আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ মাঠের শিয়রে চাঁদ



মাঠের শিয়রে চাঁদ কাজী রাকিবুল ইসলাম মিথিলা চোখ বুঝে শুঁয়ে আছে, ঘুম নেই। বিছানাটা যেন সূচঁ ফুটাচ্ছে শরীরে। এখন রাত একটার উপরে বাজে। বেশ কিছুদিন ধরে ওর এরকম হচ্ছে। সময়মতো বিছানায় যায়, কিন্তু ঘুম আসেনা, সারারাত এপাশ-ওপাশ করে।

বিশাল এক দুচিন্তা মিথিলাকে আঁকড়ে ধরেছে। দুশ্চিন্তার ছাপ কে যেন খড়িমাটি দিয়ে ওর মুখে শরীরে এঁকে দিয়েছে। মিথিলা কলেজ যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, বন্ধু-বান্ধবিদের সাথে ফোনে ছাড়া আর যোগাযোগ হয় না। মিথিলা বুঝতে পারছেনা ব্যাপারটা কারো সাথে শেয়ার করবে কিনা ? মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে। অনেকক্ষণ ধরে লোডশেডিং চলছে, জানালার পর্দা গুলো টানা, রুম গভীর অন্ধকারে সমাচ্ছন্ন।

মিথিলা বাম হাতটি তলপেটে রাখে, বুঝতে চেষ্টা করে একটি জীবনের মৃদু স্পন্দন। মিথিলার বিয়ে হয়েছে দু'বছর। পরিবারের মিন রাজীতে প্রেমের বিয়ে। এখানো মিথিলা আব্বু-আম্মুর সাথেই থাকে, পড়া লেখা শেষ হলে শ্বশুর বাড়িতে তুলে নেয় হবে। স্বামী সামিউল দেড় বৎসর ধরে প্রবাসী।

বিয়ের পর সামিউলের সাথে যদিও শারিরীক সম্পর্ক হয়েছে, কিন্তু মিথিলা জানে ওর গর্ভের ভ্রুণটি সামিউলের নয়। এমনকি কোন ভুলের ফসলও নয়। অন্তত মিথিলা তাই মনে করে। সামিউল বিদেশ যাওয়ার পর এক বান্ধবীর মাধ্যমে ওর সাথে টিপুর পরিচয় হয়। সেই থেকে সামনা সামনি অথবা ফোনে কথা বলা, ঘুরতে যাওয়া, অবশেষে একদিন টিপুদের বাড়িতে যখন বাইরে বৃষ্টি, প্রবল বৃষ্টি, লেনদেন হলো আদিম সুখের।

তারপরও আরো কয়েকবার অন্য কোথাও অন্য কোনখানে। নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে সপ্তাহখানিক চলে যাবার পরও যখন মিথিলার পিরিয়ড শুরু হলো না অজানা এক আশঙ্কা ও খুশিতে মিথিলার মন কেঁপে উঠলো। আরো কয়েকদিন পর মিথিলা নিশ্চিন্ত হলো কি ঘটতে যাচ্ছে দশমাস পরে, যার পূর্ব লক্ষণ দেখা দিবে কয়েক মাসের মধ্যেই। মিথিলা চাইলে এবরশান করে ফেলে দিতে পারে বাচ্চাটি কিন্তু কৈশোর থেকে চোখের মাঝে একটা বাবুর যে সোনালী স্বপ্ন সে দেখছে তা কি করে এত সহজে ভেঙ্গে দিবে ! অথচ তাঁর স্বপ্নের এরকম বাস্তবায়ন মেনে নিবেনা সামিউল, সামিউলের বাবা-মা- নিজের বাবা-মা, সমাজ। টিপু কি পারবে ? ঘটনাটা টিপুকে বলা হয়নি।

সে যেদিন বুঝতে পারলো একটি জীবন তার মাঝে বেড়ে উঠছে তারপর থেকে টিপুর সাথেও দেখা করেনি। মিথিলা বুঝতে পারছেনা এখন ও কি করবে ? একদিকে বাবা-মা-শ্বশুড়-শাশুড়ী, সামিউল- সবকিছু। অন্যদিকে ওর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ওর ভিতরে ওর রক্ত মাংস অঙ্েিজনে গড়ে ওঠা একটি জীবন, ওর মাতৃত্ব। মিথিলা বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। বারান্দার সামনে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই মিথিলাকে ঠেলে রুমে হুড় হুড় করে ঢুকলো দুধের মতো সাদা জ্যোৎস্না।

মনে পড়লো আগামীকাল পূর্ণিমা। বারান্দা জুড়ে লুটোপুটি খেলছে জ্যোৎস্নারা, আনন্দে নেচে উঠলো মিথিলার মন শরীর। বারান্দার গ্রীল ধরে দেখতে লাগলো জ্যোৎস্নার আসল সৌন্দর্য-অমল রূপ। আনন্দের এক অস্থির উত্তেজনা মিথিলার ভিতর। ফুরফুরে বাতাস এসে মিথিলার শরীর ছুঁয়ে গেল, ওড়ালো কপালে পড়ে থাকা কয়েকটি চুল।

বাতাসে ভেসে আসা গন্ধে চমকে উঠলো মিথিলা- ছোট বাচ্চাদের শরীর হতে বের হওয়া গন্ধ। মিথিলার দুই হাতে পেটের উপর রাখলো। তবে কি সে এসেছে, আমার এতদিনের স্বপ্ন ! মিথিলার যেন বিহবল হয়ে দাড়িয়ে রইল কিছু মুহূর্ত। ফিরে এলো রুমে। জ্যোৎস্নার আগমনে কেটে গেছে রুমের অন্ধকার।

মিথিলা ড্রয়ার খুলে কি যেন হাতড়ে বের করলো, তারপর আবার এলা বারান্দায়, চাঁদের আলোয় প্রতিভাত হয়ে উঠলো মিথিলার হাতের স্টেইনলেস স্টীলের চাকু। বারান্দা ভরে গেছে মানব শিশুর গায়ের ঘ্রাণে। মিথিলার মনে হলো আর কিছু তার প্রয়োজন নেই, চোখে আনন্দ অশ্রু চিকচিক করছে। মিথিলা বললো- সে এসেছে, আমার স্বপ্ন্ন সাধ। হাতের মুঠিতে শক্ত করে ধরে রাখা চাকুটি যেন নির্বানের পথে নিয়ে যাওয়া একটুকরো চাঁদ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।