আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বব্যাঙ্ক ও আইএমএফ - গ্লোবাল অর্থনীতি (৮)



পর্ব ৭ Click This Link পর্ব ৬ Click This Link পর্ব ৫ Click This Link পর্ব ৪ Click This Link পর্ব ৩ Click This Link পর্ব ২ Click This Link পর্ব ১ Click This Link অষ্টম পর্ব: একজন পাঠক 'প্লাটো'র প্রশ্ন ছিল, "আচ্ছা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত শক্তি জাপান,ইটালী,জার্মানী ইত্যাদিকে শিল্পোন্নত রফতানীমুখি দেশে পরিণত হবার সুযোগ কেন দেয়া হলো? আলোকপাতটা একটু বিস্তারিত করবেন আশা রাখি" - এই প্রশ্নকে মাথায় রেখে এবারের পর্ব শুরু করছি। প্রথমে "শিল্পোন্নত রফতানীমুখি দেশে পরিণত হবার সুযোগ" কেন দেয়া হলো? - এই অংশটাকে ঘিরে কিছু আলোকপাতের চেষ্টা করতে করতে বাদবাকি প্রসঙ্গে যাব। কোন যুদ্ধে যে দেশকে হারানো হয় বা যে হেরে যায় তাকে আবার শিল্পোন্নত দেশে পরিণত বা পুনর্গঠিত (reconstructed) হবার সুযোগ দেয়াটা নিশ্চয় বেমানান - সাধারণ দৃষ্টিতে কোন পাঠকের এমন একটা ধারণা তৈরি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আসলে এমন ধারণা করাটা কখন কখনও ভিত্তিহীন; তবে কোন পরিস্হিতিতে কখন থেকে এটা ভিত্তিহীন হয়ে গেছে সেটা জানা জরুরী। মোটা দাগে বললে, দাগটা টানা যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে আর পরে এভাবে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে অর্থাৎ, কলোনী নিয়ে লড়াইয়ের যুগে - এর অর্থনীতির বিশেয বৈশিষ্ট ছিল - কলোনী মালিক , যেমন বৃটিশ বা ফরাসী, এমন কলোনি-মাষ্টার দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে শুরুর দিকে আন্তঃ-লেনদেন ব্যবসা বিনিময় উল্লেখযোগ্য নয়। বরং সে পরিস্হিতিতে কলোনি মাষ্টার ও কলোনিকৃত দেশের (যেমন বৃটেন ও তার কলোনি বৃটিশ-ভারত) মধ্যে আন্তঃ-লেনদেন ব্যবসা বিনিময়ই ছিল মুখ্য, ডোমিনেটিং; নৌ-বাণিজ্য বলতে এটাকেই বুঝানো হত। প্রত্যেক কলোনি মাষ্টার দেশে এই অর্থে একটা ন্যাশনাল ইকোনমি খাড়া করতে পেরেছিল যেখানে, এ্যন্টি-ন্যাশনাল বলতে অন্য কলোনি মাষ্টার দেশ বুঝানো হত। এই পরিস্হিতিতে কোন দেশ যুদ্ধে হেরে গেলে তাকে আবার শিল্পোন্নত দেশে পরিণত বা পুনর্গঠিত (reconstructed) হবার সুযোগ দেয়াটা অবশ্যই বেমানান; এবং তাই ছিল। কলোনি দখল পাল্টাদখলের যুদ্ধে হেরে যাওয়া দেশকে আবার অর্থনৈতিক শক্তি ফলে সামরিক শক্তিও - আকারে পুনর্গঠিত (reconstructed) হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া, সাহায্য করার প্রশ্নই আসে না।

কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে এই অসম্ভব ভাবা ঘটনাই সম্ভব হয়েছিল; অবশ্যই সেটা নতুন পরিস্হিতি, ঘটনায় নতুন সংযুক্ত উপাদানে। কী সেই নতুন সংযুক্ত উপাদানে বা Newly added Factor? কলোনি মাষ্টারের ন্যাশনাল ইকোনমির ভিতরেই সেই উপাদান সুপ্ত ছিল ও লালিত হচ্ছিল। ন্যাশনাল ইকোনমি বা জাতীয় অর্থনীতি মানে এর অনুষঙ্গ হিশাবে একটা জাতি-রাষ্ট্র সেখানে আগাম আছে আর সেই জাতি-রাষ্ট্রের অর্থনীতির কথা বলছি আমরা। সেই জাতি-রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে উৎপাদন, বিনিময়, বাণিজ্যে পুঁজির চলাচল (Circulation) আত্মস্ফীতিকে জাতি-রাষ্ট্রের সীমানায় একে বেঁধে সবসময় একটা জাতীয় পুঁজি (National Capital) বলে নাম দিবার কোশিশ জারি রাখতে চায় জাতি-রাষ্ট্র। অথচ এটাই স্ববিরোধাত্মক, সুপ্ত স্ববিরোধ, পুঁজির স্বভাবের স্ববিরোধ।

