আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজামী এমন কি চিজ?

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে ভারতই সর্বপ্রথম তথা সিএনএন-আইবিএন জামাতে ইসলামী ও বিএনপির সাকা চৌধুরী কে দ্বায়ী করে। সেটা খুব সম্ভবত ২৬শে ফেব্রুয়ারী। তারা তাদের দেশের গোয়েন্দা সুত্রের বরাত দিয়ে এই রিপোর্ট দেয়। এর আগে ঘটনার দিন ২৫শে ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২:১৫ মিনিটে ভারতীয় এনডিটিভি সর্বপ্রথম জানায় যে বিডিআরের ডিজি মে. জে. শাকিল তার স্ত্রী সহ নিহত হয়েছে। অথচ ঐ দিন বিকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন বেসরকারী গণমাধ্যম তো দূরে থাকুক সরকারী ভাবেও নিশ্চিত করা যায় নি যে মে. জে. শাকিল নিহত হয়েছেন।

কিন্তু ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা "র" কিভাবে ঘটনা ঘটার সাথে সাথে জানল যে শাকিল নিহত হয়েছে? আর এই বিদ্রোহের ঘটনায় সেদিন তো দূরে থাকুক ২৭শে ফেব্রুয়ারীর আগে সেনাবাহিনীই পিলখানায় ঢুকেনি, তদন্ত আরো পরের বিষয়। তারপরেও সিএনএন-আইবিএন জামাত ও সাকা চৌধুরী কে অতি দ্রুত দ্বায়ী করল? বিষয় টি কি একটি স্বাধীন-স্বার্বভৌম দেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে কোন বিদেশী রাষ্ট্রের অযাচিত হস্তক্ষেপ নয়? যেখানে অন্য কোন দেশ বা কোন মিডিয়া এই ব্যাপারে বাংলাদেশের কারা দ্বায়ী সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করল না সেখানে ভারত কেন আগ বাড়িয়ে সূর্নিদিষ্ট ভাবে কাউকে দ্বায়ী করল? রহস্য টা কি? কিন্তু যখন নিজামী পাল্টা জবাব দিল যে না ভারতই এই ঘটনার জন্য দ্বায়ী তথা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডজন ডজন অফিসার হত্যার জন্য দ্বায়ী তখনই একজন ব্লগারের ঘুম হারাম হয়ে গেল। সে ঘটনা টি কে এমন ভাবে বিকৃত ও খন্ডিত করল এবং লিখল "পিলখানার হত্যাকান্ডের বিষয়ে মইত্যা রাজাকারের কাছে গোপন খবর আছে - ওকে অবিলম্বে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে টিআইএফ সেলে নেওয়া হোক। " Click This Link এস্কিমো সাহেব এমন ধূর্ততার পরিচয় দিলেন যে যেন নিজামীই প্রথম ভারত কে দ্বায়ী করেছে। বিকৃতির অন্যতম সেরা নমুনা আমার এই সামুতে দেখলাম।

যে বাংলাদেশ কে সত্যিকার অর্থে ভালবাসে সে বলবে যে না বিষয়টির আগে যথাযথ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ তদন্ত হৌক তারপর যে দোষী চিহ্নিত হবে তাকে শাস্তি তথা ফাঁসী তে ঝুলানো হৌক। কিন্তু তা না করে আগেই যদি কেউ বলে ওমুক ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী দ্বায়ী তখন বিষয়টির সুষ্ঠ সমাধান নাও হতে পারে। যদি তর্কের খাতিরে ধরি যে নিজামী দ্বায়ী তখন নিজামী ও তার দল জামাত বলবে ভারতের চাপে আমাদের কে মহাজোট সরকারর ফাসিয়ে দিয়েছে এটা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তখন বিষয় টি নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ হবে কারণ এর সাথে সাকা চৌধূরীর নামও আসা আশ্চর্যের বিষয় নয়। তখন যদি জামাত-বিএনপি আন্দলোন শুরু করে দেয় তখন গোটা দেশে আবার অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হবে।

বাংলাদেশের সচেতন ও বিবেকবান মানুষ ভারতের বিমাতা সূলভ বহু আচরণের জন্য ঘৃণা এবং তাকে অনেক সন্দেহের চোখে দেখে। মোট কথা ভারত কে বাংলাদেশের মানুষ সহজে বিশ্বাস করে না। তাই বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেওয়া অসম্ভব নয়। আর যদি জামাত বা সাকা কেউই তদন্তে দোষী না হন, তখন এরা হিরো হয়ে যাবেন। অথচ তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে পাকি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ সত্য।

