জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
আমি তখন অনেক ছোট। বাস্তব জীবন সম্পর্কে কোন জ্ঞান নাই। আমার বড় বোনকে একটা পাকামো প্রশ্ন করে ফেলেছিলাম।
আমাদের পাশের বাসায় এক হিন্দু পরিবার বাস করত। তাদের বাচ্চা হয়েছিল।
আমি আমার বড় বোনকে প্রশ্ন করেছিলাম, আচ্ছা, মুসলমান ধর্ম তো সঠিক। মুসলমানরা বিয়ে করলে বাচ্চা হয়। হিন্দুদের ধর্ম তো ঠিক না। তাহলে ওদের বিয়েও তো ঠিক না। ওদের কেন বাচ্চা হয় ? ওদের কেন আল্লা বাচ্চা দেয় ?
আমার বড় বোন কোন উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গিয়েছিল।
এখন বুঝি কেন সেদিন তিনি এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এখন বুঝি বাচ্চা হওয়ার সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নাই।
বাস্তব জীবনে ধর্মীয় বিশ্বাস কি কাজে লাগে ?
মানুষ কি কর্মঠ হয় কোন ধর্ম পালনের জন্য ? তাহলে তো কর্মক্ষেত্রে সেই ধর্মের লোকদেরই চাকুরি হত। তাদের বেতন হত বেশি । কোন ধর্ম যদি মানুষকে কর্মদক্ষ ও কর্মঠ বানাত, তবে সবাই সেই ধর্মের অনুসারী হতে আগ্রহ বোধ করত।
ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য কি মানুষ মেধাবী হয় ? তাহলে তো সেই ধর্মের মানুষরাই হত বড় বিজ্ঞানী বা শিল্পী। বাস্তবে তো যে কোন ধর্মের মানুষই বিজ্ঞানী বা শিল্পী হওয়ার মতো মেধাবী হয়। কোন ধর্ম পালন করলে যদি মেধাবী হওয়া যেত, তবে সবাই সেই ধর্মের প্রতি উৎসাহী হত।
ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য কি মানুষ ধনী বা গরীব হয় ? না, ধনী বা গরীব হওয়ার সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নাই। যে কোন লোকই ধনী বা গরীব হতে পারে।
যদি কোন ধর্ম গ্রহণ করলে মানুষ ধনী হয়ে যেত, তবে সবাই সেই ধর্ম গ্রহণ করত।
ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য কি মানুষ রোগমুক্ত থাকে ? না, বাস্তবে ধর্মের সাথে রোগের কোন সম্পর্ক নাই। যে কোন ধর্মের লোক যে কোন রোগে আক্রান্ত হয়। ইমাম সাহেবেরও ডায়াবেটিক হয়, পাদ্রী সাহেবেরও ডায়াবেটিক হয়। কোন ধর্ম পালন করলে যদি রোগমুক্ত থাকা যেত তবে সবাই সেই ধর্মই পালন করত।
কোন ধর্ম পালন করলে কি মানুষ চির যৌবন পায় ? না, যৌবন স্থায়ী করার সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নাই। যে কোন ধর্ম পালনই করি না কেন একটা সময়ের পর আমাদের বুড়ো হতেই হবে। কোন ধর্ম পালন করলে যদি চিরযৌবনা হওয়া যেত, সেই ধর্ম বাদে আর কোন ধর্ম থাকত না।
কোন ধর্ম পালন করলে কি মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা থেকে বাঁচে ? না, যখন ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস হয়, তখন সবার ঘরই ভাংগে। মসজিদও ভাংগে, মন্দিরও ভাংগে।
