আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাপেক্স স্টুপিড বাপেক্স অপদার্থ!

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... বাপেক্স স্টুপিড বাপেক্স অপদার্থ! হাসান কামরুল মাননীয় অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় বাপেক্সকে স্টুপিড অপদার্থ প্রতিষ্ঠান হিসেবে মন্তব্য করেছেন। অর্থমন্ত্রী মহোদয়কে বাংলার মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবেই জানে। ঙ্ঞানে বয়সে কর্মে ও স্পৃহায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ মানুষটির এমন মন্তব্যে আমরা হতবাক হয়েছি। অর্থমন্ত্রী এমন একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে মন্তব্য করেছেন যে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে সাধারন মানুষ ক্রমশই আশান্বিত হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদ সেক্টরে আওসি( আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানী) নির্ভরতা কমিয়ে আনার লক্ষে কৌশলগতভাবেই বাপেক্সকে সক্রিয় করার চেষ্টা করছে সরকার ।

বাপেক্স যতো শক্তিশালী হবে আওসির উপ¯িহতি ততো কমে আসবে । একদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে । আর অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী বলছেন বাপেক্স স্টুপিড, অপদার্থ প্রতিষ্ঠান । যা পারস্পরিক সাংঘার্ষিক ও বিপরীতমুখি বলে প্রতীয়মান । কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরে সবচেয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী হিসেবে অর্থমন্ত্রীকে ধরা হয়।

অর্থাৎ সরকারে অর্থমন্ত্রীর অব¯হান সেকেন্ডম্যান বা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় বাপেক্সের বরাদ্দ বাড়ছে। বাপেক্সের জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে প্রধানমন্ত্রী অনুপ্রেরনা ও আর্থিক জোগান দিয়ে যাচ্ছেন যার ফলে বাপেক্সের বরাদ্ধও বেড়েছে অনেকাংশে । সরকারের সদিচ্ছার কারণে বাপেক্সের কাজের পরিধি বেড়েছে । যার ফল জনগন পাচ্ছে।

বাপেক্স একটার পর একটা উন্নয়ন ও অনুসন্ধান কূপ খনন করছে, ত্রিমাত্রিক সার্ভে করছে, দ্বিমাত্রিক সার্ভে করছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নিজে বাপেক্সের ডিএসটি বা ড্রিল স্টিম স্টেস্টে উপ¯িহত থেকে গ্যাস মজুদের ডিক্লারেশন দিচ্ছেন। আর শুভ সংবাদ প্রচারের জন্য রাতভর মিডিয়াকর্মীরা গ্যাস ফিল্ডে উপ¯িহত থেকে প্রতিমহুর্তের আপডেট দিচ্ছেন আর তা যখনই জনসম্মুখে আসছে সাধারন মানুষও কিন্তু সত্যি আনন্দিত হচ্ছে। পাড়া মহল্লায় নতুন গ্যাস পাওয়া নিয়ে চায়ের দোকানগুলো মুখরিত হচ্ছে। জনগনের এমন আশা ভরসার একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে অর্থমন্ত্রী নিছক একটি বক্তব্য দিতে পারেন না।

রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে অর্থমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে হয়তো আইওসি প্রতিষ্ঠানগুলো খুশি হতে পারে কিন্তু সাধারন মানুষ কিন্তু খুশি হয়নি। আসলেই কি বাপেক্স ঠুঠুজগন্নাথ? বাপেক্স আসলেই কতোটুকু কাজ করেছে এ সরকারের আমলে? পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের দেয়া তথ্যমতে, বাপেক্স গত তিন বছরে দ্বিমাত্রিক বা টু-ডি লাইন সার্ভে করেছে ৯৯৫ কিমি। যেখানে আইওসি করেছে ৪৬৫ কিমি। ত্রিমাত্রিক বা ত্রি-ডি সার্ভে করেছে ৭৩৫ বর্গকিমি। আইওসি থ্রি-ডি করেছে ৪৬২ বর্গকিমি এলাকা।

বাপেক্স নতুন স্ট্রাকচার আবিষ্কার করেছে ৭টি। অনুসন্ধান কূপ খনন করেছে ( ২০০৯, ২০১০, ২০১১ সালের হিসেব) ১ টি। উন্নয়ন কূপ খনন করেছে ২টি। ওয়াকওভার কূপ খনন করেছে ১২টি। পক্ষান্তরে আইওসি অনুসন্ধান কূপ খনন করেছে ৩টি ও উন্নয়ন কূপ খনন করেছে ৪টি।

