আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার চোখে একুশে February

আমাদের চিন্তাই আমাদের সংজ্ঞায়িত করে শুরুতেই একটা গল্প বলি । শুধু গল্প নয় , বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী । এখন থেকে অনেক বছর আগের কথা । জিব্রাল্টার কাছে এক প্রাচীন শহর ছিলো । জ্ঞানে বিজ্ঞানে এখন থেকে ও ছিলো অনেক উন্নত ।

শহরটার নাম ছিলো আটলান্টিস । তো সেখানকার বিজ্ঞানীরা একবার মারাত্মক রোগে আক্ক্রান্ত হল , মৃত্যু অবধারিত । এখন কী করা যায় ? তারা ভেবে দেখলেন, মানুষের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার জ্ঞান । তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তারা তাঁদের সব জ্ঞান এক লাইব্রেরী তে জমা করলো । জ্ঞান সুরক্ষিত করতে করতে তারা মারা গেলেন ।

প্রথমে তাঁদের মৃত্যুর পর অনেক মানুষ হাহাকার করে উঠলো । তাঁদের সম্মানে বানানো হল স্মৃতি ফলক । মানুষ তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো অবিরত । কিন্তু মানুষের শোক তো সব সময় থাকে না । কান্নায় শোক মন্দীভূত হয় ।

তাদের শোক ও কমে এলো । ক্রমে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেলেন । বিজ্ঞানীদের কল্যাণে ততদিনে তাদের জীবন অনেক উন্নত । জীবনের সব কিছু তখন প্রযুক্তি দিয়ে করা যায় । জ্ঞানের খুব একটা দরকার নাই ।

দরকার শুধু যন্ত্র গুলো । সেগুলোই জীবনের একমাত্র সম্বল । দিনদিন যন্ত্র গুলোর প্রতি মানুষের ভক্তি বাড়তে থাকলো আর আস্তে আস্তে জ্ঞান চর্চা গেলো কমে । বিজ্ঞান নিয়ে কেউ আর ঘাঁটায় না , সবাই ভোগ বিলাসে মত্ত । কিন্তু যতই তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করুক , তারা জানে এগুলোর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানীদের অবদান ।

আর তাই বিজ্ঞানীদের প্রতিও তাদের ভক্তি ক্রমে বেড়ে গেলো । কিন্তু বিজ্ঞানীদের স্মরণে কী করা যায় ?কিছু একটা করতেই হয় , নইলে কেমন দেখায় ? তাঁদের কল্যাণে এই প্রযুক্তি আর তাঁদের জন্য কিছু না করলে মান ইজ্জত থাকে ? জ্ঞান চর্চা তো করা সম্ভব না এর চাইতে বরং এক কাজ করা যাক, তাঁদের স্তুতি গাওয়া যাক । তাঁদের স্মরণে যে স্মৃতি ফলক টা আছে সেখানে কিছু নিবেদন করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায় । একদিনের ব্যাপার মাত্র । অই দিন তাঁদের নাম জপতে জপতে অজ্ঞান হয়ে যেতে হবে ।

তবেই না সবাই বুঝবে কৃতজ্ঞতার বহর কত । গল্পটা শেষ করা বোধকরি লাগবে না কারন সবাই এতক্ষনে বুঝে গেছেন গল্পের পটভুমি কী । জি হ্যাঁ । বাংলার ভাষা দিবস কে ঘিরে আমাদের হিপোক্রেসি । বাংলার অমর একুশে February আর গাংনাম কলাভেড়ী আম জনতা ।

একুশে ফেব্রুয়ারী দিবস টা প্রতি বছর যত দেখি ততই অবাক লাগে । বাংলা ভাষা নিয়ে মানুষের ভালোবাসা এদিন দেখলে সত্যিই বিস্মিত হতে হয় । বিশেষ করে যখন রাত ১২ টায় ফুলের ঢল নামে শহীদ মিনারে । ফুল দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে তারা বদ্ধ পরিকর ; ভাষা স্মরণে তাঁদের একমাত্র করনীয়ঃ শহীদ মিনার কে যত পারা যায় কৃতজ্ঞতা দেখাও । বাংলা ভাষাকে অন্তর থেকে ভালো বাসেন আর নাই বাসেন শহীদ মিনারে ফুল না দিলে আপনি যে রাজাকার তাতে তো কোনই সন্দেহ নাই ।