উপরে জাতীয় পুঁজি (National Capital) বলে একটা কথা ব্যবহার করেছি। কিন্তু পাঠক লক্ষ্য করবেন, জাতীয় পুঁজি (National Capital) বলে কোন কিছু কল্পনা করা বা চেনা সম্ভব কী না? ক্রমান্বয়ে আত্মস্ফীতি ঘটানো ও চলাচলে বেড়ে চলা পুঁজি বা Capital এর সবচেয়ে স্বাভাবিক স্বভাব হলো কোন ন্যশনাল বাউন্ডারি, দেশ সীমানা না মানা; এটাই তার স্বভাব, কারণ তার স্বভাব বিকাশরুদ্ধ হয় তাতে। এজন্য স্বভাবগুণে বা দোষে যাই বলেন, পুঁজি আদতে আন্তর্জাতিক; পুঁজি মানেই আন্তর্জাতিক। বড় জোড় বলা যায় শুরুর দিকে অবিকশিত অবস্হায় স্বভাবের মধ্যে এর সুপ্ত আন্তর্জাতিক দিকটা সবার নজরে পড়ে না; পুঁজি আন্তর্জাতিক হয়ে উঠে নাই, ফলে স্বভাবটা চোখে ধরা পড়ে নাই। পুঁজির, পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্কের স্বভাব হলো ছড়িয়ে পড়া, মুনাফা হয়ে আত্মস্ফীতি ঘটানো - এতে সেই ছড়িয়ে পড়া জাতি-রাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে গেল কীনা, না কী ভিতরে থাকলো এটা পুঁজির বিবেচ্য নয়, বিবেচনা করাও সম্ভব নয়।

এই অর্থে জাতি-রাষ্ট্র বলে কোন ভাবনা দাঁড় করানো, বাস্তবায়ন ও ধরে রাখা সম্ভব কীনা - সেই প্রশ্নে একাডেমিশিয়ান, বিদ্যানরা নির্বাক, নিরুত্তর আজও অসহায়। মহাশয় লেনিনের আমল পর্যন্ত (১৯১৫) দেখা পুঁজির বিকাশের এই রূপটা তিনি ধরে ফেলেছিলেন; লগ্নি-পুঁজির ধারণা ও সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে তাঁর তত্ত্বের উপস্হাপন আমরা তখনই দেখেছিলাম। লেনিন ১৯৪৪ সাল দেখে যেতে পারেননি। পুঁজি নিজেকে সামলানো, নিজের আন্তর্জাতিক স্বভাব ও জাতি-রাষ্ট্র ধারণার বিরোধ মিটাতে দুদুটো বিশ্বযুদ্ধের ঘটানোর পর প্রাতিষ্ঠানিক প্রকাশে থিতু হবার কোশিশের নাম আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্ক এবং একটু দূর অর্থে জাতিসংঘ - এক কথায় পুঁজির গ্লোবাল স্বভাবের স্বীকৃতি নিয়ে ১৯৪৪ সাল থেকে এক নতুন World Economic Order এ প্রবেশ ঘটেছিল; একে আন্তর্জাতিক পুঁজির অর্থনীতি বলতে পারি। গ্লোবাল অর্থনীতি কথাটার অর্থ সহজে বুঝা এখানেই সম্ভব।

