আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিশরের পুরা-গল্প

আকাশ ছুঁব...
মিশরের পুরা-গল্প গোলাপ রাঙা জুতো পায়ের মেয়েটি অনুবাদ: অদ্বিতীয়া সিমু প্রাচীন মিশর। যখন পারস্য মিশর আক্রমন করেছে তারও আগের কথা। মিশরের রাজা ছিল তখন ফারাও ‘আমাসীস’। পারস্যের বিম্বজয়ী রাজা সাইরাস গ্রিসীয়দের পাঠিয়েছিল মিশরে বাণিজ্য করতে। বাণিজ্য করতে আসা গ্রীক বণিকরা মিশরের নক্রেটিস শহরটাকে নিজেদের করে নিয়েছিল।

সেই নক্রেটিস শহরের গল্প এটা। সেখানে বাস করত ক্যারাক্সস নামের এক ধনী বণিক। তার জণ্ম গ্রীসের ল্যাসবস দ্বীপে। সে ছিল বিখ্যাত মহিলা কবি শেপ্পোর ভাই। ক্যারাক্সস বহু বছর ধরে মিশরে বাণিজ্য করতে করতে মিশরকে আপন করে নিয়েছিল।

তাই বৃদ্ধ বয়সে মিশরের নক্রেটিসই হয়ে উঠল তার আবাসভূমি। সেই সমযকার কথা। একদিন ক্যারাক্সস হাঁটতে হাঁটতে দাস বিক্রির মঞ্চের কাছে চলে এসেছিল। সেখানে প্রচণ্ড ভীড়। কি হচ্ছে সেখানে! কৌতুহল ক্যারাক্সসকেও বাধ্য করল সেখানে যেতে।

নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এল তার! দাস মঞ্চে বসে আছে গোলাপ রাঙা অপূর্ব এক বালিকা! এত সুন্দর বালিকা ক্যারাক্সস কখনও দেখেনি। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেল নিলাম ডাকা। ধনী ক্যারাক্সস কিনে নিল সেই অপরূপা বালিকাকে। অপূর্ব সেই গ্রীসীয় বালিকার নাম ‘রডোপিস’, উত্তর-গ্রীসের মেয়ে সে। খুব ছোট্টবেলায় বাড়ি থেকে অপহরণ করে রডোপিসকে দাসবাজারে বিক্রি করে দেয় দস্যুরা।

তারপর মনিবের ঘরেই দাসদের সংগে বড় হতে থাকে রডোপিস। যতই বড় হতে থাকে রূপের আগুন যেন ঝলকে উঠতে লাগল। তাকে আগলে রাখত ‘ঈশপ’ নামের এক কুৎসিৎ বামন। ঈশপ তাকে শোনাত মজার মজার নীতিগল্প, দিত ভাল থাকার শিক্ষা। এভাবেই চলত রডোপিসের জীবন।

কিন্তু শেষ রক্ষে আর হল না। মনিবের চোখে পড়ে গেল রডোপিসের অপরূপ রূপ। মনিব তখন অনেক টাকার আশায় রডোপিসকে পাঠিয়ে দিল নক্রেটিসের দাসবাজারে। বৃদ্ধ ক্যারাক্সসের কোন মেয়ে নেই। ক্যারাক্সস রডোপিসকে দিল মেয়ের আসন, দিল সুন্দর বাগানবাড়ি, দিল দাসদাসী আর অনেক গহনা।

গহনা আর পোশাকে রডোপিস হয়ে উঠল অপরুপা রাজকুমারী। ছড়িয়ে পড়ল নক্রেটিসে ক্যারাক্সস কণ্যা রডোপিসের গল্প। গোলাপ রাঙা মেয়ে রডোপিসের জন্য বাবা ক্যারাক্সস তৈরী করাল অপুর্ব সুন্দর এক গোলাপ রাঙা জুতো। বাবার দেয়া এই অপূর্ব উপহার পেয়ে খুব খুশী হয়ে উঠল রডোপিস। তার সবসময়ের সংগী হয়ে উঠল বাবার দেয়া এই অপূর্ব উপহার।

