আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কমলগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী রাসপূর্ণিমা অনুষ্ঠান ২ নভেম্বর

প্রতিটি দিনের কাছে অনেক যে ঋণ...

রাস উৎসব মণিপুরী সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান শ্রেষ্ঠ পার্বন। এই উৎসবের স্থায়ীত্বকাল শুধু একটি দিনের একটি রজনীকে ঘিরে। হালকা শীতের মিষ্টি আমেজ নিয়ে প্রতি বছর ফিরে ফিরে আসে অপরূপ সুন্দর এই নৃত্য-গীতের অনুষ্ঠান। বর্ণাঢ্য আয়োজন ও কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আগামী ২ নভেম্বর ২০০৯ খ্রি:, সোমবার মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হবে মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা উৎসব। এ উপলক্ষে মণিপুরী সম্প্রদায়ের মাঝে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব।

মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়ামন্ডপ প্রাঙ্গনে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরীরা ১৬৭তম বার্ষিকী এবং আদমপুর ইউনিয়নের তেতইগাঁও সানাঠাকুর মন্ডপ প্রাঙ্গনে রাসোৎসব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে মণিপুরী মৈ-তৈ সম্প্রদাযের লোকজন প্রতিবছর উৎসবের আয়োজন করে। উৎসব উপলক্ষে উভয় স্থানে বসবে বর্ণাঢ্য মেলা। মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার লোকজন মেতে উঠবে আনন্দ উৎসবে। মহারাত্রির আনন্দের পরশ পেতে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যটক, বরেণ্য জ্ঞাণী-গুণী লোকজনসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠবে গোটা উৎসব অঙ্গন।

মণিপুরী সম্প্রদায়ের পূণ্যস্থাণ হিসাবে বিবেচিত মাধবপুর ও আদমপুরে রাসোৎসবের জন্য তৈরী সাদাকাগজের নকশায় সজ্জিত মন্ডপগুলো এই একটি রাত্রির জন্য হয়ে উঠবে লাখো মানুষের মিলনতীর্থ। মণিপুরী শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুন নৃত্যাভিনয় রাতভর মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, ১৭৭৯ সালে মনিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্রস্বপ্নদৃষ্ট হয়ে যে নৃত্যগীতের প্রর্বতন করেছিলেন তাহাই রাসোৎসব। ভাগ্যচন্দ্রের পরবর্তী রাজাগনের বেশরিভাগই ছিলেন নৃত্যগীতে পারদর্শী এবং তারা নিজেরাও রাসনৃত্যে অংশগ্রহন করতেন। এর ফলে মণিপুরী সম্প্রদাযের মধ্যে এ কৃষ্টির ধারাবাহিকতায় কোন ছেদ পড়েনি।

অতীতের সেই ধারাবাহিকতার সূত্র ধরেই কোনরুপ বিকৃতি ছাড়াই কমলগঞ্জে উদযাপিত হয়ে আসছে মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী কৃষ্ণের মহা রাসলীলা। তুমুল হৈ-চৈ, আনন্দ-উৎসাহ, ঢাক, ঢোল, মৃদঙ্গ, করতাল এবং শঙ্খ ধ্বনির মধ্যদিয়ে রাধা-কৃষ্ণের লীলাকে ঘিরেই সোমবারের দিনটি বছরের অন্য সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসবে কমলগঞ্জ উপজেলাবাসীর জীবনে। আর সারা দেশের শিক্ষিত, সংস্কৃতিমনষ্ক মানুষ মৌলভীবাজারের এই কমলগঞ্জকে এক নামে চিনবে। এখানে উল্লেখ করা বিশেষ প্রয়োজন যে, মনিপুরী এ নৃত্যকলা শুধু কমলগঞ্জের নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বের নৃত্যকলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। ১৯২৬ সালে সিলেটের মাছিমপুরে মণিপুরী নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশিত রাসনৃত্য উপভোগ করে মুগ্ধ হয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