জাতি-রাষ্ট্রের জয়জয়কার আমলের তথাকথিত জাতীয় পুঁজি (আসলে আমাদের বলা উচিত "কলোনি পুঁজি") বা জাতীয় অর্থনীতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখান থেকেই আদত-নামে গ্লোবাল অর্থনীতি বলে স্বীকার করে নেয়া হয়। পুঁজির আদত স্বভাব আন্তর্জাতিক (গ্লোবাল), যাকে জাতীয় পুঁজি বলে মিথ্যা ঠাহর করা হয়েছিল, এর স্বরূপ স্বীকার করে ১৯৪৪ সাল থেকে বলা হলো গ্লোবাল পুঁজির অর্থনীতি বা গ্লোবাল অর্থনীতি। আর এতে জাতি-রাষ্ট্র ধারণার সমস্যার কোন হাল হলো না বটে; তবে ডাঙ্গার কৈ মাছের মত জাতি-রাষ্ট্র ধারণা ক্রমশই আয়ু হারাচ্ছে সন্দেহ নাই। 'গ্লোবাল অর্থনীতি' বলে পুঁজির এই নতুন স্বীকৃতি মাত্র কয়েক লাইনে এখানে লিখে দিলাম বটে কিন্তু নতুন কী শর্তে, উপাদানে, পরিস্হিতিতে এটা ঘটা সম্ভব হলো - যেটাকে "এক্সপোর্ট অফ ক্যাপিটাল" বলা যেতে পারে, যেটা লেনিনের দেখা লগ্নি-পুঁজির ধারণারও পরের শর্ত, উপাদান, পরিস্হিতি - তা নিয়ে পরে সময়ে প্রসঙ্গ পেলে উপস্হাপন করব। তাহলে সারকথায় দাঁড়াল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৮) আগে যেটাকে আমরা কলোনি-পুঁজির শেষ আমল বলতে পারি - আগের সেই সময় পরিস্হিতিতে কোন দেশ যুদ্ধে হেরে গেলে তাকে আবার শিল্পোন্নত দেশে পরিণত বা পুনর্গঠিত (reconstructed) হবার সুযোগ দেয়াটা অবশ্যই বেমানান - একথাটা সঠিক; কিন্তু গ্লোবাল পুঁজির অর্থনীতি বা গ্লোবাল অর্থনীতি বলে পুঁজির গ্লোবাল বা আন্তর্জাতিক স্বভাব স্বীকার করে নিয়ে আইএমএফ, বিশ্বব্যাঙ্ক ও জাতিসংঘে এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ খাড়া করে দেবার পর, কোন যুদ্ধে হেরে যাওয়া দেশকে আবার শিল্পোন্নত দেশে পরিণত বা পুনর্গঠিত (reconstructed) হবার সুযোগ দেয়াটা অবশ্যই আর বেমানান নয়, থাকেনি।

বেমানান মনে হবার পিছনে বড় যে ভাবনা কারণ হিসাবে আমাদের মনে কাজ করে তা হলো, জাপান, ইটালী বা জার্মানী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাওয়া এই দেশগুলোকে পুরনো যে কোন জাতি-রাষ্ট্রের মত তখনও জাতি-রাষ্ট্র মনে হয়; জাতি-রাষ্ট্র - মানে একটা তথাকথিত জাতীয় পুঁজি বা জাতীয় অর্থনীতির ধারনা তখনও মাথায় চেপে বসে আছে। আরও পরিস্কার করে বলি, জাপান, ইটালী বা জার্মানী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাওয়া দেশ বলে আর জাতি-রাষ্ট্র নয় তা বলছি না, জেতা যে কোন জাতি-রাষ্ট্রও আর জাতি-রাষ্ট্র নাই। বিষয়টা জাতি-রাষ্ট্র ধারণার, যুদ্ধে হারা বা জিতা রাষ্ট্রের নয়। আসলে গ্লোবাল পুঁজির অর্থনীতি বা গ্লোবাল অর্থনীতি বলে পুঁজির গ্লোবাল বা আন্তর্জাতিক স্বভাব স্বীকার করে নিয়ে আইএমএফ, বিশ্বব্যাঙ্ক ও জাতিসংঘে এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ খাড়া করার পর জাতি-রাষ্ট্রের ধারণার মৃত্যু ঘটে গেছে। সীমানা, রাষ্ট্র কনষ্টিটিউশন ইত্যাদির কারণে বাইরে থেকে দেখতে সবই যেন আগের মতই জাতি-রাষ্ট্র মনে হলেও কেউই আর জাতি-রাষ্ট্র নয়।

