আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আগেই কোচের আত্মসমর্পণ?

কাঠমান্ডুর আকাশের মতিগতি বোঝা ভার। এই বৃষ্টি-এই রোদ। রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা চলল কাল সারা দিন। অষ্টম সাফ ফুটবল শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে হিমালয়-দুহিতার এমন রহস্যময় আচরণে অবশ্য বিশেষ ভাবিত নয় কেউ। এখন কি আর বৃষ্টি-রোদ নিয়ে ভাবার সময়!
কথাটা ব্যাখ্যার দাবি রাখে।

‘কেউ’ বলতে শিরোপাপ্রত্যাশী দলগুলো। শেষবেলার প্রস্তুতিতে নিবিড় চোখ রেখে নিজেদের কাজটাই করে যাচ্ছে ফেবারিটরা।
এরই মধ্যে নেপাল পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স মাঠে দুপুরে অনুশীলন শেষে একটা বোমাই ফাটালেন বাংলাদেশ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ। এত দিন ইনিয়ে-বিনিয়ে বললেও কাল আর কোনো রাখঢাক করেননি। সাফ মুকুট ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে এবার সরাসরি প্রত্যাশার লাগাম টেনে ধরার আহ্বান তাঁর।


অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি পছন্দ নয় ডি ক্রুইফের। তাই ২০০৩ সালে ঢাকায় তৃতীয় সাফ ফুটবল জেতা বাংলাদেশকে পেছনে না তাকাতে বলছেন ভদ্রলোক। এটা ঘটনা, বাংলাদেশ কখনোই এক নম্বর ফেবারটি হিসেবে সাফে অংশ নেয়নি। বরাবরই শীর্ষ বাছাই ভারত। তা হোক, বাংলাদেশও প্রতিবারই সাফ শিরোপায় চোখ রেখে ঝাঁপায়।

এবারও স্বপ্নের বেলুনটা তো বেশ স্ফীত।
কিন্তু সেটির এখন চুপসে যাওয়ার দশা! মাঠে নামার আগেই ডি ক্রুইফ বলে দিচ্ছেন, ‘বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টে ফেরারিট নয়। সবাইকে বাস্তবতা বুঝতে হবে। বেশি আশা করবেন না। আমরা চেষ্টা করব, তবে ভারত এই টুর্নামেন্টে অনেক শক্তিশালী।

তাদের হাতে অনেক ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে। ভারতের বাজেটও অনেক বড়। কাজেই আমি বলব, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনার দৌড়ে ভারতই এগিয়ে’—ডি ক্রুইফের এই বিশ্লেষণের সঙ্গে দ্বিমত করার লোক কমই পাওয়া যাবে।
স্বাগতিক নেপালের কুড়ি হাজার দর্শকের সামনে খেলা মানে বিশাল সুবিধা। এটাও বাস্তবতা।

তার মানে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নেই এবার? গত মার্চেই নেপালকে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে ২-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটি মনে করিয়ে দিলে লাল-সবুজের কান্ডারি প্রতিবেদকের দিকে ভ্রু কোঁচকালেন, ‘ওই ম্যাচের কথা ভুলে যান। সেদিন নেপাল জিততেও পারত ৪-২ গোলে। কাজেই ভারতের পর গ্রুপে নেপালকে এগিয়ে রাখতেই হবে। ’
তা রাখুন।

কিন্তু মাঠের লড়াইয়ের আগেই কি খানিকটা আত্মসমর্পণ করে ফেললেন ডি ক্রুইফ? মনে প্রশ্নটা আসতেই পারে। এই প্রথম সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার পরও যদি কোচ বলেন, ‘আমরা ও পাকিস্তান গ্রুপে আন্ডারডগ’, তাহলে আর স্বপ্ন দেখার বাস্তব ভিত্তি কোথায়?
অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম কি এর সঙ্গে একমত? হ্যাঁ, একমতই। ভারত ও নেপালকে এগিয়ে রেখে গ্রুপে তৃতীয় স্থানেই রাখতে চাইলেন নিজেদের, ‘আমরা গ্রুপ ফেবারিট হিসেবে তিন নম্বরে আছি। ’ উইঙ্গার সোহেল রানার সঙ্গে আগামীকাল নেপালের বিপক্ষে মামুনুলের নিজের খেলাও অনিশ্চিত। কোচের চোখে, ‘মামুনুল-সোহেল দুজনই খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।