আর তাই শহীদ মিনার ঢেকে যায়ফুলের বন্যায়। এই ফুলের বন্যা দেখে যে কারে মনে হতে পারে শহীদদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। মাতৃভাষার প্রতি আমাদের ভালবাসার সীমা নাই। কিন্তু আমরা এই দিন রাত ১২ টায় আন্ডা বাচ্চা নিয়ে হাজিরহই শহীদ মিনারে। ভাষার প্রতি ভালোবাসার খই ফোটে আমাদের মুখে।

ফুলে আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাই । বাংলা নিয়ে কে ভাবে ? সব কিছুর একটা কার্যকারণ থাকে । আজকাল এই জিনিস গুলা ego এর ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে , তরুনপ্রজম্ন এই দিনে কী করে ? সকালে ফুল দিয়ে সারাদিন ঘোরাঘুরি করে । আমাকে খালি বল যে একদিন ফুল দিয়ে তুমি কী প্রমান করতে চাও ? কাদের সামনে প্রমান করতেচাও ? যে পরিমান ফুল দেয়া হয় এই দিনে তাতে বোঝাই যায় ভাষার প্রতি সবার টান অনেক । বাস্তবে কিতাই ? আমি শুধু বলতে চাই লোক দেখানো নয় , বরং যদি অন্তর থেকে হত তাহলে আজকে তরুন RJ/DJদের অবস্থা এমন হয় কিভাবে ? কয় জন জানে ভাষা দিবসের বাংলা তারিখ ? কিন্তু এই একদিনসবাই কতই না ব্যাকুল , আকুল ।

অনেকে হয় তো বলবেনঃ আরে ব্যাটা ছাগল, তুই যে ভাষা শহীদ দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবি , তোর একটা প্রতিকৃতি লাগবে না ? নাইলে কিসের মাধ্যমে জানাবি ? একটা মাধ্যম তো লাগবে । জী ধন্যবাদ । আমি একজন মুসলিম , তাই মাধ্যম ছাড়া কৃতজ্ঞতা জানানোর অভ্যাস আমার আছে । স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাকে আমি কোন প্রতিকৃতি ছাড়াই কৃতজ্ঞতা জানাই । আল্লাহর রাসুল (সা) এর কোন প্রতিকৃতি ছাড়াই তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানানোর (আল্লাহর রাসুল হিসেবে) জন্য যে কোন অবস্থায় শুয়ে বসে তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করার শিক্ষা পেয়েছি এতদিন।

এক্ষনে এসে ভাষা শহীদদের কৃতজ্ঞতা জানাতে আমার প্রতিমূর্তি লাগবে না ধন্যবাদ । আমি বরং মনে করি আমরা যথা যথ সম্মান দিচ্ছি না । কেন? ১) বাংলা ভাষা দিবসের তারিখ ২১ শে ফেব্রুয়ারি কেন ? ৮ই ফাল্গুন বলে আমরা ডাকি না কেন?বাংলা ভাষা দিবস হবে বাংলা তারিখ এ । ২) এই দিন থেকে আমরা নতুন করে বাংলা বছর চালু করলে ভালো হত না ?কেউ কি ভেবে দেখেছেএকবার। পয়েন্ট গুলা নিয়া একবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিসিলাম ।

