আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাপেক্স অলস পড়ে আছে : কমিশন বাণিজ্যের কারণে সরকারের আগ্রহ বিদেশি কোম্পানিতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বাপেক্সের দ্বিগুণেরও বেশি মূল্যে কূপ খনন শুরু করছে গ্যাজপ্রম

জীবন কখনোই সংগ্রাম বিহীন হতে পারে না গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালনায় দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির চেয়ে বিদেশি কোম্পানিগুলোর প্রতিই সরকারের আগ্রহ বেশি। রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) অত্যাধুনিক ত্রিমাত্রিক জরিপ (থ্রিডি সার্ভে) রিগসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি এবং কারিগরিভাবে দক্ষ লোকবলসহ সব ধরনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গেই তিনগুণ বেশি অর্থব্যয়ে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বিষয়ে চুক্তি করতে যাচ্ছে। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিকে আরও শক্তিশালী না করে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির ফলাফল আগেও ভালো হয়নি। দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাপেক্সকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় করে অত্যাধুনিক থ্রিডি রিগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে দেয়া হয়েছে। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাপেক্স সফলতার সাক্ষরও রেখেছে।

বাপেক্সের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদেশি কোম্পানিগুলোকে গ্যাস উত্তোলনের ঠিকাদার নিয়োগ করায় বাংলাদেশ জ্বালানি খাতে ক্রমেই বিদেশনির্ভর হয়ে পড়বে এবং দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। মূলত ক্ষমতাসীনরা বরাবরই দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করে কমিশন নিয়ে বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে থাকে। এতে ক্ষমতাসীনদের কমিশন-বাণিজ্য হলেও রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হয় না। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্সের দ্বিগুণেরও বেশি মূল্যে আগামী সপ্তাহে কূপ খননের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের তিতাস গ্যাস ক্ষেত্রে ৪টি উন্নয়ন কূপ খননের জন্য ইতিমধ্যেই রিগ স্থাপন করেছে গ্যাজপ্রম।

পর্যায়ক্রমে ১০টি কূপ খনন করবে এ প্রতিষ্ঠানটি। জানা যায়, বিবিয়ানা থেকে বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন এককভাবে দৈনিক ৭৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করলেও দেশীয় কোম্পানির মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি গ্যাস উৎপাদন করছে তিতাস। ১৫টি কূপ থেকে দৈনিক ৪৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করছে তারা। বর্তমানে চুক্তিকৃত ১০টি কূপ থেকে দৈনিক ৪৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু কী কারণে এ কূপগুলো বাপেক্সের মাধ্যমে খনন না করে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে তা কারোই বোধগম্য নয়।

জানা গেছে, বাপেক্সের ৫টি কূপসহ ১০টি উন্নয়ন কূপ খননের জন্য গ্যাজপ্রমকে পরিশোধ করতে হবে ১৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮২ টাকা হিসেবে) ১ হাজার ৫৮৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গত বছরের ২৫ এপ্রিল খননকাজের বিষয়ে রাজধানীর একটি হোটেলে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে পেট্রোবাংলার সহযোগী তিন প্রতিষ্ঠানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের সহজলভ্য গ্যাস কূপগুলোর খননকাজ গ্যাজপ্রমের হাতে ছেড়ে দেয়ায় চরম ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন বাপেক্সের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, ৫টি কূপ থেকে উৎপাদিত গ্যাসের বিক্রয়মূল্যের চেয়ে বাপেক্সকে দ্বিগুণেরও বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠানকে। এ চুক্তির মাধ্যমে একদিকে তাদের উপর দেনার বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, অন্যদিকে কোটি-কোটি টাকা ব্যয়ে গ্যাসকূপ উন্নয়ন ও অনুসন্ধানের সক্ষমতা অর্জন করেও বেকার অথবা অন্যের কাজে সময় ব্যয় করতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটিকে।

এর আগে দেশে দ্রুত বিদ্যুৎ ঘাটতি কাটানোর নামে দেশী-বিদেশি ১৫টি কোম্পানির সঙ্গে বিনা টেন্ডারে ১৭টি রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করা হয়। বিশ্লেষকদের মতে, দেশের অর্থনীতির জন্য এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের কারণে সরকারের ভর্তুকি কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। আবার গ্যাসের ক্ষেত্রেও এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে হাজার কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে। বাপেক্সের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বাপেক্সের প্রতিটি কূপ খনন করতে ব্যয় হবে সর্বোচ্চ ৬০ কোটি টাকা। আর রিগ ভাড়া সংযুক্ত করলে সর্বোচ্চ ব্যয় হবে ৭০ কোটি টাকা।

সে হিসেবে মোট ১০টি কূপ খনন করতে বাপেক্সের সর্বোচ্চ খরচ হচ্ছে ৭শ কোটি টাকা। অপরদিকে গ্যাজপ্রমকে দিতে হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। এখানে সরকারের অতিরিক্ত গচ্চা দিতে হচ্ছে ৮৮৭ কোটি টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে সার্ভিস চার্জ, জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য খরচ। তাছাড়া গ্যাস দুর্ঘটনার ঝুঁকি তো থাকছেই।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সরকার মুখে বলছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে শক্তিশালীকরণের কথা আর ভেতরে ভেতরে সিন্ডিকেট দিয়ে জনগণের ভ্যাট ট্যাক্সের টাকায় বাপেক্সের কাজ দেয়া হচ্ছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে। যে কাজ বাপেক্সকে দিয়ে করালে প্রতিটি উন্নয়ন কূপের পেছনে খরচ হতো ৬০ কোটি টাকা। সেই কাজই করানো হচ্ছে ২শ কোটি টাকা দিয়ে। অথচ বাপেক্সের বর্তমানে যে ক্যাপাসিটি বা কাজ করার সক্ষমতা রয়েছে একাজ বাপেক্স দিয়ে অনায়াসেই করানো যেত। বাপেক্স পেট্রোবাংলার সাবসিডিয়ারি কোম্পানি মাত্র।

পেট্রোবাংলা যে সিদ্ধান্ত দেবে বাপেক্স সেটা পালন করবে। এর বেশি কিছু বাপেক্সের হাতে নেই। বাপেক্স চাইলেও এসব চুক্তির বিরোধিতা করতে পারবে না। কারণ বাপেক্সের কন্ট্রোলিং পাওয়ার পেট্রোবাংলার হাতে। আবার পেট্রোবাংলাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন মন্ত্রী-উপদেষ্টারা।

তারা মূলত মীরজাফরের মতোই দেশ ও দেশের সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। জনগণকে চরমভাবে বঞ্চিত করছে। এ বঞ্চনার জন্য মূলত জনগণের অজ্ঞতাই দায়ী। এজন্য দেশের সম্পদ রক্ষা করা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে ফরয বলা হয়েছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.