আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিরাজ সিকদার- বিভ্রান্তি আর স্থবিরতার কালে শ্রেণি বিপ্লবের সঠিক বাঁশীওয়ালা

একজন তরুন.. সিরাজ সিকদার, এক অকুতোভয় দেশপ্রেমিক, যার অস্তিত্বে জড়িয়ে আছে স্বদেশ, অথবা তার অস্তিত্ব ছড়িয়ে আছে স্বদেশের প্রতিটি কোণায়। তিনি অনুধাবন করতে সমর্থ হয়েছিলেন যে, মানুষের প্রকৃত মুক্তির জন্য বিপ্লবের কোন বিকল্প নেই। শরিয়তপুর জেলার ভেদেরগঞ্জে ১৯৪৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণকারী এই বিপ্লবী ১৯৭৫ সালের প্রথম দিনেই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীদের হাতে বন্দি ও পরদিন ওই উর্দি পরা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। আর এর মাধ্যমেই শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশে বিচার বহির্ভুত হত্যা, ‘ক্রসফায়ার’ কালচারের এক কলুষিত অধ্যায়, যার ধারকেরা এখনো এটি বয়ে বেড়াচ্ছেন। সিরাজুল হক সিকদার ১৯৫৯ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে মেট্রিক ও ১৯৬১ সালে ব্রজ মোহন কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন।

তৎকালীন সময়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভবিষ্যত কর্মজীবনের কথা ভেবে রাজনীতি থেকে দূরে থাকত, কারণ অঘোষিতভাবে ইউনিভার্সিটিতে তখন রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু এসময়েই সিরাজ সিকদার ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তখন তিনি লিয়াকত হলের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন (মেনন গ্রুপ)। তিনি ১৯৬৭ সালে বুয়েট থেকে ১ম বিভাগে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী লাভ করেন। ডিগ্রী লাভের পর পরই তিনি সরকারী চাকরীতে (সি অ্যান্ড বি বিভাগের প্রকৌশলী হিসেবে) যোগ দান করেন, কিন্তু মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে তিনি চাকরী থেকে ইস্তফা দিয়ে টেকনাফ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি বেসরকারী কোম্পানীতে যোগদান করেন।

কিন্তু এর মাঝেই বিপ্লবী পার্টি গঠনের প্রক্রিয়া চলছিল। তৎকালীন আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ছিল দ্বিধা-বিভক্ত, সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মুক্ত বাজারীদের বিরোধ ছিল চরমে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঘটে সোভিয়েত আর চীনের বির্তক। স্বাভাবিকভাবেই এই বিভক্তির প্রভাব পড়ে এ অঞ্চলের কমিউনিস্ট আন্দোলনেও। ফলশ্রুতিতে, রুশ ও চীনপন্থী, দু’টি ধারায় ভাঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি।

পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে এই ভাঙ্গনের প্রভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। ১৯৬৬ সালের মাও’র সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ছোঁয়া লাগে উভয় বাংলায়। সবাই যখন দ্বিধা-বিভক্ত, ঠিক তখনই সিরাজ সিকদার পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কৃষক-শ্রমিকের আন্দোলনের। সেসময়ে পাকিস্তানে কম্যুনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ থাকায় পার্টির তৎপরতা চলতো গোপনে। সেবছরই মহান বিপ্লবী কমরেড চারু মজুমদার ও কানু সন্যালের নেতৃত্বে ভারতের নকশালবাড়ীতে কৃষকরা সশস্ত্র আন্দোলন করে।

ভারত কাঁপানো এ আন্দোলনের ঢেউ ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বাংলায়। সেই নকশালবাড়ী আন্দোলনে উজ্জীবিত এদেশের (পূর্ব বাংলা) তরুণ বিপ্লবীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠে সভাপতি মাও’এর আদর্শে। অপরদিকে, নকশালবাড়ীর এই আন্দোলনকে কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা “হঠকারিতা” বলে অভিহিত করেন। কিন্তু তরুণরা পার্টির এহেন অভিমত মেনে নিতে পারেননি। তাদের একটি অংশ এর প্রতিবাদে দল ত্যাগ করে গঠন করেন “রেডগার্ড”।