সবাই যার যার স্রষ্টাকে ডেকেও সেই দুর্যোগ থামাতে পারে না। যদি কোন ধর্ম পালন করলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা থেকে বাঁচা যেত, মানুষ সেই ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম পালন করত না।
অন্য দিকে ধর্মের সবচেয়ে বেশি সম্পর্ক নৈতিকতার সঙ্গে। সেটাও বাস্তবে গিয়ে খুব একটা টেকে না। কেবল এক ধর্মের লোকের নৈতিকভাবে সৎ হয় এবং অন্য ধর্মের লোকের নৈতিকভাবে সৎ হয় না, তাও নয়।
বরং সব ধর্মের মধ্যেই কিছু লোক সৎ এবং কিছু লোক অসৎ। ভালো লোকদের মধ্যে সব ধর্মের লোকই আছে।
এমনও নয় যে, কোন ধর্মের লোকেরা বেশি অপরাধ করে, অন্য ধর্মের লোকেরা অপরাধ করে না। জেলখানার কয়েদিদের মধ্যে সব ধর্মের লোকই আছে। অপরাধীদের মধ্যেও সব ধর্মের লোকই আছে।
দুর্নীতি সব ধর্মের মানুষই করে। এমন হয় না যে, বিশেষ কোন ধর্মের লোকেরা দুর্নীতি করে না, আবার বিশেষ কোন ধর্মের মানুষরাই দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতি বা সুনীতি কোনটাই শেষ পর্যন্ত ধর্ম দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না, নিয়ন্ত্রণও করা যায় না, হয়তো সামান্য প্রভাব ফেলে মাত্র।
আসলে বাস্তব জীবনে আমাদের যা যা ঘটার তার সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নাই। ধর্মের সম্পর্ক মৃতু্যর সঙ্গে, মৃতু্য ভয়ের সঙ্গে।
তাই তো তরুণদের তুলনায় বৃদ্ধরা ধর্ম কর্মে বেশি মনোযোগী হয়। বয়স যত বাড়তে থাকে, ততই ধর্মীয় কাজে উৎসাহ বাড়তে থাকে।
বলা যায়, ধর্মের মূল উৎস মৃতু্য ভয়। মৃতু্য ভয় না থাকলে মানুষ ধার্মিক হত কি না সন্দেহ করা যায়। কোন দিন যদি বিজ্ঞান মৃতু্য থামিয়ে দিতে পারে, তবে ধর্ম উবে যাবে।
কেননা, মৃতু্য না থাকলে ধর্ম থাকবে না।
অন্য দিকে পৃথিবীতে নানা ধর্ম। যার যেটা পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সেটাই তার ধর্ম। অনেকে তার নিজের ধর্মের পক্ষে নানা যুক্তি তর্ক দেয়ার চেষ্টা করে । আমার কাছে মনে হয়, ধর্ম মূলত একটা বিশ্বাস।
যুক্তি তর্ক দিয়ে বুঝতে গেলে ধর্ম থাকে না। তৈরি হয় অবিশ্বাস। তাই ধর্ম মানতে গেলে বিশ্বাস করতেই হবে। বিশ্বাস ছাড়া ধর্মের আসলে তেমন কিছু নাই।
যে যেই ধর্মে বিশ্বাস করে, নীরবে নিভৃতে সেই ধর্ম চর্চা করে গেলে কোন সমস্যা হত না।
সমস্যা তখনই দেখা দেয় যখন ধর্ম প্রচার শুরু হয়। কেউ স্বমতে না এলেই তাকে শত্রু মনে হয়, তার প্রতি ঘৃণা জন্ম নেয়। বাস্তব জীবনে ধর্ম কোন কাজে না লাগলেও স্বমতের মানুষের প্রতি যেমন ভালোবাসা সৃষ্টি করে, তেমনি বিপরীত মতের মানুষের প্রতি ঘৃণা জন্মায় । এই পৃথিবীর সকল ধর্মেরই এটা একটা সীমাবদ্ধতা।
(অফ টপিক : এই পোস্টের কিছু অংশ আমার অন্য একটি প্রাসঙ্গিক পোস্ট থেকে কপি পেস্ট )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।