আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজামী, যুদ্ধাপরাধ ও শারিয়া আইন (তওবা করলে গণহত্যাকারী গণধর্ষণকারীদের শাস্তি হবে না - শরিয়া আইন)

সৃজনশীল সাহিত্যের শৈল্পিক প্রয়াসে নিমগ্ন একজন প্রকাশক
(সাম্প্রতিক পড়া হাসান মাহমুদের একটি দুর্দান্ত লেখা সবার সাথে শেয়ার করলাম। স্বাধীনতার মাসের শেষ দিনগুলোতে এই লেখাটি অবশ্যপাঠ্য বলে মনে হয়) নিজামী গং বরাবরই বলতেন জাতিকে নাকি বিভক্ত করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী-বিচারের বাতাস বইবার সাথে সাথে কথাটা তাঁরা যত্রতত্র বলে বেড়াচ্ছেন এবং বেশ উচ্চকন্ঠে বলে বেড়াচ্ছেন । জাতির ঐক্যের খাতিরে নাকি গণহত্যা-গণধর্ষণের মত ভয়ংকর অপরাধের বিচার শিকেয় তুলে রাখা দরকার। লক্ষ ধর্ষিতাদের সাথে গণধর্ষণকারীদের এবং লক্ষ নিহতদের কোটি স্বজনদের সাথে গণহত্যাকারীদের ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা নাকি খুবই দরকার।

জনাব নিজামী, কিছু স্পষ্ট কথা আপনার মাথায় না ঢুকুক কানে ঢালা প্রয়োজন। ষড়যন্ত্রের খিড়কি দরজা দিয়ে নষ্ট রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া আর জাতির হূদয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া’র মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। আজ বিপদে পড়ে ঐক্যের কথা বলছেন, জাতিকে বিভক্ত কে করেছে রক্তরেখায় ? আপনাদের আর জাতির মাঝখানে লক্ষ লাশ লক্ষ ধর্ষিতার হিমালয় কে তুলেছে ? আপনারাই তুলেছেন। সে হিমালয় চিরকাল দাঁড়িয়ে থাকবে রক্তস্বাক্ষরে। পরাক্রান্ত বিদেশী সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে সেই জীবন-মরণ যুদ্ধে আপনারা আমাদের সাথে ঐক্য করলে আমাদের শক্তি আর মনোবল অনেক বাড়ত।

কিন্তু আপনারা বাংলায় জন্মে বাঙ্গালীর সঙ্গে ঐক্য না করে বাঙ্গালীরই বিরুদ্ধে খোলাখুলি জিহাদ ঘোষণা করলেন, মানুষ খুনের অস্ত্র ধরলেন। জাতির ওপরে বিদেশীদের গণহত্যা-গণধর্ষণে শরিক হওয়াকে ইবাদত মনে করলেন এবং প্রাণপনে সে ‘‘ইবাদত’’ করলেন-ও। আপনাদের সক্রিয় সমর্থন নাপাক পিশাচদের শক্তি ও মনোবল অনেক বাড়িয়েছিল, আপনাদের সাহায্য না পেলে অনেক বাঙ্গালী বেঁচে যেত অনেক বাঙ্গালিনী ধর্ষিতা হত না। এর পরেও আশা করেন আমরা আপনাদের সাথে ঐক্য করি ? আটত্রিশ বছর কেটে গেছে আপনারা সে অপরাধের জন্য আল্লা-রসুলের কাছে আর নিপীড়িতদের কাছে ক্ষমা তো চানই নি বরং সগর্বে বলেছেন - ‘‘একাত্তরে আমরা ভুল করিনি’’। করেছেন।

ভুল-ও করেছেন, অপরাধও করেছেন। কেন করেছেন জাতি জানে। ঐক্য যে করবেন, করবেন-টা কার সাথে ? এ জাতি কখন আপনার নিজের জাতি ছিল ? কখনোই না। এ জাতির সংস্কৃতি কবে আপনার সংস্কৃতি ছিল ? কখনোই না। কখনো গেছেন রমণার বটমূলে বর্ষবরণে? যান নি।

পালন করেছেন ষড়ঋতু-নবান্নর মায়াময় উৎসবগুলো? করেন নি। এ জাতির মরমীয়া ইসলাম কবে আপনাদের ইসলাম ছিল? কখনোই না। জাতির হাজার বছরের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ঐতিহ্যে ঘুন ধরিয়ে ইসলামের হিংস্র ব্যাখ্যা আমদানী কে করেছে ? আপনারাই করেছেন। চোখের সামনে ফতোয়াবাজেরা বাঙ্গালিনীদেরকে হিলা বিয়ের নামে ধর্ষণ করায় আপনাদের ইসলামি বুক কাঁপে না। চোখের সামনে শারিয়াবাজেরা ধর্ষিতা বালিকাদের চাবুক আর জুতো দিয়ে পেটায় আপনাদের ইসলামি বুক কাঁপে না।

অথচ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আপনাদের সংগঠন আছে, আপনাদের অঙ্গুলী হেলনে ইসলামের নামে এই হিংস্রতা, মা-বোনের এই জীবন-ধ্বংস বন্ধ হতে পারত। আপনারা করেন না কারণ বাংলাদেশী ওই অসহায় মা-বোনেরা আপনাদের কেউ নয়। আপনারা যতনা বাংলাদেশী হয়েছেন তার চেয়ে বেশী হয়েছেন পাকিস্তানি। যতনা মুসলমান হয়েছেন তার চেয়ে বেশী হয়েছেন আরবী। তাই আগ্রহ আর উল্লাসের সাথে নিজের জাতিপরিচয়কে, বাংলাদেশীর রক্তকে আর নারীর সÞমকে বিদেশীর পায়ে অর্ঘ্য দিয়েছেন।