একজন এসে কুই কুই করে বলল, একুশে Februaryহচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আর তাই বিশ্বজনের স্বার্থে (!) বাংলিশ ২১ শে February নামটাই ভালো । আরে বাবা, আমরা যারা বাংলা ভাষায় পালন করি তারা তো ৮ ই ফাল্গুন বলতেই পারি international mother language day ২১ শে february হিসেবে শুরু হলে সমস্যা নাই আমরা নিজেরা তোঅন্তত বলতে পারি যে ৮ ই ফাল্গুন ভাষা দিবস্ কয় জন জানে বাংলা ভাষা দিবস এর তারিখ ? interna'tnal language day শুরু হবার বহুত আগ থেকেই বাংলিশ ভাবে আমরা ২১ শে ফেব্রুয়ারী বলেআসতেছি । আসলে কথা হচ্ছে ভুল হোক আর যাই হোক নিয়ম একটা হয়ে গেছে । আর এটাই বড় কথা তখন থেকে যদি ৮ই ফাল্গুন আমরা ভাষা দিবস বলে আসতাম আর আজকে যদি আমি International day লজিক গুলা দিয়া মানুষকে বলতাম যে ভাষা দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারী বলা দরকার তাহলে কী বলত আমাকে ?খেয়ে ফেলতো আম জনতা আমাকেঃ ব্যাটা রাজাকার ! মহান ভাষা দিবসের নামকরন বাংলিশ নামে করতে চাস ? যাই হোক , আসল প্রসঙ্গে ফিরে আসি । সত্যি কথা হচ্ছে রাত ১২ টায় ফুল দেয়া খালি পায়ে হিমুর মত সকাল বিকাল হাঁটাহাঁটি করা এসব আসলে শুধুই ভণ্ডামি।

ঠিক ই ২ দিন পর কলাভেড়ী শুরু হবে। আজকের ব্যাকুলতা টা হচ্ছে সেইটার মাশুল মাত্র । নিজেকে নিজের কাছেই প্রমান করা । আমরা যদি সত্যিই ভাষা কে ভালোবাসতাম তাহলে আজ ডোরেমন বইমেলায় শত শত কপি বিক্রি হয় না । বাসায় বাসায় জী বাংলা চলতো না ।

তরুনরা গাংনাম ,কলাভেড়ীর নামে এক গাঁজা খোরের মাতলামি শুনত না । রাস্তায় রাস্তায় শীলা , মুন্নি এসব বাজতো না । রাস্তায় বের হলেই তো সব বহুজাতিক কোম্পানির প্রসাধনীরবিজ্ঞাপনে ঐশ্বরিয়া রায় আর শাহরুখ খান। আমাদের এত জয়া আহসান বা নোবেলরা কোথায় গেল? দেশে শাহরুখ খান এসে বাংলা জানেন না বলে বাঙ্গালীর সাথে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানাতো না । বিপিএল এ হিন্দি নাচ- গান দেখে ফুর্তি করতো না মানুষ ।

বরং মনে হয় যেন এসব ছাড়তে পারবে না বলেই মাশুল হিসেবে এদিন তারা বেশী করে উতলা হয়ে উঠেন আর নিজের কাছে নিজেকে স্বচ্ছ রাখার ব্যর্থ চেস্টা করেন । বাংলা একাডেমীর প্রাঙ্গণ থেকে বইমেলায় আসা বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীদের যখন জিজ্ঞেস করা হয়একুশে ফেব্রুয়ারীতে কী হয়েছিল তখন সত্য মধ্য বয়সী রমণী থেকে ছোট্ট শিশুসহ অনেকেই পারেনিকোনো সদুত্তর দিতে। এক যুবক আবার বলে উঠলেন ৭ মাস যুদ্ধ করে এদিন আমরা স্বাধীনহয়েছি,বেশীরভাগেরই উত্তর এদিন অনেক বড় যুদ্ধ হয়েছিল। WATCH VIDEO(facebook) [yt|] আমরা শহীদ মিনারে ফুল তো কম দিচ্ছি না বরং আগের থেকে বাড়ছে । বিভিন্ন স্থানে তৈরি হচ্ছে শহীদ মিনার , কারন প্রতিকৃতি ছাড়া তো আর ফুল দেয়া যাবে না ।

তাহলে ? সমস্যা কোথায় ? ফুল কি তাহলে আরো বেশি দিতে হবে ? নাকি বিদেশ থেকে দামি ফুল আমদানি করতে হবে ? আমি জানি না। আপনারাই সমাধান করুন। "সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী রেখেছো বাঙ্গালী করে মানুষ কর নি" ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.