আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হ্যাপী নিউ ইয়ার


থার্টি র্ফাস্ট নাইট অনেক আনন্দ উচ্ছাসে নতুন বর্ষ বরণের অপেক্ষা পৃথিবী জুড়ে মানুষের মনে। বেশ কিছু দিন আগে থেকেই পরিকল্পনা হয়ে যায় কি ভাবে পালন করবেন দিনটি। কেউ বন্ধুবান্ধবের সাথে, কেউ পরিবারের সাথে। কেউ বা শুধুই আপন মনে নিজের ভুবনে অথবা দুজনে দুজনার হয়ে কাটাতে চান। কেউ চলে যান ভালোলাগার কোন জায়গায়।

দু’হাজার সাল ছিল বিশাল অপেক্ষার, নতুন বর্ষ বরণ করার। একটা শতকের পরিবর্তন, হাঁক ডাক অনেক বেশী আয়োজন ছিল। অনেক আতংক আর ভয়ও কাজ করছিল সে সময় নানা রকম পরিবর্তনের, শেষ পর্যন্ত কিছুই অঘটন ঘটেনি কেটে গেছে দশটি বছর আরেকটি নতুন দশকের সুচনা হলো দুহাজার দশে। বাংলা নববর্ষ আমাকে যেমন টানে ইংরেজী বর্ষ তেমন টানে না। নিরবে নিভৃতে চলে গেলে তেমন কিছু যায় আসে না।

যদিও সময়ের মাপ চলে ইংরেজী বছরের গননায়। বছর শুরুর দিনটি সুন্দর আনন্দময় হোক, সফলতা সুস্বাস্থ্য বয়ে আনুক নিরবে এমন প্রার্থনায় কাটাতেই আমি ভালোবাসি, সে বাংলা বা ইংরেজী নববর্ষই হোক। বাংলাদেশে থাকতে দেখেছি অনেকের উচ্ছাস থার্টি ফাস্ট নাইটে। পুলিশের কড়া পাহাড়া বিশেষ বিশেষ এলাকায়। তারপরও বছর শুরুর পত্রিকার প্রথম পাতা ভর্তি অশোভন আচরণের ছবি আর বর্ণনা।

এটা কেমন সংস্কৃতি কেমন আনন্দ আমি জানিনা, নিজের আনন্দের অতি সজ্জে অচেনা নারীকে ধরে টানাটানি আবার দোষটাও সেই নারীর কেন সে আসল এই উৎসবে? রমনীদের থাকতে হবে গৃহকোনে। উল্লাসে মাতবে ওরাংওটাং লম্ফ ঝম্পে শুধু পুরুষ। দেশে থাকতে আমি কাটাবন এলাকায় থাকতাম। রাত গভীরে ঘুম ভেঙ্গে যেত হৈ চৈ চিৎকারে। আমাদের দালান গুলোর উল্টা পাশেই ছিল বস্তি।

সেখানে বেআইনী ড্রাগ বিক্রি হতো। যার খবর জানতো অভিজাত এলাকার লোকেরা। মাঝরাতে পাড় মাতাল হয়ে বা হওয়ার জন্য পাড়া মাথায় তুলে ডেকে উঠাত বস্তির লোকদের গাড়ীওয়ালা লোকরা,আরো নেশার সমগ্রী কেনার জন্য, ড্রাগের নেশায় আরো উন্মাদ হওয়ার জন্য। পাশে হয়তো কোন বাড়িতে অসুস্থ কোন বৃদ্ধ অথবা শিশু ঘুমিয়ে আছে । অথবা যে কেউ নিজের মতন আছে, বর্ষবরণের উচ্ছাসে অন্যের কোন অসুবিধা হলো কিনা সে ভাবনা হয়তো ঐ আনন্দে বিভোর মানুষ গুলো কখনই ভেবে দেখেনি।

