আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুলিশের সামনে পরীক্ষার হলে ছাত্রলীগের হামলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্বয়ং ছাত্রদের নিরাপত্তা বিধান করতে ব্যর্থ, যা ছাত্রলীগের আজকের হিংস্রতা প্রমাণ করে।



পুলিশের সামনে পরীক্ষার হলে ছাত্রলীগের হামলা সাংবাদিক ও ছাত্রসহ আহত ৫ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও হল পর্যায়ের নেতৃবন্দ ও পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা দুই সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। গতকাল রেবাবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে সামনে এই ঘটনা ঘটে। হামলায় সাংবাদিক ও ছাত্রসহ ৫ জন আহত হয়েছে। ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলায় সংবাদ সংস্থা ইউএনবির বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম ও বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর প্রদায়ক শহীদুজ্জামান আহত হয়েছে। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রোববার বিকালে কার্জন হলে ছাত্রলীগ এক ছাত্রকে মারধর করতে থাকে। জহুরুল হক হলের সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের নিরাপত্তাজনিত কারণে কলাভবনের পরিবর্তে কার্জন হলে পরীক্ষা দিতে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আফতাব আলী শেখের নিরাপত্তাধীনে পরীক্ষার হলের ভিতরেই ছাত্রলীগ তাকে মারধর শুরু করে। সাইফুল ইসলামের ছবি তুলতে গেলে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা তাকে বাধা দেয়।

এক পর্যায়ে তারা এফএইচ হলের ছাত্রলীগ সভাপতি মারুফ জামান কল্লোলের নেতৃত্বে সাইফুলের ওপর চড়াও হয়। সাইফুলকে রক্ষা করতে গেলে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা চড়াও হয় সাংবাদিক শহীদুজ্জামানের ওপর। এসময় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা তাকে বেধড়ক মারধর করে। এসময় ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, জহুরুল হক হলের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী সুমন, সাধারণ সম্পাদক সামছুল কবির রাহাত প্রমুখও উপস্থিত ছিল।

আহত সাইফুল জানান, নাজমুল, সুমন, রাহাত তাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করে। পুলিশের সামনে বেধড়ক মারধর করা হলেও পুলিশ ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এ প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। কোন ফোর্স সেখানে ছিল কি অবস্থায় ছিল তা জানতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আহত সাংবাদিকদের মেডিকেল সেন্টারে দেখতে যান।

এসময় তিনি বলেন, সাংবাদিকতায় পেশাগত দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় কেউ বাধা দিতে পারে না। তিনি এ বিষয়টি দেখার আশ্বাস প্রদান করেন। ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, আহত ছেলেকে উদ্ধার করে প্রক্টরের গাড়িতে তুলে দিয়ে ফিরে আসার সময় দেখি আবার হট্টগোল বেধে গেছে। এ ঘটনার পর তাৎক্ষণিক বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং ঘটনায় জড়িদের বিরুদ্ধে একাডেমিক ও সাংগঠনিক শাস্তি দাবি করে। এদিকে সাধারন ছাত্ররা জানায়, বেলা সোয়া এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ছাত্রলীগ ক্যাডার ইমতিয়াজ আহমেদ বাপ্পীর নেতৃত্বে ৭/৮ জন ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীর পৈশাচিক হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরবী বিভাগের ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র মোঃ আব্দুল আউয়াল।

এছাড়াও বেলা সোয়া একটায় ডিপার্টমেন্টের ক্লাস শেষ করে বের হওয়ার পথে ৪ ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীর অপর এক হামলায় আহত হয়েছেন এসএম হল শাখা নৃবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মোঃ মাহমুদুল হাসান। অন্যদিকে বেলা দেড়টার সময় অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে পলাশী মোড়ে জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগ ক্যাডারদের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের সংস্কৃত বিভাগের অনার্সের ছাত্র আহমেদ আল জোবায়ের। ছাত্ররা এই ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সাধারন ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্র আহমদ আল জুবায়েরকে পরীক্ষার হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সামনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সাধারন ছাত্ররা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্বয়ং ছাত্রদের নিরাপত্তা বিধান করতে ব্যর্থ যা ছাত্রলীগের আজকের হিংস্রতা প্রমাণ করে।

গোটা ছাত্র সমাজ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। তারা আরো বলেন, ছাত্ররাজনীতির মূল উদ্দেশ্য ছাত্রকল্যাণ ও জ্ঞানার্জন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য পরীক্ষার হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশের সামনে ছাত্রদেরকে মারাত্মকভাবে নির্যাতন করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠকে ছাত্রলীগ তার অব্যাহত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব আদর্শ বা মতামত লালন করা সাংবিধানিকভাবে তার মৌলিক অধিকার। অথচ শুধু মৌলিক অধিকারটুকু চর্চার কারণে মেধাবী ছাত্রদের ওপর এই পৈশাচিক হামলা ছাত্রলীগের ন্যক্কারজনক রাজনৈতিক হীনমন্যতার পরিচয় বহন করে।

সাধারন ছাত্ররা বলেন, পূর্বে প্রশাসনকে অবহিত করার পরও প্রশাসন কোন ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ছাত্রলীগ প্রশাসনের সামনে এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজ করতে সাহস পেয়েছে। অবিলম্বে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.