আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুলশানে রাজপথ দখল করে প্লট!

পাকা দোকান ও দেয়াল তুলে গুলশান আবাসিক এলাকার একটি রাস্তা দখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কয়েকটি ব্যাংকের শাখা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ শতাধিক বাড়ির বাসিন্দারা রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন। বিভিন্ন অলিগলি পেরিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার ঘুরে তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। ভুক্তভোগী লোকজন অভিযোগ করে জানান, প্রভাবশালী মহলের নাম ভাঙিয়ে একজন ডাক্তার এ রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। ওই ডাক্তারকে 'রাস্তা খেকো' উল্লেখ করে গুলশান থানায় একটি জিডি (জিডি নং- ১৩২৯) হয়েছে।

যারা জনস্বার্থে থানায় জিডি করেছেন তারা পড়েছেন এখন চরম হুমকির মুখে। এরপর থেকে আর কেউ তার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করতেও সাহস পাচ্ছেন না।

রাজউক সূত্রে জানা যায়, গুলশান এক ও দুই নম্বরের মাঝামাঝি ১০৮ নম্বর রাস্তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ১১৩/এ নম্বর রাস্তাটি। এ রাস্তা দুটির সংযোগস্থলে হঠাৎ করেই কোমর পর্যন্ত ইটের দেয়াল তুলেছেন পাশর্্ববর্তী ১৪ নম্বর প্লটের মালিক ডা. মাহফুজুল হক। সেখানে তিনি টানিয়ে দিয়েছেন সাইনবোর্ড।

তাতে লেখা হয়েছে, 'জমির পরিমাণ ১৯ কাঠা ১২ ছটাক, খরিদ সূত্রে মালিক ডা. মাহফুজুল হক। ' রাস্তাটির অন্য প্রান্তে একই ব্যক্তি কিছু ইটের স্তূপ গড়ে তুলে জনচলাচলের রাস্তাটি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বাসিন্দারা। তারা জানান, রাস্তাসংলগ্ন উত্তর পাশে গাছপালায় ছেয়ে থাকা বাড়ির মালিক ইদানীং সংযোগ রাস্তাটিও তার বাড়ির সীমানা বলে দাবি করছেন। ইতোমধ্যেই রাস্তার দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে ১০টি বড় দোকান তুলে ভাড়াও দিয়েছেন তিনি।

এখন সংযোগ সড়ক ঘিরে বড় কোনো ইমারত নির্মাণেরও পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে ডা. মাহফুজুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ১৪০ ফুট দীর্ঘ ও ১০৫ ফুট প্রশস্ত জায়গার পুরোটাই ১৪ নম্বর হোল্ডিং। এর একটি অংশে বাড়ি নির্মাণ করে বাকি অংশ বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত ফেলে রাখা হয়েছিল। ফাঁকা জায়গা পেয়ে আশপাশের বাসিন্দারা তা জনচলাচলের রাস্তায় পরিণত করে। এখন পুরো জায়গাটির ওপর পরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করছি।

এ কারণেই রাস্তাটি বন্ধ করে এখন নির্মাণ কার্যাদি চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। ডা. মাহফুজুল হক আরও বলেন, 'আমার বাড়ির মধ্য দিয়েই একটি মহল জোরপূর্বক রাস্তা বানানোর পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। তারা নানাভাবে আমাকে হয়রানি করে চলছে। ' তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দারা অভিযোগ করে জানান, ১৯ কাঠা ১২ ছটাক জমিতে ডা. মাহফুজুল হকের বাড়ি থাকার কথা বলা হলেও তিনি রাস্তাসহ অন্তত ৩৬ কাঠা জায়গা নিজের দখলে রেখেছেন। রাজউকের উদ্যোগে জায়গা পরিমাপ করা হলেও এ অভিযোগের সত্যতা মিলবে।

তারা আরও জানান, সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ওই রাস্তাটি মেরামত করতে গেলে প্রভাবশালী মহলটি তাদেরও বাধা দিয়েছে। ফলে ওই রাস্তার পাকাকরণ, ড্রেনেজ ও সুয়্যারেজ লাইন সংস্কারের কাজ দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে। রাজউকের নকশায় ১০৮ নম্বর রাস্তা থেকে ১১৩/এ নম্বর রাস্তার সংযোগ সড়কের পূর্ব পাশেই রয়েছে ২৩টি প্লট। এসব প্লটের অধিকাংশ বাড়ি ছয় থেকে ১২ তলা উচ্চতার। সেখানে আনুমানিক আড়াই হাজার লোকের বসবাস।

একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানির অফিসও রয়েছে এই রাস্তার পাশে। রাজউক-২ এর সংশ্লিষ্ট অথারাইজড অফিসার সুকমল চাকমা জানান, রাজধানীর রাস্তা দেখভালের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তবে প্লটের প্রকৃতি ও রাজউকের নকশা পাল্টে কোনো কিছু করা হয়ে থাকলে অবশ্যই খোঁজ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (উত্তর) প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল খায়ের জানান, রাস্তা দখলের বিষয়টি তার জানা নেই। জরুরি ভিত্তিতে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

জনচলাচলের রাস্তা দখল করে কেউ তা প্লট হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু স্থানীয়রা জানান, প্রভাবশালী মহলের কাউকে কাউকে বিশেষ সুবিধায় দোকানপাট বরাদ্দ দেওয়ার মাধ্যমে ডিসিসি-রাজউককেই উল্টো চাপে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ওই রাস্তা খেকো দখলবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ দূরের কথা জমিটির ধারে কাছেও পা মাড়াতে সাহস পান না।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.