বরং সবাই "গ্লোবাল পুঁজির অর্থনীতি"র অধীন; সীমানা, রাষ্ট্র বা কনষ্টিটিউশন দিয়ে গ্লোবাল পুঁজি আটকানো বা বিভক্ত নয়। জাতি-রাষ্ট্রের অধীনে পুঁজি আর গ্লোবাল পুঁজির স্বার্থের অধীনে, প্রাতিষ্ঠানিকতার (আইএমএফ, বিশ্বব্যাঙ্ক ও জাতিসংঘে) অধীনে রাষ্ট্র - এককথা নয়। বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নৈতিক, রাজনৈতিক শক্তিহীন কমিউনিটি জাপান, ইটালী বা জার্মানী - গ্লোবাল পুঁজির স্বার্থ বিকাশ ও ছড়িয়ে পড়ার দিক থেকে স্বর্গ বলে বিবেচিত হয়েছিল। আবার কেবল জাপান, ইটালী বা জার্মানীর কথা মাথায় রেখে এই কথাটা বুঝলেও অর্থ সংকীর্ণ থেকে যাবে, অর্থ সবটা জানা যাবে না। পুঁজির গ্লোবাল হয়ে উঠার পথে পুরনো কলোনি সম্পর্কই ছিল সবচেয়ে বড় বাঁধা; কলোনি সম্পর্ক অর্থাৎ কলোনি মাষ্টার ও কলোনিকৃত দেশের (যেমন বৃটেন ও তার কলোনি বৃটিশ-ভারত) মধ্যে সীমাবদ্ধ আন্তঃ-লেনদেন ব্যবসা বিনিময় বাণিজ্যের মধ্য পুঁজির চলাচল (Circulation) আত্মস্ফীতি।

দুদুটো বিশ্বযুদ্ধ ছিল এই সীমাবদ্ধ কলোনি সম্পর্কের মধ্যে পূঁজির বিচরণের অর্গল মুক্ত হবার যুদ্ধ। যুদ্ধের ফলাফলে পুঁজি তাই শুধু গ্লোবাল হয়েই উঠেনি বরং আগের মত আর যে কোন জাতি-রাষ্ট্রের অধীনে না থেকে উল্টা জাতি-রাষ্ট্রগুলোকে পুঁজি নিজের গ্লোবাল স্বার্থের অধীনে নিয়ে আসে। এতে পুঁজির চলাচল (Circulation) আত্মস্ফীতি আগের কেবল কলোনি সম্পর্কের মধ্যে নয় বরং কলোনি মাষ্টার-মাষ্টার, মাষ্টার-দাস এমনকি, কলোনি নন-কলোনি নির্বিশেষে দুনিয়ার সকল অর্থনীতিকে এক গ্লোবাল অর্থনীতির অধীনে নিয়ে পূঁজি সর্বত্র নিজেকে বিচরণশীল ও গম্য করে নেয়। রাজনৈতিক দিক থেকে দেখলে কলোনি সম্পর্ক মোড় ফিরে আলগা হয়ে পড়ার কারণে আমরা এটাকে এ্যন্টি-কলোনিয়াল আন্দোলন হিসাবে চিনি, ১৯৪৭ সালের বৃটিশের কলোনি-ইন্ডিয়া ত্যাগ, দেশভাগ, পাকিস্তান - আমরা স্বাধীনতা হিসাবে দেখি। কিন্তু আমরা যে কলোনি সম্পর্ক ছেড়ে গ্লোবাল পুঁজির অধীনে রাষ্ট্র গড়ার (বৃথা) চেষ্টা করেছি তা খুব কমই টের পাওয়া যায়।