তারা এখনো তৈরি নয়। মামুনুল ৮০ ভাগ ফিট। কাজেই এই দলকে আমি গ্রুপে ভারত ও নেপালের পেছনেই রাখব। ’
এখনো সেরা একাদশই খুঁজে পাননি ডি ক্রুইফ। এক সাংবাদিকের তাই তির্যক প্রশ্ন, ‘এত দিনেও ২০ জনের দল চূড়ান্ত করতে পারলেন না।

এটা কি আপনার ভুল পরিকল্পনার খেসারত? ‘এটা পুরোপুরি ভ্রান্ত মত’ বলে উড়িয়ে দিয়ে ক্রুইফ ব্যাখ্যা দিলেন, ‘২০ জনের স্কোয়াডের সঙ্গে অতিরিক্ত হিসেবে আনা মিডফিল্ডার মোনায়েম খানকে (রাজু) শেষ সময়ে নিবন্ধন করানো যায়নি। চোটগ্রস্ত গোলরক্ষক সোহেলের সঙ্গে সেও ধরছে দেশের বিমান। কাজেই ২০ জনের দল ঠিকই আছে। ’
এই ক্রুইফ যেন অচেনা। আগের দিন মিডিয়ার কাছে মুখ বন্ধ রেখে রাগে ফুঁসছিলেন।

কাল খানিকক্ষণের জন্য অনুশীলন মাঠে খুলে দিলেন মনের জানালা। চোটকেই রাখলেন এক নম্বর শত্রুর তালিকায়। প্রশ্ন এল, ভারতের ডাচ কোচ উইম কোভারম্যানকে চেনেন কিনা? তিনিও তো ডাচ। ক্রুইফের ঝটপট জবাব, ‘আরে উনি তো আমার শিক্ষক। ’ সকালে একই মাঠে অনুশীলন শেষে কোভারম্যানও বলছিলেন, ‘হল্যান্ডে আমার অধীনে “এ” কোচিং লাইসেন্স করেছে ডি ক্রুইফ।

কাজেই আগে থেকেই ওঁকে জানি। ’
বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটা তাই দুই ডাচ কোচেরও লড়াই হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে নিজেদেরই এগিয়ে রাখছেন কোভারম্যান। টুর্নামেন্টে ফেবারিট কে—জানতে চাইলে নিজের টি-শার্টে ভারত লেখাটা দেখিয়ে বললেন, ‘এই যে এটা...। ’
পাকিস্তানের বাহরাইনি কোচ মোহাম্মদ আল সামলানকে পাওয়া গেল হোটলে লবিতে।

মাত্র পাঁচ দিন আগে দায়িত্ব নেওয়া পাকিস্তানের সাবেক এই সহকারী কোচ সোফায় গা এগিয়ে বলছিলেন, ‘উম...ভারতই ফেবারিট। ’
খানিক বাদে ব্যাগপত্তর নিয়ে হোটেলে ঢুকল মালদ্বীপ। এই দলের প্লে-মেকার অভিজ্ঞ আলী আশফাক ‘আমার কাছে মালদ্বীপই এক নম্বর ফেবারিট’ বললেও পরক্ষণেই স্বীকার করলেন, ‘ভারত খুবই শক্তিশালী। ওরা শিরোপা নিতেই এসেছে। ’
নিজেদের ফেবারিট ভাবার সাহসই নেই বাংলাদেশের।

তাই অমন কথা বললেন ডি ক্রুইফ!:।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।