সাইক্লপ্স এবং আমাকে ঘিরে তেরোশো হলুদ প্রজাপতি ধীরে ধীরে উড়ছে

ডুবোজ্বর

০১. আমি আর প্রেত শুয়ে থাকি বিছানার 'পর, চুরুটে আগুন ধরাই আর তাকাই পরস্পর। সে পুনরায় ফিরে যায় তার স্বপ্নের ঘোরে। একটা সিগারেট ধরায়, আলগোছে টেনে নেয় কল্পনার হাত। এইখানে কল্পনা কোনো মানবী নয়, শুধুই কল্পনা। তার স্বপ্ন পুরনের কথা ছিলো বৃষ্টির দিনে।

সে হাওয়ার ঠোঁটে একটা চুমো খেলো। হাওয়া বললো, বিদায়। এই সুর গ্রীষ্মের উত্তাপ ধরে ছিলো গত রৌদ্রে। রৌদ্র ছিলো বর্ষণপক্ষ, ডানার পূর্বশর্ত। সেই শর্তে রথ যে নিয়ে এলো, তার ত্বকের রঙ হালকা নীল, শিশ্নস্থানে মৃণাল, টকটকে লাল... রথের চাকায় মরুরঙ ঝালর।

সে রথে আরোহণ করলো। আর রথ উড়ে চললো। মাঝপথে সারথি পড়ে গেলো ভূমিমধ্যে। এখন সেইই সারথি। তারপর ঘোরভাঙা চোখে দেখলো আকাশের মৃত্যু।

কী নীল! ০২. আমি তার কাছে গিয়ে গভীর কণ্ঠে বললাম, আয় তোকে সমস্ত শূন্য করে দিই। লবণ বললো, ভালোবাসা হলো শূন্যতাবোধ। কে বললো তোকে? প্লাতুন। অ! মহামান্য প্লেটো বলেছেন এই কথা? কথা সত্যি। আমার মনে হয়ে বুদ্ধিবৃত্তি কামস্পৃহাকে ভালোবাসায় রূপান্তরিত করেছে।

তাই এটা অভ্যাসগত, প্রবৃত্তি নয়। প্রবৃত্তি হলো কাম। আর মমতা অন্যজিনিশ-- নির্ভরতা আর অধিকারবোধের প্রকাশ। প্রাথমিক যুগে ভালোবাসা ব্যাপারটা ছিলো না। এমনকি মমতাও।

সবই মানুষ সভ্যতার সাথে অর্জন করেছে। ০৩. শিল্প হলো চোখের বিপরীতে দেখা। মানে চোখের উল্টো দিকে। সমুখের দৃশ্যাবলি কিছু নয়। শিল্পের কথা আজ থাক।

অন্যদিন বলবো। আজ একটা গানের কথা বলি। স্বাতী! একটা গানের বেদনা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। সেই কবে গানটা বাজতো আমাদের ঘরে সন্ধ্যাবেলা! ইদানীং শুনছি খুব। কেনো যে শুনছি? হৃদয় আমার সুন্দর তব পায় বকুলের মতো ঝরিয়া মরিতে চায়... গানটা সাগরিকা সিনেমায় ছিলো।

আল্পনা ব্যানার্জির গাওয়া। ০৪. কোনো আগুন ছিলো না। ছিলো না আগুনের ধ্যান। শ্যামল রূপসীরা পাশ কেটে যাচ্ছিলো অরণ্য ও আরণ্যক সমাধি। দ্রিম দ্রিম শব্দে বজ্র আর বিজলি বেজে যাচ্ছিলো শূন্যে।

আমি আঙুর আর নাশপাতির খাঁচা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। কে যেনো আমার কাঁধে হাত রাখলো। তার রূপ বর্ণনাতীত। আমি বললাম, তুই কে? কোনো উত্তর নাই। সুতরাং আমি তাকে স্বীকার করলাম না।

আমি মনে মনে বললাম, ঝড়। ঝড় এসে উড়িয়ে নিয়ে গেলো আঙুরের বন, নাশপাতির বন। কেবল আমার কাছে কিছুটা সংরক্ষিত আছে। এইবার সে বললো, আমি সময়। আর আমি তাকে স্বীকার করলাম।

এবং আঙুর আর নাশপাতির বীজ তার হাতে দিলাম। সে আমাকে নতজানু হয়ে সম্মান জানালো। আর বয়ে চলে গেলো। ০৫. আমি কেবল দরজা জানলা এইসব বানাই। ঘরটর এইসব আপনারা বানাবেন।

ঘরের ভিতর একফালি শীত অথবা গ্রীষ্ম বুনে দেবেন। ফলন ভালো হলে আপনারাই খাবেন, পান করবেন, হাসাহাসি করবেন, খুনসুটি করবেন। সাইক্লপ্স যদি আসে তবে কী করবেন তা আমি বলে দেবো না। পসিডনের কাছে যেতে পারেন। তাতে কোনো লাভ নেই।

একার্থে ঈশ্বর আর সাইক্লপ্সের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ০৬. কেউ যদি প্রতিশ্রুতি করে-- পুনর্ববার আমাকে জীবন দেবে, তবে একবার আমি মরে যাবো। পরের জন্মে গণিতের ছাত্র হবো। তিনটে টিয়্যুশনি করবো। একটা প্রেম করবো।

আর কবিতা শব্দটির সাথে পরিচিত হবো না। ০৭. স্বপ্নের থাকে দুইটি ডানা। ঝলমলে। ঝিরিঝিরি। রুমঝুম।

যদি ডানাদুটি চাকায় পরিণত হয় তবে তা আর স্বপ্ন থাকে না-- পরিকল্পনা হয়ে যায়। স্বপ্নের সাথে ভাবের সম্পর্ক। বস্তুসাপেক্ষ ভাব। আর পরিকল্পনার সাথে থাকে বিষয়ের সম্পর্ক। মুহূর্তের একটি স্বপ্নের কথা যদি বলি-- আমাকে ঘিরে তেরোশো হলুদ প্রজাপতি উড়ছে... অভিমান বললো, তারপর? জনহীন পথ ধরে হাঁটছি।

হাঁটতে হাঁটতে একটা সোনালুগাছের নিচে দাঁড়াতেই একহাজারটা প্রজাপতি একহাজার সোনালুফুল হয়ে ঝরে পড়লো আমার চুলের বনে, কাঁধে, বুকপকেটে। আমাকে ঘিরে বিস্তারিত হলো পৃথিবীর রূপ। অভিমান বললো, সুন্দর। একহাজারটা হলুদ প্রজাপতি ঝলমলে, ঝিরিঝিরি, রুমঝুম-ঝুমঝুম... সাথে চকচকে রোদ, নিকেলমাখা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।