নিজেকে ছাড়া অন্যদের সুবিধা অসুবিধা ভাবার অভ্যাস কবে হবে আমাদের সমাজের মানুষের- আশা করি অনেক উন্নত হয়েছে সিভিক সেন্স আমার দেখা বাংলাদেশের চেয়ে। থার্টি ফাস্ট নাইট কী ভাবে ক্যানাডায় উজ্জাপিত হয় তা দেখার জন দু হাজার এক সালে প্রথম আমি টরন্টোর ন্যাথন ফিলিপস স্কোয়ার এ যাই। দশ বছর পর আবার এবছর গেলাম। প্রচন্ড শীত বরফের স্তুপে ঢাকা চারপাশ এর মাঝে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে সেখানে। বেশীর ভাগ মানুষ এসেছে সাবওয়ে ধরে কারণ গাড়ী পার্কিং পাওয়া খুব কঠিন ।

মঞ্চে গান করছে কানাডার বিখ্যাত শিল্পীরা। সরাসরী প্রচার হচ্ছে সে অনুষ্ঠান সিটি টেলিভিশনের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানটা সিটি টিভির সৌজনে হচ্ছে। মাঝে মাঝে সরাসরি র্দশকদের সাথেও কথা চলছে। পাশে বরফের মূর্তি বানানো, রঙ বেরঙের আলোর মালায় যা ছড়াচ্ছে হীরক দ্যুতি।

আনন্দ হুল্লোর আইস স্কেটিংয়ে নৃত্যরত মানুষ। আমি আর আমার সঙ্গী দল হেঁটে কেন্দ্রে পৌঁছানের পথে অনেকে উইস করল হ্যাপী নিউ ইয়ার ২০১০। আমরাও উইস করতে করতে এগিয়ে গেলাম মূল অনুষ্ঠানের কাছে। শেষ মুহুর্তে ভীড় করছে আরো মানুষ। দুমিনিট আগে থেমে গেলো গান।

নতুন বছরের আগমনী অপেক্ষা সবার মনে। উপস্থাপকের বর্ননা চলছে। শুরু হলো হাজারো মানুষের এক সাথে সময় গননা ..নয়..আট..সাত.ছয়..পাঁচ ..চার ..তিন ..দুই.. ওয়েলকাম টু থাওজেন টেন, আলোর ফুলছুড়ি .. চিৎকার, উচ্ছাস, কাছের মানুষের আলিঙ্গন, ভালোবাসার মানুষকে চুমু,প্রার্থনা শুভেচ্ছা জানান। প্রচন্ড ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে দেখছি মিনিট পনেরো ধরে ছুঁড়ে দেয়া আলোর খেলা। পিছনে বা পাশের মানুষ অচেনা পৃথিবীর অন্য কোন দেশের মানুষ পুরুষ নারী।

অথচ কেউ একটি বারের জন্য ছুঁয়ে দেখার ও চেষ্টা করছে না কাউকে আপন জন ছাড়া। অসাবধনতায় ভীড়ের কারণে কখন কারো গায়ে লেগে গেলে সাথে সাথে ”সরী” বলে মাপ চেয়ে নিচ্ছে সে নারী কিংবা পুরুষই হোক। গান বাজনার তালে কথা বা সুর ভাজছে, নিম্গ্ন অনুষ্ঠানের আনন্দে,কেউ নাচ করছে আপন মনে। হঠাৎ আমার কানের কাছে একটু বেক্ষাপ্পা কথা শুনলাম। আমার পেছনের মানুষটি উচ্ছাস প্রকাশ করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে দূরের কোন মানুষকে মুঠোফোনে।

এত শব্দের মাঝে চিৎকার করেই কথা বলতে হচ্ছে বেচারাকে। কানের কাছে চুংচা শব্দ শুনে, আমি একটু মুখটা ঘুরিয়ে তাকাতেই সে বুঝতে পারল ওর জোড়ে কথা বলা অন্যদের অসুবিধা করছে । যদিও বিজাতিও ভাসা তবু বুঝলাম সে তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলল কথাবার্ত। ট্রেনে চড়তে প্রায় দুঘন্টা লেগে গেলো ভীড়ের কারণে। প্রচুর লোক দাঁড়ানোর জায়গা নাই।

ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে লাগল স্টেশনে স্টেশনে । আবার নতুন কিছু মানুষও উঠতে লাগল। একজন যুবক টলে পরে যাচ্ছে, বুঝা যাচ্ছে অতিরিক্ত পান হয়েছে। পরের স্টেশনে অসম্ভব রূপবতি এক মেয়ে উঠলে, ঘোর লাগা চোখে ছেলেটি মেয়েটির কাছে গিয়ে কথা বলে, ভাব করার চেষ্টা করল। খানিকটা বেশামাল ছেলেটি গায়ে হাত দিয়ে ভাব করতে গেলো।

মেয়েটি সরে গেলো ছেলেটি আবার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই মেয়েটি বলল, ডোন্ট টাচ মি, ও আচ্ছা তুমি আমাকে পছন্দ করছো না। ঠিক আছে, ছেলেটি ফিরে গেলো নিজের আসনে। যত বেশামাল অবস্থাই হোক আইন জ্ঞান টনটনে রাখতে হয়। মেয়েটি পুলিশ ডাকলে বর্ষশুরুর দফারফা হয়ে যাবে। সারা বছর এমনকী সারা জীবনের জন্য দাগী আসামী হয়ে থাকতে হবে আর প্রতি পদে পদে ক্রিমিন্যাল হওয়ার খেসারত দিতে হবে সুযোগ বঞ্চিত হয়ে।

ক্যানাডাকে বলা হয় উইম্যান ফ্রীডমের দেশ। মেয়েরা এখানে রাজার হালে থাকে। আচ্ছা সে গল্প আরেক দিন হবে যা বলছিলাম বর্ষশুরুর কথা। সেখানেই ফিরে যাই। অনেক ভালো রেস্টুরেন্ট রাত অবধী খোলা থাকে।

অনেকে পান করেন বলরুমে নাচে মেতে উঠেন। খোলেন নতুন স্যাম্পেনের বোতল। ৩১শে ডিসেম্বর রাত বারোটা এক মিনিটে আলোর ঝলসানি, হৈ হুল্লোরে মাতোয়ারা ক্যানাডাবাসী বরণ করে নতুন বৎসর পহেলা জানুয়ারী। হ্যাপী নিউ ইয়ার ধ্বনী উচ্চারিত হতে থাকে কিছু দিন। বাড়ি বাড়ি জ্বলতে থাকে আলোর মালা জানুয়ারী ধরে।

এই আনন্দ উচ্ছাসের বন্যা খুশি ভাব চলতে থাকে বেশ কিছুদিন ধরে। কিছু মানুষ যখন উচ্ছাসে মাতে পৃথিবীর অনেক মানুষ আবার এসবের কোন খবরও জানেনা। দিনের কোন হিসাব নাই তাদের কাছে। প্রতিদিনই আরেকটা জীবন সংগ্রাম বেঁচে থাকার । তারা দেখে কিছু মানুষের আনন্দ ওরা সোনার চামুচ মুখে জন্মেছে।

ওদের আতস বাজীর খরচ তাদের মুখে আহার যোগাতে পারত। সে ভাবনাও তারা ভাবে না। ওরা জানে ওদের জীবন ধুঁকে ধুঁকে চলার। এই অসহায় মানুষগুলো কোন প্রতিবাদ জানায়না দাবী করে না। অথচ এই পৃথিবীর সব আনন্দ উপভোগের অধিকার ওদের সমান প্রাপ্য।

যারা এই আনন্দ উপভোগ করছে তারা কী কখনো এই আনন্দ পৃথিবীর সব মানুষের সাথে ভাগ করে নেয়ার কথা ভাববে ? নববর্ষের শুভবার্ততা সকল মানুষের জন্য সমান হোক, যারা কিছু করতে পারে সকল মানুষের জন্য সেই উচ্চাসনে আসিন মানুষদের চোখ খুলুক এই কামনা।
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।