পুরো ঢাকা শহরের দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা হয়, “বন্দুকের নলই সকল মতার উৎস”, “নকশালবাড়ী জিন্দাবাদ”সহ আরো অনেক দেওয়াল লিখন, সেই সাথে বিলি করা হতে থাকে লিফলেট। যারা এসব প্রচারণা চালাতো, সিরাজ সিকদার ছিলেন তাদেরই অন্যতম। সিরাজের চোখে তখন তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকরূপী শোষকদের নির্যাতন-নিপীড়ণ, হত্যা, জাতীয় সম্পদ লুন্ঠন থেকে সশস্ত্র পন্থায় পূর্ব বাংলা ও এর মানুষের প্রকৃত মুক্তির স্বপ্ন, যার মাধ্যমে পরাজিত হবে পাকিস্তানের জান্তা সরকার। ১৯৬৭ সালে মালিবাগে সিরাজ প্রতিষ্ঠিত করেন “মাও সে-তুঙ চিন্তাধারা গবেষণাগার”, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল তরুণদের প্রকৃত মানব-মুক্তির জন্য বিপ্লবের সঠিক পথ দেখানো। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের (মতিয়া) সূর্য্য রোকনের হাতে এই গবেষণা কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব দেন।

রোকন ছিলেন হো চি মিন, মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমূখের দ্বারা অনুপ্রাণিত, সিরাজের ঘনিষ্ট অনুসারী ও প্রতিবেশী। এসময়ে তারা “পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন”-এর ইস্তেহার লিখেন ও পরবর্তীতে এক মধ্যরাতে (১৯৬৮ সালের ৮ জানুয়ারী) তারা ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে এই ইস্তেহার প্রিন্ট করেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৪। বাংলাদেশের যে লাল সবুজের পতাকা আমরা দেখি, এই অনমনীয় স্বাধীন প্রিয় পতাকা সিরাজ সিকদারের নিজের হাতে তৈরি করা। ১৯৭০ সালের ৮ জানুয়ারী সংগঠনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে স্বাধীন পূর্ব বাংলার পতাকা ওড়ানো হয়।

ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ ও ময়মনসিংহে ওড়ে সবুজ জমিনের মাঝে লাল সূর্য্য ও মাঝে তিনটি মশাল ক্ষচিত এই পতাকা। অথচ বুর্জোয়া ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র কাঠামো এমনই অকৃতজ্ঞ যে সিরাজ সিকদারকে সেই স্বীকৃতিটুকও তারা দেয়নি। আর সে বছরে ৬ মে কার্লমাক্সের জন্মদিনে পাকিস্তান কাউন্সিলে দুটো হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় ‘পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন’এর সামরিক উইং। সংগঠনটির সামরিক শাখা ১৯৭০ সালের শেষ নাগাদ জাতীয় মুক্তি আকাঙ্খার বিরুদ্ধে পরিচালিত ব্যুরো অব ন্যাশনাল রিকনস্ট্রাকশন, আমেরিকান ইনফরমেশান সেন্টারসহ আরো বেশ কিছু বিদেশী প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। চীনে কমরেড মাও সেতুং-এর সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও বিপ্লবের দ্বারা সিরাজ সিকদার অনেকাংশেই অনুপ্রাণিত ছিলেন।

আরো যাদের দ্বারা সিরাজ অনুপ্রাণিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে জেনারেল জিয়াপ, হো চি মিন অন্যতম। তবে বস্তুত মাও ছিলেন সিরাজ সিকদারের আদর্শিক গুরু। মাও সে-তুঙ’এর গেরিলা যুদ্ধ অনুসরণ করে সে সময় যে সব গ্রুপ এদেশে সশস্ত্র কৃষক-শ্রমিকের নেতৃত্বে বিপ্লব করতে চেয়েছিলো, সাধারণভাবে তারা পরিচিতি লাভ করে পিকিংপন্থী (পরে নকশাল) হিসেবে। কিন্তু কমরেড সিরাজ সিকদার ছিলেন তাঁর চিন্তাধারায় অনন্য। কেননা অন্য পিকিংপন্থীরা যখন জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে প্রাধান দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখতে ব্যর্থ হন, তখন সেই ১৯৬৮ সালের ‘পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন’এর থিসিসেই কমরেড সিরাজ সিকদার মূল দ্বন্দ্ব দেখিয়েছিলেন চারটি- ১. পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে পাকিস্তানী উপনিবেশবাদের জাতীয় দ্বন্দ্ব; ২. পূর্ব বাংলার বিশাল কৃষকজনতার সাথে সামন্তবাদের দ্বন্দ্ব; ৩.(ক) পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে সাম্রাজ্যবাদ বিশেষতঃ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের জাতীয় দ্বন্দ্ব, ৩. (খ) পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে সংশোধনবাদ, বিশেষতঃ সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের জাতীয় দ্বন্দ্ব, ৩. (গ) পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের জাতীয় দ্বন্দ্ব; ৪. পূর্ব বাংলার বুর্জোয়াদের সাথে শ্রমিক শ্রেণীর দ্বন্দ্ব।