এ আমলের বাপেক্সের কাজের পরিধির সহিত গত সরকারের আমলে অর্থাৎ বিএনপি সরকারের আমলের তুলনামুলক একটা চিত্র পাওয়া গেছে ২০০২, ২০০৩, ২০০৪ অর্থবছরের হিসেব অনুযায়ী তৎকালীন সময়ে প্রথম তিনবছরে বাপেক্স টু-ডি সার্ভে করেছিল ৮৮৪ লাইন কিমি যেখানে আইওসির ছিল ১০১০ লাইন কিমি। ঔ সময় বাপেক্স কোন থ্রি-ডি সার্ভে করেনি পক্ষান্তরে আইওসির থ্রি-ডি সার্ভে করেছিল ৪৫০ বর্গকিমি এলাকা। তৎকালীন সময়ে বাপেক্স নতুন স্ট্রাকচার আবিষ্কার করেছিল ১টি ও উন্নয়ন কূপ ও অনুসন্ধান কূপ খনন করেছিল ১টি করে। এই দুই আমলে আইওসি ও বাপেক্সের কাজের অনুপাত হিসেব করলে এ সরকারের গেল তিন বছর বাপেক্সের কাজের পরিধি ও কাজের ফলাফল আশাব্যঞ্জক। যা কোনমতেই অর্থহীন বলে প্রমাণ করেনা।

২০১২ সালে বাপেক্সের গ্যাস প্রডাকশনের ইনডেক্সে দেখা যায় সালদানদী ৩ নং কূপ থেকে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ১৬ দশমিক ৭৫ এমএমএসসিএফ (মিলিয়ন স্টান্ডার্ড ঘনফুট), ফেঞ্চুগঞ্জ ৩ ও ৪ নং কূপ থেকে উৎপন্ন হচ্ছে ৩৭ দশমিক ৯৫ এমএমএসসিএফ, শাহবাজপুর ১ নং কূপ থেকে উৎপন্ন হচ্ছে ৭ দশমিক ৭০ এমএমএসসিএফ, সেমুতাং ৫ নং কূপ থেকে ৯ দশমিক ১২ এমএমএসসিএফ ও সুন্দালপুর-১ থেকে উৎপাদিত হচ্ছে প্রতিদিন ৯ দশমিক ২৬ এমএমএসসিএফ গ্যাস। বিপরীতে সালদা নদী ৩ নং কূপ থেকে কনডেন্সেট ( অপরিশোধিত খনিজ তেল) উৎপন্ন হচ্ছে প্রতিদিন ৮ দশমিক ৪০ বিবিএল, ফেঞ্চুগঞ্জ ৩ ও ৪ নং কূপ থেকে ৩০ দশমিক ৮৭ বিবিএল, শাহবাজপুর -১ থেকে শুন্য দশমিক ২৫ বিবিএল, সেমুতাং-৫ থেকে ৪ দশমিক ০৪ বিবিএল ও সুন্দালপুর-১ থেকে শুন্য দশমিক ২৯ বিবিএল অপরিশোধিত খনিজ তেল বা কনডেন্সেট উৎপাদিত হচ্ছে। ২০১২ সালে বাপেক্স সফলতার সহিত শ্রীকাইলে অনুসন্ধান কূপ ও উন্নয়ন কূপ খনন করে ৩২১৪ মিটার গভীরে গ্যাস লেয়ারে গ্যাসের নিশ্চিত মজুদ আবিষ্কার করেছে। রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাপেক্সের আর্থিক ও জনবলের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও এ সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় ও সহযোগীতায় বাপেক্সের অর্জন প্রনিধানযোগ্য এবং তাতে জনগনও কিন্তু খুশি।

বাপেক্সের এ সাফল্যকে আরো প্রসারিত করতে পারলেই শক্তিশালী একটি ভীত রচিত হবে। আর এ ভীত রচনায় নীতিনির্ধারকদেরকে আরো বেশি মনোযোগ দেয়া বাঞ্জ্যনীয়। তাই বাপেক্সের অর্জনকে খাটো করে না দেখে বাপেক্সকে শক্তিশালী করার ব্রত নিয়ে উদ্ধর্তন কতৃর্পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। বাপেক্সের আর্থিক অসঙ্গিতি দূর করার জন্য মাননীয় অর্থমন্ত্রীর নিশ্চয়ই অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। বাপেক্সের কাজের জন্য সকল প্রকার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দুর করে যতো দ্রুত সম্ভব আর্থিক বরাদ্ধ ও ফান্ড রিলিজের ব্যব¯হা করতে হবে।

বাপেক্সকে কাজের সুযোগ দিতে হবে আর বাপেক্স কাজ করতে পারলেই নিশ্চয় অনেক ভালো কিছু জাতির জন্য অপেক্ষা করবে একথা নির্দ্ধিধায় বলা যায় । বাপেক্সের সাফল্য মানেই সরকারের সাফল্য রাজনৈতিক সাফল্য তথাপি আপামর জনসাধারনের সাফল্য। হাসান কামরুল: ভূতত্ত্ববিদ ও কলামলেখক। যশমবড়ষড়মরংঃ@মসধরষ.পড়স ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.