ধর্মীয় উন্মাদনা কতখানি উন্মাদ উদগ্র হলে মানুষ এমন করতে পারে তা জাতি ঠিকই বোঝে। জাতির হত্যাকারী ধর্ষণকারী শক্তির সাথে অস্ত্রহাতে ঐক্য করেছেন, এখন ডুডু-ও খাবেন টামাকও খাবেন তা হয় না। গাছের খাবেন তলারও কুড়োবেন তা হয়না। কিছু মানুষ চিরকাল-ই হিংস্র কসাই থাকবে। কিন্তু আমাদের কষ্টটা হচ্ছে এই যে আপনারা এটা করেছেন ইসলামেরই নামে।

ইসলামি রাষ্ট্র বানিয়ে শারিয়া আইন চালাতে চান। জাতির জানা দরকার একাত্তরের কসাইপনা ও কুকর্মের কি ব্যবস্থা শারিয়া আইনে আপনারা আগে থেকেই করে রেখেছেন, উদ্ধৃতিঃ - ‘‘হিরাবা’র অপরাধ ব্যতীত অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধী তওবা করিলেও শাস্তি হইতে রেহাই পাইবে না - হিরাবার অপরাধের শাস্তি ব্যতীত তওবা অন্য কোন শাস্তি বাতিল করে না’’ - শরিয়া আইন নং ১৩, বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খ¨ পৃষ্ঠা ২১৮ ও ২২২। সুষ্পষ্ট আইন। অর্থাৎ হিরাবা’র অপরাধীরা তওবা করলে ‘‘শাস্তি হইতে রেহাই পাইবে’’। হিরাবা কি? আবার উদ্ধৃতি দিচ্ছি আপনাদেরই ওই শারিয়া কেতাব থেকেঃ- ‘‘হিরাবাহ্ বলিতে সংঘবদ্ধ শক্তির জোরে আক্রমণ চালাইয়া আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাইয়া জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা বোঝায়।

সম্পদ লুন্ঠন, শ্লীলতাহানী, হত্যা ও রক্তপাত ইহাত অন্তর্ভুক্ত’’। হল ? ইসলামের নামে ইসলামের প্রতি এই ভয়ংকর বিশ্বাসঘাতকতা কে করেছে? আপনারা-ই করেছেন। ইসলামের নামে আইন বানিয়েছেন ইসলামি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হুদুদ অপরাধ অর্থাৎ খুন-যখন-ডাকাতি-পরকীয়া-কুৎসা করলে - ‘‘তাহার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা যাইবে না’’ - বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ৩য় খ¨ আইন নং ৯১৪ গ। মুখে ইসলামের তুবড়ি ছুটিয়ে কোরাণ-বিরোধী নারী-বিরোধী আইন বানিয়েছেন, স্বামীর জন্য - ‘‘তালাক সংঘটিত হওয়ার জন্য সাক্ষ্য শর্ত নহে’’ - বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন ১ম খ¨ আইন নং ৩৪৪। যেখানে সুরা তালাক আয়াত ২-তে আল্ কোরাণে সুষ্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে রেখেছে স্ত্রী-তালাকের সময় দুইজন সাক্ষী রাখতে সেখানে আপনাদের আইনে ‘‘সাক্ষ্য শর্ত নহে’’, এটা বহু শারিয়া কোর্টে প্রয়োগও হয়।

কোরাণ-রসুলের বিরোধী এমন অজস্র আইন আপনারা বানিয়েছেন ইসলামের নামে। কিছু তরুণ এসব না জেনে না পড়ে আপনাদের বিশ্বাস করে, সমর্থন করে। ওই তরুণরা, কিংবা পরের প্রজন্ম যেদিন জানবে কি নিষ্ঠুরভাবে ওদের ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে ওদের আপনারা ঠকিয়েছেন সেদিন ওরাই আপনাদের গলা চেপে ধরবে। জাতি জানে, তিন খন্ডের বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন কোন একজনের লেখা নয়, আপনাদেরই ফেইথ-কাজিন ছয়জন পন্ডিতের টিম-এর লেখা - আপনাদেরই তত্ত্বগুরু শাহ আবদুল হান্নান-এর তত্ত্বাবধানে। ওটা কোন ব্যবসায়ী প্রকাশকের লাভের বই নয়, ওটা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশন।

একটা গণতান্ত্রিক দেশের সরকারী প্রতিষ্ঠান কিভাবে এ ধরণের বই প্রকাশ করেছে সে দড়িতেও একদিন টান পড়বে। আমাদের হাজার দোষ থাকতে পারে কিন্তু ইসলাম-বিরোধী নারীবিরোধী হত্যাকারী ধর্ষকদের সাথে আমরা বাংলাদেশীরা ঐক্য করি না । এই জাতি কোন চাতুরীতে ভুলবে না - যত হও তুমি সুদক্ষ অভিনেতা লাশের ওজন ধর্মে যাবে না কেনা - যতই ধুর্ত হোক ক্রেতা-বিক্রেতা। হাসান মাহমুদ বিজয় দিবস, ৩৯ মুক্তিসন (২০০৯)
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।