আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রঙীন সেই দিনটি



দিনটির কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে, রঙে রঙে সেজেছিল সমস্ত দেশের মানুষ। যেদিন বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পেল, সেই দিনটির কথা বলছি। আমি তখন কলেজে পড়ি। ক্লাস চলছিল। খেলার খবর জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলাম সবাই।

আমাদের মধ্যে থেকে একজন রেডিও এনেছিল। লুকিয়ে লুকিয়ে একটু পর পর খেলার ধারাভাষ্য শুনছিলাম। কিভাবে যেন টিচার'স রুমে খবর চলে গেল যে আমাদের ক্লাসে রেডিও এনেছে কেউ। এক কড়া ম্যাডাম এসে সবাইকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কে এনেছে রেডিও। আমরা সবাই চুপ।

স্বীকারই করলাম না রেডিও আছে। এতগুলো মেয়ের ব্যাগ চেক করাও সম্ভব না, চেক করতে করতেই এদিক ওদিক পাচার হয়ে যাবে রেডিও। ম্যাডাম বললেন, কে রেডিও এনেছ বল, নইলে সবাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আমরা খুশিমনেই সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। ভাগ্য ভালো যার রেডিও সে তখন বাইরে গিয়েছিল একটা কাজে, নইলে সে ভয় পেয়ে বলে দিতে পারত।

খেলায় জেতার খবর যখন পেলাম কেউ আর চিৎকার না করে পারলাম না। ম্যাডাম এসে আরেক দফা বকা দিয়ে গেলেন, যদিও রেডিও উদ্ধার করতে পারলেন না বা আমাদের আনন্দও কোন অংশে কমাতে পারলেন না। কলেজ ছুটি হবার আগে আগে খবর আসল, কেউ রাস্তায় বের হলেই তাকে রঙে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে। বাইরে দাঁড়ানো গার্জিয়ানরাও এর থেকে রেহাই পান নি। একজন আংকেলকে দেখলাম সবুজ রঙের টাক নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

স্কুল কলেজের অনেক মেয়েই সাহস করে বের হল, প্রত্যেকেই রঙে ভেসে গেল। এর মধ্যে কয়েকজন কাঁদতে কাঁদতে প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ দিতে এল, নালিশ দিয়ে আর লাভ কী। এর মধ্যে একজনকে এতই রঙ মাখানো হয়েছিল যে অনেকদিন পর্যন্ত তার এক কান সবুজ আর এক কান লাল হয়ে ছিল। সে নিজেই বলত, আমি বাংলাদেশের পতাকা হয়ে গেছি। আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম।

প্রায় দেড় ঘন্টা পর বের হলাম। রাস্তা তখন অনেক শান্ত। রিকশা ঠিক করে রওনা দিলাম বাসায়। রাস্তায় কয়েকজন আমাকে তখনও ফ্রেশ অবস্থায় দেখে দৌড়ে আসল, কিন্তু তাদের স্টক শেষ হয়ে যাওয়ায় কিছুই করতে পারল না, শুধু একটু ভয় দেখাল খালি রঙের কৌটা ছুড়ে দেখানোর ভান করে। রঙে ভেসে যাওয়া রাস্তা দিয়ে সহি সালামতে বাসায় ফিরলাম।

এসেই খোঁজ নিলাম কার কী অবস্থা। দেখলাম সেদিন বাসার সবাই বের হয়েছিল। আব্বা অফিসে গিয়েছিলেন, বয়স্ক মানুষ বলে হয়ত কেউ ঘাটায় নি। আম্মা ছোট ভাইটাকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছেন আবার নিয়েও এসেছেন, ওদের কাউকেই রঙ দেয়া হয় নি। বড় দুইবোন ভার্সিটিতে গিয়েছিল।

ঐরকম একটা জায়গা থেকেও তারা সম্পূর্ণ বে-রঙ অবস্থায় বাসায় ফিরেছে। বাকী রইল ছোটবোন। সে স্কুল থেকে বের হয়ে বাসায় আসা পর্যন্ত প্রতিটা রাস্তার মোড়ে একবার করে রঙে গোসল হয়েছে। মোট সাতবার তাকে সাত রঙে ভাসানো হয়েছে। বেচারীকে আর চেনা যাচ্ছিল না।

আমাদের পরিবারের সাত সদস্যের রঙ সে একাই মেখেছিল সেই দিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.