যার মাঝে প্রধান দ্বন্দ্ব নির্ণীত হয়েছিল “পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে পাকিস্তানী উপনিবেশবাদের জাতীয় দ্বন্দ্ব”। প্রধান দ্বন্দ্ব সম্পর্কে সভাপতি মাও বলেছেন- “কোনো প্রক্রিয়াতে যদি কতকগুলো দ্বন্দ্ব থাকে তবে তাদের মধ্যে অবশ্যই একটা প্রধান দ্বন্দ্ব থাকবে যা নেতৃস্থানীয় ও নির্ণায়ক ভূমিকা গ্রহণ করবে। অন্যদের গৌণ ও অধীনস্ত স্থান নিবে। তাই দুই বা দু’য়ের অধিক দ্বন্দ্ব বিশিষ্ট কোন জটিল প্রক্রিয়ার পর্যালোচনা করতে গেলে আমাদের অবশ্যই তার প্রধান দ্বন্দ্বকে খুঁজে পাবার জন্য সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এই প্রধান দ্বন্দ্বকে আঁকড়ে ধরলে সব সমস্যাকেই সহজে মীমাংসা করা যায়।

” আর এই ক্ষেত্রে জাতীয় মুক্তির মাধ্যমেই অন্যান্য দ্বন্দ্ব সমূহের মীমাংসা সম্ভব; কেননা এই পরাধীনতার সাথে জড়িত ছিল সামন্তবাদ, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ এবং বুর্জোয়া ব্যবস্থা। উপনিবেশিক শাসনে অন্যান্য দ্বন্দ্ব সমূহের মীমাংসা খুঁজতে যাওয়াটা ছিল অরণ্যে রোদন। এছাড়াও সেসময়ে ছিলো আওয়ামী লীগ-ঘেঁষা, ভোটপন্থায় ক্ষমতা দখলে বিশ্বাসী মনি সিংহ-এর নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি, মোজাফ্ফর গং, যারা চিহ্নিত হয় মস্স্কোপন্থী হিসেবে। মিথ্যা বা ভূলের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা আদর্শের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে ১৯৭১’এর মধ্যভাগে তাঁর হাতেই গঠিত হয় “পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি”, “জাতীয় মুক্তিবাহিনী”।

পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শোষণের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে সংগঠিত করেন মুক্তিযুদ্ধকে, শোষকশ্রেণী কর্তৃক এদেশের মানুষের জাতীয় আত্মমর্যাদার পরিপন্থী কাজের প্রতিবাদ করেন। এর নিদর্শন আমরা দেখতে পাই যখন ১৯৭৩ ও ৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশে সর্বহারা পার্টির পক্ষ থেকে হরতালের ডাক দেয়া হয়, যা স্বতঃস্ফুর্তভাবে পালিত হয়। আর এই হরতালকে কেন্দ্র করে শাসক রূপী শোষকবাহিনী প্রচার মাধ্যমে নানান মনগড়া কাহিনী ছড়ায়, বিপ্লবীদের ‘ডাকাত’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, কিন্তু সাধারণের মুক্তির সংগ্রাম চলমান থাকে। ফ্যাসিস্ট শাসকশ্রেণী ভিন্নমতকে নিঃশেষ করে দিয়ে একদলীয় শাসন কায়েমের নিমিত্তে তারা শোষণের উগ্রতায় মেতে উঠে; সেনাবাহিনী, রক্ষীবাহিনী পুলিশ ও গোয়েন্দাবাহিনীকে দিয়ে চালানো হয় বর্বরোচিত রাষ্ট্রীয় হত্যাযজ্ঞ। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারী সিরাজ সিকদারকে আটকের পর বিমানে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

পরে গণভবনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন শেখ কামাল, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ। সিরাজ সিকদার আত্মসমর্পণ করে সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হতে নিজেকে বিরত রাখতে বলা হয়, তিনি তাতে রাজী না হয়ে শেখ মুজিবের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনি দেশটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন, এর জন্য আপনিই দায়ী থাকবেন। ” পরে শেখ কামালের রিভলবারের আঘাতে কমরেড লুটিয়ে পড়েন। সিরাজ সিকদারকে এরপরে আগারগাও রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে অকথ্য নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। রাতে তার লাশ সাভারে নিয়ে ‘এনকাউন্টার’এর নাটক মঞ্চস্থ করা হয়।