তখন যদি যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে কোন মামলা করতে গেলেও তারা ভারতের ষড়যন্ত্রের বিষয় টি সামনে আনবে। তখন যুদ্ধাপরাধের মামলায় এর প্রভাব পরতে পারে। তখন যুদ্ধাপরাধের মামলা সঠিক ভাবে নাও চলতে পারে। বাংলাদেশে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে যখন কোন মামলায় রাজনৈতিক প্রভাব পড়ে সেই মামলার ভবিষ্যতই অনিশ্চিত হয়ে যায়। যদি নিজামী ও সাকা চৌধুরী যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আদালতে দোষী সাব্যস্ত না হন তখন এ দেশীয় যুদ্ধাপরাধীদের গোটা বিচার করার ব্যাবস্থাটিই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় এত হত্যাকান্ড কোন দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীর কাছে স্বপ্নেও কাম্য নয়। সেখানে এই রকম নারকীয় ঘটনার কোন তদন্ত হওয়ার পূর্বেই যদি বিদেশী কোন রাষ্ট্র বলে যে সূনির্দিষ্ট ভাবে ওই লোক দ্বায়ী তখন সে আরো আলোচিত ব্যাক্তি হয়ে গেল। অথচ যে কিনা যুদ্ধাপরাধের বিচারের ভয়ে তটস্থ ছিল। কিন্তু ভারতের আগ বাড়িয়ে এই রকম অভিযোগ এখন তাকে বাঁচার পথ করে দিলেও দিতে পারে। বিডিআর বিদ্রোহের পর ভারতের কোলকাতার পত্রিকা টেলিগ্রাফ লিখেছে যে বর্তমান মহাজোট সরকার নাকি দিল্লী কে ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা একমাত্র ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে দিতে ইচ্ছুক; http://www.telegrap hindia.com/ 1090227/jsp/ frontpage/ story_10599074. jsp টেলিগ্রাফ পত্রিকার এই রিপোর্টের পরও বাংলাদেশের মহাজোট সরকার এ বিষয়ে কোন কিছু বলেনি।

আর মৌনতা সম্মতির লক্ষণ স্পষ্টতই মহাজোট সরকার বাংলদেশে ভারতীয় বাহিনী কে স্থায়ী ভাবে রাখতে চায়। এ ছাড়া এই ঘটনায় ভারতীয় বিমান বাহিনীও বাংলাদেশে ঢুকার জন্য ষ্ট্যান্ড বাই ছিল; Click This Link জামাত কিন্তু ভারতের অভিযোগের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র মৌনতা দেখায় নি। কিন্তু অন্ধ আওয়ামী-বাকশালী সমর্থক এস্কিমো ওরফে জিয়া উদ্দিন ভাই এ বিষয় টি মাথায় রাখেন নি বলেই প্রতীয়মান হয়। আর যদি রাখেনই এমন হঠকারী ব্লগ কেন লিখলেন? চলুক না ভারত ও নিজামী বা জামাতের কামড়া কামড়ী। বাংলাদেশের কোন সাংবাদিক বিশেষ করে আলীগ সমর্থক কোন পত্রিকা বা সাংবাদিক এ বিষয়ে কোন মন্তব্য বা এস্কিমোর মত দ্বাবী কেউ করে নি।

কিন্তু এস্কিমো এতই নিজামী বা জামাত ফোবিয়ায় ভূগেন যে আগা মাথা বিবেচনা না করে স্রেফ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করেন। তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে লিখছেন সেটায় আমার কোন আপত্তি নাই। কারণ মহাজোটের নির্বাচনী এজেন্ডায় যুদ্ধাপরাধের বিচার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচারের সাথে বিডিআর বিদ্রোহের সম্পর্ক এখনও আমাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু ভারতের সূরে তাল মিলিয়ে নিজামী কে বিডিআর বিদ্রোহের জন্য দ্বায়ী করে প্রকারন্তরে নিজামী ও জামাতেরই উপকার করছেন।

তিনি কি ইচ্ছা করেই করছেন নাকি বেকুবের পরিচয় দিচ্ছেন? নিজামী এমন কোন ব্যাক্তি নন যে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় তার দল জামাত সহসাই যাবে। সে জীবিত অবস্থায় একক ভাবে তো নয়ই বরং আগামী ১০০ বছরেও জামাত বাংলাদেশর রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবে কিনা তা যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। তারপরেও মূল বিষয়ের(যুদ্ধাপরাধের বিচার) বাইরে কেন অহেতুক নিজামী কে নিয়ে হাইলাইট করা হয় তা সঠিক ভাবে বুঝতে পারি না। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার পর হতেই ভারতের নানা বিমাতা সুলভ আচরেণ শিকার। সেক্ষেত্রে ভারতের এ ধরণে আচরণ জামাত কে বিপুল ভাবে অজুহাত দিবে যে ভারত বাংলাদেশ কে দখল বা করদ রাজ্য বানিয়ে রাখতে চায়।