এখানে বারবার গ্লোবাল পুঁজির স্বার্থ কথাটা বলেছি বটে তাতে, বলাটা অনেক বিমুর্ত থেকে গেছে, কর্তা দেখা পাওয়া যায় না। গ্লোবাল পুঁজির স্বার্থ কার ভিতর দিয়ে সবচেয়ে নির্ধারকভাবে প্রতিনিধিত্ত্ব ও হাজির হয়েছিল এইভাবে উত্তর খুজলে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় দুবার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন (১৯১৩-১৯২১) ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনবার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ফ্রান্কলিন রুজভেল্ট (১৯৩৩-৪৫) ছিলেন সেই কর্তা। না, তাঁরা দুজন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফলে স্বতঃসিদ্ধে এরা সেই কর্তাস্বত্ত্বা - এই সহজ অঙ্কে কথাটা বুঝলে ভুল হবে বা কিছুই জানা যাবে না। "লীগ অফ নেশন" ১৯২০ - আজকের জাতিসংঘ ধারণার আগের ভার্সনের নাম। "লীগ অফ নেশন" এই আইডিয়ার জনক হলেন উইলসন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তিতে ইউরোপ যখন হারুপার্টি জার্মানির কাছ থেকে নগদ যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ কীভাবে আদায় করা যায় তা নিয়ে ব্যস্ত উইলসন তখন ক্ষতিপূরণের দাবির সাথে ঐক্যমতের বিনিময়ে ইউরোপকে "লীগ অফ নেশন"এর আইডিয়া গিলানোতে ব্যস্ত। এজন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের ভার্সাই চুক্তি (Treaty of Versailles) বিসদৃশ্যভাবে দুটো ভাগে বিভক্ত; প্রথম ভাগই "লীগ অফ নেশন" গঠন সংক্রান্ত আর দ্বিতীয় ভাগ জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় সংক্রান্ত। ব্যর্থ লীগ অফ নেশনকে জাতিসংঘ নামে নতুন করে হাজির ও বাস্তবায়ন এবং ব্রেটনউড ইন্সটিটিউশন আকারে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্কের জন্মদানের রাজনৈতিক উদ্যোক্তা ফ্রান্কলিন রুজভেল্ট। গ্লোবাল পুঁজির স্বার্থ এই দুই ব্যক্তির মাধ্যমে যতটা প্রকাশিত ও প্রতিনিধিত্ত্ব হয়েছে ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রিতে তাঁরা অদ্বিতীয়; সেসময় থেকে আগামিদিনের বিশ্ব-ইতিহাস এদের হাতেই আকার পেয়েছে। বৃটিশ কলোনি শাসনের অধীনে থাকার কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের সম্পর্কে ভারতীয় উপমহাদেশে আমরা যতটা খবর রাখি জানি, রুজভেল্টের কথা আমরা ততটাই কম জানি বা খবর রাখি।

আমাদের ফর্মাল পাঠ্যপুস্তকে কেবল চার্চিলের জয়জয়কার। অথচ ঘটনা হলো, যুদ্ধে বৃটেনসহ সারা ইউরোপ আমেরিকার কাছে দেউলিয়া হয়ে ছিল, হাটু গেড়ে ভিক্ষা চেয়েছিল। আর সেইসময় রুজভেল্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তি বিশ্বের চেহারা আকার বুঝা নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন, তাতে ইউরোপের কমিটমেন্ট আদায়ের চেষ্টা করছেন। চার্চিল তখন যেকোন ওয়াদার বিনিময়ে রুজভেল্টের অর্থ সাহায্য, সমর্থন ও আমেরিকাকে তার পক্ষে যুদ্ধে জড়ানোর চেষ্টায় দিনযাপন করেছেন। ইউরোপের সাথে আমেরিকার এই ডিলিংগুলো ষ্টাডি গুরুত্ত্বপূর্ণ।

তবু ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট নয়, ১৯১৬ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকান সমাজের যুদ্ধ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক ও প্রেসিডেন্টদের আইন পরিষদে উত্থাপিত কয়েকটি আইন পর্যালোচনা বিশেষত, যুদ্ধে না জড়িয়ে ব্যবসা করার পরপর তিনটা আইন, Neutrality Act ১৯৩৭, ১৯৩৯ ও Lend-Lease Act ১৯৪১ খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ। এখান থেকে আমরা উত্তর পেতে পারি সারা জীবন কলোনি সম্পদ লুটেও পরিশেষে, ইউরোপের কলোনি-মাষ্টাররা সবাই কেন আমেরিকার কাছে দেউলিয়া হয়ে গেল, এই পালাবদলে আমেরিকা কেন যুদ্ধোত্তর নতুন World Economic Order এর কেন্দ্র হয়ে গিয়েছিল; গ্লোবাল পুঁজির স্বার্থ কেন আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের বক্তব্য হয়ে গিয়েছিল - আগামি দিনের নতুন emperor হবার তাবত শর্ত কেন আমেরিকা পূরণ করতে পেরেছিল। এসব নিয়ে আগামি কোন পর্বে কথা হতে পারে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.