ক্যারাক্সসও তাকে আদর করে নাম দিল- ‘গোলাপ রাঙা জুতো পায়ের মেয়ে’। মিশরে অনেক গরম পড়েছিল। তেমনি একদিনের কথা। দুপুরে প্রচণ্ড গরম। মার্বেল পাথরে বাঁধানো ঝর্ণাপুকুরে নেমেছে রডোপিস।

প্রিয় গোলাপ রাঙা জুতো জোড়া খুলে রেখেছে সিঁড়িতে। দাসীরা কেউ ধরে রেখেছে জামা, কেউ তোয়ালে, কেউবা গহনা। শুনসান নিরবতা। হঠাৎ শো শো আওয়াজ। কোথা থেকে তীর বেগে ছুটে এল এক ঈগল! দাসীরা সব চিৎকার করতে করতে লুকাল বাগানের ভিতর।

ঝর্ণ থেকে উঠে এল রডোপিস। ঈগলের যেন সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। ছুটে গিয়ে বাঁকা নখরে গোলাপ রাঙা এক পাটি জুতো নিয়ে ছুটে গেল আকাশে আবার। রডোপিস ডুকরে উঠল বাবার দেয়া উপহার হারিয়ে। এ শুধু তার প্রিয়ই ছিল না, ছিল অনেক গর্বের বস্তুও।

এদিকে এই ঈগলটা ছিল দেবতা হরাসের পবিত্র পাখি। দেবতা হরাসই তাকে পাঠিয়েছিল। জুতো নিয়ে পাখি ছুটে গেল সোজা মেমফীসে, ফারাওরাজ আমাসীসের প্রাসাদে। রাজা তখন ব্যস্ত বিচারকাজে। ঈগলটা সোজা ছুটে গেল রাজার সিংহাসনের দিকে।

গোলাপ রাঙা জুতোর পাটিটা ফেলল ঠিক রাজার কোলের উপর। তারপর মিলিয়ে গেল আকাশে। সবাই চমকে উঠল। রাজাও অবাক হলো দেখে। এত সুন্দর জুতো! নিশ্চয়ই এই জুতো পায়ের মেয়েটিও অপূর্ব সুন্দর! রাজা আমাসীস তখন ঢেঁড়া পিটিয়ে জানিয়ে দিল এই অপূর্ব জুতোর প্রকৃত মালিক মেয়েই হবে এ রাজ্যের রাণী।

সংবাদবাহক জুতোর পাটি নিয়ে ছুটলো বাড়ি বাড়ি। জুতোর উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল মেয়েরা। কিন্তু কারও পাযেই হয না জুতো। সংবাদবাহক ছুটলো এ শহর থেকে ও শহর, কত শহর! শেষপর্যন্ত পৌঁছল নক্রেটিসেও। গেল ক্যারাক্সসের বাড়ি।

রডোপিস আনন্দে চিৎকার করে উঠলো নিজের জুতো দেখে। সে কখনও ভাবেইনি বাবার দেযা জুতোর পাটি আবার ফিরে পাবে! অন্য পাটিও এনে দেখাল সংবাদবাহকদের। সংবাদবাহকরা ফিরে গেল মেমফীসে। রাজাকে শোনাল বণিকের পালিত কণ্যা দাসী মেয়ে রডোপিসের গল্প। বলল- মেয়েকে দেয়া বাবার এই উপহারের গল্প।

বলল- মেয়েটির কাছে কতটা প্রিয় এই জুতো জোড়া। সব শুনল ফারাওরাজ আমাসীস। তারপর? – তারপর আমাসীস নিজে ক্যারাক্সসের কাছে গেল রডোপিসকে রাণী করার প্রস্তাব নিয়ে। মহাধুমধামে বিয়ে হল রডোপিস আর ফারাওরাজ আমাসীসের। তারপর সুখে কাটাল মৃত্যুর আগপর্যন্ত গোলাপ রাঙা জুতো পায়ের মেয়ে রডোপিস।

ওহ্, আরেকটা কথা, গোলাপ রাঙা জুতো পায়ের মেযেটি মারা গিয়েছিল পারস্য মিশর আক্রমণের বছরখানেক আগে। [সবচে মজার ব্যাপার হলো ঘটনাটা মিশরের, কিন্তু সিন্ডেরেলার গল্প এর অনুরূপ নয়কি! আসলে দেশে দেশে গল্প বোধহয় শুধু রূপ পাল্টায়...]
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।