ফলে বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনায় ভারতের মন্তব্যের পূর্বে যুদ্ধাপরাধের বিচার দ্বাবীতে যে আবহ তৈরী হয়েছিল তা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হবে। বাংলাদেশের অনেক মানুষই জানে ভারত কোনদিনই চায়নি এ দেশের সশস্ত্র বাহিনী থাকুক। এই সুরই আওয়ামী বুদ্ধিজীবি মুনতাসির মামুন, কবির চৌধুরী, গাফ্ফার চৌধুরী সহ অনেকেই কথা বলে। আর বিএনপি-জামাতের সবাই চায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দিন কে দিন শক্তিশালী হতে থাকুক। এই যুক্তিতে বলা যায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর কোন ক্ষতি হলে তা নিয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বিএনপি-জামাত।

কারণ দুটি দলই ভারতের চক্ষুশূল। ভারত কখনই চায়না এ দুটি দল আবার জোটগত ভাবে ক্ষমতায় যাক। কারণ ২০০১-০৬ সময়ে চারদলীয় জোট ভারতের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোন অসম চুক্তি করে নি। তাই আজকে বিডিআরের বিদ্রোহের ঘটনায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর ষ্ট্যান্ড বাই থাকা, কমান্ডো ও ছত্রী সেনার প্রস্তুতি নেওয়ার অপতৎপরতা কে অস্বীকার করে যারা এই ঘটনায় স্রেফ নিজামী ও জামাত কে ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা জবাবে কিছু বলা কে হাইলাইটস্ করে তা অবশ্যই ভারতের আধিপত্যবাদী কার্যক্রমকেই প্রশ্রয় দেয়। যা অবশ্য অবশ্যই জামাতের ও নিজামীর ফেভারে যায়।

আর মনে রাখতে হবে বাজাই হল পাকিস্তান ও সৌদি আরবের পছন্দের এবং বিশ্বস্ত সংগঠন তাই এটা কখনই ভারতের সাথে গোপনে গোপনে সম্পর্ক রাখতে পারে না। যদি তাই হত তো আমরা এতদিনে পাকিস্তান-সৌদি ও বাজাইর মধ্যে বিরুপ সম্পর্কের খবর পেতাম। তারপরেও এস্কিমো সাহেব বলেন যে নিজামীর সাথে নাকি "র" এর গোপন সম্পর্ক আছে। এ রকম অর্বাচীন ও অবাস্তব কথা বলে নিজামীর রাজনৈতিক ভিত যত না পূর্বে শক্তিশালী ছিল তা আরো শক্তিশালী হবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদপত্র মারফত জেনেছি জামাতের যারা অনূর্দ্ধ ৫০ বছর সেই সকল নেতা কর্মীদের সিংহভাগ অংশ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের জন্য নিজামী, মুজাহিদ সহ একই অভিযোগে অন্য নেতাদের জামাত হতে অব্যাহতি দিতে চান।

সেখানে যদি ভারতের এভাবে উস্কানি মূলক বক্তব্য চলে তখন স্বভাবতই নিজামী সহ অন্যরা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হয়ে উঠবেন। কারণ জামাতের সবাই ভারত কে শত্রু মনে করে। বাংলাদেশের কারো উচিত হবে না ভারত-বাজাই এর বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনায় টাগ অভ ওয়ারের বিষয় নিয়ে তদন্তের পূর্বেই কোন কিছু বলা। তাতে নিজামী সহ অন্যান্য এ দেশীয় যুদ্ধাপরাধীরা যেখানে এতদিন রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছিল(ভোটের সমর্থন দিন দিন কমছিল) সেখানে তারা পুনরায় তাদের প্রতি জন সমর্থন বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর এবার যদি মহাজোট তথা আলীগ এ দেশীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করতে পারে তবে আর কোনদিনও তাদের বিচার করতে পারবে না।

তখন আলীগ সহ যারা যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে সোচ্চার আছে তারা নিজেদের কপালে জুতা-ঝাটা পেটা করলেও কোন লাভ হবে না। আশা করব মূল যুদ্ধাপরাধের বিষয় ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে অহেতুক (সূনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া) যেন নিজামীদের বিরুদ্ধে কিছু লেখা না হয়। এত আন্দোলন করেও যদি এদের বিচার করা না যায় তো গোট বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ হাসি ঠাট্টার প্রাত্রে পরিণত হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।