শ্রদ্ধেয় লেখক আহমদ শরীফ ‘সেই গ্লানিবোধ কাঁটার মতো বুকে বেঁধে’ শীর্ষক লেখায় বলেন, ‘এ মানবতাবাদী সাম্যবাদী নেতাকে হাতে পেয়ে যেদিন প্রচণ্ড প্রতাপে শঙ্কিত সরকার বিনা বিচারে খুন করলো সেদিন ভীতসন্ত্রস্ত আমরা আহা শব্দটিও উচ্চারণ করতে সাহস পাইনি। সেই গ্লানিবোধ এখনো কাঁটার মতো বুকে বিঁধে। ’ সারাবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এদেশেও বিপ্লবী নেতা চে’কে নিয়ে ব্যাপক মাতামাতি হয়। তবে এত মাতামাতির মাঝে তাঁকে অপমানের সমস্ত উপাদান বিদ্যমান। যাই হোক এতে করে কর্পোরেটরা মহানন্দের জোয়ারে ভাসতে পারেন, কারণ উন্মাদনাকে কাজে লাগিয়ে চে’কে অন্তর্বাসে বা পায়ের জুতোতে ঠেলে দিতে তারা সক্ষম হয়েছে।

কিন্তু আমিও না হেসে পারিনা যে এদেশের সাহসী, দেশপ্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধা, বিপ্লবী শহীদ কমরেড সিরাজ সিকদারের ছায়া স্বপ্নে দেখতে পেলেও এসমস্ত লেজহীন অমানুষগুলো ঘুম ভেঙ্গে চিৎকার করে উঠে। ভারতের কাছে পাকিস্তান কর্তৃক আত্মসমর্পণের দলিলে সাক্ষরের পর যে নয়া ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র কায়েম হল, সেই রাষ্ট্র মানুষকে পাকিস্তানী শোষণের দুঃস্বপ্ন থেকে বিন্দুমাত্র নিস্তার দিতে পারেনি। এটা স্বাভাবিক ঘটনা বটে। কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন, নিপীড়ক রাষ্ট্রযন্ত্রটির বিরুদ্ধে একদল তরুণ লড়াইয়ে নেমেছিলেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন যাবতীয় অন্যায়-কুকর্মের বিরুদ্ধে বিশাল সশস্ত্র জনযুদ্ধ সূচিত করতে, যার ফালাফল জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্টা। শহীদ কমরেড সিরাজ সিকদার ছিলেন এদের স্বপ্নদ্রষ্টা, ঠিক যেমনটি ছিলেন শহীদ কমরেড চারু মজুমদার।

তাঁর ডাকে ভারতের হাজার হাজার তরুণ, কৃষক রক্তাক্ত সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারি কমরেড সিরাজ সিকদার রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। স্বৈরশাসক, ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিবের নির্দেশে তাঁর উপর নির্যাতন চালানো হয়, ২ জানুয়ারিতে যার শেষ পরিণতি। রাষ্ট্রীয় হেফাজতে নির্যাতনের পর খুন করে ফেলা। পরে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ‘এনকাউন্টার’ নামক নাটকের প্রচার, বিপ্লবী নামধারী কিছু সংশোধনবাদী কর্তৃক তাঁকে ‘ডাকাত’ সাব্যস্ত করাসহ আরো নানান কেচ্ছা-কাহিনী শুনানো।

অনেকসময় শোষকশ্রেণীর কোন অংশের পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবী করা হয়। কিন্তু শহীদের উত্তরসূরিরা শহীদের অবমাননাকে সহ্য করেননা। কারণ শহীদের পবিত্রতা রক্ষা করা এবং সেই সাথে রক্তের শোধ তোলা তাঁর উত্তরসূরিদের পবিত্র দায়িত্ব। এই বিপ্লবী নেতাকে নিয়ে আজকের দিনে শোষকশ্রেণীর ঘুম ভেঙ্গে আঁতকে উঠার মত ঘটনা দেখে আমি পুলকিত হই, সেটা আগেই উল্লেখ করেছি। তবে দুঃস্বপ্ন দেখে শোষকশ্রেণীর নিদ্রাভঙ্গের এই বিষয়টি প্রমাণ করে যে তাদের কাছে এই বিপ্লবী কতটা ভয়ংকর! তাঁর প্রদর্শিত নীতি-আদর্শ কতটা ভয়ংকর! অর্থাৎ, গণমুক্তির স্বার্থে তিনি আজও কতটা প্রাসঙ্গিক।

তিনি একটি পতাকা, একে বয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই পতাকার সাথে নতুনদের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, যাতে এই পতাকা জনে-জনে, হাতে হাতে পৌঁছে যায়। চিরতরুণ কমরেড সিরাজ সিকদার বেঁচে থাকবেন চিরতারুণ্যের মাঝে। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.