পরে তিনি তার শান্তিনিকেতনে কমলগঞ্জের মনিপুরী নৃত্যশিক্ষক গুরু নীলেশ্বর মুখার্জীকে নিয়ে গিয়ে প্রবর্তন করেছিলেন মণিপুরী নৃত্য। কমলগঞ্জে প্রায় এক মাস আগ থেকেই চলছে রাসোৎসবের প্রস্তুতি। মনিপুরী সম্প্রদায়ের বাড়ি বাড়ি কুমারী কিশোরদের রাস লীলায় অংশগ্রহণ করার জন্যে নৃত্য ও সংগীতের তালিম নেয়ার ধুম পড়ে যায়। এক্ষেত্রে তাবৎ বাড়িতে রাসধারী ও রাস লীলার উস্তাদ এনে শিক্ষা দেয়ার রেওয়াজ প্রচলিত। আনুমানিক ৩০/৪০ জন কিংবা ততোধিক সংখ্যার কিশোরী এ রাসলীলায় অংশগ্রহণ করে থাকে।

প্রিয় সুধি, সবার আমন্ত্রণ রইল। আসুন, দেখুন, উপভোগ করুন একটি জনগোষ্ঠীর এই বৃহৎ মিলনমেলাকে। কিভাবে আসবেন: আগে আপনাকে শ্রীমঙ্গল আসতে হবে। তারপর শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ যাবার গাড়ীর অভাবে নেই। শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ১৩/১৪ কি:মি:।

প্রাইভেট গাড়ী ভাড়া করে বা সিএনজিতে অথবা লোকাল বাসে করে কমলগঞ্জ যাওয়া যায়। প্রতিদিন ঢাকা কমলাপুর থেকে ছাড়ে ৩টি আন্তঃনগর ট্রেন। ৪ ঘন্টায় আপনি পৌঁছে যাবেন শ্রীমঙ্গল। পারাবত এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৬টায়, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস দুপুর ২ টায় এবং উপবন রাত ১০টায়। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের চেয়ারকোচের ভাড়া ১৩৫ টাকা, ১ম চেয়ার ২০০ টাকা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচে ৩০০ টাকা এবং স্লিপিং কোচে ৩৬০ টাকা।

বাসে যেতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। বাস ভাড়া ২৫০ টাকা। সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে আসা যে কোনো বাসে আপনি চড়তে পারেন। শ্যামলী পরিবহন (এসি, নন-এসি), হানিফ (এসি, নন-এসি),, মৌলভীবাজার সিটি (এসি, নন-এসি) প্রভৃতিই নির্ভরযোগ্য বাস। কোথায় থাকবেন: কমলগঞ্জে ভাল কোনো হোটেল নেই।

তাই যদি থাকতে চান তবে থাকতে হবে শ্রীমঙ্গলে। শ্রীমঙ্গলে থেকে আরো দর্শনীয় স্থানগুলো যেমন- লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক, প্রায় ৫০০ বছরের পুরানো নির্ম্মাই শিববাড়ী, বাইক্কা বিল, হাইল হাওড়, সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট ইত্যাদি দেখতে পারেন। শ্রীমঙ্গল শহরের উল্লেখযোগ্য হোটেলগুলো হলো এলাহী প্লাজা, নিরালা রেস্ট হাউজ, টি টাউন রেষ্ট হাউজ প্রভৃতিতে উঠতে পারেন। ভাড়া স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও সরকারি ও আধাসরকারি সংস্থাগুলোর বেশ কিছু বাংলো রয়েছে এখানে।

তবে কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে এখানে ওঠতে পারেন। সপরিবারে যেতে পারেন আবার বন্ধু-বান্ধব মিলে একত্রেও যেতে পারেন। শহরে খাওয়া দাওয়ার জন্য অনেক হোটেল রয়েছে। তবে নুর ফুডস এবং শাহ হোটেল এর যে কোন একটিতেই আপনি স্বল্প খরচে ভাল মানের খাবার পাবেন। ছবি: রাসলীলার নৃত্য


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.